উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা
কত `সংস্কার` মানে রে....
প্রান্ত দত্ত
৮ সেপ্টেম্বর ২০২১
ক্রিকেট খেলাটা তো খুবই সহজ। স্রেফ ভালো ব্যাটিং, ভালো বোলিং আর ভালো ফিল্ডিং করলেই চলে। কিন্তু এই সরল-সহজ কাজগুলো করতে গিয়েই দিনের পর দিন মাঠে খেটে মরতে হয় ক্রিকেটারদের। শুধু খাটলেও তো চলে না, অনেককে আশ্রয় নিতে হয় অনেক সংস্কারেরও। তাতে যদি ভালো খেলা যায়! এই লেখায় বিখ্যাত ক্রিকেটারদের তেমনই কিছু সংস্কারের গল্প।
যেকোনো একটা ক্রিকেট ম্যাচ কিভাবে জেতা যায়? ভালো ব্যাটিং, সেরা বোলিং, দুর্দান্ত ফিল্ডিং আর মাঠের বাইরে করা দলীয় পরিকল্পনার সার্থক প্রয়োগ...এই তো? কিছু একটা কি বাদ পড়ে গেল? ঠিকই ধরেছেন, ভাগ্যটা বাদ পড়েছে। সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে 'সৌভাগ্য'। যদিও ক্রিকেট বড়ই অনিশ্চয়তার খেলা, আজ যদি ভাগ্যদেবী সুপ্রসন্ন হয়ে হাসেন তো কাল হয়তো মুখ তুলে চেয়েও দেখবেন না। অনিশ্চয়তার এই খেলায় তাই সব যুগের খেলোয়াড়দের মধ্যেই জন্ম নিয়েছে অদ্ভুতুড়ে সব বিশ্বাস। অখ্যাত কিংবা স্বল্প পরিচিত থেকে শুরু করে বিখ্যাত সব খেলোয়াড়…কে নেই সেখানে!
শচীন টেন্ডুলকার: সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন, ক্রিকেট ঈশ্বর ব্যাট করতে নামার আগে সব সময় বাঁ পায়ের প্যাডটা আগে বাঁধতেন।
অনিল কুম্বলে: পাকিস্তানের বিপক্ষে দিল্লি টেস্টে কুম্বলে একাই নিয়েছিলেন দশ-দশটি উইকেট, এখানেও জড়িয়ে আছেন লিটল মাস্টার। ঐ ম্যাচে কুম্বলে প্রতিবার বোলিং শুরুর আগে আগে নিজের সোয়েটার আর টুপি খুলে শচীনের হাতে দিয়েছিলেন, আর শচীন সেগুলো তুলে দিয়েছেন আম্পায়ারের হাতে। ওই ওভারগুলোতেই অনিল কুম্বলে তুলে নিয়েছিলেন একেকটি করে উইকেট।
সুনীল গাভাস্কার: ব্যাটিংয়ে নেমে গার্ড নেওয়ার সময় ডান পা জায়গামতো রাখার আগেই সবসময় নিজের ব্যাটখানা মাটিতে ছোঁয়াতেন।
সৌরভ গাঙ্গুলী: ব্যাটিয়ের সময় নিজের গুরুর ছবি পকেটে রাখতেন কলকাতার মহারাজ।
সনাৎ জয়াসুরিয়া: ব্যাটিয়ের সময় পকেট হাতড়ে কিছু একটা খুঁজতেন।
মাহেলা জয়াবর্ধনে: ব্যাটিয়ের সময় নিজের ব্যাটে চুমু খেয়ে নিতেন সব সময়।
ইমরান খান: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ১৯৯২ বিশ্বকাপের সব ম্যাচে জার্সির ভেতরে বাঘের ছবিওয়ালা টি-শার্ট পরে খেলতে নেমেছিলেন।
স্টিভ ওয়াহ: ১৯৯৩ সালের এক ম্যাচে পকেটে দাদার দেয়া লাল রুমাল নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন, এরপর থেকে কোনো ম্যাচেই সেই রুমাল তাঁর পকেট ছাড়া হয়নি।
মাইকেল ক্লার্ক: ব্যাটিংয়ে নামার আগে উচ্চশব্দে গান শুনতেন।
জিওফ বয়কট: ব্যাটিংয়ে নামার আগে ড্রেসিংরুমে একাকী গভীর চিন্তায় আত্মমগ্ন হয়ে থাকতেন।
নিল ম্যাকেঞ্জি: বাংলাদেশের বিদায়ী ব্যাটিং কোচের বিশ্বাসটা ছিল একটু বেশিই অদ্ভুতুড়ে, কোনো এক ম্যাচের আগে সতীর্থরা খেয়ালের বশেই তাঁর ব্যাট দিয়ে ড্রেসিংরুমের ছাদে মৃদু আঘাত করেছিলেন। এরপর ম্যাকেঞ্জি ব্যাট করতে নেমেই পেয়ে যান সেঞ্চুরি। এরপর থেকে নিজে নিজেই ব্যাট দিয়ে ছাদে আঘাত করে ব্যাটিংয়ে নামতেন। শুধু তাই নয়, তাঁর ব্যাটিংয়ের সময় যেন ড্রেসিংরুম থেকে প্যাভিলিয়ন; সব টয়লেটের সিট নিচে নামিয়ে রাখা হয় এমন অদ্ভুত আবদারও করতেন এবং নিজে সবকিছু ঠিকঠাক তদারকি করে তবেই ব্যাটিংয়ে নামতেন।
জন জেমস ওয়ার: ১৯৫০-এর দিকের এই ইংলিশ বোলার যখনই উইকেটের জন্য মরিয়া হয়ে যেতেন, তখনই দৌড়াতেন প্যাভিলিয়নের দিকে। সেখানে রাখা একটা পুতুল কোয়ালা ভাল্লুকের পেটে হাত বুলিয়ে আসতেন। অবশ্য কোয়ালার পেট এই আদরে যে সন্তুষ্ট হয়নি, তা বলাই বাহুল্য। একেকটি উইকেটের বিনিময়ে ২৮১ রান গচ্চা দিয়ে ইংলিশ বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বাজে বোলিং গড় নিয়ে তাঁর ক্যারিয়ারের ইতি ঘটেছিল।