অ্যাথলেটিকস দিয়ে অলিম্পিক ফিরছে ‘পাখির বাসা’য়
২০০৮ অলিম্পিক
উৎপল শুভ্র
২১ জুলাই ২০২১
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর থেকে দিন পাঁচেক ফাঁকাই পড়ে ছিল বেইজিং অলিম্পিকের মূল ভেন্যু। বার্ডস নেস্টে তো শুধু অ্যাথলেটিকসের খেলাগুলোই হওয়ার কথা ছিল! এর আগ পর্যন্ত অলিম্পিকের পদক তালিকায় শীর্ষ নামটা ছিল চীনেরই, অ্যাথলেটিকস দিয়েই যেটি বদলে দেওয়ার আশা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ২০০৮ অলিম্পিকের পদক তালিকায় চীনের নামই ছিল সবার ওপরে।
প্রথম প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০০৮। প্রথম আলো
দুনিয়া কাঁপানো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর থেকেই শূন্য পড়ে আছে ‘পাখির বাসা’। বার্ডস নেস্টকে ঘিরে গড়ে ওঠা অলিম্পিক চত্বরের অন্য সব ভেন্যুতে যেখানে পদকের লড়াইয়ের আড়ালে মঞ্চস্থ হচ্ছে একের পর এক মানবীয় সব নাটক, অলিম্পিক স্টেডিয়াম যেন শুধুই এক স্থাপত্য-বিস্ময় হয়ে পর্যটকদের মনোরঞ্জনের উপলক্ষ!
আজ থেকে আর তা থাকছে না। মাইকেল ফেলপসের কারণে সুইমিং পুলে চোখ না রেখে উপায় নেই। তবে পাশের ওয়াটার কিউব থেকে বেইজিং অলিম্পিকের আলোর রোশনাই অনেকটাই কেড়ে নিতে যাচ্ছে বার্ডস নেস্ট। আবার পাখির... দুঃখিত, অ্যাথলেটদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠতে যাচ্ছে ‘পাখির বাসা’। অ্যাথলেটিকস যে শুরু হয়ে যাচ্ছে আজই।
অলিম্পিকে সবচেয়ে বেশি পদক বলেই শুধু নয়, অ্যাথলেটিকস সেই আদিকাল থেকেই অলিম্পিকের প্রাণভোমরা। এটিকে ঘিরে যে উন্মাদনা, মৃতপ্রায় অ্যাথলেটিকসের দেশ বাংলাদেশে বসে তা বুঝতে কল্পনাকে অনেক দূর ছড়িয়ে দিতে হয়। যে দেশের দ্রুততম মানবী ‘নিজের ইলেকট্রনিক টাইমিংটা কত, তা জানতে পারার সুযোগ’কে অলিম্পিকে অংশ নিতে পারার সবচেয়ে বড় মাহাত্ম্য বলে মানেন, সেই দেশের মানুষের কাছে অ্যাথলেটিকস আর কী হবে! ‘দৌড়-ঝাঁপ-লাফ’-এর বেশি কিছু নয়।
হ্যাঁ, অ্যাথলেটিকস দৌড়-ঝাঁপ-লাফই! তবে এর গায়ে বাড়তি একটা অলংকার লাগানো আছে—সব খেলার রানি! তবে চীনাদের সঙ্গে কথা বললে মনে হওয়া স্বাভাবিক, বাঙালির মতো এরাও বোধ হয় চরম অ্যাথলেটিকস-বিমুখ! যে অলিম্পিক তাঁদের কাছে বাকি বিশ্বের সামনে নিজেদের সুন্দরতম দিকগুলোকে তুলে ধরার সুযোগ, সেটিতে অ্যাথলেটিকস না থাকলেই যেন খুশি হতো তারা। কেন? এমন কেন?
কারণটায় বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো মিল নেই। চীনাদের অ্যাথলেটিকস-বিরাগের—বিরাগ না বলে বরং ভীতি বলাই ভালো—মূল কারণ অ্যাথলেটিকস শুরু হওয়া মানেই যে যুক্তরাষ্ট্রের জয়জয়কার শুরু হয়ে যাওয়া। যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে পদক তালিকার প্রথমেই চীনের নামটি দেখতে চাওয়ার যে স্বপ্ন, সেই স্বপ্নপূরণ অনেকটাই নির্ভর করছে অ্যাথলেটিকসে... না, চীনাদের নিজেদের সাফল্যের ওপর নয়, মার্কিনিদের ব্যর্থতার ওপর।
অলিম্পিক অ্যাথলেটিকসের ইতিহাসে বাকিদের অনেক পেছনে ফেলে সফলতম দেশের নাম যুক্তরাষ্ট্র। আজ প্রথম দিনে যে দুটি সোনার লড়াই, তার প্রথমটিতেই তো মার্কিন জাতীয় সংগীত বেজে ওঠার যথেষ্ট সম্ভাবনা। অ্যাথলেটিকসে প্রথম সোনাটি উঠবে পুরুষদের শটপুটে বিজয়ীর গলায়। গত দুটি অলিম্পিকে রুপাজয়ী তিন মণ ওজনের মার্কিনি অ্যাডাম নেলসন যেন গলা বাড়িয়েই আছেন। এথেন্সে সোনাজয়ী ইউরি বিলনগ এবারও আছেন। তবে যাঁর ক্রীড়া-দর্শন ‘ড্রিম হিউজ, থিঙ্ক হিউজ, থ্রো হিউজ’, সেই নেলসনের সম্ভাবনাকে বাতিল করে দেবেন কীভাবে?
স্থানীয় সময় রাত পৌনে ১১টায় শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় সোনার লড়াই নিয়ে যত কথা হচ্ছে, তাতে মনে হতেই পারে যে, ইথিওপিয়ার দিবাবা তিরুনেশ এটি জিতেই গেছেন। মেয়েদের ১০ হাজার মিটার দৌড়টা হবে আসলে রুপা আর ব্রোঞ্জ নির্ধারণী!
শটপুট, ১০ হাজার মিটার দৌড়—কোনোটাই সে অর্থে অ্যাথলেটিকসের গ্ল্যামার ইভেন্ট নয়। যে ইভেন্টের গায়ে এই তকমাটা সবচেয়ে বেশি জ্বলজ্বলে, পুুরুষদের সেই ১০০ মিটার স্প্রিন্টের পূর্বরাগও আজ। সোনার লড়াই আগামীকাল রাতে, আজ হিটে নামছেন উসাইন বোল্ট, আসাফা পাওয়েল ও টাইসন গেরা।
নামছেন বাংলাদেশের আবু আবদুল্লাহও। অলিম্পিকে দৌড়ানোর স্বপ্নপূরণের রোমাঞ্চের মধ্যেও একটু মন খারাপ হতেই পারে তাঁর। বোল্ট, গে বা পাওয়েলের সঙ্গে দৌড়াতে পারলে শুধুই অংশ নেওয়ার জন্য অংশ নেওয়া বাংলাদেশের দ্রুততম মানব বাকি জীবন গল্প করার মতো একটা বিষয় পেয়ে যেতেন। কিন্তু আবদুল্লাহর হিটে এঁরা কেউই নেই, তাঁর হিটে বাকি আট স্প্রিন্টারের মধ্যে বাহামার ডেরিক অ্যাটকিন্সই যা একটু পরিচিত নাম।
কে জানে, আবু আবদুল্লাহ হয়তো এ নিয়ে ভাবছেনই না! নাজমুন নাহার বিউটির মতো তাঁর কাছেও হয়তো অলিম্পিকের বড় প্রাপ্তি—ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ডে নিজের ‘দৌড়’টা জানা!