একটা অক্রিকেটীয় লাথি কিংবা আমাদের ক্রিকেটীয় দৈন্য
উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা
মু শাহাদাত হোসাইন সোহাগ
১৪ জুন ২০২১
কখনো ক্যামেরার সামনে অশালীন অঙ্গভঙ্গি করে, কখনো বা দর্শক পিটিয়ে, কখনো পত্রিকায় কলাম লিখে--সাকিব আল হাসান বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন অনেকবারই। সর্বশেষ যেমন দিলেন আম্পায়ার এলবিডব্লিউর আবেদন নাকচ করলে স্টাম্পে লাথি মেরে। বারেবারে সাকিবই যে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু, এই দায় কি বিসিবিও এড়াতে পারে? বিসিবি কি সাকিবকে ঠিকঠাকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে? এক পাঠক লিখে পাঠালেন, পারছে না।
গত ক'দিন ধরেই কচকচানি চলছে বিষয়টি নিয়ে, কাগজ-অকাগজ (নেট) সবখানেই। ওসব থাক, সাকিব ‘হিরো’ আর বিসিবি ‘জিরো’ নাকি এর উল্টোটা, এসব নিয়ে আর কি লিখব, তাই একটু অন্যভাবে এগোই।
বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী ক্রীড়া বোর্ড বিসিবি অনেক বড় বড় কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। একজন তারকা প্লেয়ারকে কীভাবে হ্যান্ডেল করতে হয়, তা দেখার সময় কোথায়? বারবার সাকিবই যে এত বিতর্কে জড়াচ্ছেন, এটা কি শুধু তাঁরই সমস্যা? আন্তর্জাতিক তারকা বলে সে কি নিয়মের ঊর্ধ্বে? নাকি বিসিবির অবস্থা সেই বাবার মতো যিনি ধূমপায়ী বলে উঠতি বয়সী ছেলের সিগারেট খাওয়া নিয়ে কিছু বলতে পারছেন না! বিসিবির উচিত আগে সাকিবের সাথে সরাসরি কথা বলা, তাঁর ভবিষ্যৎ প্ল্যান জেনে নেওয়া এবং তারপর কাজ করা। তিনি কি চান, কত দিন খেলবেন, টেস্ট না ওয়ানডে বা টি২০ তাঁর কাছে অগ্রাধিকার পাবে--এসব জানা খুব জরুরি। সাকিবেরও উচিত এটা-সেটা, এখানে-সেখানে না বলে (এবং এটা সেটা না করে) সরাসরি বিসিবিকে তাঁর ক্যারিয়ার প্ল্যান জানানো। তবে তিনি যদি সবসময় এভাবে আলোচনায় থাকতে পছন্দ করেন, তবে ভিন্ন কথা। তাই বলে তাঁর বিতর্কিত কাজগুলো কোনোভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়, জনসমর্থন যতই তাঁর পক্ষে থাকুক না কেন।
আফসোস, ক্যারিয়ার জুড়েই নানা সময়ে নানা বিতর্কে জড়িয়ে না থেকে শুধু খেলা নিয়ে থাকলে বিশ্ব ক্রিকেট আরও সমৃদ্ধ হতো। ঠিকই পড়ছেন, শুধু তাঁর ক্যারিয়ারই নয়, বিশ্ব ক্রিকেটই আরও সমৃদ্ব হতো। সেরা অলরাউন্ডার হিসাবে তিনি সোবার্সের কাছাকাছি কি না, এই আলোচনা করি আমরা। কিন্তু সাকিব যদি সব বিতর্ককে পাশ কাটিয়ে চলতেন, তবে হয়তো আমরা বলতে পারতাম, অলরাউন্ডার হিসাবে শুধু সোবার্সই তাঁর কাছাকাছি আসতে পারেন। কিন্তু ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি একের পর এক বিতর্কে জড়িয়েছেন সাকিব।
এর দায় কি এড়াতে পারে বিসিবি? পারে না। শুরু থেকেই বিসিবি কঠোর হলে কি একের পর এক আচরণবিধি ভঙ্গের ঘটনা ঘটাতে পারেন সাকিব? কেউ কেউ বলছেন, লাথিটা সাকিব স্টাম্পেই মারেননি, সেটা তিনি মেরেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে অনিয়মের বিরুদ্ধেও। আর অনিয়ম দূর করার দায়িত্ব তো বিসিবিরই। মাঠে স্টাম্পে লাথি দিয়ে সাকিব তাই যত বড় অপরাধই করুন, আমরা তাঁকেই ‘হিরো’ বানাই। স্টাম্পে সাকিবের লাথি এবং এর আগে-পরের ঘটনা আমাদের ক্রিকেটের দৈন্যরই প্রকাশ করে। সাকিব কিংবা সাকিবদের সঠিকভাবে ব্যবহার না করতে পারায় বিশ্ব ক্রিকেটের যে ক্ষতি হয়েছে তার জন্য বিসিবির উচিত ক্রিকেট ভক্তদের কাছে ক্ষমা চাওয়া।
বিসিবির শুভবুদ্ধির উদয় হোক।