উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা
আমিনুল-লিখনরা কি একই পথের যাত্রী?
উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা
শাওন শেখ শুভ
১০ এপ্রিল ২০২১
বাংলাদেশের ক্রিকেটে কান পাতলেই শোনা যায় লেগ স্পিনারের জন্য হাহাকার। অথচ লেগ স্পিনারের সন্ধানে দেশের ক্রিকেট যতটা মরিয়া, তাদের সুযোগ দেওয়ার বেলায় ঘরোয়া দলগুলো ততটাই উল্টোরথের যাত্রী। একটি ম্যাচ খেলার জন্য তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষায় থাকতে হয় লিখন-বিপ্লবদের।
২৫ অক্টোবর ২০১৪: সফরকারী জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় জুবায়ের হোসেন লিখনের। প্রথম দুই টেস্টে ৪ উইকেট নিলেও তৃতীয় টেস্টেই নিজের জাত চেনান লিখন। ইনিংসে ৫ উইকেটসহ ম্যাচে নেন ৭ উইকেট। তবে সব ছাপিয়ে লিখন হয়তো তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্ত বলে মানবেন ২০১৫ সালে ফতুল্লা টেস্টে গুগলিতে কোহলিকে বোল্ড করাকে। অমন ব্যাটসম্যানের উইকেট পাওয়া তো সব বোলারের জন্যই তো স্বপ্ন।অন্য দুই ফরম্যাটেও লিখনের অভিষেক ঘটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই। তিন ওয়ানডেতে ৪ উইকেট আর একমাত্র টি-২০তে ২ উইকেটের পরিসংখ্যান বলছে, তাঁর ক্যারিয়ারের শুরুটা নজরকাড়া না হলেও 'আশা জাগানিয়া'ই ছিল।
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯: আবারও প্রতিপক্ষ হয়ে আসে জিম্বাবুয়ে, আবারও দৃশ্যপটে আবির্ভাব আরেক লেগ স্পিনারের। এবার আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। অভিষেক ম্যাচে ১৮ রান খরচায় পেয়েছিলেন ২ উইকেট, এখন পর্যন্ত ৭টি-টোয়েন্টি খেলে পেয়েছেন ১০ উইকেট। ভারতের মাটিতে তাঁদেরই বিপক্ষে টি টোয়েন্টিতে করেছেন নজরকাড়া পারফরম্যান্স। নিয়ন্ত্রিত বোলিং আর মাথা খাটানোর মনোভাব আশা জাগিয়েছিল ক্রিকেট-ভক্তদের মনে। তবে ঘরোয়া লিগে দলে নিয়মিত জায়গা না পাওয়া, পরবর্তীতে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া, সবটা মিলে বিপ্লবের ক্যারিয়ারটা যেন লিখনেরই জেরক্স-কপি।
লেগ স্পিনারদের জন্য বাংলাদেশের হাহাকার দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসেছিলেন জুবায়ের হোসেন লিখন ও আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। তবে সে হাহাকার তাঁরা কতটকু দূর করতে পেরেছেন, কিংবা দূর করার জন্য কতটুকু সহযোগিতা তাঁরা পেয়েছেন, সেসব প্রশ্নই উঠেছে বারবার।
একজন লেগ স্পিনার যেমন ব্যয়বহুল হতে পারেন, আবার তিনি একাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে পাশের দেশ ভারতের লেগ স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহালকে স্মরণ করা যেতে পারে। টি টোয়েন্টিতে ৪৮ ম্যাচে ৮.৪ ইকোনমিতে উইকেট নিয়েছেন ৬২টি। ওয়ানডে ক্রিকেটে ৫৪ ম্যাচে ৫.২১ ইকোনমিতে ৯২ উইকেট। তুলনামূলকভাবে ইকোনমি রেট বেশি থাকলেও দলের প্রয়োজনে উইকেট এনে দিয়ে হয়ে উঠেছেন বিরাট কোহলির দলের অপরিহার্য এক সদস্য। গত পাঁচ বছরে ভারতের বোলিং পারফরম্যান্সের ইতিবাচক পরিবর্তনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এই লেগি।
আমলে নেয়া যেতে পারে আদিল রশিদকেও। বহুদিন ধরেই ইংল্যান্ড অধিনায়ক এউইন মরগানের তুরুপের তাস এই লেগি। ২০১৯ বিশ্বকাপে বল হাতে ইংল্যান্ডের ট্রফি জয়ে পালন করেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এমনকি সময়ের সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলির কাছে পর্যন্ত আদিল রশিদ এক রহস্যের নাম। এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোহলিকে নয় বার আউট করেছেন তিনি। সম্প্রতি শেষ হওয়া ভারত- ইংল্যান্ড সিরিজেও রাশিদকে খেলতে হিমশিম খেতে হয়েছে কোহলিকে।
অথচ ওয়ানডেতে আদিল রশিদের ইকোনমি রেট ৫.৬৬, যা নিঃসন্দেহে কিছুটা বেশি। কিন্তু তারপরও ইংল্যান্ড টিম ম্যানেজমেন্ট তাঁর ওপর আস্থা হারায়নি কখনোই। যার ফলে একদিনের ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়ে উঠেছেন এই লেগি।
কিন্তু লেগ স্পিনারদের নিয়ে এই ঝুঁকিটাই যেন নিতে চায় না বাংলাদেশ। 'খরুচে হবে' এই ভয়ে লেগ স্পিনারকে একাদশে সুযোগ দিতে চায় না ক্লাব কিংবা ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের বেশির ভাগ দল। বাংলাদেশের ক্রিকেটে কান পাতলেই শোনা যায় লেগ স্পিনারের জন্য হাহাকার। অথচ লেগ স্পিনারের সন্ধানে দেশের ক্রিকেট যতটা মরিয়া, তাদের সুযোগ দেওয়ার বেলায় ঘরোয়া দলগুলো ততটাই উল্টো রথের যাত্রী। একটি ম্যাচ খেলার জন্য তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষায় থাকতে হয় লিখন-বিপ্লবদের।
তাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের সাত বছর পরও একাডেমিতে ভর্তি হতে হয় জুবায়ের হোসেন লিখনের। ঘরোয়া ক্রিকেটে ম্যাচ খেলার সুযোগ না পেয়ে পেয়ে ক্লান্ত এই লেগ স্পিনার থাকেন নতুন শুরুর চেষ্টায়। বাংলাদেশ দলে একজন লেগ স্পিনারের শূন্যতা অনুভূত হচ্ছে সেই কবে থেকে। অথচ একজন লেগ স্পিনারের অন্তর্ভুক্তি বাধ্যতামূলক করার মতো নামমাত্র ও লোকদেখানো কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বিসিবি , যার ছিটেফোঁটাও বাস্তবায়ন হয়নি। তাই কবে এই শূন্যতা পূরণ হবে, সেটি নিশ্চিত করে বলার উপায় নেই। তবে খুব তাড়াতাড়িই যে এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।