একজন সাকিব আল হাসান
দুলাল মাহমুদ
১১ নভেম্বর ২০২১
বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রীড়াবিদ বেছে নিতে গেলে তাঁর নামটাই সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়। ক্রিকেটার হিসেবে নিজেকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন যে, বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে তা পেয়ে গেছে আন্তর্জাতিক মাত্রা। `স্বাধীনতার ৫০ বছরে খেলার ৫০` ধারাবাহিকের আজকের পর্বে সাকিব আল হাসান।
We remember not the scores and the results in after years; it is the men who remain in our minds, in our imagination.
লিখেছিলেন ক্রিকেট সাহিত্যের রোমান্টিক পুরুষ নেভিল কার্ডাস। সেই আলোকে আগামীতে কে আমাদের মনে স্থায়ী জায়গা করে নেবেন, কে নেবেন না, তা তো আর এখন হলফ করে বলা যাবে না। আগামী সেই দিনগুলো না হয় থাকুক ভবিষ্যতের গর্ভে। তখনকার কথা তখন ভাবা যাবে। হাল আমলে আমাদের হৃদয়ে, আমাদের কল্পনায়, আমাদের ভালোবাসায় সাকিব আল হাসান যেভাবে স্থান করে নিয়েছেন, তার বোধকরি কোনও তুলনা চলে না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনুজ্জ্বল আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে তিনি যে মানদণ্ড স্থাপন করেন, এর আর কোনো উদাহরণ নেই। বাস্তবেও যে খেলার মাঠে বাংলাদেশের কারও পক্ষে বিশ্বসেরা হওয়া সম্ভব, অনন্যসাধারণ সেই নজির গড়েছেন। আমাদের সামর্থ্যের টিলাকে তিনি পৌঁছে দিয়েছেন পাহাড় অব্দি।
তিনি এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটের পোস্টারবয়। তবে যেভাবে তিনি আইকন হয়ে উঠেছেন, নেভিল কার্ডাসের ওই কথাটাকে সত্যি করে সামগ্রিক বিবেচনায় আগামীতেও তিনি আমাদের মানসপটে উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন বলে আশা করাই যায়। প্রকৃত অর্থেই কোনও স্কোরকার্ড বা পরিসংখ্যান দিয়ে তাঁকে মূল্যায়ন করা যাবে না। যদিও বাংলাদেশের ক্রিকেটের অসংখ্য গৌরবময় অধ্যায় তো বটেই, এমনকি বিশ্ব ক্রিকেটের অনেক মাইলফলকের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর নাম। সেই মাইলফলকগুলো হয়তো একসময় ম্লান হয়ে যেতে পারে, কিন্তু তাঁর ক্যারিশমা, তাঁর কৃতিত্ব, তাঁর শৈলী ক্রিকেট ইতিহাসের সৌন্দর্যের অংশ হয়ে থাকবে। আর সব কিছু বাদ দিলেও তাঁকে বাংলাদেশের ক্রিকেটের যুগপুরুষ হিসেবে অনায়াসে অভিহিত করা যায়। তিনি বদলে দিয়েছেন ক্রিকেটীয় চিন্তাধারা, দৃষ্টিভঙ্গি ও দর্শন। ক্রিকেটের সীমানা ছাড়িয়ে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনেরও কি তিনি নায়ক নন? তাঁর মতো করে কে আর আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে দেশকে এভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন?
১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বাংলাদেশের ক্রিকেটে যে পালাবদল ঘটে যায়, তা সাকিবের মনোভূমিতেও এঁকে দেয় স্বপ্নের মায়াঞ্জন। পৈত্রিক সূত্রে ফুটবলার হওয়াই ছিল জীবনের লক্ষ্য। কিন্তু ফুটবল আসক্ত মাগুরার কিশোরটি ঝুঁকে পড়ে ক্রিকেটের মায়াবী জগতে। সেই বয়সে তাঁর অনুধাবন করতে অসুবিধা হয়নি যে, ক্রিকেট একটা খেলার চেয়েও অনেক বেশি। তাকে রপ্ত করতে হলে থাকতে হবে প্রবল ইচ্ছেশক্তি। তারপর থেকে এই খেলাটি হয়ে উঠে তাঁর ধ্যান-জ্ঞান-সাধনা। খুব সহজেই তিনি খেলাটিকে আয়ত্তে আনেন। বরং লেখা ভালো, খেলাটিই যেন সহজেই তাঁর কাছে ধরা দেয়।
সহজাত প্রতিভা নিয়েই যে তাঁর জন্ম, এটা নতুন করে বলার কিছু নেই। তার চেয়েও বড় বিষয়, ক্রিকেট বোধকরি তাঁর অন্তর্গত রক্তের ভিতর খেলা করে। আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ হলে এ কথা বিশ্বাস না করার কারণ নেই যে, সব কিছুরই একটা কার্যকারণ থাকে। তারপরও কেন যেন মনে হয়, কিছু কিছু বিষয় আছে, যার রহস্য অনুদ্ঘাটিত রয়ে গেছে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে ক্রিকেটার হিসেবে সাকিবের কাণ্ডকীর্তিতে অনুমিত হয়, তাঁর খেলার মধ্যে কী এক গোপন রহস্য হেঁয়ালি হয়ে বিভ্রম সৃষ্টি করে, যার নাগাল পাওয়া যায় না। যে কারণে ক্রিকেট মাঠে কখনও কখনও তিনি যা করতে চান, তা করতে তাঁকে একদমই বেগ পেতে হয় না। যেন পুরো বিষয়টি নির্ভর করে তাঁর ইচ্ছেশক্তির ওপর।
সেই টেপ টেনিস দিয়ে ক্রিকেট খেলার বয়স থেকে তিনি তাঁর ইচ্ছেশক্তি দিয়ে এমন সব কৃতিত্ব দেখিয়ে আসছেন, তাতে রীতিমতো ভেল্কিবাজি বলে মনে হয়। যে কারণে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে খুব দ্রুতই উপরে উঠে এসেছেন তিনি। সেই ধারা আজও অব্যাহত আছে। তবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা উপলক্ষ মাধ্যম হিসেবে ইন্ধন জোগায়। সেটাও বোধকরি নিয়তি নির্ধারিত। সাকিবও চালিত হয়েছেন সেই নিয়তি দ্বারা৷ একজন জহুরির চোখে পড়ে যাওয়ার কারণে বদলে যায় তাঁর জীবনের বাঁক। ট্যালেন্ট হান্টে খুঁজে পাওয়া যায় প্রকৃতপ্রদত্ত একজন ট্যালেন্টকে। তারপর বিকেএসপির শৃঙ্খলিত জীবনে তাঁর প্রতিভার পরিচর্যা বা ঘষামাজা করে পরিণত করা হয় মূল্যবান হীরায়। তবে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বুকের মধ্যে জমাটবাঁধা অবরুদ্ধ কান্নাকে ঢেলে দেন ক্রিকেটের বেদিতে। তার বিনিময়ে ধীরে ধীরে ছড়াতে থাকে তাঁর দ্যুতি।
খুব বেশি পরিশ্রম না করলেও যে কোনো বিষয় চট করে ধারণ করার প্রকৃতিদত্ত একটা ক্ষমতা তাঁর আছে। আর আছে অসম্ভব আত্মবিশ্বাস আর মানসিক শক্তি। এ কারণে অন্য সবার চেয়ে তিনি এগিয়ে থাকেন। কখনও ব্যাট হাতে, কখনও বল হাতে, কখনও ফিল্ডার হিসেবে, আবার কখনও অধিনায়ক হিসেবে তিনি মুগ্ধতা ছড়াতে থাকেন। ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে শিরোপা জয় করার লক্ষ্য নিয়ে শ্রীলঙ্কা যায় বাংলাদেশ দল। কোয়ার্টার ফাইনালে সেই স্বপ্ন ভেঙে গেলেও চমৎকার খেলেন সাকিব। ১৫০ রান করার পাশাপাশি ৭টি উইকেট নেন। বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে তা সহজেই কাটিয়ে ওঠেন।
যুব দল, 'এ' দল, ঢাকা লিগ, জাতীয় লিগ মিলিয়ে অন্যতম সেরা পারফর্মার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেন। ব্যাটে দুর্দান্ত স্ট্রোক, বাঁ হাতের ঘূর্ণি বলে মায়াবী বিষের ছোবল আর ক্ষিপ্র গতিতে ফিল্ডিং দিয়ে নিজের প্রতিভার স্ফুরণ ঘটান। তখনই বিশ্বের অন্যতম প্রতিভাবান ক্রিকেটার হিসেবে তাঁকে শনাক্ত করা হয়। শুরু থেকেই নিজেকে অলরাউন্ডার হিসেবে মেলে ধরেন। মজার ব্যাপার, খেলার আগে তাঁর কোনও টার্গেট থাকে না। মাঠে নামার পর টার্গেট নির্ধারণ করতে ভালোবাসেন। অর্থাৎ অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষপাতী তিনি। ২০০৬ সালের ৬ আগস্ট হারারেতে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে, একই বছর ২৮ নভেম্বর খুলনায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি এবং ২০০৭ সালের ১৮ মে চট্টগ্রামে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর অভিষেক হয়।
এরপর থেকে সাকিব প্রতিনিয়তই তাঁর পরিসংখ্যান সমৃদ্ধ করে চলেছেন। ব্যাটসম্যান হিসেবে তিন সংস্করণের ক্রিকেটেই বাংলাদেশের সেরা তিন জনের তিনি একজন। এই ক্ষেত্রে মূলত তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহ। টেস্টে সর্বাধিক রানের সারিতে তাঁর অবস্থান তৃতীয় হলেও ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টিতে তিনি আছেন দ্বিতীয় স্থানে। শুধু তাই নয়, ব্যক্তিগত সর্বাধিক রানের ইনিংস, অ্যাভারেজ, সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি, ফিফটিসহ বিভিন্ন পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রেও খুব একটা হেরফের নেই। ক্রিকেটের তিন সংস্করণে বাংলাদেশের অনেকগুলো পার্টনারশিপ রেকর্ডের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর নাম।
টেস্ট ক্রিকেটে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে ৩৫৯ রানের যে জুটি গড়েন, তা যে কোনো উইকেটে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড। ওয়ানডেতে পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে গড়া ২২৪ রানের পার্টনারশিপটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তৃতীয় অবস্থানে আছে। দুবার টেস্ট ক্রিকেটে একই ইনিংসে সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেট নিয়েছেন। টেস্টে পাঁচবার প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ হয়েছেন। এক টেস্টে ১০০ রান ও ১০ উইকেট নেওয়া বিশ্বের চতুর্থ অলরাউন্ডার তিনি। তাঁর আগে যে কৃতিত্ব ছিল অস্ট্রেলিয়ার অ্যালান ডেভিডসন, ইংল্যান্ডের ইয়ান বোথাম ও পাকিস্তানের ইমরান খানের। একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ১০ উইকেট নেওয়ার কীর্তিতে সঙ্গী শুধু বোথাম ও ইমরান।
বাংলাদেশের বোলিংয়ে তিন সংস্করণেই শীর্ষে সাকিব। তাঁর কাছাকাছি দেশের আর কোনো ক্রিকেটার কেউ নেই। টি-টোয়েন্টিতে তো গড়েছেন বিশ্ব রেকর্ডই। ওয়ানডেতে একই মাঠে (শের-এ-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম) সর্বাধিক ১২২ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব তাঁর। এ ক্ষেত্রে তাঁর সমান্তরালে আছেন পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরাম। টি-টোয়েন্টিতে প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ হয়েছেন চারবার। তাঁর আগে আছেন শুধু ভারতের শচীন টেন্ডুলকার আর পাকিস্তানের বাবর আজম। তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১৬ বার প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ হয়েছেন। শীর্ষে আছেন ভারতের শচীন টেন্ডুলকার এবং বিরাট কোহলি।
তিন সংস্করণ মিলিয়ে একই মাঠে সর্বাধিক ২২১ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব একমাত্র তাঁর। ওয়ানডে ক্রিকেটে প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন ২৩ বার৷ অধিনায়ক হিসেবেও সাফল্য দেখিয়েছেন। টেস্ট এবং ওয়ানডে ক্রিকেটে সবচেয়ে কম বয়সে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বিদেশের মাটিতে প্রথম টেস্ট সিরিজ জয় করে। নেতৃত্ব দিয়েছেন ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপ ক্রিকেটের মতো আসরে৷ আসলে সাকিবের নামের সঙ্গে যত পরিসংখ্যান জড়িয়ে আছে, তার ইতিবৃত্ত এই লেখায় উল্লেখ করার সুযোগ নেই। তার প্রয়োজনও নেই।
ওয়ানডে বিশ্বকাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপের মতো বড় আসরগুলোতে তিনি বাংলাদেশের সফলতম ক্রিকেটার। ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান। প্রতিটি ম্যাচেই দেখা যায় তাঁর ব্যাটের ঝলকানি। তৃতীয় সর্বাধিক ৬০৬ রান ও ১১ উইকেট নিয়ে তিনি ছিলেন বিশ্বকাপের সেরা অলরাউন্ডার। ২০১২ সালের এশিয়া কাপ ফাইনালে তাঁর অলরাউন্ড পারফরম্যান্স সত্ত্বেও পাকিস্তানের কাছে ২ রানে হেরে যাওয়াটা ছিল দুর্ভাগ্যজনক। ক্রিকেটে আবেগময়তার দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা থাকলেও সাকিবকে দেখে মনে হয়, তাঁকে বুঝি কোনও আবেগ স্পর্শ করতে পারে না। কিন্তু সেই ফাইনালে হারার পর যেভাবে শিশুর মতো কেঁদেছিলেন তিনি, তা স্পর্শ করেছিল পুরো জাতিকে। অনুধাবন করা যায়, তাঁর বুকের মধ্যে বহমান মাতৃভূমি।
বিশ্বের যে প্রান্তেই খেলা হোক না কেন, তাঁকে বাদ দিয়ে সেই আয়োজন যেন অনেকটাই অপূর্ণ রয়ে যায়। আন্তর্জাতিক ক্লাব ক্রিকেটে সাকিব তো অটোমেটিক চয়েস। ভারত, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের ক্লাব বা দলের হয়ে দাপটের সঙ্গে খেলেছেন। তাঁর মতো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার থাকার পরও বাংলাদেশের কোনো শিরোপা জিততে না পারাটাকে বিধির বিধান ছাড়া আর কী লেখা যায়?
সাকিব বোধকরি সেই দার্শনিকের জীবনদর্শনে বিশ্বাসী, যিনি বলেছেন, জগতে যখন এসেছিস, তখন একটা দাগ রেখে যা। কোনও আসর বা সিরিজে সাকিব খেলবেন, আর সেখানে তাঁর কোনও ভূমিকা থাকবে না, এমনটা যেন ভাবাই যায় না। হয় ব্যাট হাতে নতুবা বল হাতে কিংবা অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দেখিয়ে তিনি ভূমিকা রাখবেনই। অনেকবারই একক কৃতিত্বে দলকে জিতিয়েছেন। কোনো কারণে যদি তাঁর ভূমিকা না থাকে, সেটাকেই বিস্ময়কর মনে হয়। কী কারণে তিনি ভূমিকা রাখতে পারলেন না, তা হয়ে উঠে গবেষণার বিষয়। এত এত আলোর মাঝে কখনও কখনও তাঁর মেজাজ হারিয়ে ফেলাটা খানিকটা অন্ধকার হয়ে আছে। আর যাই হোক, উইকেটে তাঁর লাথি মারাটাকে কোনোভাবে মহিমাণ্বিত করা যাবে না। তাছাড়া আইসিসি তাঁকে নিষিদ্ধ করলে মন খারাপ না করে কি পারা যায়?
অলরাউন্ডারদের বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে সাকিবের এক নম্বরে ওঠাটা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ছিল অভাবিত ও অবিশ্বাস্য এক ঘটনা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল, আইসিসি ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি ওয়ানডেতে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হিসেবে যখন তাঁর নাম ঘোষণা করে, তা ছিল বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য নতুন এক মাইলফলক। সেদিন যেন আকাশ স্পর্শ করেছিল বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন। একই বছর নির্বাচিত হন উইজডেন ম্যাগাজিনের বর্ষসেরা ক্রিকেটার। ২০১১ সালের ২২ ডিসেম্বর টেস্টে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হন।
তাতেও তিনি থেমে থাকেননি। তিনি এমন কিছু করতে চেয়েছেন, যাতে ক্রিকেট দুনিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়। সেটা তিনি পেরেছিলেন। ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারিতে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে একইসঙ্গে তিন ধরনের ক্রিকেটে অলরাউন্ডার র্যাংকিংয়ে শীর্ষে উঠার গৌরব অর্জন করেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন নতুন উচ্চতায়। সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে আলোচনায় উঠে আসেন তিনি।
আসলে সাকিব আল হাসানকে কোনও বিশেষণ দিয়ে মূল্যায়ন করা যাবে না। কবিতার ভাষায় লেখা যায়, সে এক পাথর আছে কেবলই লাবণ্য ধরে। শুধু লাবণ্যই ধরে না, সাকিব যেন সেই পরশপাথর, যার স্পর্শে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন কেবলই আলোকিত হয়। গৌরবাণ্বিত হয়। অর্জন করে সুখ্যাতি। সাকিবের পরিসংখ্যানগুলো মনে না রাখলেও আগামীতে তাঁকে মনে না রাখার কোনো কারণ নেই।