উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা

এখনো সুপার লিগ স্বপ্নে বিভোর লাপোর্তা

শাওন শেখ শুভ

৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

এখনো সুপার লিগ স্বপ্নে বিভোর লাপোর্তা

ইউরোপিয়ান সুপার লিগের পরিকল্পনা দমকা হাওয়ার বেগে এসে মিলিয়ে গিয়েছিল হাওয়াতেই। নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে ১২ দলের নয়টিই। কিন্তু যে তিন দল নাম প্রত্যাহার করেনি, তারা সুপার লিগ মাঠে নামাতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এখনো। নতুন করে দৃঢ়প্রত্যয়ই ব্যক্ত করলেন বার্সা সভাপতি হুয়ান লাপোর্তাও।

২০২১ সালের এপ্রিলে হুট করেই ঘোষণা আসে, ইউরোপের নামে-ধামে বড় ১২টা দল মাঠে নামাচ্ছে ইউরোপিয়ান সুপার লিগ। কিন্তু আলোচিত এ টু্র্নামেন্টের স্বপ্ন কয়েকদিনের মাঝেই ফিকে হয়ে আসে সমর্থকদের তীব্র অসন্তোষের কারণে। বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ ও জুভেন্টাস ছাড়া বাকি ন'টি ক্লাব নাম প্রত্যাহার করেও নেয়।

আর্সেনাল, চেলসি, লিভারপুল,ম্যানচেস্টার সিটি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, টটেনহ্যাম, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, এসি মিলান এবং ইন্টার মিলান; অর্থাৎ যে ক্লাবগুলো সুপার লিগে যোগ দিতে চেয়েও সরে গেছে, তারা পুনরায় ইউরোপিয়ান ক্লাব অ্যাসোসিয়েশনে (ইসিএ) যোগ দিয়েছে এরই মধ্যে। প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কর্তৃপক্ষ ছয়টি ইংলিশ ক্লাবকে মোট ২২ মিলিয়ন পাউন্ড জরিমানাও করেছে এই অপরাধে। যদিও শীর্ষ ক্লাবগুলোর কাছে এ জরিমানা তেমন কিছুই নয়, এর মাধ্যমে ওই 'বিগ সিক্স'-কে ফের সুপার লিগে যোগ দেওয়া থেকে বিরত রাখা সম্ভব নয় বলেও মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।

আর রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সালোনা, জুভেন্টাস তো সুপার লিগের পরিকল্পনা আঁকড়ে ধরেই বসে আছে এখনো। সুপার লিগের স্বপ্নে তাদের বিভোর হয়ে থাকার কারণটাও বোঝা যাচ্ছে স্পষ্ট। কোভিড-১৯-এর কারণে ইউরোপের শীর্ষ ক্লাবগুলো অর্থনৈতিকভাবে বেশ চাপে রয়েছে।

বার্সেলোনাই তো এর বড় উদাহরণ। প্রায় পুরো গ্রীষ্মজুড়েই নতুন খেলোয়াড় সই করাতে ঘাম ঝড়াতে হয়েছে তাদের। হারাতে হয়েছে দলের প্রাণভোমরা লিওনেল মেসিকেও। বার্সার মতো শীর্ষ ক্লাবগুলোকে তাই আয়ের অন্য উৎসের দিকে ঝুঁকতে হচ্ছে।

বর্তমান নিয়মানুযায়ী, উয়েফা টু্র্নামেন্ট থেকে অর্জিত আয় পরিচালনা কমিটি সব ক্লাবগুলোকে ভাগ করে দেয়। কিন্তু সুপার লিগের ক্লাবগুলো বিশ্বাস করে, যেহেতু মুনাফার সিংহভাগ তারাই অর্জন করে, সেহেতু ছোট ক্লাবগুলোর সাথে মুনাফার ভাগাভাগি না করে মুনাফার বেশির ভাগটা তাদেরই নেয়া উচিত। তাদের মতে, সুপার লিগের জমজমাট সূচি তাদের বাণিজ্যিক আকর্ষণ বৃদ্ধি করবে, পাশাপাশি আমেরিকা ও এশিয়ায় নতুন মার্কেট তৈরি করবে। তাই সব মিলিয়ে  ইউরোপীয় পর্যায়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ জাতীয় টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে যে পরিমাণ অর্থ আয় করতে পারে বড় ক্লাবগুলো, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি আয় হবে প্রস্তাবিত ইউরোপিয়ান সুপার লিগ থেকে।

আর সম্প্রতি সুপার লিগ প্রশ্নে অঁজে টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বার্সা প্রেসিডেন্ট হুয়ান লাপোর্তা তো বলেই দিয়েছেন সুপার লিগের আসল উদ্দেশ্য, 'সুপার লিগ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারলে এটা হবে পৃথিবীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় টুর্নামেন্ট। পাশাপাশি এ টুর্নামেন্ট আমাদের আর্থিকভাবেও অনেক সাহায্য করবে।'

যে কারণে এখনো ইসিএ'তে যোগ দেয়নি তারা। টলেনি উয়েফা কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি সত্ত্বেও। আর এই তিন ক্লাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষমতা আদৌ উয়েফার রয়েছে কি না, এ নিয়ে তো এখন আইনি লড়াইও চলছে দু'পক্ষে। ইউরোপিয়ান বিচারিক আদালত উয়েফার এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে তাদের এ টুর্নামেন্ট আয়োজনের অনুমতি দেবে, এ নিয়ে এখনও আশাবাদী ক্লাবগুলো।

লাপোর্তা যেমন জানাচ্ছেন, 'উয়েফা আমাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। আমরা আদালতের রায়ের অপেক্ষা করছি। আদালত এ প্রকল্প গ্রহণ করলে ইংলিশ ক্লাবগুলোর উপর যে অযথা চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে, সেটা কোনো কাজেই আসবে না তখন।'

আদালত এখন কোন পক্ষে রায় দেয়, সেটাই দেখার।

-​​​​​'দ্য অ্যাথলেটিক' অবলম্বনে

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×