বাংলাদেশকে হকিতে মাতিয়ে তোলা সেই টুর্নামেন্ট

দুলাল মাহমুদ

৩০ জুন ২০২১

বাংলাদেশকে হকিতে মাতিয়ে তোলা সেই টুর্নামেন্ট

১৯৮৫ সালে বাংলাদেশে বসেছিল এশিয়া কাপ হকির আসর। এর আগে দেশে হকির জোয়ার সে অর্থে টের পাওয়া না গেলেও দশ দলের ওই টুর্নামেন্ট রীতিমতো জাগরণের সৃষ্টি করে। ফাইনালটাও হয়েছিল ফাইনালের মতোই, তখনকার দুই হকি পরাশক্তি পাকিস্তান আর ভারতের মধ্যকার ফাইনালে পাকিস্তান জেতে ৩-২ গোলে। `স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে খেলার ৫০` ধারাবাহিকের আজকের পর্বে থাকছে ১৯৮৫ এশিয়া কাপের গল্প।

দেশের মাটিতে আন্তর্জাতিক ক্রীড়ার আসর বসলে তার প্রভাব যে কতটা হতে পারে, সেবার তা অনুধাবন করা যায়। হকি বাংলাদেশে খুব বেশি জনপ্রিয় ছিল না। সীমিত পরিসরে আয়োজিত এ খেলাটি বলতে গেলে নির্দিষ্ট একটা গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ ছিল। কিন্তু ১৯৮৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় এশিয়া কাপ হকি সব হিসাব উল্টে-পাল্টে দেয়। বলা যায়, রীতিমতো একটা জাগরণের সৃষ্টি করে। সেই জাগরণের কারণে শহর তো বটেই, এমনকি প্রত্যন্ত এলাকায়ও হকি খেলা দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ে। কোথাও খোলা চত্বর পেলেই হলো, তাতেই চলত হকি খেলা। হকি স্টিক তো আর সহজলভ্য ছিল না, যে কারণে গাছের ডাল ভেঙে তা দিয়েই হকি খেলায় মেতে উঠতে দেখা যায়। মোদ্দা কথা, লাঠি জাতীয় কিছু একটা পেলেই হলো, সেটাকে হকি স্টিক বানিয়ে খেলতে আনন্দের কোনো কমতি হতো না। জনপ্রিয়তার তরঙ্গ কত দূর পৌঁছালে এমনটা সম্ভব হয়, সেটা সহজেই অনুধাবন করা যায়। তবে বিপরীত দৃষ্টিকোণ থেকেও বলা যেতে পারে, বাঙালির তো হুজুগে জাতি হিসেবে 'খ্যাতি' আছে। কোনো বিষয় পেলে কচলে কচলে তিতা না বানানো পর্যন্ত নিস্তার দেয় না। আবার হুজুগ কেটে গেলে ফিরেও তাকায় না। হকির ক্ষেত্রেও কি তেমনটা হয়েছে?

সে বছরের ২০-২৮ জানুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় এশিয়া কাপ হকি। কোনো একটি খেলায় পূর্ণাঙ্গ জাতীয় দল নিয়ে সেবারই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৪৫ লাখ টাকার এ টুর্নামেন্টে অংশ নেয় ১০টি দেশ। শেষ মুহূর্তে ওমান ও ম্যাকাও নাম প্রত্যাহার না করলে দলের সংখ্যা আরও বাড়ত।

এতগুলো দেশের জাতীয় দল নিয়ে একটি টুর্নামেন্ট আয়োজন বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে মাইলফলক হয়ে আছে। এখনও এতগুলো দেশের উপস্থিতিতে কোনো টুর্নামেন্ট আয়োজন করা মোটেও সহজ নয়। হকিতে তখন পাকিস্তান এবং ভারতের দুর্দান্ত ক্রেজ। উপমহাদেশের এই দু’দেশ একসঙ্গে খেললে সঞ্চার হতো তুমুল উত্তেজনার। বাংলাদেশেও তার প্রাবল্য দৃশ্যমান হয়। এই টুর্নামেন্ট নিয়ে দারুণভাবে সাড়া পড়ে যায়। তখনও আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার উপযোগী হকি স্টেডিয়াম ছিল না। অগতির গতি ঢাকা স্টেডিয়ামে আয়োজিত হয় মহাদেশীয় এ টুর্নামেন্ট। খেলা হয় ঘাসের মাঠে।

এশিয়া কাপে দর্শক সমাগম হয় ব্যাপক।
অতীতে গৌরব করার মতো সাফল্য না থাকলেও স্বাগতিক বাংলাদেশ দলকে নিয়ে বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। কোনো একটা ঘটনায় জাতীয় দলের দুই কোচ এহতেশাম সুলতান আর প্রতাপ শংকর হাজরা কোচিং করানো বন্ধ করে দেন। এ ঘটনায় প্রতাপ শংকরকে ১০ বছর এবং এহতেশাম সুলতানকে ৫ বছর সাসপেন্ড করা হয়। শেষ মুহূর্তে তাঁরা সরে দাঁড়ানোর কারণে সহকারী ম্যানেজার ও কোচের দায়িত্ব পালন করেন মো. মহসীন।

দলের অধিনায়ক করা হয় সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন শাহাবুদ্দিন চাকলাদারকে এবং দলের অন্য খেলোয়াড়রা হলেন সালাউদ্দিন চৌধুরী টিসা (সহ-অধিনায়ক), মো. ওসমান, ওয়ালিউল ইসলাম নাসিম, জুম্মন লুসাই, খাজা আরজু রিজওয়ান, জসিমউদ্দীন আহমেদ কাঞ্চন, জামিল পারভেজ লুলু, মো. আলমগীর চুন্নু, আবদুল মালেক চুন্নু, খাজা মো. ড্যানিয়েল, মো. বরকতউল্লা চপল, জাহাঙ্গীর আলম, কামরুল ইসলাম কিসমত, আবদুল্লাহ পিরু, মো. সহিদুল্লাহ। ম্যানেজার ছিলেন সাব্বির ইউসুফ।

দুই গ্রুপে খেলা হয়: ‘ক’ গ্রুপ- পাকিস্তান, জাপান, চীন, ইরান, বাংলাদেশ। ‘খ’ গ্রুপ- ভারত, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর।

সে সময় কোনো আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন করাই ছিল বড় ঘটনা। তখনকার প্রেক্ষাপটে এটি ছিল অনেক বড় আয়োজন। এ টুর্নামেন্টকে কেন্দ্র করে জমজমাট হয়ে ওঠে ঢাকার ক্রীড়াঙ্গন। প্রথম দিন থেকেই তা জমিয়ে তোলে স্বাগতিকরা। উদ্বোধনী ম্যাচে ইরানকে ৩-১ গোলে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। আর এই জয়ের নায়ক ছিলেন জুম্মন লুসাই। ফুলব্যাকের এই খেলোয়াড় হ্যাটট্রিক করার গৌরব অর্জন করেন। কোনো বিদেশি দলের পক্ষে এটি ছিল বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড়ের প্রথম হ্যাটট্রিক। অতীতে যেখানে এক ম্যাচেই হালি হালি গোল খাওয়ার নজির রয়েছে, সেখানে এমন কৃতিত্ব ছিল অভাবনীয়। এই জয় দর্শকদের ব্যাপকভাবে উজ্জীবিত করে।

বাংলাদেশ দল।
পরের ম্যাচে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী জাপানের সঙ্গে ড্র করাও ছিল বাংলাদেশের জন্য বড় একটি সাফল্য। খেলা শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগে পেনাল্টি স্ট্রোক থেকে গোল করেন জাপানের তাকামোরি। পেনাল্টি স্ট্রোকের প্রতিবাদে উত্তেজিত দর্শকরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে খেলা ১৮ মিনিট বন্ধ রাখতে হয়। পরিস্থিতি শান্ত হলে খুব দ্রুতই খেলায় সমতা ফেরান সালাউদ্দিন টিসা। চীনের সঙ্গেও ২-২ গোলে ড্র করে স্বাগতিকরা। ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়লেও হাল ছেড়ে না দিয়ে খেলায় সমতা নিয়ে আসেন নাসিম ও মালেক চুন্নু।  

ইরানকে হারানোর পর জাপান এবং চীনের সঙ্গে ড্র করার পর উদ্বেলিত হয়ে ওঠে পুরো দেশ। যে কারণে পরের ম্যাচে অলিম্পিক হকিতে চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানকে হারিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আশাবাদের সঞ্চার হয়। এ ম্যাচকে কেন্দ্র করে স্টেডিয়ামে দর্শকের ঢল নামে। হকি খেলা দেখার জন্য এত দর্শক সমাগম এর আগে কখনোই ঘটেনি। শক্তিশালী পাকিস্তানের বিপক্ষে উজ্জীবিত বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা নিজেদের নিংড়ে দিয়ে খেলেন। গড়ে তোলেন তীব্র প্রতিরোধ। প্রতিপক্ষকে একটুও ছাড় না দিয়ে সমানতালে লড়াই চালিয়ে যায় বাংলাদেশ। সালাউদ্দিন টিসা দুটি সহজ গোলের সুযোগ নষ্ট না করলে ইতিহাস গড়তে পারত বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের হাসান সরদারের গোলে ১-০ গোলে হারতে হয়। খেলা শেষ হওয়ার ৬ মিনিট আগে তিনি গোলটি করেন।

এই ম্যাচটি ১৯৭০ সালে এশিয়ান গেমস হকিতে সদ্য চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান দলের বিপক্ষে প্রদর্শনী ম্যাচে পূর্ব পাকিস্তান দলের প্রতিরোধকে স্মরণ করিয়ে দেয়। সেই ম্যাচেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে ১-০ গোলে হেরে গিয়েছিল আবদুস সাদেকের নেতৃত্বে স্বাগতিকরা।

বাংলাদেশ-ইরান ম্যাচে।
পাকিস্তানের সঙ্গে লড়াকু মেজাজে খেলে ক্লান্ত হয়ে যান খেলোয়াড়রা। ফলে স্থান নির্ধারণী ম্যাচটি মালয়েশিয়ার কাছে ৩-০ গোলে হেরে ষষ্ঠ হয় বাংলাদেশ। প্রথম সেমিফাইনালে ভারত ৯-১ গোলে জাপানকে এবং দ্বিতীয় সেমিফাইনালে পাকিস্তান ৭-০ গোলে দক্ষিণ কোরিয়াকে হারায়। দর্শকদের প্রত্যাশাকে সত্য করে দিয়ে ফাইনালে মুখোমুখি হয় পাকিস্তান এবং ভারত। এ টুর্নামেন্টে মূলত ১৯৮৪ সালে অলিম্পিক হকিতে চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান দলটি অংশ নেয়। আর ভারতীয় দলটিতে ছিলেন ১৯৮০ সালে অলিম্পিক হকি চ্যাম্পিয়ন দলের দুজন খেলোয়াড় মোহাম্মদ শহীদ ও সোমাইয়া। তবে ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় জাফর ইকবাল শেষ মুহূর্তে টুর্নামেন্ট থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন। এ ম্যাচ দেখার জন্য উপচে পড়ে ঢাকা স্টেডিয়াম। বিপুলসংখ্যক দর্শক কাঁটাতারের বেষ্টনি টপকে মাঠের পাশে বসে খেলা দেখেন। কোনো হকি ম্যাচে দর্শক উপস্থিতির দিক দিয়ে এটা ছিল একটা মাইলফলক।

১০০ মিনিটের ম্যাচটি ছিল তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, শ্বাসরুদ্ধকর ও নাটকীয়তায় পরিপূর্ণ। উপভোগ্যময় এই ম্যাচে যে কোনো দলই জয়ী হতে পারত। খেলার নির্ধারিত সময়ে প্রাধান্য ছিল ভারতের। তবে একের পর এক আক্রমণ গড়ে তুললেও গোল করায় দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেনি তারা। এ সময়ে ভারত ১৬টি পেনাল্টি কর্নার পায়। পাকিস্তান পায় ৬টি। ভারতের ক্রমাগত আক্রমণের মুখে পাকিস্তানের লেফট ব্যাক নাসির আলী, তিন হাফ ব্যাক আবদুল রশিদ, আয়াজ মাহমুদ ও নাঈম আখতার, আর ফরোয়ার্ড মুশতাক আহমেদ ও হানিফ খান দৃঢ়তার সঙ্গে দলের হাল ধরে রাখেন। অধিনায়ক হানিফ খান বারবার রক্ষণভাগে নেমে খেলেন, আবার আক্রমণ গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। হানিফ খান, হাসান সরদার, মুশতাক ও লেফট আউট খালিদ হামীদ নিজেদের মধ্যে সুন্দর আদান-প্রদান করে খেলতে থাকেন। গোলপোস্ট আগলে রাখার ব্যাপারে পাকিস্তানি গোলরক্ষক শহীদ আলী খান দক্ষতার ছাপ রাখেন। মাটিতে শুয়ে পড়ে যেভাবে ভারতীয় পেনাল্টি কর্নার ঠেকিয়েছেন, তা দর্শকদের আনন্দ দেয়।

বল নিয়ে এগোচ্ছেন পাকিস্তানের হাসান সরদার।
প্রথমার্ধের ৩১ মিনিটে হঠাৎ করে ডান দিক দিয়ে পাকিস্তান একটি আক্রমণ গড়ে তোলে। ভারতের অধিনায়ক সোমাইয়া তা ফ্রি হিটের মাধ্যমে রক্ষা করেন। পাকিস্তানের রাইট উইঙ্গার কলিমুল্লাহ খানের ফ্রি হিট থেকে ‘ডি’ এলাকার ভিতরে গড়ানো দুর্বল শটের সাহায্যে প্রথম গোল করেন হানিফ খান। এই গোলের পর পাকিস্তান রক্ষণাত্মক কৌশল গ্রহণ করলে ভারত গোল পরিশোধের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। খেলা শেষ হওয়ার ৫ মিনিট আগে ভারত গোল পরিশোধ করে। মোহাম্মদ শহীদ অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে মধ্যমাঠ থেকে আক্রমণ রচনা করে বাম প্রান্ত দিয়ে পাকিস্তানের বিপজ্জনক স্থানে ঢুকে পড়ে মোহাম্মদ নঈমের দিকে বল ঠেলে দেন। নঈম কালবিলম্ব না করে বল বোর্ডে পাঠান।

নির্ধারিত ৭০ মিনিটের খেলা ১-১ গোলে ড্র থাকার পর অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলা হয়। এরপর ভারত যেন খানিকটা স্তিমিত হয়ে যায়। অতিরিক্ত সময়ের ১৯ মিনিটে আয়াজের পাস থেকে মুশতাক একটি দর্শনীয় গোল করে পাকিস্তানকে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে নেন। ৪ মিনিট পর খেলায় সমতা আনে ভারত। সেন্টার হাফ হরদ্বীপ সিং তড়িৎ গতিতে ‘ডি’ জোনের মধ্যে ঢুকে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে গোল করেন। খেলা শেষ হওয়ার ৩ মিনিট আগে জয়সূচক গোল করেন কলিমুল্লাহ। একটি পেনাল্টি কর্নার থেকে এ গোলের সূচনা হয়। কলিমুল্লাহর ঠেলে দেওয়া বল হাসান সরদার গোলের দিকে স্কুপ করলে ভারতীয় রক্ষণভাগের একজন খেলোয়াড়ের স্টিকে লেগে উঁচু হয়ে গোলের কাছাকাছি চলে যায়। গোল মুখে দাঁড়ানো কলিমুল্লাহ প্রায় কাঁধের সমান উঁচু অবস্থায় বলকে ঠেলে জয়সূচক গোলটি করেন।

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের একটি মুহূর্ত।
জাপানি আম্পায়ার ইয়োশিমোতো উবুতা গোলের সিদ্ধান্ত দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভারতীয় খেলোয়াড়রা তাঁকে ঘিরে ধরেন। ‘বিপজ্জনক খেলা’র অভিযোগে গোল বাতিল করার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এক পর্যায়ে ভারতের একজন খেলোয়াড়ের স্টিকের আঘাতে আম্পায়ার আহত হলে তাঁকে স্ট্রেচারে মাঠের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। জাপানি আম্পায়ার আর খেলা পরিচালনা করতে পারেননি। তাঁর পরিবর্তে অতিরিক্ত আম্পায়ার খেলা পরিচালনা করেন। পাকিস্তানের তৃতীয় গোল হওয়ার পর কিছু দর্শক মাঠে ঢুকে পড়ে খেলোয়াড়দের জড়িয়ে ধরেন। সব মিলিয়ে গোল পরবর্তী ঘটনায় ৩৩ মিনিট খেলা বন্ধ থাকে। ভারতীয় খেলোয়াড়রা আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মাঠের ধারে বসে থাকা বিচারকদের কাছে বারবার আবেদন করে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে খেলায় অংশ নেন। শেষ তিন মিনিট খেলা হয় ফ্লাডলাইটের আলোয়। রোমাঞ্চকর ফাইনালে ভারতকে ৩-২ গোলে হারিয়ে শিরোপা অক্ষুণ্ন রাখে পাকিস্তান। এ ম্যাচে পাকিস্তানের কলিমুল্লাহ, হাসান সরদার, হানিফ খান, নাঈম আখতার, শহীদ খানরা চমৎকার খেলেন। ভারতের পক্ষে স্টিকের ঝলকানি দেখিয়েছেন মোহাম্মদ শহীদ, মোহাম্মদ নঈম, পরগত সিং, ভিনিত কুমার, হরদ্বীপ সিং, রাজেন্দর সিংরা।

হকির দুই পরাশক্তির লড়াই দর্শকদের বিমোহিত করে দেয়। ঢাকার মাঠে এমন একটি ম্যাচ দেখা ছিল স্বপ্নের মতো। পাকিস্তানের হকির ইতিহাসে অন্যতম সেরা তিন ফরোয়ার্ড ও অলিম্পিক স্বর্ণজয়ী খেলোয়াড় হাসান সরদার, কলিমুল্লাহ ও হানিফ খান এবং ভারতের অন্যতম সেরা অলিম্পিক স্বর্ণজয়ী দলের খেলোয়াড় শহীদ এবং নঈম পুরো টুর্নামেন্টে অসাধারণ খেলেন। বিশ্বখ্যাত এই খেলোয়াড়দের খেলা কাছ থেকে দেখতে পাওয়াটা কম আনন্দদায়ক ছিল না। টুর্নামেন্টে সর্বাধিক ১২টি গোল করেন মো. নঈম।

হকি খেলা যাঁরা বুঝতেন না, তাঁরাও দ্বিতীয় এশিয়া কাপ দেখার পর এই খেলাটির অনুরাগী হয়ে ওঠেন। সারা দেশে সৃষ্টি হয় তুমুল উদ্দীপনা। এই টুর্নামেন্ট যে মানুষের হৃদয়ে কতটা স্থান করে নেয়, তা এখন আর বোঝানো যাবে না। শহর এলাকায় তো বটেই, গ্রামে-গঞ্জের একদম প্রত্যন্ত এলাকায়ও হকি খেলতে দেখা যায়। তখনকার পরিস্থিতি এমন ছিল, মনে হতো বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হকি। এ কারণে সবার একটা ধারণা হয়েছিল, খেলাটি নিয়ে যখন এত ক্রেজ তৈরি হয়েছে, তখন নিশ্চয়ই জেগে ওঠবে এ দেশের হকি। কিন্তু নানা কারণেই হকির সেই জাগরণ বেশি দিন ধরে রাখা সম্ভব হয়নি।

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×