ইউরো-কোপার টানা চার ম্যাচ দেখার পর আবোলতাবোল
উৎপল শুভ্র
৩ জুলাই ২০২১
ইউরোর দুই কোয়ার্টার ফাইনালের পর কোপার দুই কোয়ার্টার ফাইনাল। মাঝখানে সব মিলিয়ে ঘণ্টাখানেক বিরতির কথা ভুলে গেলে প্রায় দশ ঘণ্টা ধরে টানা ফুটবল। যে কারণে এক ম্যাচে ঢুকে পড়ছে আরেক ম্যাচ, এক গোলের কথা ভাবতে গিয়ে চোখে ভেসে উঠছে অন্যটা। বিচিত্র সেই অভিজ্ঞতার কথাই এই লেখায়, যাতে ভুলভ্রান্তির জন্য আগেই ক্ষমার দরখাস্ত দিয়ে রাখতে হচ্ছে।
শুক্রবার রাত দশটা থেকে শনিবার সকাল ৮টা…কয় ঘণ্টা হয়? ১০ ঘণ্টা, তাই তো? ইউরোর দুটি ম্যাচের মধ্যে মিনিট দশ-পনের বিরতি ছিল। কোপার দুই ম্যাচের মধ্যে মনে হয় ৪০-৪৫ মিনিট। দুটি মিলিয়ে ঘণ্টাখানেক ধরে নেওয়া যায়। বাকি পুরোটা সময় ফুটবল আর ফুটবল...।
চারটি ম্যাচ, দুটি টাইব্রেকার, চারটি লাল কার্ড, ১২টি ‘স্বাভাবিক’ গোল…ব্রাজিল-চিলি ম্যাচশেষে এই লেখা লিখতে বসে মাথা চক্কর দিচ্ছে। এক ম্যাচের মধ্যে ঢুকে পড়ছে আরেক ম্যাচ, একটা গোল মনশ্চক্ষে দেখতে গিয়ে চোখের সামনে ভেসে উঠছে অন্য কোনো গোল, আবেগময় একটা দৃশ্য এসে ঢেকে দিচ্ছে আরেকটাকে…না, এমন অভিজ্ঞতা জীবনে এটাই প্রথম।
ইউরো আর কোপা একসঙ্গে চলছে তো সেই কবে থেকেই, তবে টানা চারটা ম্যাচ এর আগে আর দেখা হয়নি। কোপার প্রথম রাউন্ডে মূলত ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাতেই সীমাবদ্ধ ছিলাম, এর বাইরে কোন একটা ম্যাচের যেন মিনিট পনের-বিশ…এক রাতে টানা তিনটি ম্যাচ মনে হয় একবারই দেখেছি এর আগে। রাত-সকাল মিলিয়ে তিন ম্যাচ অবশ্য বেশ কয়েক দিনই, তবে দ্বিতীয় আর তৃতীয় ম্যাচের মাঝখানে তো ঘণ্টা তিনেকের বিরতি পড়েছে তাতে। প্রথম দুটিতেও বেশির ভাগ রাতেই ঘণ্টাখানেকের।
শুক্রবারের রাতে ইউরোর প্রথম কোয়ার্টার ফাইনাল টাইব্রেকারে গড়ানোয় ম্যাচ শেষ হওয়ার পর একটু আড়মোড়া ভাঙতে না ভাঙতেই শুরু হয়ে গেছে দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনাল। ভাগ্যিস্, কোপায় ফাইনালের আগে নকআউট পর্বে কোনো এক্সস্ট্রা টাইমের বালাই নেই। সরাসরি টাইব্রেকার। নইলে তো পেরু-প্যারাগুয়ে আর ব্রাজিল-চিলির মাঝখানেও ওই আড়মোড়া ভাঙার সময়টুকুই শুধু পাওয়া যেত।
অভূতপূর্ব এই অভিজ্ঞতা লিখতে শুরু করার আগেই ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করার জন্য আগাম দরখাস্ত দিয়ে রাখাটা তাই গালমন্দের হাত থেকে বাঁচার জন্য খুব জরুরি বলে মনে হচ্ছে। আগেই জানিয়ে রাখা ভালো, তথ্যবিভ্রাট হয়ে যেতে পারে। কেন, তা তো বুঝতেই পারছেন। না বুঝে থাকলে একটু বুঝিয়ে বলি। ওই টানা দশ ঘণ্টাই উৎপলশুভ্রডটকমের ফেসবুক পেজ আর গ্রুপে পোস্ট দিয়ে যাওয়ার সুবাদে বুঝতে পেরেছি, আমার মতো আরও অনেকেই চার ম্যাচ দেখে ঘুমাতে গেছেন। শেষ শব্দ দুটি একটু খেয়াল করতে বলি। আপনারা ঘুমাতে গেছেন, আর আমি লিখতে বসেছি। ফুটবল পরাশক্তি দুই মহাদেশের চার ম্যাচ টানা দেখে থাকলে আপনাদের মাথায়ও তা একটু জট পাকিয়ে গিয়ে থাকবে। কিন্তু আপনাদের তো আর তা নিয়ে লিখতে হচ্ছে না। আপনার মনে জেগে ওঠা প্রশ্নটা আমি পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছি-তুই-ও ঘুমিয়ে পড়্ না, কে তোকে লেখার দিব্বি দিয়েছে?
কেউই দেয়নি। এই লেখা কতজন পড়বেন, তা-ও জানি না। তবে অভিজ্ঞতাটা যেহেতু একেবারেই নতুন, ভাবলাম, তা একটু আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করি। তা শুরুটা কোত্থেকে করা যায়? এই ইউরোতে অপ্রতিরোধ্য এক রূপে আবির্ভূত ইতালির কাছে বেলজিয়ামের সোনালী প্রজন্মের আত্মসমর্পণ দিয়ে, নাকি টাটকা গল্পটাই আগে বলে নেব? ম্যাচের প্রায় অর্ধেকটা দশজন নিয়ে খেলেও ব্রাজিলের সেমিফাইনালে উঠে যাওয়ার গল্প!
হাই প্রোফাইল এই দুই ম্যাচের মাঝখানে স্যান্ডউইচে পরিণত পেরু-প্যারাগুয়েও তো দেখি দাবি জানিয়ে হাত তুলছে! নির্ধারিত ৯০ মিনিটে অনেক নাটকের পর ৩-৩, টাইব্রেকারে প্যারাগুয়ের ফুটবলারদের আক্ষরিক অর্থেই উচ্চাভিলাষের মূল্য দিয়ে পেরুর জয়…ম্যাচ তো মনে হয় এটাই সবচেয়ে ভালো হয়েছে! প্যারাগুয়ের ফুটবলারদের উচ্চাভিলাষ কথাটা কোন অর্থে বলেছি, খেলা দেখে থাকলে তা আর বুঝিয়ে বলার দরকার পড়ছে না। না দেখে থাকলে জানাই, টাইব্রেকারে পেরুর গোলকিপারকে তেমন কিছু করতে হয়নি শুধু এ কারণেই। প্যারাগুয়ের একাধিক (এই দেখুন, সুনির্দিষ্টভাবে সংখ্যাটা বলতে পারছি না) খেলোয়াড় বার উঁচিয়ে আকাশমুখী শট নিয়েছেন। তারপরও প্যারাগুয়ের গোলকিপারের কৃতিত্বে টাইব্রেকার পাঁচ শট শেষে ৩-৩ হয়ে ‘অকস্মাৎ মৃত্যু’ মানে সাডেন ডেথে গড়াল। সেখানে অবশ্য প্যারাগুয়ের 'সাডেন ডেথ'ই হলো। মানে প্রথম শটেই নিষ্পত্তি আর কি!
ইউরোর দুই ম্যাচশেষে ফেসবুক পেজে একটা ফান পোস্ট দিয়েছিলাম, ‘এরপর যারা পেরু-প্যারাগুয়ে ম্যাচটা যারা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মন দিয়ে দেখবেন, তারাই সত্যিকার ফুটবলপ্রেমী!!’ কমেন্ট বক্সে অনেকে পরদিন সকালে কাজে যেতে হবে, অথবা ব্রাজিলের ম্যাচের আগে একটু ঘুমিয়ে না নিয়ে আর পারছেন না জানিয়ে ম্যাচটা না দেখায় তাদের ফুটবলপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলায় আপত্তি তুলেছেন। আমি যেমন ফান করে পোস্টটা দিয়েছিলাম, এই কমেন্টগুলোও তেমনি হালকা চালে দেওয়া ধরে নিয়ে আমি তাতে মজাই পেয়েছি।
তবে যারা সত্যি সত্যি এই ম্যাচটাও দেখেছেন, তারা সাক্ষ্য দেবেন, পেরু-প্যারাগুয়ে ম্যাচটা আসলেই দারুণ হয়েছে। কোপা আমেরিকার অনেক স্বাতন্ত্র্যের মধ্যে বিতর্কিত রেফারিংও একটা অপরিহার্য অনুষঙ্গ হয়ে থাকে। এই ম্যাচেও তা ছিল। দুই দলের দুই জন লাল কার্ড দেখেছেন। দুটি লালই দ্বিতীয় হলুদ কার্ডের পরিণতি। দুটি লালের ক্ষেত্রেই রেফারিকে কারও কারও কাছে একটু বেশিই কড়া বলে মনে হওয়াটা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। তবে ইউরো নিয়ে আহা-উহু আর কোপা নিয়ে নাক সিটকানোর একটা ফ্যাশন যে খুব বাজার পেয়েছে, তাতে বেশ ধাক্কাই দিয়েছে এই ম্যাচটা। যা দেখতে দেখতে আমার শুধু মনে হচ্ছিল, এই ম্যাচটাতে যদি গ্যালারি ভর্তি দর্শক থাকত, তাহলে এটাকেও ইউরোর চেয়ে মোটেই কম রোমাঞ্চক মনে হতো না।
ইউরোপের ফুটবল বরাবরের মতোই অনেক বেশি গতিশীল, শৃঙ্খলাবদ্ধ; যেখানে লাতিন আমেরিকান ফুটবল এখনো আপাত আয়েশি ভঙির স্লো বিল্ড আপে বিশ্বাসী। যে কারণে ইউরোতে মুগ্ধ চোখের কোপায় ব্যাক পাসের আধিক্য দেখে বিরক্তি লাগা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
ইউরো আর কোপার পার্থক্য নিয়ে আলোচনা পরে কোনো একটা লেখার জন্য তুলে রাখাই ভালো। শুরুতেই তো বলে নিয়েছি, টানা খেলা দেখে মাথা চক্কর দিচ্ছে। এমন সিরিয়াস বিষয় নিয়ে আলোচনা করার মতো শারীরিক ও মানসিক অবস্থা এখন নয়। এই লেখাটা বরং এমন এলোমেলোই চলতে থাকুক।
তবে আজ শুধু এটুকু বলি, ফুটবলের বিশ্বায়নের ধাক্কায় বিভেদরেখাটা আগের মতো মোটা দাগের না হলেও দুই ঘরানার মধ্যে পার্থক্যটা কিন্তু এখনো বিদ্যমান। ইউরোর দুটি ম্যাচ দেখার পর কোপার দুটি--টানা চারটি ম্যাচ দেখার কারণেই হয়তো তা আরও বেশি চোখে পড়েছে। ইউরোপের ফুটবল বরাবরের মতোই অনেক বেশি গতিশীল, শৃঙ্খলাবদ্ধ; যেখানে লাতিন আমেরিকান ফুটবল এখনো আপাত আয়েশি ভঙির স্লো বিল্ড আপে বিশ্বাসী। যে কারণে ইউরোতে মুগ্ধ চোখের কোপায় ব্যাক পাসের আধিক্য দেখে বিরক্তি লাগা অস্বাভাবিক কিছু নয়। দর্শনাভূনতির যে পার্থক্য, তাতে মনে হয় টিভি প্রোডাকশনের মানেরও কিছুটা ভূমিকা আছে। ব্রাজিলের ম্যাচটা দেখে থাকলে নেইমার দারুণ এক ক্রসে ফিরমিনহোকে যে সুযোগটা করে দিয়েছিলেন, সেটির হাস্যকর রিপ্লে’টার কথা একটু মনে করার চেষ্টা করুন তো! চেষ্টা করার দরকার নেই, ওটা এমনিতেই মনে থাকার কথা। মনে থাকার কথা, কারণ ইউরোতে আপনি এমন কিছু কল্পনাই করতে পারবেন না। একবার নেইমার ফাস্ট ফরোয়ার্ডে ছুটে সামনে চলে আসছেন, এরপরই আবার পেছনে...বিটিভিতেও এখন যা বিরলদৃষ্টই।
ভিন্ন খেলার ধরন আর টিভি প্রোডাকশনের চেয়েও এবার ইউরো আর কোপাকে একেবারে আলাদা করে দিয়েছে একেবারে বিপরীত আবহ। যেটির মূল কারণ অবশ্যই দর্শক উপস্থিতি আর অনুপস্থিতি। মধ্যরাতে ইউরো আর শেষ রাত আর সাতসকালে কোপা দেখতে দেখতে আমার অবশ্য একটা কথা খুব মনে হলো। ইউরোর তীব্র গতি, তুমুল উত্তেজনার সঙ্গে মধ্যরাতটাই খুব ভালো যায়। যেমন ভোররাত আর মাত্র আলো ফুটতে থাকা সকালের সঙ্গে তুলনামূলক ধীর লয়ের কোপা। ওই যে একেক সময়ের জন্য একেক রাগ আছে না, ঠিক সেরকম।
এই দেখো, ইউরো আর কোপার তুলনামূলক আলোচনা পরে কখনো করব বলার পর এ নিয়েই কিনা কথা বলে যাচ্ছি! লেখাটা বরং শেষ করি। কিন্তু অনেক কথা যে এখনো বলার বাকি রয়ে গেল। ব্রাজিলের খেলা দেখতে দেখতে যে কথাটা বারবার মনে হলো, তা বলব না? কথাটা হলো, কথা না বলে উপলব্ধি বলাই ভালো, আর্জেন্টিনা যতটা মেসিসর্বস্ব দল, ব্রাজিল তার চেয়েও বেশি নেইমারসর্বস্ব। বেচারা নেইমারের অবস্থাটা এমনই যে, গোলের সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে, আবার পারলে সেই সুযোগ নিজেই কাজে লাগিয়ে গোলও করতে হবে।
ফেসবুকে পেজে একের পর এক পোস্ট দেওয়ার কথা বলছিলাম। এত দিয়েছি যে, সব এখন মনেও নেই। মোবাইল স্ক্রল করে দেখছি, সম্ভবত হাফ টাইমের সময় ব্রাজিলের গোল করার একটা তরিকা বাতলে দিয়েছিলাম। যদিও সেটির বাস্তবায়ন একটু কঠিনই বটে। কর্নার নেওয়ার পর নেইমারকেই দৌড়ে গিয়ে সেই কর্নার কিকে হেড করে গোল করতে হবে। নেইমারকে যেভাবে নেমে এসে খেলতে হয়, তা দেখতে দেখতে শুধু ভাবি, জাতীয় দলের জার্সিতে তাঁর যে দুর্দান্ত স্কোরিং রেকর্ড, চিরদিন ব্রাজিলের হলমার্ক হয়ে থাকা সৃষ্টিশীল মিডফিল্ডারদের অন্তত এক/দুজনকেও যদি পেছনে পেতেন, আরও কত গোলই না করতে পারতেন!
ইতালি-বেলজিয়াম একটু ছুঁয়ে গিয়েছিলাম। সোনার কাঠি-রুপোর কাঠি অদল বদল করে ঘুমন্ত ইতালিকে রবার্তো মানচিনির জাগিয়ে তোলা নিয়ে এরই মধ্যে অনেক কথা হয়েছে। তারপরও অপরাজিত থাকার ইতালিয়ান রেকর্ডটাকে টানা ৩২ ম্যাচে (বিশ্ব রেকর্ড ব্রাজিল ও স্পেনের ৩৫ ম্যাচ) তুলে নেওয়ার কথা তো মনে করিয়ে দিতেই হয়। এরই সূত্র ধরে আসে টানা ১৩তম জয়, যার ৫টি এই ইউরোতে, এর আগে কখনোই যা পারেনি ইতালি। ম্যাচটায় ফিরতে চাওয়ার এর চেয়েও বড় কারণ অবশ্য ইনসিনিয়ের ওই গোল।
উৎপলশুভ্রডটকমের ফেসবুক পেজেই মনে হয় কেউ গোলটা সম্পর্কে মন্তব্যটা করেছেন, 'এ যেন ডান পায়ের মেসি।' এর চেয়ে ভালো উপমা আর হয় না। প্রশংসা হিসেবেও মনে হয়, এর চেয়ে বড় কিছু হয় না। লুকাকুর পেনাল্টি গোলে প্রথমার্ধ ২-১ গোলে শেষ হওয়ার পর ম্যাচের পরের অর্ধেকটা খুব রোমাঞ্চকর কিছুর হাতছানি দিচ্ছিল। যতটা আশা ছিল, ততটা হয়নি। তবে ভাগ্য প্রসন্ন থাকলে লুকাকু সমতাসূচক গোলটাও হয়তো করে ফেলতে পারতেন। তাতে অবশ্য গোললাইন থেকে স্পিনাজোলার বলটা ফিরিয়ে দেওয়ার কৃতিত্বকে খাটো করা হয়। আহা, স্ট্রেচারে শুয়ে বেচারার কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়ার দৃশ্যটা বড় মর্মস্পর্শী। কাঁদারই কথা। যতটুকু জেনেছি, অ্যাকিলিস টেন্ডনের ইনজুরিতে তাঁর ইউরো এখানেই শেষ।
শেষ পর্যন্ত ম্যাচশেষেও প্রথমার্ধের স্কোরলাইনই, ইতালির পক্ষে ২-১। যেটিকে কেউই আনফেয়ার রেজাল্ট বলবে বলে মনে হয় না। র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর দল, সোনালি প্রজন্ম...কোনোটাই তো মিথ্যা নয়, তবে এটাও তো মিথ্যা নয় যে, এই রাতে বেলজিয়ামের চেয়ে শ্রেয়তর দল ছিল ইতালিই। সেমিফাইনালে যাদের সামনে পড়ে যাওয়াটা স্প্যানিশ শিবিরে মোটেই রোমাঞ্চকর কোনো অনুভূতি জাগানোর কথা নয়।
এই দ্যাখো কাণ্ড, পরের তিন ম্যাচ নিয়ে কথা আবোলতাবোল কথা বলতে বলতে প্রথম ম্যাচটার কথা কিনা বেমালুম ভুলেই গেছি! ওই যে বললাম, টানা চার ম্যাচ দেখার কারণে এক ম্যাচ এসে আরেকটাকে ঢেকে দিচ্ছে। কী কী যেন হয়েছিল এই ম্যাচে? হ্যাঁ, মনে পড়েছে। প্রথমেই মনে পড়েছে লাল কার্ডটা। শুরুতেই আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়ে শাকিরির কল্যাণে ১-১ করে ফেলার কিছুক্ষণ পরই সুইজারল্যান্ডের দশজনের দল হয়ে যাওয়াটাই কি স্পেনকে বাঁচিয়ে দিল? ওটাকে তো অবশ্যই টার্নিং পয়েন্ট বলে মানতে হবে। কিন্তু দশজন নিয়েও তো পরের পৌনে এক ঘণ্টা নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দিয়েছিল সুইজারল্যান্ড। ম্যাচটাকে টাইব্রেকারে নিয়ে যাওয়াটাকেই তো তখন মনে হচ্ছিল বড় জয় বলে। মানসিক অবস্থার দিক থেকে দুই দল যে ছিল দুই মেরুতে!
গত বিশ্বকাপে স্বাগতিক রাশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নিতে হয়েছে স্পেনকে। সাম্প্রতিক স্মৃতি তো আরও ভয়াবহ। সর্বশেষ পাঁচটি পেনাল্টিতে গোল করতে ব্যর্থ, যার দুটি আবার এই ইউরোতেই। যেখানে টাইব্রেকার সুইজারল্যান্ডের কাছে একেবারে তরতাজা সুখস্মৃতি। আগের ম্যাচেই পাঁচে-পাঁচ করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে বিদায় করে দিয়েছে। সেদিনের হিরো ইয়ান সমার এদিনও দুর্দান্ত, ম্যাচ টাইব্রেকারে নিয়ে যাওয়ার নায়ক।
কিন্তু সেদিন তো সমার টাইব্রেকারেও নায়ক হতে পেরেছিলেন সতীর্থদের অব্যর্থ লক্ষ্যভেদের কারণে। এদিন যে তাঁরাই ব্যর্থ! স্পেনের প্রথম শটটাই পোস্টে মেরে কী সুযোগটাই না করে দিয়েছিলেন বুসকেটস! তা নষ্ট করার পরও তো রদ্রির শট ঠেকিয়ে সমার বাঁচিয়ে রেখেছিলেন সুইজারল্যান্ডের প্রথম কোনো বড় টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্ন। এর আগে-পরে কী হলো...সুইজারল্যান্ডের কারা যেন মিস করলেন, আগের ম্যাচে ইউরোর ইতিহাসে সবচেয়ে হাস্যকর গোল খাওয়া স্প্যানিশ গোলকিপার উনাই সিমোন যেন কয়টা শট ঠেকালেন?
না, মনে করতে পারছি না। ওই টাইব্রেকারের পর আরও প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ফুটবল দেখার পর এটুকু যে মনে আছে, এটাই তো বেশি!