স্বপ্নপূরণের কাছাকাছি নেইমাররা
২০১৬ রিও অলিম্পিক
উৎপল শুভ্র
২০ জুলাই ২০২১
দীর্ঘ একটা সময় দুর্বোধ্য এক ধাঁধা হয়ে ছিল এই তথ্যটা যে, অলিম্পিক ফুটবলে কখনো সোনা জেতেনি ব্রাজিল। ঘরের মাঠের অলিম্পিকে সেই আক্ষেপ ঘোচাতেই আঁটঘাঁট বেঁধে নেমেছিল ব্রাজিল। প্রথম দুই ম্যাচে কোনো গোল পায়নি, তারাই এরপর থেকে যেন ইচ্ছামতো গোল করছে। ডেনমার্ককে ৪-০ গোলে হারিয়ে শুরু, এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ২-০। আর সেমিফাইনালে ওই দুই ম্যাচের সমান ৬ গোল করে পৌঁছে গিয়েছিল স্বপ্নপূরণের কাছাকাছি।
প্রথম প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০১৬। প্রথম আলো
আগের দিন এই মারাকানা সাক্ষী হয়েছিল মার্তাদের কান্নার। গতকাল সেই মারাকানায় নেইমারদের মুখে শুধুই হাসি।
সুইডেনের কাছে টাইব্রেকারে হেরে সেমিফাইনালেই শেষ হয়ে গেছে ব্রাজিলের মেয়েদের অলিম্পিক। ছেলেরা যেখানে হেসেখেলে সেমিফাইনাল জিতল হন্ডুরাসের বিপক্ষে।
আগের দিন দর্শকে কানায় কানায় পূর্ণ মারাকানাও কেঁদেছে। কাল সেখানে শুধুই হাসি-গান এবং ‘ব্রাজিল’ ‘ব্রাজিল’ গর্জন।
এই অলিম্পিকে প্রথম দুই ম্যাচে কোনো গোল পায়নি যে ব্রাজিল, তারাই এরপর থেকে যেন ইচ্ছামতো গোল করছে। ডেনমার্ককে ৪-০ গোলে হারিয়ে শুরু, এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ২-০। আর সেমিফাইনালে ওই দুই ম্যাচের সমান—৬ গোল!
দুর্বোধ্য এক ধাঁধা হয়ে আছে এই তথ্যটা যে, অলিম্পিক ফুটবলে কখনো সোনা জেতেনি ব্রাজিল। এর আগে তিনবার ফাইনালে উঠে তিনবারই পুড়তে হয়েছে স্বপ্নভঙ্গের বেদনায়। সর্বশেষ তো এই গত অলিম্পিকেই। ফেবারিট হয়েও যেখানে ব্রাজিল হেরে গিয়েছিল মেক্সিকোর কাছে।
সেই দলেও ছিলেন নেইমার। ম্যাচ শেষে হতাশায় শুয়ে পড়েছিলেন ওয়েম্বলির ঘাসে। সেই দুঃখ ভোলার সুযোগ এখন তাঁর সামনে। আগামী শনিবার এই মারাকানাতেই ফাইনাল। যেটিতে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ হবে জার্মানি বা নাইজেরিয়া।
ব্রাজিলের প্রথম গোলটি ছিল সৌভাগ্যপ্রসূত, কিন্তু ম্যাচের পুরো সময়জুড়েই তো হলুদ জার্সির রাজত্ব। দ্বিতীয়ার্ধে হন্ডুরাসের খেলোয়াড়দের পায়ে পায়ে বল ঘুরেছে বেশ খানিকটা। কিন্তু সেটি ব্রাজিল তাদের খেলতে দিয়েছে বলেই। ৫-০ হয়ে যাওয়ার পর কে আর অত ঘাম ঝরাতে যায়! ঘাম অবশ্য ভালোই ঝরেছে সবার। গত কয়েক দিন মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি হয়েছে, সঙ্গে তীব্র ঠান্ডাও পড়েছিল। কাল সকাল থেকেই প্রখর রোদ এবং প্রচণ্ড গরম। তার ওপর ম্যাচটি শুরু হয়েছে বেলা একটায়। যখন ঠিক মাথার ওপর সূর্য।
ম্যাচ শুরু হতে না হতেই গোল! মাত্র ১৫ সেকেন্ড খেলা হয়েছে তখন। সেটিও নেইমারের। যদিও অলিম্পিক ফুটবলের দ্রুততম এই গোলে তাঁর নিজের কৃতিত্বের চেয়ে হন্ডুরাসের ডিফেন্ডারের ভুলের অবদান বেশি। তবে সেন্টার ব্যাক জনি পালাসিওসের ওপর এমন চাপ তৈরি করেছিলেন বলেই না ভুল করেছেন তিনি! বল নেইমারের শরীরে-পায়ে লেগে সামনে যায়। এগিয়ে আসা গোলরক্ষকের গায়ে লেগে আবারও নেইমারের গায়ে, সেখান থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে জালে। লাফ দিয়ে পড়ে নেইমার বুকে ব্যথা পেয়েছিলেন। শুশ্রূষা নিয়ে ফেরেন মাঠে এবং পুরো ম্যাচেই দুর্দান্ত খেলেন। ম্যাচের শুরুতেই প্রথম গোল ও ম্যাচের শেষ মুহূর্তে পেনাল্টি থেকে ব্রাজিলেরও শেষ গোলটিও তাঁর। আরও দুটি গোলেও তাঁর বড় অবদান। হন্ডুরাসের খেলোয়াড়েরা যেভাবে হোক, নেইমারকে আটকানোর মন্ত্র পড়ে মাঠে নেমেছিল। বাজে কিছু ট্যাকলও তাই সহ্য করতে হলো নেইমারকে। ব্রাজিলের ম্যাচে এটা অবশ্য এখন নিয়মই হয়ে গেছে।
ব্রাজিল অনেকটাই ব্রাজিলের মতো। কিন্তু হন্ডুরাস? এমনই ছন্নছাড়া যে, এই দলটি কীভাবে সেমিফাইনালে উঠল, তা নিয়েই বিস্ময় জাগছিল। তবে ফুটবলে কখনো কখনো এমন হয়ে যায়। গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ব্রাজিলও কি জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে হারেনি?
প্রথমার্ধেই ৩-০ হয়ে যাওয়ার পর মনে হচ্ছিল, সেই ম্যাচটাই ফিরে আসছে নাকি! শেষ পর্যন্ত ৭-১ হয়নি, তবে ব্যবধান বেলো হরিজেন্তের ওই সেমিফাইনালেরই সমান-৬!
নেইমারের মতো দুই গোল পালমেইরাসের তরুণ উইঙ্গার গ্যাব্রিয়েল জেসুসেরও। বাকি দুটি গোল করেছেন মারকুইনহোস ও লুয়ান।