উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা
জয়ের আত্মবিশ্বাস বনাম বিশ্বকাপ প্রস্তুতি
শাওন শেখ শুভ
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে ধুঁকতে থাকা দলটি যখন ঘরে-বাইরে মিলিয়ে টানা তিনটি সিরিজ জেতে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে আত্মবিশ্বাসে টইটুম্বুর একটি দলের নাম হওয়ার কথা `টিম বাংলাদেশ`। অথচ ঘটনা কি আসলেই তাই? খেলোয়াড় থেকে টিম ম্যানেজমেন্ট, সংবাদমাধ্যম থেকে সমর্থক, সবার মধ্যে উল্টো কোথায় যেন এক অজানা শঙ্কা। এ নিয়েই লিখেছেন এই পাঠক।
ঘরের মাঠে পর পর দুই সিরিজ জয়. তা-ও অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। যে দুই দলের বিপক্ষে এই ফরম্যাটে জয় পাওয়া ছিল সোনার হরিণ, তাদের বিপক্ষে এমন দাপুটে জয়ে নিঃসন্দেহে আত্মবিশ্বাসী করছে টাইগারদের।
তবে সামনে যেহেতু টি -টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, তাই শুধু আত্মবিশ্বাসই কি যথেষ্ট? নাকি আত্মবিশ্বাসের পাশাপাশি সঠিক প্রস্তুতি হওয়াটাও জরুরি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই!
তাই এতগুলো জয় পাওয়ার পরও বিস্তর আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে বিশ্বকাপের আগে এরকম উইকেটে খেলার যৌক্তিকতা নিয়ে। এই রকম উইকেটে খেলার পক্ষে যেমন অনেকেই সমর্থন দিয়েছেন, তেমনি বিপক্ষেও মতামত কম নেই।
এক পক্ষ মনে করছে, কেমন উইকেটে খেলা হচ্ছে, এটা বড় বিষয় নয়, বিশ্বকাপের আগে ম্যাচ জিতে আত্মবিশ্বাস অর্জন করাটাই গুরুত্বপূর্ণ। অন্য পক্ষের যুক্তি হলো, মন্থর ও টার্নিং উইকেটে খেলে বিশ্বকাপের জন্য আদর্শ প্রস্তুতি হয়নি বাংলাদেশের। প্রস্তুতিতে ঘাটতি থেকে গেছে অনেকটাই। এই রকম উইকেটে ম্যাচ খেলে গিয়ে বিশ্বকাপের স্পোর্টিং উইকেটে খেই হারিয়ে ফেলতে পারে বাংলাদেশ।
অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সিরিজ খুব সাদা চোখে বিশ্লেষণ করলেও দেখা যায়, বাংলাদেশের জয়গুলোর পিছনে বড় অবদান ছিলো বোলারদের। এই দুই সিরিজে মুস্তাফিজের নামের পাশে যোগ হয়েছে , ১৫ উইকেট। বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমদ পতন ঘটিয়েছেন ১৬ উইকেটের। পাশাপাশি সাকিব, মাহেদি, সাইফউদ্দিনরাও ভালো করেছেন। আর তাঁদের সফলতার পিছনে বড় নিয়ামক হিসাবে কাজ করেছে মিরপুরের মন্থর ও টার্নিং উইকেট। কন্ডিশনের সুবিধার কারণে ওভার প্রতি ছয় রানের উপরে গুনতে হয়নি কোনো বোলারকেই। কিন্তু বিশ্বকাপের উইকেটে এই ইকোনমি রেট ধরে রাখতে পারার কোনো সম্ভাবনাই নেই।সেখানে ওভার প্রতি সাত-আট রানের নিচে দেওয়াটাই হয়ে দাঁড়াবে বড় চ্যালেঞ্জ। আর ডেথ ওভারে ১০ রানের নিচে দিলেই সেটাকে ভালো ওভার বলে ধরা হবে।
যদিও নিউজিল্যান্ড সিরিজের শেষ ম্যাচে কিছুটা পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে বাংলাদেশের বোলারদের, কিন্তু এই এক ম্যাচের পরীক্ষা কতটুকু কাজে আসবে, তা বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সই হয়তো বলে দেবে!
স্লো পিচে বোলাররা নিজেদের কাজটা দক্ষতার সাথে সম্পাদন করতে পারলেও ব্যাটসম্যানরা পারেননি। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সিরিজের ১০ ম্যাচে মাত্র একটি অর্ধশতকের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসমানরা। ব্যাটসমানদের মধ্যে আফিফই ছিলেন কিছুটা সাবলীল। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসান এবং নাঈম শেখ বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ইনিংস ভালো খেললেও সে ব্যাটিংকে আত্মবিশ্বাসী ও ভয়ডরহীন ব্যাটিং বলার উপায় নেই।
যে কারণে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচে তুলনামূলক ব্যাটিং সহায়ক উইকেটেও ১৬২ রান তাড়া করতে পারেনি বাংলাদেশ। এমনকি সিরিজ নিশ্চিত করার ম্যাচে ৯৪ রানের জয়ের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নেমেও অনেকটা চাপেই পড়ে যায় দল, খেলা গড়ায় শেষ ওভার পর্যন্ত।
ওপেনার লিটন দাস দীর্ঘদিন ধরে রানখরায় ভুগছেন, একই কথা প্রযোজ্য মুশফিক-সাকিবের বেলাতেও। ব্যাট হাতে কেউই ভালো অবস্থায় নেই। তার ওপরে খেলতে হয়েছে স্লো-টার্নিং উইকেটে,যা মোটেই ব্যাটসমানদের ফর্মে ফিরতে সাহায্য করেনি। তাই আত্মবিশ্বাসের টোটকাটা কিন্তু ব্যাটসম্যানদের জন্য ঠিক কাজে লাগছে না। আর ব্যাটসম্যানদের এই ফর্মহীনতা ও আত্মবিশ্বাসহীনতার প্রভাব পড়তে পারে বিশ্বকাপ পারফরম্যান্সেও।
নিয়মিত জয়ের অভ্যাস দলের জন্য অবশ্যই জরুরি, পাশাপাশি ব্যাটসমানদের বড় ইনিংস খেলা, কঠিন পরিস্থিতিতে বোলারদের পারফর্ম করার অভ্যাসটাও জরুরি। তাই আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে ও নিয়মিত জেতার অভ্যাস তৈরি করতে আমারা যে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি ও বাস্তবায়ন করছি, তা হয়তো একটু বেশিই নগদ সাফল্যনির্ভর!
জিতলে আত্মবিশ্বাস বাড়বে, এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এই আত্মবিশ্বাসের সাথে যদি বিশ্বকাপ প্রস্তুতির একটা সমন্বয় করা যেত, হয়তো সেটাই হতো আদর্শ রেসিপি।