গ্রান্দে ব্রাজিল!

উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা

তীর্থ বিশ্বাস

৯ জুলাই ২০২১

গ্রান্দে ব্রাজিল!

লেখক ব্রাজিলের প্রেমে পড়েছিলেন মাত্র ৬ বছর বয়সে। সেই ভালোবাসাটা অক্ষুণ্ণ আছে এখনো। বাবাও ছিলেন ব্রাজিলের পাঁচড় ভক্ত, এ কারণেই বোধ হয়।

ব্রাজিলকে পছন্দ করার শুরুটা সেই ছোট থেকে। যতদূর মনে পড়ে, আমার বয়স তখন ৬ বছর। আমাদের বাড়িতে তখন একটা সাদা-কালো টিভি, স্ব-জ্ঞানে প্রথম ব্রাজিলের ম্যাচ দেখি ওই ৬ বছর বয়সেই। ২০০৮ সাল তখন। সেই থেকেই কোনো এক অজানা কারণে ব্রাজিল ফুটবল দলকে ভালবেসে ফেললাম। তখন ব্রাজিলের ফুটবল সম্পর্কে বলতে গেলে কিছুই জানতাম না। আমার মনে আছে, আমি ওই ম্যাচের পরেই আমাদের বাড়ির বুক-শেলফ থেকে মোটা একটা বই বের করলাম। বইটার নাম ছিল বিশ্বকোষ না নতুন বিশ্ব ছিল, ঠিক মনে নেই এখন। তবে মায়ের কাভহে শুনেছিলাম, এই বইয়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন তথ্য, সাথে খেলাধুলারও অনেক তথ্য দেওয়া আছে। সেখানে পড়েও জানলাম, ব্রাজিলই একমাত্র দেশ, যারা পাঁচটি বিশ্বকাপ জিতেছে। গারিঞ্চা, পেলে, রোমারিও, রোনালদো….আরও অনেককে নিয়েই জানলাম। সেই থেকেই শুরু।

২০১০ এর বিশ্বকাপ ছিল আমার দেখা প্রথম বিশ্বকাপ। তখন আমার বয়স ৮। তখন কাকার খুব বড় ভক্ত আমি। এর আগের বছরই কাকা রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিয়েছেন। সেই থেকে ক্লাব হিসেবে রিয়াল মাদ্রিদও পছন্দের আমার। যাই হোক, মাকে বলে একটা ব্রাজিলের পতাকা বানালাম ওই বিশ্বকাপে। তখনো বাড়িতে সেই সাদা-কালো টিভিটাই, মাকে একদিন সাহস করে বললাম, 'মা বিশ্বকাপ আসতেছে, বাড়িতে একটা রঙিন টিভি কিনো।' আমাদের এলাকায় তখনো বৈদ্যুতিক সংযোগ আসেনি, ১২ ভোল্টের ব্যাটারিতে টিভি দেখা হত। ব্যাটারিতে চলে, এমন রঙিন টিভি পাওয়া তখন প্রায় অসম্ভব ছিল। বিশ্বকাপ শুরু হয়ে দুটা ম্যাচও হয়ে গেল, কিন্তু রঙিন টিভি আর কেনা হলো না। আমি রুমে বসে কান্নাকাটি করতাম। পরে দাদা অনেক খোঁজাখুঁজি করে ব্যাটারিতে চলে এমন টিভি কিনে আনলেন। ওইদিন এত খুশি হয়েছিলাম যে, বলে বোঝানো সম্ভব না। ওই বিশ্বকাপে মাইকনের প্রায় জিরো ডিগ্রি কোণ থেকে করা গোলটার পর আমি পাগলের মতো নেচেছিলাম। কোয়ার্টার ফাইনালে হল্যান্ডের সাথে ম্যাচে ব্রাজিল হারল, সাথে কাকাও লাল কার্ড দেখলেন। আমার মনে আছে, ম্যাচ শেষ হওয়ার সাথে সাথে আমি কারও সাথে একটা কথাও না বলে কাঁদতে কাঁদতে রুমে এসে শুয়ে পড়েছিলাম। রাতে খাইওনি ওইদিন। তখনই আসলে বুঝেছি, ব্রাজিল ফুটবল টিমকে কত ভালবাসি।

যাই হোক, তখন থেকেই আমার পেপার কাটিংয়ের শুরু। খবরের কাগজে ব্রাজিল এর কোনো খেলোয়াড়ের ছবি ছাপা হলেই সেটাকে কেটে আঠা দিয়ে দেয়ালে লাগিয়ে দিতাম। একটা সময় দেয়াল ভর্তি হয়ে গিয়েছিল ব্রাজিলের খেলোয়াড়দের ছবিতে। প্রায় ১১ বছর পার হয়ে গেল, এখনো সেই দেয়ালে কিছু ছবি আছে। এখন বাড়িতে নেই, থাকলে দেয়ালের ছবি তুলে দেখাতাম উৎপলশুভ্রডটকম-এর পাঠকদের।

২০১৩-তে কনফেডারেশনস কাপের সময় নেইমার উঠতি তারকা। রবিনহো-কাকাদের তখন বয়স হয়ে গেছে। তাঁদের জন্য বেশ মন খারাপ হতো। ওই কনফেডারেশনস কাপেই প্রথমবারের মতো ব্রাজিলকে কোনো আন্তর্জাতিক শিরোপা জিততে দেখলাম আমি। ২০১৪ ওয়ার্ল্ড কাপে জার্মানির সাথে ৭ গোলে হারার পর কেন যেন আমার একটুও কান্না পায় নাই। 'অধিক শোকে মানুষ হাসে'-- এ কারণেই বোধ হয়। তারপর তো ব্রাজিলকে অলিম্পিক, কোপা আমেরিকার শিরোপা জিততেও দেখলাম।

এখন আস্তে আস্তে বড় হচ্ছি, কিন্তু ব্রাজিল ফুটবল টিমের প্রতি সেই ভালবাসা একটুও বদলায় নাই। টিভির সামনে বসে 'ব্রাজিল, ব্রাজিল' বলে তারস্বরে চিৎকার করে আমি একটা স্বর্গীয় আনন্দ পাই। এখনও ব্রাজিলের ডি বক্সের কাছে বিপদজনক পজিশন থেকে কোনো ফ্রি কিক দেখি না। চোখ বন্ধ করে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি যাতে কোনো অঘটন না ঘটে।

মায়ের কাছে শুনেছি, বাবাও ব্রাজিলের অনেক বড় ভক্ত ছিলেন। ২০০৬ বিশ্বকাপে আমাদের বাড়ির সামনের দেয়ালে বড় করে ব্রাজিলের প্লেয়ারদের ছবি এঁকেছিলেন। হয়তো উত্তরাধিকার সূত্রেই ব্রাজিলের প্রতি এত ভালোবাসা জমা হয়েছে আমার। তবে আমার মা আর্জেন্টিনার সাপোর্টার। আমি ছোট থাকতে মাকে প্রশ্ন করতাম, ব্রাজিল এর মতো টিম থাকতে আর্জেন্টিনাকে কেন সাপোর্ট কর? আরও তাকে বোঝানোর চেষ্টা করতাম, কী কী কারণে ব্রাজিল সেরাদের সেরা।

তবে আমি যেমনটা ব্রাজিলের ফ্যান, তেমনটা 'ফুটবলেরও ফ্যান'। 'ফুটবলের ফ্যান' শব্দে আলাদা জোর দিলাম, কারণ এখন বেশির ভাগ মানুষকেই দেখা যায়, তারা যে দল সাপোর্ট করে, ওটা ছাড়া বাকি দলগুলোকে রীতিমতো অপমান করে। যেটার পক্ষে আমি নই।

আশা করছি, এবারের কোপায় সুন্দর একটা ফাইনাল হবে এবং শিরোপাটা ব্রাজিলেরই হবে।

গ্রান্দে ব্রাজিল!

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×