লর্ডসে অন্য ভূমিকায় স্টিভ ওয়াহ

২০১২ লন্ডন অলিম্পিক

উৎপল শুভ্র

২১ জুলাই ২০২১

লর্ডসে অন্য ভূমিকায় স্টিভ ওয়াহ

লর্ডসে পা পড়ল স্টিভ ওয়াহ, এখানে অবশ্য তিনি ক্রিকেটার নন। ছবি: গেটি ইমেজেস

লর্ডসে স্টিভ ওয়াহকে দেখাটা অস্বাভাবিক নয় মোটেই। তবে যে ভূমিকায় এসেছিলেন, সেটা একটু অস্বাভাবিকই। ২০১২ অলিম্পিকে অস্ট্রেলিয়া দলে তাঁর পদের নাম ছিল অ্যাথলেটস লিয়াজোঁ অফিসার। কাজ বলতে অ্যাথলেটদের অনুপ্রাণিত করা। ক্যারিয়ারের নানা বাঁকে মুখোমুখি হওয়া চাপের অভিজ্ঞতাগুলো ভাগ করে নেওয়া।

প্রথম প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০১২। প্রথম আলো

মাইকেল আথারটন গিয়ে বললেন, ‘হোয়াট দ্য হেল ইউ আর ডুয়িং হেয়ার?’ স্টিভ ওয়াহ শুধু হাসলেন। তাঁর তো জানাই, এখানে তিনি কী করছেন, আথারটন তা জেনেই এসেছেন। যে লর্ডসে দুজন অ্যাশেজের মহারণে সম্মুখসমরে নেমেছেন, সেটিকে পেছনে রেখেই কথা বলছেন আথারটন ও ওয়াহ। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কের পরিচয়টা এখানে বদলে গেছে। স্টিভ ওয়াহ অস্ট্রেলিয়া অলিম্পিক দলের ‘অ্যাথলেটস লিয়াজোঁ অফিসার’, আথারটন দ্য টাইমস-এর সাংবাদিক।

অলিম্পিক আর্চারির চূড়ান্ত পর্ব হবে মূল মাঠে। কাল র‍্যাঙ্কিং রাউন্ডটা হলো মহাকাশযানসদৃশ প্রেসবক্সের পেছনে নার্সারি মাঠে। আথারটনের সাক্ষাৎকার পর্ব শেষ হওয়ার পর অস্থায়ী তাঁবুর পেছনে দাঁড়িয়ে গভীর মনোযোগে অস্ট্রেলীয় প্রতিযোগীর পারফরম্যান্স দেখছিলেন স্টিভ ওয়াহ। ক্রিকেটের কারণে বাংলাদেশ নামটা তো খুব পরিচিতই। গত পরশু প্র্যাকটিসের সময়ে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেখে নিজে থেকে আর্চার ইমদাদুল হকের সঙ্গে কথা বলেছেন। বাংলাদেশের সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলতেও যথেষ্ট আগ্রহ।

প্রথম প্রশ্নটা অনুমিতই, এই লর্ডসে অন্য ভূমিকায় এসে কেমন লাগছে? ‘একটু তো বিচিত্রই। জীবনেও ভাবিনি, লর্ডসে এমন দৃশ্য দেখব। তবে আর্চারির জন্য এটি খুব ভালো হলো। লর্ডসের জন্য প্রচারটা বেশি হবে।’

এই স্টিভ ওয়াহ আর্চার! ছবি: গেটি ইমেজেস

স্টিভ ওয়াহর মতো আরও দু-তিনজন আছেন অস্ট্রেলিয়া দলে। তাঁদের কাজটা ঠিক কী? ‘কাজ বলতে অ্যাথলেটদের অনুপ্রাণিত করা। আমরা যেহেতু ক্যারিয়ারে নানা চাপের মধ্য দিয়ে গেছি, সেই অভিজ্ঞতা ওদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারি। আমি তো বেইজিংয়েও ছিলাম।’ অলিম্পিক অভিজ্ঞতাটা সেবার খুব উপভোগ করেছিলেন। এ কারণেই ব্যবসার ব্যস্ততা ফেলে এসেছেন এবারও।

একটা জিনিস মিলিয়ে নেওয়ার ছিল। ক্রিকেট জীবনে ‘মেন্টাল ডিজইন্টিগ্রেশন’ নাম দিয়ে স্লেজিংয়ের পতাকা তুলে ধরার গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন। এবার অলিম্পিকে এসে সংবাদ সম্মেলনে নাকি বলেছেন, আর্চারিতেও স্লেজিংয়ের সুযোগ আছে। কথাটা বলতেই চোখমুখ কঠিন হয়ে গেল, ‘সাংবাদিকতা কোন পর্যায়ে নেমে গেছে, এটা তার প্রমাণ। আমি মজা করে কথাটা বলেছিলাম। সেটিকেই এমন সিরিয়াস বানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ বলার পরই মনে হলো, যাঁকে বলা হচ্ছে, সে-ও তো সাংবাদিক! ভদ্রতা করে তাই বললেন, ‘আপনি ভুল বুঝবেন না। সব সাংবাদিক একরকম নয়, আমি জানি।’

খেলোয়াড়ি জীবন থেকেই বই লেখার অভ্যাস আছে। ঢাউস একটা আত্মজীবনীও লিখেছেন। আগামী বছর এখানে যে কাজটা করছেন, সেই মেন্টরিংয়ের ওপর একটা বই লেখার পরিকল্পনার কথাও জানালেন। প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে পাল্টা প্রশ্নও করলেন—বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি লিগটা কেমন হয়েছে? ‘হয়েছে তো খুব ভালোই, কিন্তু খেলোয়াড়দের টাকা বকেয়া থাকা নিয়ে ভালো একটা বিতর্কই শুরু হয়েছে।’ স্টিভ ওয়াহ যেভাবে মাথা ঝোঁকালেন, তাতে বোঝা গেল এই খবর তিনি রাখেন। বিসিবির সঙ্গে টিম মের লড়াইয়ের কথাও তাঁর অজানা নয়। শেষ পর্যন্ত অবস্থানটা যে খেলোয়াড়দের পক্ষেই নেবেন, সেটি অনুমেয়ই ছিল, ‘আমি বিস্তারিত জানি না। তবে প্লেয়ারদের পাওনা টাকা দেওয়া হবে না, এটা কেমন কথা!’

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×