নেইমারের সফলতার ডানায় আরেকটি পালক গজানোর অপেক্ষায়

উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা

তাহমিদ নিশাত

৯ জুলাই ২০২১

নেইমারের সফলতার ডানায় আরেকটি পালক গজানোর অপেক্ষায়

২০০২ থেকে ব্রাজিল সমর্থন করে এই পাঠক আনন্দ কম পাননি, পাওয়া কষ্টের সংখ্যাও কম না। তবুও ব্রাজিলকেই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন এখনো। ১১ তারিখ সকালে অবশ্য আনন্দের সাক্ষীই হতে চান।

২০০২ সাল। ক্লাস টু বা থ্রিতে পড়ি। বাড়ির আঙিনায় বড়দের সাথে ফুটবল খেলতে খেলতেই ফুটবলের সাথে পরিচয়। এরই মাঝে বিশ্বকাপের উন্মাদনা শুরু। পছন্দের দল নিয়ে সবার মাতামাতি, আর তর্ক চলমান। ১৯৯৮ সালে ব্রাজিল ফুটবল দলের বীরত্বের কথা বড়দের মুখে মুখে। তা শুনতে শুনতেই কচি মনে আটকে যায় একটি নাম, ফুটবল মানেই ব্রাজিল!

তারপর তো ২০০২ সালের বিশ্বকাপ শুরু। ২০০২ সালের বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় সুবিধা ছিল, সেবারের আসর এশিয়াতে হওয়ায় সবগুলো ম্যাচ মোটামুটি দিনেই হয়েছিল। তাই সেই অল্প বয়সেই বেশির ভাগ ম্যাচ দেখতে তেমন সমস্যা হয়নি। সাদা-কালো (এলাকায় কাছাকাছি কোথাও কোন রঙিন টিভি ছিল না) টিভিতেই দেখলাম রোনালদো, রোনালদিনহো আর রিভালদোদের বিশ্বজয়। ২০০২ সালের বিশ্বকাপের প্রতিটা ম্যাচ মনে গেঁথে আছে। প্রথম ম্যাচে তুরস্কের হাকান সুকার তো প্রথমে গোল করে ব্রাজিলকে একাই কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। তারপর থেকেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল ব্রাজিল। তখন থেকেই বুঝে নিয়েছিলাম, এই দলটার প্রতি আস্থা রাখা যায়। ২০০২ সালের আরেকটি ম্যাচের কথা বিশেষ করে মনে আছে। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচটি। সে ম্যাচেও ১ গোলে পিছিয়ে থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল ব্রাজিল। আর সাথে মাঝমাঠের কাছাকাছি জায়গা থেকে রোনালদিনহোর গোলকিপারকে বোকা বানানো সেই ফ্রি-কিক। বলছিলাম না, সব কিছুই মনে এমনভাবে গেঁথে আছে যে, তা এখনো ভুলিনি।

সেবার আস্থার প্রতিদান খুব ভালোই দিয়েছিল ব্রাজিল। ফাইনালে কিভাবে জার্মানদের নিয়ে ছেলেখেলা খেলে কাপ ছিনিয়ে নিয়েছিল, তা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে রূপকথার গল্পও মনে হতে পারে।

২০০৬ সালের বিশ্বকাপ তেমন সুখকর ছিল না ব্রাজিল-ভক্তদের জন্য। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে ফেবারিট হয়েই দল বিশ্বকাপে গিয়েছিল সেবারও। কিন্তু জিদান ও থিয়েরি অঁরির ম্যাজিকের কাছে কোয়ার্টার ফাইনালেই ভেঙে যায় হেক্সা জয়ের স্বপ্ন। বড় বড় অনেক তারকার পতন দেখেছিলাম সে বিশ্বকাপে।

২০১০ বিশ্বকাপের উন্মাদনা ছিল সবচেয়ে বেশি। তখন তো বেশ ভালোমতোই বুঝতে শিখেছি ফুটবল। সদ্য এসএসসি পাশ করে খেলা দেখার জন্য অফুরন্ত সময় হাতে। এরই মাঝে কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য ঢাকায় আগমন। বড় পর্দায় প্রথম খেলা দেখা ঢাকাতে এসেই। সেবারও ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন কোয়ার্টার ফাইনালেই আটকে যায়। ব্রাজিল ফুটবলের নতুন রাজপুত্র রিকার্ডো কাকাও তখন অফ ফর্মে।

এর পরে আরও দুটো বিশ্বকাপ গেলেও ওই তিন বিশ্বকাপের মতো উন্মাদনা আর হয়নি। ২০১৪-তে যদিও বেশি আশাবাদী ছিলাম। ২০১৪-তে বেশি আশাবাদী হওয়ার কারনও ছিল বটে। ২০১৩ কনফেডারেশন কাপে নেইমারর নৈপুণ্যে উড়তে থাকা স্পেনকে মাটিতে নামিয়ে কাপ জিতে নিয়েছিল ব্রাজিল। উল্টো সেই আসরই ব্রাজিল সাপোর্টারদের ক্ষতের কারণ হয়ে আছে।

একবিংশ শতাব্দীতে ব্রাজিল দলের অনেকগুলো অর্জন থেকে সবচেয়ে বেশি সুখস্মৃতি বলতে ২০০২ সালের বিশ্বকাপ জয়, ২০১৩ সালের কনফেডারেশন কাপ জয়, আর ২০১৬ সালের অলিম্পিক জয়। এগুলোই সবচেয়ে আনন্দ দিয়েছে। আর ক্ষত বলতে ২০০৬ আর ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে পরাজয় এবং ২০১২ সালে অলিম্পিকে মেক্সিকোর কাছে পরাজয়।

এই হলো আমার এই পর্যন্ত ব্রাজিল সাপোর্ট করে সুখ-দুঃখের স্মৃতি। আশা করি সামনে আরও এমন বহু মুহূর্ত আসবে। খুশিতে মন ভরে উঠবে আবার হতাশায় ভেঙে পড়ব। তারপরও প্রতিবার নতুন আবেগ আর উন্মাদনায় সাপোর্ট করে যাব ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে সফল খেলোয়াড় তৈরির কারখানা প্রিয় ব্রাজিলকে।

আপাতত আশা করছি, ১১ তারিখ আরও একটি সুখ স্মৃতি উপহার দেবে ব্রাজিল। নেইমারের সফলতার ডানায় নতুন আরেকটি পালক গজাবে। শুভকামনা প্রিয় ব্রাজিল।

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×