দুই বাংলাই কাঁপিয়ে দেওয়া এক মোনেম মুন্না
দুলাল মাহমুদ
২৫ আগস্ট ২০২১
বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়, দেশের সীমানা ছাড়িয়ে যাঁর নাম-যশ-খ্যাতির সাক্ষী কলকাতাও। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে কলকাতা লিগে খেলতে গিয়ে রীতিমতো আলোড়ন তুলেছিলেন। স্বাধীনতার ৫০ বছরে খেলার ৫০ ধারাবাহিকে আজ মোনেম মুন্নার কীর্তিগাথার গল্প।
একটা সময় উপমহাদেশের ফুটবলের তীর্থকেন্দ্র ছিল কলকাতা। আর কলকাতার ফুটবলকে ফুলে-ফলে সৌরভে ভরিয়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন পূর্ব বাংলা তথা আজকের বাংলাদেশের ফুটবলাররা। কিংবদন্তি গোষ্ঠ পাল থেকে শুরু করে এশিয়ান গেমস ফুটবলে শিরোপাজয়ী ভারতের সর্বশেষ অধিনায়ক চুনী গোস্বামীসহ অসংখ্য ফুটবলার এই বাংলা থেকে উঠে এসেছিলেন। ১৯১১ সালে আইএফএ শিল্ডজয়ী মোহনবাগান ক্লাব, স্বর্ণযুগের কলকাতা মোহামেডান স্পোর্টিং কিংবা সাড়া জাগানো ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে খ্যাতির তুঙ্গে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ইতিহাস হয়ে আছেন পূর্ব বাংলার ফুটবলার ও সংগঠকরাও।
দেশভাগের পর পূর্ব বাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তানের ফুটবলারদের কলকাতায় খেলার পরিসর অনেকটাই সীমিত হয়ে যায়। আর বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর যে কারণেই হোক, পথটা একরকম রুদ্ধ হয়ে যায়। কলকাতার ফুটবলাররা ঢাকার মাঠে খেলতে আসলেও ঢাকার ফুটবলারদের সেখানে যাওয়া কিংবা আমন্ত্রণ পাওয়া হয় না। আশির দশকের একদম শেষদিকে এই অচলায়তন ভাঙতে থাকে। ১৯৮৭ সালে আইএফএ শিল্ডে কলকাতার ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের হয়ে খেলেন আবাহনী ক্রীড়া চক্রের আসলাম ও ওয়াসীম। একই বছর কলকাতা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে লিগে খেলেন ঢাকা মোহামেডানের কায়সার হামিদ। তিনি অবশ্য নিয়মিতই সাদা-কালোদের হয়ে খেলেছেন। এরপর ১৯৯১ সালে ঢাকা ও কলকাতার সেরা ৬টি ক্লাব নিয়ে ঢাকায় আয়োজিত হয় ‘বিটিসি ক্লাব কাপ’।
এই টুর্নামেন্টে দাপটের সঙ্গে খেলে কলকাতার তিনটি শীর্ষ ক্লাব মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ও মোহামেডান ক্লাবকে বিদায় দিয়ে ফাইনালে মুখোমুখি হয় আবাহনী লিমিটেড ও ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। এই দু’দলের খেলোয়াড়দের ক্রীড়াশৈলী দেখে মুগ্ধ হন কলকাতার ক্লাব কর্মকর্তারা। ঢাকার ফুটবলাররা যে এত ভালো খেলেন, বোধ করি তাঁদের তেমন ধারণা ছিল না। মূলত এই টুর্নামেন্ট দেখার পর বদলে যায় তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি। সেবার কলকাতার ফুটবলে ঢাকার ফুটবলারদের একরকম ঢল নামে। কলকাতা মোহামেডান প্রথম দফায় ঢাকা মোহামেডানের কায়সার হামিদ ছাড়াও জনি, রেহান, কাননকে এবং ইস্টবেঙ্গল ক্লাব আবাহনীর আসলাম, মোনেম মুন্না, রুমিকে খেলার আমন্ত্রণ জানায়। পরে মোহামেডানে যোগ দেন জুয়েল রানা, সাব্বির, রক্সি, সালাউদ্দীন, পনির, মানিক এবং ইস্টবেঙ্গলে গাউস। জমজমাট হয়ে উঠে কলকাতা লিগ। ঢাকার ফুটবলারদের নৈপুণ্যে দারুণভাবে জমে উঠে শিরোপার লড়াই।
তবে সবাইকে ছাপিয়ে অনন্য হয়ে উঠেন মো. মোনেম মুন্না। সেবার ফর্ম ও জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ‘বিটিসি ক্লাব কাপ’-এ তাঁর দুর্দান্ত নৈপুণ্যে চ্যাম্পিয়ন হয় আবাহনী। তারই ধারাবাহিকতায় কলকাতায় তিনি যেন খাপ খোলা তলোয়ারের মতো ঝলসে ওঠেন। স্টপার হিসেবে খেলা শুরু করলেও তাঁর খেলার স্টাইল দেখে ইস্টবেঙ্গলের কোচ নাইমুদ্দিন তাঁকে খেলিয়েছেন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার বা লিবেরো হিসেবে। বলা যায়, বিশ্বখ্যাত ফুটবলার জার্মানির ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন তিনি। তাতে যেন সোনায় সোহাগা হয়। তাঁর অভ্যস্ত পজিশন ছেড়ে নতুন পজিশনে খেলতে নেমে তিনি রীতিমতো ফাটিয়ে দেন।
কলকাতার ট্যাকলবহুল ফুটবলে তিনি অসম্ভব আত্মবিশ্বাস, দৃঢ় মনোবল আর অসম সাহসিকতা নিয়ে খেলে আধিপত্য বিস্তার করেন। অর্কেস্ট্রার দক্ষ কনডাক্টরের মতো চমৎকারভাবে যোগসূত্র স্থাপন করেন আক্রমণ আর রক্ষণভাগের মধ্যে। আক্রমণ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ট্যাকলিং, ডিস্ট্রিবিউশন, বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ, নিখুঁত পাস সব কিছুতেই নিজেকে আলাদা করে চেনান। প্রতিপক্ষ দলের কাছে তিনি যেন হয়ে যান হিমালয় পাহাড়ের মতো দুর্ভেদ্য। ম্যাচের পর ম্যাচে মুন্না দুই দলের মধ্যে ব্যবধান গড়ে দেন।
সে বছর লিগে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় ইস্টবেঙ্গল। সবচেয়ে বিস্ময়কর হলো, পুরো লিগে লাল-হলুদের জাল অক্ষত রয়ে যায়। একটি গোলও হজম করতে হয়নি। এক্ষেত্রে মুন্নার বড় ভূমিকা ছিল। যে কারণে পুরো লিগে সব কিছু ছাপিয়ে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেন মুন্না। কলকাতার ফুটবলকে রীতিমতো নাড়িয়ে দেন তিনি। অর্জন করেন আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা। ‘ফুটবল দেবতা’-র আসনে অভিষিক্ত করে হাজারো ফুটবল অনুরাগী তাঁকে নিবেদন করেন ভালোবাসার অর্ঘ্য।
ফুটবল নগরী কলকাতায় সেই দেশভাগের পর পূর্ব বাংলা তথা বাংলাদেশের আর কোনো ফুটবলার এতটা প্রভাব-প্রতিপত্তি ও দাপট দেখাতে পারেননি। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের ইতিহাসে তাঁর মতো জনপ্রিয়তা অর্জন করেন আর মাত্র দু/একজন বিদেশি ফুটবলার। তাঁকে নিয়ে ব্যাপক উম্মাদনার সৃষ্টি হয়। তাঁর ছবির পোস্টারে ছেয়ে যায় কলকাতা। তাঁর রেশ ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্রই। তাঁকে নিয়ে চলে আলোচনা। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে এসে তাঁকে এক নজর দেখার জন্য লাইন পড়ে যেত। তিনি রাস্তাঘাটে বের হলে ঘিরে ফেলতেন ফুটবল অনুরাগীরা। তাঁকে স্পর্শ করে পূর্ব পুরুষের স্মৃতি ফিরে পেতে চাইতেন কলকাতায় বসবাসকারী একসময়ের পূর্ব বাংলার অধিবাসীরা। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁকে অতিথি করার হিড়িক পড়ে যায়। উপহার হিসেবে কত কিছুই নিয়ে আসতেন ভক্ত-অনুরাগীরা। এমনকি তাঁর কল্যাণে কলকাতায় বাংলাদেশিদের সমাদর যথেষ্ট বেড়ে যায়। ভারতের মাটিতে তিনি হয়ে উঠেন বাংলাদেশের ফুটবলের বিজ্ঞাপন।
১৯৯৩ সালে লিগের মাঝামাঝি পর্যন্ত পয়েন্ট টেবিলে পিছিয়ে পড়ে ইস্টবেঙ্গল। অগত্যা কর্মকর্তারা শরণাপন্ন হন মুন্নার। সেই অনুরোধে সাড়া দেন মুন্না। তাঁর উপস্থিতি যেন টনিকের মতো কাজ করে। উজ্জীবিত ইস্টবেঙ্গল জয় করে শিরোপা। ইস্টবেঙ্গলের আমন্ত্রণে ১৯৯৫ সালে ফেডারেশন কাপ খেলতে যান। এই টুর্নামেন্টে রানার্সআপ হয় লাল-হলুদরা। তবে মুন্নার অবদান ভুলতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। ক্লাবের ‘হল অব ফেম’-এ স্থান করে নিয়েছেন মুন্না। বিদেশের মাটিতে তাঁর মতো বাংলাদেশের আর কোনো ফুটবলার এতটা তোলপাড় সৃষ্টি করতে পারেননি। মালয়েশিয়ার সেমি প্রফেশনাল লিগে খেলার সুযোগ পেয়েও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ক্লিয়ারেন্স পেতে বিলম্ব হওয়ায় আর খেলা হয়নি। কলকাতা মোহনবাগান ক্লাবে খেলার আমন্ত্রণ তিনি অবলীলায় ফিরিয়ে দেন। এছাড়াও একাধিক বিদেশি দলের হয়ে খেলার আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন মেজাজী এই ফুটবলার।
জীবন তো অদ্ভুত এক খেয়াল। কখন, কোন বিষয় কাকে কীভাবে জাগিয়ে দেবে, তা কেউ বলতে পারেন না। না হলে নারায়ণগঞ্জ থেকে এসে ১৯৭৫ সালে ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে চ্যাম্পিয়ন আবাহনী ক্রীড়াচক্র আর নবাগত ব্রাদার্স ইউনিয়নের খেলা দেখে বালক মুন্নার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন বুকের মধ্যে অঙ্কুরিত হতো না। সেই ম্যাচে জয়ী হয় ব্রাদার্স। এই ম্যাচটি তাঁর হৃদয়ে দারুণভাবে দাগ কাটে। (পরবর্তীকালে এই দুই ক্লাবের হয়েই তিনি খেলেছেন)। তারপর থেকে ফুটবলার হওয়ার অভিলাষ নিয়ে নিঃশব্দে একাগ্র সাধনা চালিয়ে যান। বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে রক্ষণভাগের অন্যতম সেরা তিন অতন্দ্র প্রহরী নান্নু, মঞ্জু, টুটুলের মতো ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে থাকেন।
নারায়ণগঞ্জের গণ্ডি পেরিয়ে ১৯৮০ সালে পা রাখেন ঢাকার ফুটবল অঙ্গনে। পাইওনিয়ার লিগ দিয়ে শুরু করে দ্বিতীয় বিভাগ হয়ে মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়াচক্রের মাধ্যমে ১৯৮৪ সালে প্রথম বিভাগ লিগে অভিষেক হয়। প্রথম বছরেই নজর কাড়েন। মুক্তিযোদ্ধার হয়ে দুই মৌসুম খেলার পর ১৯৮৬ সালে পাড়ি জমান ব্রাদার্স ইউনিয়নে। তার পরের বছর থেকে কৈশোরের প্রিয় দল আবাহনীতে থিতু হন। অনেক প্রলোভন, অপমান, অবজ্ঞা সত্ত্বেও আকাশি-নীলের ভালোবাসার বন্ধন ছিন্ন করেননি। টানা ১১ বছর ক্লাবের জন্য নিজেকে নিংড়ে দিয়েছেন। খেলেছেন রক্ষণভাগের বিভিন্ন পজিশনে। প্রয়োজনে মধ্য মাঠের হাল ধরেছেন। বল কন্ট্রোল, ইন্টারসেপশন, ট্যাকলিং, লম্বা পাস, হেডওয়ার্কে তিনি ছিলেন অসাধারণ। ওভারল্যাপিংয়ের মাধ্যমে আক্রমণ গড়ে তুলতেন। দৃঢ় আত্মবিশ্বাস, দুর্দান্ত সাহস আর অসম্ভব দায়িত্ববোধ তাঁকে অন্যদের চেয়ে আলাদাভাবে চিনিয়ে দেয়। মানসিকভাবে ছিলেন খুব শক্ত। পেইন কিলার নিয়েও অনেক ম্যাচ খেলেছেন। যে কোনো পরিস্থিতি সহজেই সামাল দিতে পারতেন। সব মিলিয়ে তিনি পরিচিত পেয়েছেন ‘কিং ব্যাক’ হিসেবে।
১৯৯১ সালে ঢাকা লিগে মুন্না অনন্য এক নজির স্থাপন করেন। দলবদলে তাঁকে নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে যায়। মোহামেডান স্পোর্টিং ও ব্রাদার্স ইউনিয়ন তাঁকে দলভুক্ত করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়। দলবদলে তাঁর দাম উঠে যায় ৩০ লাখ টাকা। কিন্তু প্রিয় ক্লাব আবাহনীর টানে ২০ লাখ টাকায় থেকে যান। বাংলাদেশের দলবদলের ইতিহাসে এটা একটা মাইলফলক হয়ে আছে। অথচ আবাহনী দলের সঙ্গে আসাম সফরে খেলতে না যাওয়ায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ১৯৯৩ সালে তাঁর গায়ে হলুদের দিন ধরিয়ে দেওয়া হয় সাসপেনশনের চিঠি। অপমানকর এমন চিঠি পেয়েও তিনি আবাহনী ছাড়ার কথা ভাবেননি।
মুন্নার ছিল নেতৃত্ব দেওয়ার সহজাত ক্ষমতা। ১৯৯৪ সালে তরুণ ফুটবলারদের নিয়ে লিগে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় আবাহনী, এ ক্ষেত্রে অধিনায়ক হিসেবে তিনি অসাধারণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৯৫ সালেও তাঁর দায়িত্বশীল অধিনায়কত্বে লিগ চ্যাম্পিয়ন হয় আকাশি-নীলরা। আর কোনো অধিনায়ক আবাহনীকে দু’বার লিগ শিরোপা জেতাতে পারেননি। ১৯৯৬ সালে তাঁর নেতৃত্বে লিগে রানার্সআপ হয় আবাহনী। পরের বছরও তিনি অধিনায়ক ছিলেন। ফেডারেশন কাপ শিরোপা জয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার পর তিনি আর খেলেননি। ১৯৯০ সালে ভারতের নাগজি ট্রফি, ১৯৯১ সালে বিটিসি কাপ এবং ১৯৯৪ সালে কলকাতার চার্মস কাপে শিরোপা জয়ী আবাহনীর হয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
জাতীয় দলের অপরিহার্য খেলোয়াড় ছিলেন মুন্না। ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত টানা খেলেছেন বাংলাদেশ দলে। আন্তর্জাতিক ফুটবল বাংলাদেশের সাফল্যের নায়কদের অন্যতম নায়কও তিনি। ১৯৮৯ সালে প্রেসিডেন্ট গোল্ড কাপে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ লাল দলের খেলোয়াড় ছিলেন। তিনি জাতীয় দলের একাধিকবার অধিনায়কত্ব করেন। ১৯৯৫ সালে মিয়ানমারে চার জাতির ফুটবল, মাদ্রাজ সাফ গেমস এবং ১৯৯৭ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলের বাছাইপর্বে মালয়েশিয়ায় প্রথম রাউন্ডে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেন। তাঁর অধিনায়কত্বে মিয়ানমারে চার জাতির ফুটবলে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়। 'আন্তর্জাতিক' ফুটবলে এটি বাংলাদেশের প্রথম শিরোপা জয়। এই টুর্নামেন্টে তিনি চমকপ্রদ নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। মুন্না সম্পর্কে জার্মান কোচ অটো ফিস্টার একবার বলেছিলেন, He was mistakenly born in Bangladsh.
খেলা ছাড়ার পর আবাহনীর ফুটবল ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মুন্না। এমনিতেই নানান অনিয়মের কারণে শরীরে হানা দেয় মারাত্মক রোগ-ব্যাধি, তদুপরি অসুস্থ শরীরে আবাহনীর ফুটবল দলের দেখভাল করতে গিয়ে শারীরিক ও মানসিক ব্যাপক চাপের মুখে ছিলেন। কিন্তু তিনি তাঁর পরোয়া করেননি। জীবনকে তিনি অপব্যয় করেন খোলামকুচির মতো। এজন্য তাঁকে খেসারত দিতে হয়। খামখেয়ালিপনাই তাঁর জীবন চলার পথকে সংক্ষিপ্ত করে দেয়। যে কারণে বিবাহবার্ষিকীর এক যুগ পূর্তির দিন ২০০৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তাঁকে অকালেই চলে যেতে হয়। তখন তাঁর বয়স মাত্র ৩৭।
মুন্না ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির বর্ষসেরা ফুটবলার, ১৯৯১ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার এবং ২০০৫ সালে মরণোত্তর জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর চেয়ে বেশি পেয়েছেন ভক্ত-অনুরাগীদের ভালোবাসা। আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও ভালোবাসা দিয়ে যাঁরা উজ্জ্বল করেন দেশের মুখ, মোনেম মুন্না তাঁদের অন্যতম। হুট করে তিনি চলে গেলেও অমলিন হয়ে আছে তাঁর কীর্তি।
আরও পড়ুন:
মুন্নারা মরে না কি!