লুইস-কুয়ারিকে ছুঁতে চান ‘জন্মদিন বালক’
বেইজিং অলিম্পিক
উৎপল শুভ্র
২১ জুলাই ২০২১
২০০৮ পর্যন্তও জ্যামাইকার ছেলে-মেয়েরা বড় হতো ডন কুয়ারির গল্প শুনে, সেই ১৯৭৬ সালে ২০০ মিটার স্প্রিন্টে জ্যামাইকাকে স্বর্ণ এনে দিয়েছিলেন এই দৌড়বিদ। ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিক থেকেই বদলে গেল গল্পটা। উসাইন বোল্টের আবির্ভাব ঘটেছিল তো! এই লেখায় বোল্টের আগমনী সেই দৌড়ের গল্প।
প্রথম প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০০৮। প্রথম আলো
হোয়াট’স ইন এ নেম? বলেছিলেন শেক্সপিয়ার। ভুল বলেছিলেন! নামে কী আসে-যায়, সেটি শনিবার ভালো করেই বুঝিয়ে দিলেন উসাইন ‘থান্ডার’ বোল্ট। যেন বজ্রের মতো কী একটা হলুদ রেখা ছুটে গেল বার্ডস নেস্টের লাল ট্র্যাকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঐতিহ্যবাহী রেগে মিউজিকের ভঙ্গিতে ফিনিশিং লাইন ছুঁলেন অলিম্পিকের দ্রুততম মানব। গায়ের জার্সির সঙ্গে মিশে গেল হলুদ-সবুজ জাতীয় পতাকা। চুমু খেলেন সোনারঙা জুতো জোড়ায়। যেন ৯.৬৯ সেকেন্ডের বিশ্ব রেকর্ডের এই কীর্তি তাঁর নয়, জুতোর!
প্রথম জ্যামাইকান হিসেবে ১০০ মিটারে সোনা জেতার ইতিহাসটা আরও স্মরণীয় করে রাখার সুযোগ এসেছে তাঁর সামনে। সুযোগ এসেছে কার্ল লুইসের মতো কিংবদন্তির পাশে বসার। আগামীকাল ২০০ মিটারের দৌড়ে সোনা জিতলে অলিম্পিকের স্প্রিন্টে ‘ডাবল’ জেতার বিরল কৃতিত্ব গড়বেন ২১ বছর বয়সী বোল্ট। ১৯৮৪ লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে লুইসের এই কীর্তির পর এখন পর্যন্ত গত ২৪ বছরে যেটি অর্জন করতে পারেননি কেউই।
বোল্ট যে পারবেন, তাতে সন্দেহ দেখা যাচ্ছে খুব কম লোকেরই। ১০০ মিটারে তাঁর দৌড় শেষ করার ভঙ্গিটাই জোগাচ্ছে এ বিশ্বাস। খুব ছোট দৈর্ঘ্যের দৌড় বলে ১০০ মিটারের ফাইনালে স্প্রিন্টারদের মধ্যে ব্যবধান থাকে খুব কম। অথচ এবার অলিম্পিকে দেখা গেল, ৮০ মিটার পেরিয়ে অনেক সামনে এগিয়ে বোল্ট! এমনও বলা হচ্ছে, ইচ্ছে করেই ওই সময় গতি কমিয়ে দিয়েছিলেন তিনি! কৌতুক করে বলা হচ্ছে, ১০০ মিটারের গতিটা যদি কালও তুলতে পারেন, তাহলে রেস শেষ করার আগে চাইলে সে সময় তাঁর প্রিয় নাশতাটাও সেরে ফেলতে পারবেন বোল্ট!
তাঁকে অবশ্য অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছেন ডন কুয়ারি। ১৯৭৬ সালে জ্যামাইকান এই কিংবদন্তি জিতেছিলেন ২০০ মিটারের সোনা। দৌড়বিদের দেশ জ্যামাইকার সবাই কুয়ারির রূপকথা শুনে শুনেই বড় হয়। তাঁরপর কোনো জ্যামাইকানের গলায় ওঠেনি এই পদক। স্বপ্নের নায়ককে ছোঁয়ার তাগাদা আছে। আছে দেশবাসীকে উৎসবের আরও একটা উপলক্ষ এনে দেওয়ার তাগিদও। ‘আশা করি আমি আমার দেশকে গর্বিত করতে পারব। আশা করি ২০০ মিটারেও তারা আমাকে নিয়ে গর্ব করবে’—কাল হিট শেষ করে বলেছেন বোল্ট। লুইস ছাড়াও ডাবল জেতার কীর্তি গড়েছিলেন ১৯৭২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভ্যালেরি বোরজোভ; ১৯২৮ সালের কানাডার পার্সি উইলিয়ামস; এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ১৯৫৬ সালে ববি মোরো, ১৯৩৬-এ জেসি ওয়েন্স, ১৯৩২ অলিম্পিকে এডি টোলান, ১৯১২ সালে রালফ ক্রেইগ এবং ১৯০৪ সালে আর্চি হান।
১০০ মিটারের বিশ্ব রেকর্ডটা পর পর দুবার ভেঙে দিলেও বোল্টের নিজের প্রিয় ইভেন্ট কিন্তু ২০০ মিটার। ক্যারিবীয় দ্বীপ থেকে উঠে এসে বিশ্বমঞ্চে ঝড় তোলা এই তরুণ এ বছর ২০০ মিটারের দ্রুততম টাইমিংটাও গড়েছেন। আগামীকাল তাই বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছেন বর্তমান চ্যাম্পিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের শন ক্রফোর্ড। চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত এবার ১০০ মিটারে ব্রোঞ্জ জেতা ওয়াল্টার ডিক্স আর ওসাকায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ জেতা ওয়ালেস স্পিয়ারমন। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন টাইসন গে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রায়ালেই ছিটকে পড়েছিলেন ইনজুরির কারণে। বোল্টের পাল্লাটা তাই বেশ হেলে আছে সম্ভাবনার দিকে। কিন্তু ছেড়ে কথা কইবেন না ৩০ বছর বয়সী ক্রফোর্ড, ‘আমার কিছুই প্রমাণের দরকার নেই। ২০০৪ সালের সোনাটি আমার ছিল, কেউ তা কেড়ে নিতে পারবে না।’
কিন্তু ক্রফোর্ড কি জানেন, ২১ তারিখ বোল্টের ২২তম জন্মদিন? আগের দিনই পেয়ে যাচ্ছেন নিজেকে উপহার দেওয়ার বড় সুযোগ। সেটিই বা বোল্ট হাতছাড়া করবেন কেন!