হঠাৎ `কোপা`!
উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা
আশিক আহমেদ রিয়ান
৮ জুলাই ২০২১
লড়াইটা আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের, আর সে দুই দলের সবচেয়ে বড় তারকা নেইমার-মেসি। `লড়াইয়ের ভেতর লড়াই` বলে যে একটা যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাব ফুটিয়ে তুলব, সে উপায়ও নেই। দুজনকে তো বন্ধু বললেও কম বলা হয়। মারাকানায় দুজন মুখোমুখি হবেন, কী হতে পারে তখন, সে দৃশ্যটাই আগে-ভাগে দেখে ফেলতে চেষ্টা করলেন এক পাঠক।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের `হঠাৎ দেখা` কবিতা অবলম্বনে ছন্দে ছন্দে লিখে পাঠিয়েছেন বলে যাকে কবিও বলা চলে।
মারাকানার মাঠেই হঠাৎ দেখা,
ভাবি নি সম্ভব হবে কোনোদিন।
আগে ওকে বারবার দেখেছি
বার্সেলোনার টিমে
দশ কি এগারো নম্বর জার্সিতে ;
আজ পরেছে উজ্জ্বল হলুদ কাপড়,
জার্সি নম্বর দশ,
চুল করেছে সাদা— হাস্যোজ্জ্বল মুখখানি ঘিরে।
মনে হল, হলুদ রঙে একটা গভীর দূরত্ব
ঘনিয়ে নিয়েছে নিজের চার দিকে,
যে দূরত্ব ন্যু-ক্যাম্পের শেষ সীমানায়-
মারাকানার সবুজ ঘাসে।
থমকে গেল আমার সমস্ত মনটা
চেনা লোককে দেখলেম অচেনার গাম্ভীর্যে।
হঠাৎ ফুটবলটা মাঠের বাইরে ফেলে দিয়ে
আমাকে ধরলে জড়িয়ে।
হাফ-টাইমের হুইসেল বেজে গেল,
আলাপ করলেম শুরু--
কেমন আছো , কেমন চলছে প্যারিসের সংসার
ইত্যাদি।
সে রইল ডি-বক্সের বাইরের দিকে চেয়ে
যেন কাছের দিনের ট্রফি জয়ের চাহনিতে।
আবারও হুইসেল বাজল।
দিলে অত্যন্ত ছোটো দুটো-একটা পাস,
কোনোটা বা দিলেই না।
বুঝিয়ে দিলে পায়ের অস্থিরতায় --
কেন এ-সব খেলা, অভিনয় খালি,
এর চেয়ে অনেক ভালো সাবস্টিটিউট নামিয়ে ফেলা।
আমি ছিলেম প্রতিপক্ষে
ওর সাথি ডি-মারিয়ার সঙ্গে।
এক সময়ে ড্রিবলিং করে বল নিয়ে গেল গোলপোস্টের কাছে।
মনে হল কম সাহস নয়;
মার্তিনেজকে হেল্প করলাম সেভ করতে কিন্তু হল না।
বাঁশির আওয়াজের আড়ালে
বললে মৃদুস্বরে,
" কিছু মনে কোরো না,
সময় কোথা সময় নষ্ট করবার।
তোমাকে অবসর নিতে হবে পরের ফিফাতেই;
আরও অনেক বছর খেলব আমি, বাড়ি যাবে তুমি,
দেখা হবে না আর কোনোদিনই।
তাই যে প্রশ্নটার জবাব এতকাল থেমে আছে,
শুনব তোমার মুখে।
সত্য করে বলবে তো?"
আমি বললেম, "বলব।"
বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়েই শুধোল,
"তোমাদের গেছে যে দিন
একেবারেই কি গেছে,
কিছুই কি নেই বাকি?"
একটুকু রইলেম চুপ করে, লজ্জায়;
তারপর বললেম,
" ইন্টারন্যাশনাল সব ট্রফিই আছে
ব্যালন ডি'অরের গভীরে।"
খটকা লাগল, কী জানি বানিয়ে বললেম না কি।
ও বললে, "থাক্, এখন যাও ও দিকে।"
ওরা সবাই উল্লাস করতে করতে শ্যাম্পেনে ভেজালো এই ট্রফিটাও ;
আমি চললেম খালি হাতে, একা।