উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা
কুম্বলের দশে দশ লাইভ দেখেছি, অ্যাজাজ প্যাটেলের দশে দশও
শেখ মিনহাজ হোসেন
৪ ডিসেম্বর ২০২১
রিচার্ড স্টোকস বালক বয়সে ওল্ড ট্রাফোর্ডে জিম লেকারের কীর্তি দেখেছিলেন। বড় হয়ে ঘটনাচক্রে দেখেছেন দিল্লিতে অনিল কুম্বলের ইনিংসে ১০ উইকেট নেওয়াও। অ্যাজাজ প্যাটেল তাঁদের সঙ্গী হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, রাহুল দ্রাবিড় ও জাভাগাল শ্রীনাথও কুম্বলের টেস্টে যেমন ছিলেন, তেমনি অ্যাজাজ প্যাটেলের টেস্টেও। এই দুই কীর্তি টেলিভিশনে লাইভ দেখার উত্তেজনায় এক পাঠকের লেখা।
রিচার্ড স্টোকস এখনও জীবিত কি না জানি না। ১০ বছর বয়সে ১৯৫৬ সালে বাবার সাথে ছোট ছেলেটা অ্যাশেজের ওল্ড ট্রাফোর্ডে টেস্ট দেখতে গিয়েছিল। সেই টেস্টে জিম লেকার এমন এক কীর্তি করেছিলেন, যেটা সব বোলার-ব্যাটার মিলিয়ে এক টেস্টে কোন এক নির্দিষ্ট ক্রিকেটারের শ্রেষ্ঠতম কীর্তি!
হ্যাঁ, আপনি ব্রায়ান লারার ৪০০-এর কথা বলতে পারেন। সেই রেকর্ড ভাঙার সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন ওয়ার্নার-ক্লার্ক। ভাঙতে পারেননি। হয়তো কোনোদিন কেউ তা ভেঙেও দিতে পারেন। কিন্তু এক টেস্টে একজনের ১৯ উইকেট? সেটা যে শুধু একজন একক বোলারের কৃতিত্ব, তাই না, অন্য সব বোলারের ব্যর্থতাও বটে! টনি লক আর ইংল্যান্ড দলের অন্যান্য বোলারদের প্রতি জিম লেকার সম্ভবত মৃত্যুর পরের জীবনেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। টনি লক অন্যদিকে পুরো টেস্টে মাত্র ১ উইকেট না পেলে হয়তো লেকারের অবিশ্বাস্য ১৯ উইকেটের কীর্তি হয় না। লেকারও এভাবে ক্রিকেট ইতিহাসে অমর হয়ে যান না!
যাই হোক, রিচার্ড স্টোকসে ছিলাম। ১০ বছরের স্টোকস মাঠে বসে লেকারের ১০ উইকেটের কীর্তি দেখেছিলেন বাবার সাথে। এর ৪৩ বছর পরের কথা। ১৯৯৯ সালে ভারত-পাকিস্তান টেস্টের সময় রিচার্ড স্টোকস ব্যবসার কাজে দিল্লি গিয়েছিলেন। লাঞ্চের পরে টেস্ট ম্যাচ দেখতে মাঠে গেলেন। মাঠে বসে দেখলেন অনিল কুম্বলের ১০ উইকেট! হয়ে গেলেন মাঠে বসে জিম লেকার আর অনিল কুম্বলের ১০ উইকেট দেখা একমাত্র ব্যক্তি! বেঁচে থাকলে এখন রিচার্ড স্টোকসের বয়স হওয়ার কথা ৭৫। তবে তিনি যে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতে ছিলেন না, সেটা প্রায় নিশ্চিত।
অ্যাজাজ প্যাটেলের জন্ম মুম্বাইতেই। আট বছর বয়সে পরিবারের সাথে নিউজিল্যান্ডে গিয়েছেন। সেখানেই বেড়ে ওঠা। ৩০ জনের বিশাল পরিবারের সাথে একদিন ডিনার করছিলেন, সেখানেই শোনেন তিনি নিউজিল্যান্ড টেস্ট দলে সুযোগ পেয়েছেন। তখন কি ভাবতে পেরেছিলেন এমন এক অর্জন করবেন, যেই অর্জনটা প্রায় দেড় শ বছরের টেস্ট ইতিহাসে এর আগে মাত্র দুজনই করতে পেরেছেন!
মুম্বাইয়ে জন্ম নিয়ে সেই মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতেই ভারতের বিপক্ষেই ইনিংসে ১০ উইকেট! অভাবনীয়, অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয়! কে লিখেছিল অ্যাজাজ পাটেলের স্ক্রিপ্ট?
রিচার্ড স্টোকসে আবার ফিরে যাই, ভদ্রলোক মাঠে বসে প্রথম দুইটা কীর্তি দেখেছিলেন। রাহুল দ্রাবিড় সম্ভবত একমাত্র ব্যক্তি, যিনি দলের অংশ হয়ে এমন দুইটা কীর্তি দেখলেন। অনিল কুম্বলের সময়ে সতীর্থ ছিলেন, অ্যাজাজ প্যাটেলের সময়ে প্রতিপক্ষ কোচ। জাভাগাল শ্রীনাথের আবার কুম্বলের ১০ উইকেটে বেশ ভালো ভূমিকা ছিল। কুম্বলের ৮ উইকেট হয়ে যাওয়ার পর শ্রীনাথ ইচ্ছা করেই অনেক বাইরে বল করছিলেন যেন শেষ ২টা উইকেট কুম্বলেই পান। সেই শ্রীনাথ এই টেস্টের ম্যাচ রেফারি!
নিজের একটা ছোট আনন্দ সহভাগ করি। আমার মতো দর্শকদের জন্য টেলিভিশনই ভরসা! অনিল কুম্বলের দশ উইকেট লাইভ দেখেছিলাম, এবার অ্যাজাজ পাটেলেরটাও লাইভ দেখলাম! ৯ উইকেট পাওয়ার পর উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। সিরাজ যখন বলটা সুইপ করলেন, বলটা আকাশে উঠে গেল, আমিও লাফিয়ে উঠলাম। না, অ্যাজাজ পাটেল আমার এমন কোনো প্রিয় ক্রিকেটার নন। এটা দেড় শ বছরে মাত্রই তৃতীয়বার সৃষ্ট একটা মুহূর্ত দুবার টিভিতে লাইভ দেখতে পারবার আনন্দ, উত্তেজনা! আর টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা!
টেস্ট ক্রিকেটের কীর্তিগুলোর স্ক্রিপ্ট সম্ভবত বিধাতা লিখেন বলেই কিনা জানি না, টেস্ট ক্রিকেট বেঁচে আছে এই দ্রুত পরিবর্তনশীল সময়ে!