ফেলপস ‘রাজা’, ‘রানি’ রাইস
বেইজিং অলিম্পিক
উৎপল শুভ্র
২১ জুলাই ২০২১
প্রতি অলিম্পিকেই সর্বোচ্চ পদকজয়ী পুরুষ আর প্রমীলা অ্যাথলেটকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিতে ভূষিত করে আইওসি। বেইজিং অলিম্পিকে সেরা প্রমীলা অ্যাথলেটের স্বীকৃতি পেয়েছিলেন স্টেফানি রাইস, আর সেরা পুরুষ মাইকেল ফেলপস। ফেলপস সোভিয়েত ইউনিয়নের জিমন্যাস্ট ভিক্টর চুখারিনের পর পরপর দুটি অলিম্পিকে সর্বোচ্চ পদক জেতা প্রথম অ্যাথলেটও হয়ে গেলেন এতেই।
প্রথম প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০০৮। প্রথম আলো
ট্র্যাকে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে তিনটি সোনা জয়ের পর চীনাদের হৃদয়ও জয় করে নিয়েছেন উসাইন বোল্ট। সিচুয়ানে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের সাহায্যে চীনা রেডক্রসকে দিয়েছেন ৫০ হাজার ডলারের চেক। সময় কাটিয়েছেন ভূমিকম্পে হাত-পা হারানো শিশুদের সঙ্গে। চীনের সবচেয়ে বিখ্যাত ইংরেজি দৈনিক চায়না ডেইলি এই প্রতিবেদনের শিরোনাম করেছে, ‘বোল্ট দেখালেন তাঁর সোনার হৃদয়!’
১০০ ও ২০০ মিটারে ওই অতিমানবীয় দৌড়, সঙ্গে বিচিত্র উদযাপনভঙ্গি-আমুদে স্বভাব মিলিয়েই চীনাদের হৃদয়ে ঢুকে গিয়েছিলেন। সহমর্মিতার এই প্রকাশ সেখানে আরও স্থায়ী করে দিল বোল্টের আসন। মাইকেল ফেলপসের কথা ভুলে গিয়ে চীনারা তাই বোল্টকেই নায়ক বানিয়ে দিচ্ছে বেইজিং অলিম্পিকের।
কিন্তু রেকর্ড-বই তো আবেগ দিয়ে লেখা হয় না। সেখানে শুধু সংখ্যাটাই বড়। এক অলিম্পিকে আট সোনা জয়ের অভূতপূর্ব কীর্তি গড়ে মাইকেল ফেলপসই তাই বেইজিং অলিম্পিকের ‘রাজা’। কাল অলিম্পিকের শেষ দিনে ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) আনুষ্ঠানিকভাবেই ঘোষণা করেছে এটি। রাজা তো অবশ্যই ফেলপস, কিন্তু রানি, রানি কে? রানি সাঁতারু স্টেফানি রাইস। অস্ট্রেলিয়ার এই সাঁতারু জিতেছেন ৩টি সোনা। মেয়ে অ্যাথলেটদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, তাই তিনি রানি। সোজা হিসাব।
২০০৪ এথেন্স অলিম্পিকেও এই স্বীকৃতি পেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার এক সাঁতারুই—পেট্রিয়া টমাস। এথেন্সের রাজাও এক সাঁতারু এবং তাঁর নামও মাইকেল ফেলপস! এক অলিম্পিকের রাজার পরের অলিম্পিকেও মাথায় মুকুট ধরে রাখার মাত্র দ্বিতীয় ঘটনা এটি। ১৯৫২ ও ১৯৫৬ অলিম্পিকে ছেলেদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পদক জিতে এর আগের কীর্তিটি সোভিয়েত ইউনিয়নের জিমন্যাস্ট ভিক্টর চুখারিনের।
রাজা-রানির এই স্বীকৃতিটা যেহেতু শুধুই পদক হিসাব করে, স্বাভাবিকভাবেই এই তালিকায় সাঁতারু ও জিমন্যাস্টের জয়জয়কার। আর কোনো খেলায় তো একজনের এত পদক জয়ের সুযোগ নেই। তা-ও ভালো, তালিকায় জেসি ওয়েন্স ও কার্ল লুইসের নাম দুটি আছে। ১৯৩৬ বার্লিন অলিম্পিকে প্রথম অ্যাথলেট হিসেবে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে ৪টি সোনা জিতেছিলেন ওয়েন্স। ১৯৮৪ লস অ্যাঞ্জেলেস গেমসে এই কীর্তির পুনরাবৃত্তি করেন কার্ল লুইস।
বার্লিন অলিম্পিকের কথা উঠলেই যেমন প্রথমেই ওয়েন্সের কথা মনে পড়ে, লস অ্যাঞ্জেলেসের কথা উঠলেও তেমনি লুইসের। অথচ এই দুটি অলিম্পিকে সাঁতার বা জিমন্যাস্টিকসে কেউ এর চেয়ে বেশি সোনা জিতে ফেললে কেমন কাণ্ডটা হতো! ওয়েন্স বা লুইসকে বাদ দিয়ে রেকর্ড-বইয়ে সেই দুটি অলিম্পিকের রাজা হিসেবে নাম উঠে যেত তাঁদের।
এমন হয়তো অনেক উঠেছেও। বিচার্য যে ছিল শুধুই পদকসংখ্যা। কিন্তু একটি পদক জিতেও তো কেউ হয়ে উঠতে পারেন অলিম্পিকের মুখ। নিচের তালিকা যেমন আপনাকে জানাবে, ১৯৬৮ মেক্সিকো অলিম্পিকের ‘রাজা’ জাপানি জিমন্যাস্ট আকিনরি নাকায়ামা। অথচ এই নামটা কজনের পরিচিত? মেক্সিকো অলিম্পিক মানেই তো বব বিমনের ওই লাফ। যেটিকে বলা হয় ‘মানবজাতির সবচেয়ে বড় লাফ’। এই এত বছর পর অলিম্পিকে এর চেয়ে বেশি দূরত্ব লাফাতে পারেননি কেউ। মেক্সিকো অলিম্পিক তা হলে নাকায়ামার ছিল, নাকি বিমনের?