ফ্রম ফ্লোরিডা উইথ লাভ
আবু হায়াত রিয়াদ
৩০ মে ২০২১
ফ্লোরিডা থেকে এক পাঠকের চিঠি, যাতে তিনি লিখেছেন তাঁর আবেগের কথা। নিজে বয়সভিত্তিক জেলা ও বিভাগীয় দলে খেলেছেন। ক্রিকেট নিয়ে তাঁর আবেগ তাই অনুমেয়ই। উৎপলশুভ্রডটকম নিয়েও যা কম নয়।
আমি আপনার একজন অনেক পুরোনো ভক্ত, যে মোটামুটি আপনার কলম থেকে প্রসব হওয়া প্রতিটি লেখা একাধিকবার চেটেপুটে খেয়েছে এবং খেয়ে যেতেই পছন্দ করবে বাকি জীবন।
বাংলাদেশের ৭৫ পার্সেন্ট যুবকের মতো আমিও একজন প্রাক্তন ব্যর্থ ক্রিকেটার! কোন মাত্রার ব্যর্থ? হুমমম, ভালো প্রশ্ন। আমি তামিম ইকবালের প্রথম ওপেনিং পার্টনার। আমি অনূর্ধ্ব-১৭ পর্যন্ত জেলা এবং বিভাগীয় দলের অধিনায়কও ছিলাম এবং যেহেতু কেউ বলে দেয়নি কোন পথে গেলে ক্রিকেটার হওয়া যাবে, তাই হাল ছেড়ে ওই পাট চুকিয়ে দেশছাড়া আজ প্রায় ১১ বছর।
সম্পর্ক ছাড়িনি ক্রিকেটের সাথে। নিজের বাড়তি ইনকাম দিয়ে শুরুতে নিজের একাডেমিতে স্পনসর করতাম, এরপর চট্টগ্রাম বিভাগীয় দলের সাথেও কাজ করা হয়েছে, আমার ছোটখাটো একটা স্পোর্টস ব্যবসা আছে চট্টগ্রামে। নাম গুড বাই। আমরা গত তিন বছর ধরে বিপিএলে খুলনা টাইটানসের প্রকিউরমেন্টে পার্টনার।
বিশ্বাস করেন দাদা, এতো ফিরিস্তি দিতে চাইনি। শুধু পাগলের মতন বোঝাতে চেয়েছি, আমি ক্রিকেটকে ভালোবাসি! অনেকখানি।
একটা ঘটনা ঘটেছে আজকে, শেয়ার করার জন্য লিখতে বসলাম। কিংবা বলা চলে, ঘটনাটা ঘটার কারণেই লিখতে পারছি!
আমি ফোন থেকে বাংলা লেখায় তেমন পারদর্শী নই। বন্ধুর পরামর্শে একটা নোট সিরিজ কিনলাম, কিন্তু আমার লেখার স্পিড যে লাউ সেই কদু। লিখতে দেরি হয়ে যায় দেখে আমি কোথাও রিপ্লাই করি না। পারিবারিক কারণে আমি এমনিতেই স্বনামে ফেসবুকে নেই। লেখার ব্যাপারে বেশ একটা অনাগ্রহই চলে এসেছিল। আমি পেশায় ব্যাংকার, সারা দিন কম্পিউটারে খটমট এমনিতেই লেগে থাকে দিন-রাত। আলাদা করে কম্পিউটার নিয়ে বসে রং-ঢং করে, উপমায় ভাসিয়ে দিয়ে বাংলা লিখব, সেই বাস্তবতা আসলে আমার ছিল না। কিন্তু আপনি বাঁধিয়ে দিলেন হাঙ্গামা! আমার স্বপ্নের উৎপল শুভ্র পাঠকের এত কাছে চলে এলেন হঠাৎ করে, আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না আসলে। তিনি সাধারণ মানুষের মতন কথার জবাব দিচ্ছেন, পাঠকের মন্তব্য পড়ছেন। ভুল হলে ধরিয়ে দিচ্ছেন। বাস্তবতা এতখানিও সত্যি হয়!
আমি অফিস থেকে বের হয়ে সবার আগে একটা মিনি কম্পিউটার কিনেছি আজ। ২৬৭.৪৪ ডলার খরচও হলো, আমার যদিও ফুল সাইজের ল্যাপটপ আছে বাসায় একের অধিক। কিন্তু এই মিনি কম্পিউটারটা শুধু আপনার ওয়েবসাইটে লেখার জন্য কেনা। আপনার ক্ষমতা সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণাই নেই!
আপনি বলেছেন, আপনি ক্রীড়া সাংবাদিকতার কোর্স করাবেন ভবিষ্যতে। আমি তীর্থের কাকের মতন চেয়ে আছি, যেদিন ঘোষণা দেবেন, আমি সব ছেড়েছুড়ে বাংলাদেশ চলে আসব। আমি থাকি দাদা ফ্লোরিডা নামক ছাতার অঙ্গরাজ্যে। ভাল্লাগে না আমার এইসব দেশ, যেখানে খেলে না কেউ ক্রিকেট। আমার একটা সাত বছরের ছেলে আছে (ক্রিকেট প্রতিভা নাই তেমন একটা)। দাদা, আমি খুব চেষ্টা করছি ওর ভবিষ্যৎটা যত তাড়াতাড়ি পারি, যতখানি পারি নিশ্চিত করে দিতে আমার পক্ষ থেকে। এরপর আপনার বাসার কাজের লোককে ঘুষ দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিয়ে আমি ওই ব্যাটার চাকরিটা নিয়ে নেব। আমি সব কাজ করতে জানি দাদা।
আবোল-তাবোল কথাবার্তার মাঝখানে সত্যি কথা যেটা, আপনার কল্যাণে দুটো লাইন বাংলা লেখার স্পৃহা ফিরে এসেছে। সেটাই বা কম কি দাদা!
আপনার অনেক কাজ করে যাওয়া বাকি। সেদিন এক সাক্ষাৎকারে বেমক্কা বলে বসলেন, বয়সটা নাকি ৫৩ ছুঁয়েছে। বুকটা কেমন জানি করে উঠল। কেন বাড়ল বয়সটা? খেয়াল রাখতে পারেননি? আমার কাছে তো ৩০ বছরের ছুটে বেড়ানো টগবগে তরুণই রয়ে গেলেন। আমার সাথে আপনার দেখা হতেই হবে। ওটা ওপরওয়ালা লিখে রেখেছেন বলে আমার খুব একটা চিন্তা হয় না। একদিন হঠাৎ দেখবেন এসে পড়েছে ঘাড়ে সিন্দাবাদের ভূত। তদ্দিন অনেক অনেক ভালো থাকুন।