রঙিন উইম্বলডনে

২০১২ লন্ডন অলিম্পিক

উৎপল শুভ্র

২১ জুলাই ২০২১

রঙিন উইম্বলডনে

এমন রঙিন পোশাকে অল ইংল্যান্ড লন টেনিস ক্লাবে কে খেলতে পেরেছে কবে! ছবি: গেটি ইমেজেস

কেবল সাদা পোশাক পরে খেলতে হবে বলে দীর্ঘ একটা সময় উইম্বলডনকে এড়িয়ে গিয়েছিলেন আন্দ্রে আগাসি। সেই উইম্বলডন রঙিন হয়ে উঠেছিল অলিম্পিকের ছোঁয়ায়। ভেনাস উইলিয়ামস খেলছিলেন কালো টি-শার্ট পরে, নোভাক জোকোভিচ-অ্যান্ডি রডিক নীল।

প্রথম প্রকাশ: ১ আগস্ট ২০১২। প্রথম আলো

আন্দ্রে আগাসি কি টেলিভিশনে অলিম্পিক টেনিস দেখছেন আর হাসছেন? ‘সাদা’ উইম্বলডনকে যে গোলাপি করে দিয়েছে লন্ডন অলিম্পিক! কি হে, সাদা পোশাক ছাড়া নাকি উইম্বলডনে প্রবেশাধিকার নেই!

আগাসি প্রশ্নটা করতেই পারেন। সাদা পোশাক বাধ্যতামূলক বলেই ক্যারিয়ারের শুরুতে উইম্বলডনে খেলেননি। তাতে উইম্বলডনের চেয়ে নিজেরই বেশি ক্ষতি বুঝতে পেরে পরে মত বদলান এবং প্রথম গ্র্যান্ড স্লামও জেতেন এখানেই। কাল সকালে এত দিনের ‘অল হোয়াইট’ সেই উইম্বলডনের সেন্টার কোর্টে ঢুকে চোখে একটা ধাক্কাই লাগল। টেলিভিশনে এত বছর দেখা দৃশ্যের সঙ্গে শুধু কোর্টটাই মিলছে। পেছনে সাদার বদলে অলিম্পিকের লোগো-সংবলিত গোলাপি প্রেক্ষাপট। গ্যালারিতেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গোলাপি। প্রথম ম্যাচে ভেনাস উইলিয়ামস খেললেন কালো টি-শার্ট পরে। দিনের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত ম্যাচে নোভাক জোকোভিচ ও অ্যান্ডি রডিক দুজনই নীল। মারিয়া শারাপোভা নামলেন লাল টকটকে টপস পরে।

উইম্বলডনকে যাঁর নিজের বাড়ি বলে মনে হওয়া স্বাভাবিক, সেই রজার ফেদেরার অলিম্পিকের আগে বলছিলেন, এবার উইম্বলডনে তাঁর একটু কেমন-কেমনই লাগবে! এত বছরের চেনা-জানা, কিন্তু রঙিন উইম্বলডন তো আর দেখেননি কখনো। 

ফেদেরারের একটি অলিম্পিক সোনা আছে। তবে সেটি দ্বৈতে। এককের সোনাটা পেলে সর্বকালের সফলতম টেনিস খেলোয়াড়ের অর্জন পরিপূর্ণতা পায়। এটাই হয়তো শেষ সুযোগ এবং বড় সুযোগও। অলিম্পিক শুরুর মাত্র ২০ দিন আগে যে উইম্বলডনে রেকর্ড সপ্তম শিরোপা জিতেছেন, সেখানেই খেলা।

উইম্বলডনের সেমিফাইনাল ও ফাইনালে যে দুজনকে হারিয়েছেন, সেই জোকোভিচ ও মারেই বড় চ্যালেঞ্জার হওয়ার কথা। জোকোভিচ অবশ্য ফেদেরারকে ফেবারিট রায় দিয়ে পরের ধাপে মারে ও নিজের সঙ্গে রাখছেন জো উইলফ্রায়েড সোঙ্গাকেও।

ফেদেরার তৃতীয় রাউন্ডে উঠে গেছেন। জোকোভিচ ও মারেও সেখানে সঙ্গী হলেন কাল। সাবেক নাম্বার ওয়ান অ্যান্ডি রডিককে নিয়ে বলতে গেলে ছেলেখেলাই করলেন জোকোভিচ। ৬-২, ৬-১ গেমে উড়িয়ে দেওয়ার পথে মেলে ধরলেন অসাধারণ সব শটের প্রদর্শনী। সহজাত শো-ম্যান, একবার আপাত অসম্ভব একটা ড্রপ শট ফিরিয়ে দিয়ে পয়েন্ট জেতার পর দুই হাত তুলে এমন একটা হাসি দিলেন যেন এইমাত্র অলিম্পিক সোনার মীমাংসা হয়ে গেছে! 

শুধু রঙের বদলই নয়, দর্শকদের প্রতিক্রিয়াতেও নতুনত্ব খুঁজে পাচ্ছেন টেনিস খেলোয়াড়েরা। উইম্বলডনে দর্শকেরা মেপে-মেপে হাততালি দেন, চিৎকার-চেঁচামেচিতেও থাকে সংযমের পরিচয়। আর অলিম্পিকে দেশের সমর্থনে দর্শকেরা গলা ফাটিয়ে ফেলছেন। একটু পরপর কারও নাম বলে পরপর তিন তালিতে চারপাশ কাঁপিয়ে তোলার ঘটনাও উইম্বলডনে অদৃষ্টপূর্বই ছিল। কাল সেন্টার কোর্টে দিনের চতুর্থ ম্যাচে সেটিই হলো বারবার। ‘লরা’ ‘লরা’ বলে সে কী তুমুল গর্জন! লরা মানে লরা রবসন স্বাগতিক দর্শকদের সেই তুমুল সমর্থনে উদ্দীপিত হয়ে মারিয়া শারাপোভাকে কাঁপিয়েও দিয়েছিলেন। প্রথম সেটটি টাইব্রেকারে নিয়ে গেলেন। দ্বিতীয় সেটে (৬-৩) অবশ্য আর কুলাতে পারলেন না। শারাপোভা অবশ্য দর্শকদের চিৎকারের জবাব সহজাতভাবেই দিয়েছেন। বিখ্যাত সেই ‘গোঙানি’তে। রবসন র‍্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বে ৯১ নম্বর। তাঁর কাছ থেকে তাই ব্রিটিশদের বড় কিছু আশা করার কথা নয়। স্বাগতিকদের সেই আশার নাম অ্যান্ডি মারে। তিনিও তুমুল সমর্থন পেলেন। তবে ফিনল্যান্ডের নিমিনেন জার্কোর বিপক্ষে জয়টা মোটামুটি সহজেই (৬-২, ৬-৪) এল বলে গ্যালারির চিৎকারটা অত উচ্চগ্রামে পৌঁছাল না। 

পুরো ব্রিটেন তাঁর কাছে সোনা চাইছে। অলিম্পিক টেনিসে সবচেয়ে বেশি চাপে বোধহয় এই স্কটিশই। তবে মারের জন্য এটি নতুন কোনো অভিজ্ঞতা হওয়ার কথা নয়। খেলা উইম্বলডনে, আর প্রতিবার উইম্বলডনে খেলার সময়ই তো এই চাপ তাঁর ছায়াসঙ্গী হয়ে থাকে। দ্বৈতে হেরে গেছেন। এককে তো ছিলেনই, এখন খেলছেন মিশ্র দ্বৈতেও। চাপটাকে প্রেরণাও বানাতে চাইছেন। কাল দ্বিতীয় রাউন্ডে জয়ের পর বললেন, ‘নিজের দেশে অলিম্পিক সোনা জেতার সুযোগ তো আর পাব না জীবনে। আমি নিজেকে উজাড় করেই দেব।’

কাল সেন্টার কোর্টে প্রথম ম্যাচে ভেনাস উইলিয়ামস মনে হলো নিজেকে পুরো উজাড় করে দিয়েই জিতে গেলেন। কানাডার আলেসান্দ্রা ওজনিয়াকের বিপক্ষে ৬-১, ৬-৩ গেমে জয় ইতিহাস গড়ার দিকে তাঁর আরেক ধাপ। অলিম্পিক টেনিসে একক-দ্বৈত মিলিয়ে তিনটি সোনা আছে। এবার চতুর্থটি পেলে টেনিস ইতিহাসে অনন্য হয়ে যাবেন। 

অলিম্পিকের মতো উইম্বলডনের এই সেন্টার কোর্টেও ভেনাস উইলিয়ামসের অনেক সাফল্য। কিন্তু এই উইম্বলডন তো সেই উইম্বলডন নয়। রঙিন পোশাক গায়ে রঙিন উইম্বলডনে ট্রফি তুলে ধরাটা নতুন একটা অভিজ্ঞতাই হবে। 

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×