আজ বিশ্বসেরার মুখোমুখি বাংলাদেশ
কার্ডিফ রূপকথা, রূপকথার কার্ডিফ-১
উৎপল শুভ্র
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১
এটা সেই সময়, যখন পরাজয় নিশ্চিত ধরে নিয়েই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামত বাকি দলগুলো। এটা সেই সময়, যখন বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলা মানেই নিশ্চিত জয়। ২০০৫ সালের ১৮ জুন কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে ত্রিদেশীয় ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির ম্যাচটি অনন্য এ কারণেই। যেদিন অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বাংলাদেশ লিখেছিল কার্ডিফ রূপকথা।
প্রথম প্রকাশ: ১৮ জুন ২০০৫। প্রথম আলো।
প্রথম ম্যাচটা ওভালেই খেলেছে বাংলাদেশ। তবে সত্যিকার ওভালের সঙ্গে পরিচয় হচ্ছে আজ। লন্ডনে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে পুরনো টেস্ট ভেন্যুটির নামই ওভাল। তবে নামে ওভাল না হোক, ‘ওভাল’ বলতে যা বোঝায়, কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন ঠিক সে রকমই ডিম্বাকৃতির। যেসব ব্যাটসম্যান ‘ভি’য়ের মধ্যে খেলার ব্যাটসম্যানশিপের আদি নীতিটা শিরোধার্য বলে মানেন, মাঠটি তাদের খুব পছন্দ হওয়ার কথা। উইকেটের আড়াআড়ি যতটা বড়, তাঁর তুলনায় লম্বালম্বি অনেক ছোট এই মাঠ। ম্যাথু হেইডেনের সোফিয়া গার্ডেন পছন্দ না হয়েই যায় না!
হাবিবুল বাশার অবশ্য মাঠের বর্ণনা শুনলেন এক সাংবাদিকের টেলিফোনে। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে খেলতে নামার আগে মাঠ দেখারই যে সুযোগ হয়নি তাঁর! ইংল্যান্ড সফরে অনেক জায়গাতেই সকালে পৌঁছে হোটেলে উঠতে দুপুর ২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে। বেশির ভাগ হোটেলেরই চেক আউট টাইম দুপুর ২টা, এ কারণে ডারহাম থেকে সকালে ওয়ারউইকশায়ারে পৌঁছে সরাসরি মাঠে চলে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। প্র্যাকটিস-ট্র্যাকটিস শেষ করে তাঁরপর হোটেলে! আগের দিন ম্যাচ খেলার পর আর এই অনিশ্চয়তায় ভুগতে চায়নি বলে লন্ডন থেকে বাংলাদেশ দল দুপুর ১২টায় রওনা হয়েছে ১৪০ মাইল দূরের কার্ডিফে। পৌঁছতে পৌঁছতে বিকেল। প্রথম ম্যাচে বাইরে থাকা চারজন ছাড়া আর কেউ প্র্যাকটিসও করেননি।
অস্ট্রেলিয়া অবশ্য সাতসকালেই মাঠে। টুর্নামেন্টে তাদের প্রথম ম্যাচ, তাঁর ওপর সফরের দুই ম্যাচে পরাজয়ের জ্বালা মিলিয়ে প্র্যাকটিসে খুবই সিরিয়াস দেখাল অস্ট্রেলিয়ানদের। হাবিবুল বাশার তাতে একটুও অবাক নন। অস্ট্রেলিয়াকে তিনি ভালোই চেনেন; চেনেন বলেই বলছেন, ‘ওই দুই ম্যাচে না হারলেও ওরা একই রকম সিরিয়াস থাকত। এ কারণেই দলটির নাম অস্ট্রেলিয়া।’
হাবিবুল বাশার প্রতিপক্ষ নিয়ে কথা না বলে বারবার শুধু বললেন, ‘কাদের সঙ্গে খেলা, এটা ভেবে লাভ নেই। আমরা নিজেদের নিয়েই ভাবছি। আমাদের যা করার কথা, তা করতে পারাটাই আমাদের লক্ষ্য থাকবে।’
টোয়েন্টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে পরাজয়কে হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিল অস্ট্রেলীয়রা। ৩৪২ রান করেও সমারসেটের কাছে হারার পর পন্টিং আর হাসতে পারেননি। অস্ট্রেলীয় অধিনায়কের মুখে তাঁর দলের খেলোয়াড়দের প্রকাশ্যে সমালোচনা শোনার বিরল অভিজ্ঞতাও হয়েছে সাংবাদিকদের। মাইকেল কাসপ্রোভিচকে সাংবাদিকদের সামনে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে কাল আড়ালেই থাকলেন পন্টিং। তবে গতকাল ‘দ্য অস্ট্রেলিয়ান’ পত্রিকায় ছাপা হওয়া কলাম অস্ট্রেলীয় অধিনায়কের চিন্তাভাবনাটা ঠিকই জানিয়ে দিচ্ছে। তাতে দুটি পরাজয়কে হালকা করে দেখাতে গিয়ে পন্টিং লিখেছেন, টোয়েন্টি টোয়েন্টি আর সমারসেটের ম্যাচ দুটিকে যারা ‘ট্যুর ওপেনার’ ভেবেছেন, তারা ভুল করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার কাছে সফর শুরু হচ্ছে আজ বাংলাদেশ ও আগামীকাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচের আগে যে প্রশ্নের উত্তর দিতে হওয়াটা অবধারিত, তাঁর উত্তরও আছে এই কলামে, ‘বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচগুলোর আগে আমরা কতটা একাগ্র, তা নিয়ে হয়তো প্রশ্ন উঠবে। তবে সাউথম্পটন ও টন্টনে আমরা যে রকম বাজে খেলেছি, সে রকম খেললে এই ম্যাচগুলোতে জোর লড়াই-ই হবে।’
শেষ বাক্যটা যে খেলোয়াড়দের অহমে ঘা দেওয়ার একটা চেষ্টা, তা না বললেও চলছে। আস্থার জায়গাটা যে এরপরই জানিয়েছেন পন্টিং, ‘আমাদের দলের সবচেয়ে বড় শক্তিগুলোর একটি হলো, নিজেদের পারফরম্যান্স নিয়ে খেলোয়াড়দের দারুণ গর্ব আছে। এ কারণেই একটা বাজে দিনের পরই আমি তাদের তুলাধোনা করতে চাই না। তবে সমারসেটের কাছে হারার পর আমার মনের কথাটা আমি লুকাইনি।’
আজকের ম্যাচে প্রতিপক্ষ কে—এটি তাই আসলে কোনো ব্যাপারই নয়। অস্ট্রেলিয়া আজ অস্ট্রেলিয়ার মতো খেলার প্রতিজ্ঞা নিয়েই মাঠে নামবে। বাংলাদেশও কিন্তু তা-ই নামছে! হাবিবুল বাশার প্রতিপক্ষ নিয়ে কথা না বলে বারবার শুধু বললেন, ‘কাদের সঙ্গে খেলা, এটা ভেবে লাভ নেই। আমরা নিজেদের নিয়েই ভাবছি। আমাদের যা করার কথা, তা করতে পারাটাই আমাদের লক্ষ্য থাকবে।’ যা করার কথা, কিন্তু করা যাচ্ছে না—এই তালিকায় প্রথমেই আছে বোলিং, তাঁরপর টপ অর্ডারের কারো লম্বা ইনিংস না খেলতে পারা।
গত ম্যাচের ১২ জনের দল অপরিবর্তিত রেখেছে বাংলাদেশ। খালেদ মাহমুদের জায়গায় মানজরুল ইসলামকে খেলানো হবে কি না, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ছিল শুধু এটাই।
কার্ডিফ রূপকথা, রূপকথার কার্ডিফ-২
কার্ডিফ রূপকথা, রূপকথার কার্ডিফ-৩
কার্ডিফ রূপকথা, রূপকথার কার্ডিফ-৪