এত খেলা...কোনটা রেখে কোনটা দেখি!
মধু মাসে মধুর সমস্যা!
রিজওয়ান রেহমান সাদিদ
২ জুন ২০২১
আম-জাম-কাঁঠালে ভরপুর এ সময়টা বাংলায় পরিচিত মধু মাস নামেই। খেলাপ্রেমী মানুষের জন্যও এ মাসটা মধু মাসের মতোই, পুরো জুন মাসজুড়েই খেলা আর খেলা। খেলার এই রমরমা মৌসুমটাই অবশ্য ফেলে দিচ্ছে মধুর সমস্যায়, `কোনটা রেখে কোনটা দেখি` সংশয়ে। বিস্তারিত সূচি জানলে আপনারও এমন দশাই হবে।
রজার ফেডেরার ফিরেছেন। বলতে গেলে ২০২০ সালটা শুয়ে-বসেই কাটিয়েছেন, ২০২১ সালেও নেমেছেন মাত্র চতুর্থ ম্যাচ খেলতে। কিন্তু ম্যাচ প্র্যাকটিসের অভাবের সামান্যতম ছাপ না রেখে ফেডেরার খেললেন ফেডেরারের মতোই। আল্ট্রা-অ্যাটাকিং টেনিসের অনুপম প্রদর্শনীতে ডেনিস ইস্তোমিনকে হারিয়ে অনায়াসেই পৌঁছে গেলেন ফ্রেঞ্চ ওপেনের দ্বিতীয় রাউন্ডে। এবং এই জয়টাই আমাকে ফেলে দিলো উভয় সংকটে। এতদিন বাদে খেলায় ফেরার পরও কোনো আড়ষ্টতা নেই দেখে ফেডেরার-ভক্ত আমি কোথায় খুশি হব, কিন্তু আমাকে এখন ভাবতে হচ্ছে, 'এরপর কী হবে!'
বিড়ম্বনার কারণটা খুলেই বলা যাক। ৩০ মে শুরু হয়েছে ফ্রেঞ্চ ওপেন, চলবে ১৩ জুন পর্যন্ত। এদিকে ব্যাটে-বলের যে ধ্রুপদী লড়াই নিয়ে রোমান্টিসিজমে ভোগেন ক্রিকেটপ্রেমীরা, সেই ইংলিশ সামারও শুরু হয়ে গেল আজ ২ জুন থেকে। গোলার্ধের একই দিকটায় ইংল্যান্ড আর ফ্রান্সের অবস্থান বলে সময় নিয়ে সংঘাতটা অনিবার্যই এবং আমার সংকটটাও সে কারণেই। এমনও হতে পারে, যে সময়টায় ফেডেরার লড়ছেন ধুন্ধুমার এক ম্যাচে, জেমস অ্যান্ডারসন ঠিক একই সময়ে সুইংয়ের ছোবলে নাভিশ্বাস তুলছেন ব্যাটসম্যানদের। আমার মতো আপনাকেও তাই 'কোনটা রেখে কোনটা দেখি' ধন্দে পড়তে হতেই পারে।
আমার ক্ষেত্রে জয়টা সম্ভবত ক্রিকেটেরই হবে। বয়সটা ৩৯ ছুঁইছুঁই, ক্যারিয়ারে দেখে ফেলেছেন ১৯টি বসন্ত। পেসার হয়েও জেমস অ্যান্ডারসন এখনো যে খেলে যাচ্ছেন, সেটাই আশ্চর্য। এ বছরেরই নভেম্বর-ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় বসবে অ্যাশেজ। সেই সিরিজ দিয়েই যদি বিদায় বলার কথা ভেবে রেখে থাকেন তিনি, তো ইংলিশ গ্রীষ্মে মেঘলা আকাশের নিচে ডিউক বল হাতে ছুটে আসা অ্যান্ডারসনকে শেষবার দেখার সুযোগ মিলবে এবারই। লাল চেরিটা যাঁর হাত থেকে বেরোয় কবিতা হয়ে, তাঁর ক্যারিয়ারের এই শেষ লগ্নে উপস্থিত থাকার সুযোগটা হাতছাড়া করব কেন!
আর অ্যান্ডারসনে আপনার অরুচি, তা-ও যে একটু জিরোবেন, এরও কোনো জায়গা রাখেনি ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড। যে সূচি বানিয়েছেন আয়োজকরা, তাতে তো শুরুর আগেই জিবে জল আসার যোগাড়। লর্ডসে ঘণ্টা বাজিয়ে শুরুটা হচ্ছে ইংল্যান্ড আর নিউজিল্যান্ডের দুই টেস্টের সিরিজ দিয়ে। এই সিরিজ চলাকালীনই রানির দেশে পৌঁছে যাবেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ টেস্টের সিরিজ খেলবে ভারত, তবে এর আগে নিজেদের ৯০ বছরের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নিরপেক্ষ ভেন্যুতে টেস্টও খেলবে। প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড, উপলক্ষ ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল। বিশ দিন টাইম ফ্রেমে মুখোমুখি 'ফ্যাব ফোর'-এর তিনজন, ক্রিকেট দর্শকদের জন্য এমন রোমাঞ্চকর সময় আর এসেছে কি না সন্দেহ।
ক্রিকেট উৎসব চলবে ইংল্যান্ডের বাইরেও। ইংলিশ সামার শুরুর ঘণ্টা দেড়েক আগেই উটরেখটে শুরু হয়ে যাবে আয়ারল্যান্ড-নেদারল্যান্ডের তিন ওয়ানডের লড়াই। ঠিক আছে, বড় কিছু না ঘটে না গেলে এটার খোঁজখবর না হয় না-ই রাখলাম। তাতেই কি, ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ডের মধ্যে দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হচ্ছে ১০ জুন থেকে, একই দিন মাঠে নেমে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা আর ওয়েস্ট ইন্ডিজও। দুই টেস্ট আর পাঁচ টি-টোয়েন্টির সিরিজের পাঁচটি ম্যাচই এই জুনে। ইংল্যান্ডের ঘরোয়া টি-২০ লিগ 'টি-২০ ব্লাস্ট'ও শুরু হচ্ছে ৯ জুন থেকে, স্থগিত হয়ে যাওয়া পাকিস্তান সুপার লিগের জন্যেও সময় খোঁজা হচ্ছে জুনেরই এক ফাঁকে।
ফ্রেঞ্চ ওপেন ১৩ তারিখে শেষ হয়ে গেলেই যে খানিকটা দম নেবেন, সেই ফুরসৎ-ও তো নেই। ইউরো শুরু হয়ে যাচ্ছে আগের রাতেই।রোনালদো-গ্রিজমান-এমবাপ্পেরা নেমে যাবেন আপনাকে ফুটবল জাদুতে মোহিত করতে। ১২ জুন থেকে ইউরোপের ১১টি শহরে এই ফুটবল মহোৎসব শুরু হয়ে চলবে ১২ জুলাই অব্দি।
জাদুর কথা যদি বলা হয়, তো সেটা তো লাতিন ফুটবলারদের পায়েই দেখা যেত এক কালে। সেই নান্দনিকতা গত হয়েছে বেশ কিছু দিন হলো, এখন যেন মারদাঙ্গা ফুটবলেই ভরসা খোঁজে লাতিন দলগুলো। তবে, মেসি-নেইমারের মতো ফুটবল জাদুকরেরা এখনো খেলেন বলে যেকোনো মুহূর্তেই মন রাঙিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে লাতিন ফুটবল। দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের মঞ্চ কোপা আমেরিকা মাঠে গড়ানোর কথা ১৪ জুন থেকে, করোনা ভাইরাসের কারণে যা স্থগিত হয়ে গিয়েছিল গত বছর। তবে, দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবলের সোনালি দিন অতীত হওয়ার পেছনে প্রশাসনের অব্যবস্থাপনাও যে কম দায়ী নয়, তা বোঝা যাচ্ছে কোপা আমেরিকা আয়োজন নিয়ে হাজারো নাটক দেখেই। শুরুতে আর্জেন্টিনা এবং কলম্বিয়ায় আয়োজনের কথা থাকলেও কলম্বিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা আর আর্জেন্টিনায় করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়াতে টুর্নামেন্ট সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ব্রাজিলে। অথচ, ব্রাজিলেও করোনা পরিস্থিতি ভালো নয় তেমন, তুলনা টানতে বসলে আর্জেন্টিনার চাইতে খারাপই বলতে হবে। তাই, ফুটবলটা ব্রাজিলিয়ানদের কাছে ধর্ম হলেও এই ক্রান্তিকালীন সময়ে কোপা আমেরিকা আয়োজনের পেছনের কারণ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে খোদ ব্রাজিলেই।
তবুও কনমেবল ১৪ জুন থেকে কোপা আমেরিকা শুরু করে দেবে বলেই জানিয়েছে। প্রথম ম্যাচেই মুখোমুখি আর্জেন্টিনা-চিলি, মাঠের বাইরের সমস্ত অব্যবস্থাপনা লিওনেল মেসি উড়িয়ে দেবেন এক লহমায়, এই ভরসাতেই হয়তো।
ফ্রেঞ্চ ওপেন শুরু হয়ে যায় বেলা তিনটা বাজতেই, এর এক ঘণ্টা পর থেকেই পুড়তে হবে ইংলিশ গ্রীষ্মের জ্বরে। রাত তিনটা পর্যন্ত চলবে ইউরোর ১৬তম আসর, ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে গড়ালে তা না দেখেই চ্যানেল বদলাতে হবে কোপা আমেরিকার দর্শক হতে চাইলে।
ভাগ্যিস, এই অঞ্চলটায় গলফ, সাইক্লিং কিংবা আইস হকির মতো খেলাধুলা জনপ্রিয়তা পায়নি খুব একটা। স্ট্যানলি কাপ, ইউএস ওপেন, ট্যুর ডি ফ্রান্স--জাগতিক কাজকর্ম বাদই দিন, দু'চোখের পাতা এক করারই তো সুযোগ থাকত না তখন!
এক নজরে জুনের ক্রীড়াসূচি:
★ এনবিএ প্লে-অফ: ২০ মে-জুলাই*।
★ ফ্রেঞ্চ ওপেন: ৩০ মে-১৩ জুন।
★ ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড প্রথম টেস্ট: ২ জুন-৬ জুন।
★ আয়ারল্যান্ড-নেদারল্যান্ড ওয়ানডে সিরিজ: ২ জুন-৭ জুন।
★ টি-২০ ব্লাস্ট: ৯ জুন-১৮ সেপ্টেম্বর।
★ ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্ট: ১০ জুন-১৪ জুন।
★ ওয়েস্ট ইন্ডিজ- দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম টেস্ট: ১০ জুন-১৪ জুন।
★ ইউরো: ১২ জুন-১২ জুলাই।
★ কোপা আমেরিকা: ১৪ জুন-১১ জুলাই।
★ ইউএস ওপেন গলফ: ১৭ জুন-২০ জুন।
★ ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল: ১৮ জুন-২২ জুন।
★ ওয়েস্ট ইন্ডিজ- দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় টেস্ট: ১৮ জুন-২২ জুন।
★ ইংল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা টি-২০ সিরিজ: ২৩ জুন-২৬ জুন।
★ ট্যুর ডি ফ্রান্স: ২৬ জুন-১৮ জুলাই।
★ ওয়েস্ট ইন্ডিজ-দক্ষিণ আফ্রিকা টি-২০ সিরিজ: ২৭ জুন-৪ জুলাই।
★ ইংল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা ওয়ানডে সিরিজ: ২৯ জুন-৪ জুলাই।
*(ফাইনালের তারিখ অনির্ধারিত)
**(বাংলাদেশের সময় অনুযায়ী)