উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা
শেষ হইয়াও হইলো না শেষ
শাওন শেখ শুভ
১২ অক্টোবর ২০২১
ধোনি শেষ, ধোনি শেষ...রব উঠে যাওয়ায় এক পাঠক এ নিয়েই লিখেছিলেন মাত্র দুদিন আগে। পরের ম্যাচেই চেন্নাই সুপার কিংসকে কোয়ালিফায়ার জিতিয়ে ধোনি যখন বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁর গল্পটা এখনো শেষ হয়নি; ওই পাঠককে তাই আবারও লিখতে হলো ধোনিকে নিয়ে।
১৯তম ওভারের প্রথম বলে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে রুতুরাজ গায়কোয়াড় যখন ড্রেসিংরুমে ফিরলেন, তখনো জয়ের জন্য চেন্নাইয়ের দরকার ১১ বলে ২৩ রান।
কে আসবেন ক্রিজে? পুরো টুর্নামেন্টে ১৩ গড় আর ৯৫ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করা ব্যাটসমান, নাকি ৭৫ গড় আর ১৪৫ স্ট্রাইক রেটের ব্যাটসমান?
শতকরা ৯৯.৯৯ ভাগ দিনেই ৭৫ গড় নিয়ে পুরো টুর্নামেন্ট খেলা ব্যাটসমানই আসতেন। তবে ওই যে ০.০১ শতাংশের ফাঁক, সেটা গতকালের মতো দিনগুলোর জন্য। ক্রিজে তাই রবীন্দ্র জাদেজা নন, মহেন্দ্র সিং ধোনি।
বলতেই পারেন, এমন ঘটনা তো ২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনালেও দেখেছি। সেই যে ইন-ফর্ম যুবরাজ সিংকে নিচে ঠেলে ফাইনালে আগে নেমেছিলেন, যিনি কিনা ফাইনালের আগের ৮ ম্যাচ মিলিয়ে করেছিলে ১৫০ রান, সর্বোচ্চ ৩৪। সেখানে অপরাজিত ৯১ রান করে ভারতকে ২৮ বছর পর জিতিয়েছিলেন বিশ্বকাপ। গতকাল আগে নেমে যাওয়াটা ধোনির জন্য আর নতুন কী হলো!
হ্যাঁ, ঠিক নতুন হলো না। তবে দুটো ঘটনার সাথে মিল থাকলেও প্রেক্ষাপট কিন্তু মেলানো যাবে না। ২০১১ সালে ধোনির ফিনিশিং সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন ছিল না। ব্যাট হাতে ধোনি কতটা কী করতে পারেন, তা নিয়ে সংশয় ছিল না। কিন্তু পরিসংখ্যান আমলে নিলে এখন সংশয়-সন্দেহ করাও তো মোটেই অমূলক নয়। তবে বিশ্লেষকরা পরিসংখ্যানকে যতটা গুরুত্ব দেন, ধোনির কাছে হয়তো ততটা গুরুত্ব নাই কিংবা থাকলেও তা খেলা শুরুর আগ পর্যন্ত। ওহ! এখনও তো গত ম্যাচে ধোনি কী করেছেন, সেটাই বলা হলো না।
নিজের খেলা দ্বিতীয় বলে ছক্কা মেরে শুরু। শেষ ওভারে চেন্নাইয়ের সামনে সমীকরণ-- প্রথম সুযোগেই ফাইনালে উঠতে চেন্নাইয়ের ৬ বলে চাই ১৩ রান। কিন্তু টম কারেনের করা প্রথম বলেই লং লেগে রাবাদার হাতে ধরা পড়েন মঈন আলী (১৬)। তবে বল হাওয়ায় থাকতে থাকতেই প্রান্ত বদলে স্ট্রাইক এন্ডে চলে এসেছেন ধোনি। দ্বিতীয় বলে কারেনকে এক্সট্রা কাভার দিয়ে বাউন্ডারি। টিপিক্যাল ধোনি-ড্রাইভে। পরের বলে পেলেন ভাগ্যের সঙ্গ। বল ধোনির ব্যাটের কানায় লেগে কিপারের বাঁ পাশ দিয়ে আবার চার! সমীকরণটা নেমে এলো ৩ বলে ৫ রানে। পরের বলটা ওয়াইড দিয়ে বসেন কারেন। সমীকরণ তখন আরও সহজ ধোনিদের জন্য। একটা বাউন্ডারির অপেক্ষা ছিল তখন। আর ধোনি সেটাই করলেন! পরের বলে ডিপ স্কয়ার লেগ আর ডিপ মিড উইকেটের দিয়ে মারলেন চার। ফাইনালে চেন্নাই।
এত কিছু বললাম! তাতেও কি বোঝাতে পারলাম ধোনির এই ক্যামিওর গুরুত্ব? আপানদের বুঝতে কিছুটা হলেও সাহায্য করতে পারে গতকাল ম্যাচ শেষের টুইটগুলো।
ভারতীয় দলের বর্তমান ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলি থেকে শুরু করে দিল্লি ক্যাপিটালসের কোচ রিকি পন্টিং সবাই প্রশংসায় ভাসিয়েছেন ধোনিকে। কোহলির টুইটটা এমন, 'রাজা তাঁর সিংহাসনে ফিরেছেন। সর্বকালের সেরা ফিনিশার। তাঁর ব্যাটিং দেখে উত্তেজনায় চেয়ার ছেড়ে আবারও লাফিয়ে উঠলাম!'
ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপ তো অনেকটা সতর্ক করেই দিলেন সবাইকে! ধারাভাষ্যকক্ষে তাঁর দৃপ্ত উচ্চারণ, 'ধোনিই সেরা। কখনোই তাঁর সামর্থ্য নিয়ে সন্দেহ করবেন না'।
ম্যাচ শেষে দিল্লি ক্যাপিটালসের কোচ রিকি পন্টিং বলে দিলেন চূড়ান্ত কথাটা, 'যখন সে অবসর নেবে, তখন তাকে সর্বকালের অন্যতম সেরা ফিনিশার হিসেবেই ক্রিকেট বিশ্ব মনে রাখবে'।
কঠিন পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রেখে রান-বলের হিসাব মিলিয়ে দিয়ে ব্যাট নামক তলোয়ার হাতে দলকে জেতানো যার অভ্যাস, তাঁকে মানুষ নিশ্চয়ই স্মরণ করবে। তবে তিনিও হয়তো গতকাল আমাদের স্মরণ করিয়েই দিলেন যে, তাঁর সেই তলোয়ারে বয়সের কারণে কিছুটা মরচে ধরলেও এখনো তা অচল হয়ে যায়নি!