ঢাকায় যেভাবে স্বাগত জানিয়েছিলাম মেসিকে
উৎপল শুভ্র
২৪ জুন ২০২১
২০১১ বিশ্বকাপ ক্রিকেট বা ২০১৪ টি-২০ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে বড় আয়োজন কম হয়নি বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। তবে ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তারিখ থেকে আরও একটা গর্ব যোগ হয়েছে এই স্টেডিয়ামের গৌরবে। এখানে লিওনেল মেসি খেলে গেছেন।
প্রথম প্রকাশ: ৫ সেপ্টেম্বর ২০১১। প্রথম আলো।
মেসি! মেসি!! মেসি!!!
কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে ‘মেসি মেসি’ রব। কিন্তু লিওনেল মেসি কি একাই আসছেন আজ?
মেসি আসছেন। তাঁর সঙ্গে আসছে তারায় তারায় খচিত আর্জেন্টিনা দল। বিশ্ব ফুটবলের অভিজাত ছোট্ট দলটিতে যাদের প্রশ্নাতীত অধিষ্ঠান। অধিনায়কের আর্মব্যান্ডটা এখন খুদে জাদুকরের বাহুতেই বাঁধা বলে বলতে পারেন ‘মেসির আর্জেন্টিনা’।
আজ সকালে আসছে নাইজেরিয়াও। বিশ্ব ফুটবলের অভিজাত সারিতে আসন নেই, তবে যথেষ্টই সমীহ জাগানো দল। নাম ‘সুপার ইগলস’। যে নামের সার্থকতা অনেকবারই প্রমাণিত।
ইতিহাস আপনাকে জানাবে, প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনা হলে ‘ইগল’রা যেন আরও বেশি ‘সুপার’ হয়ে ওঠে। আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত দ্বৈরথগুলোর মধ্যে অবশ্যই পড়ে না। তবে ছন্দময় লাতিন আমেরিকার সৃজনশীলতা আর শক্তিময় আফ্রিকার স্কিল এই ম্যাচে সব সময়ই আলাদা একটা আকর্ষণ হয়ে থাকে। প্রীতি ম্যাচের আবরণে দুই ফুটবল ঘরানার জমজমাট এক লড়াইয়ের অপেক্ষায় এখন ক্ষণ গুনছে বাংলাদেশ।
কিন্তু অপেক্ষাটা যেন শুধুই ফুটবল মহানায়কের জন্য। আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ছাপিয়ে এটি ‘মেসির ম্যাচ’। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে বিশ্বসেরার লড়াইটা একসময় ফটো ফিনিশে মীমাংসা হতো। গত কিছুদিনে সেই ব্যবধান অনেকটাই বাড়িয়ে নিয়েছেন। মেসি এখন ফুটবলের প্রতীক। এমনই যে, তাঁর পদধূলি (নাকি বুট-ধূলি) পাবে বলে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামও যেন রোমাঞ্চিত!
আগামী পরশু সন্ধ্যা ৬টায় শুরুর বাঁশি বাজবে ম্যাচের। তার আগে, আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়ই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে পা পড়বে মেসির। মেসিকে চর্মচক্ষে দেখতে পারাটাই অনেকের কাছে আবেগময় এক অভিজ্ঞতা। আর্জেন্টিনার প্র্যাকটিস সেশনে তাঁর কারিকুরি দেখাটা তো আরও। সেই সুযোগ পেতেও অবশ্য টাকাপয়সার ব্যাপার থাকছে। তবে মেসিকে দেখার জন্য সে আর এমন কী!
এই শহরে দুই দিন আগেই পা রাখার কথা ছিল তাঁর। প্র্যাকটিস ভেন্যু নিয়ে জটিলতায় কলকাতাই বাড়তি দুই দিন পেয়ে গেল মেসির আর্জেন্টিনাকে। পেলে-ম্যারাডোনাকেও কাছ থেকে দেখা কলকাতায়ও মেসিকে ঘিরে অভূতপূর্ব উন্মাদনা। ম্যাচ শেষে তাঁর একটু কাছে যেতে পুলিশের ব্যাকুলতায় আতঙ্কিত মেসি পুলিশি প্রহরায় কোথায় যেতেও নাকি ভয় পাচ্ছেন।
ঢাকায়ও কি এমন কিছু হবে? টিকিট বিক্রির যে করুণ দশা, তাতে এই শহর মেসি-ম্যানিয়ায় আক্রান্ত বলা যাচ্ছে না। মুখে-মুখে মেসি আছেন, কিন্তু টিকিট কাউন্টারে ভিড় নেই। টিকিটের অগ্নিমূল্য অবশ্যই একটা কারণ। তবে বিশ্বকাপের সময় এই দেশে নীল-সাদা পতাকা নিয়ে যে উন্মাদনার ঢেউ বয়ে যায়, তা মনে রাখলে মাঠে গিয়ে আর্জেন্টিনাকে দেখার এই সুবর্ণ সুযোগটা হেলায় হারানোটা বিস্ময় জাগায় বৈকি!
কলকাতায় পুরো ম্যাচ রাজত্ব করেও গোল না পাওয়া মেসি ঢাকায় গোল পাবেন কি না—এর চেয়েও তাই বড় প্রশ্ন, স্টেডিয়াম পুরো ভরবে কি না। সল্টলেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনও পুরো ভরেনি। তবে তার পরও সেখানে ছিল ৮০ হাজার দর্শক। ২৪ হাজারি বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম না ভরলে মেসি কি আর বিশ্বাস করবেন, ঢাকাও কলকাতার তুলনায় একটুও কম মেসি-পূজারি নয়!
প্রস্তুতিতে এখন শেষ পোঁচ দেওয়ার সময়। ম্যাচ শুরুর আগে কাল বিকেলে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম যেন বিয়েবাড়ি। নিরাপত্তা মহড়া চলছে, গোলপোস্টে লাগানো হচ্ছে নতুন জাল, বাফুফে কর্তারা পা দিয়ে মাঠ দেখছেন, উৎসাহী দর্শকেরও অভাব নেই। এরই মধ্যে একই রকম জার্সি গায়ে এক দল প্রাণবন্ত কিশোর। তাদের মধ্যেও একজন ‘মেসি’ আছে!
বিশ্বের সব ফুটবল দলেই এখন একজন ‘মেসি’ থাকেন। দেখতে ছোটখাটো, ১০ নম্বর জার্সি, পায়ে একটু কারিকুরি—তিনটাই মিলে গেলে তো কথাই নেই, দুটি মিললেও কেউ না কেউ ‘গরিবের মেসি’র স্বীকৃতি পেয়ে যায়। বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৬ দলেও যেমন একজন ‘মেসি’ আছে। বিকেএসপির নবম শ্রেণীর ছাত্র সাব্বির। আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ম্যাচে বল-বয় হিসেবে কাজ করবে এই খুদে ফুটবলাররা। মেসিকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়ে রীতিমতো রোমাঞ্চিত কিশোরেরা সমস্বরে বলল, ‘আমাদেরও মেসি আছে। সাব্বিরকে আমরা মেসি বলেই ডাকি।’
এই ম্যাচ আরও অনেক কিশোর-তরুণের মনেই বুনে দেবে মেসি হওয়ার স্বপ্নের বীজ। এত টাকা খরচ করে এই ম্যাচ আয়োজনের সার্থকতা নিয়ে যাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, তাঁদের সেই প্রশ্নের এটিই একমাত্র জবাব নয়। এই ম্যাচের মাধ্যমে বিশ্বের অনেক দেশ প্রথমবারের মতো জানবে, বাংলাদেশে এমন ফুটবল মাঠ আছে, যেখানে আর্জেন্টিনার মতো দলও খেলে যায়!
মঙ্গলবারের পর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম আর আগের মতো থাকবে না। নতুন একটা গর্ব যে যোগ হবে—এখানে লিওনেল মেসি খেলে গেছেন!
আরও পড়ুন: মাটিতে নেমে আসা আকাশের তারা