জোকোভিচের হার ছাড়িয়ে ব্রাজিলের ড্র

২০১৬ রিও অলিম্পিক

উৎপল শুভ্র

২০ জুলাই ২০২১

জোকোভিচের হার ছাড়িয়ে ব্রাজিলের ড্র

এমন মাথা নিচু করেই অলিম্পিক ছাড়তে হয়েছিল জোকোভিচকে। ছবি: গেটি ইমেজেস

গেমজ ভিলেজে ৪০ মিনিট মতো লিফটে আটকে ছিলেন দেল পোত্রো, সেই দিনেই নোভাক জোকোভিচকে অলিম্পিক থেকে বিদায় করে দিয়েছিলেন তিনি, তা-ও প্রথম রাউন্ডেই। ব্রাজিল অবশ্য এর চেয়েও বেশি সরগরম হয়ে ছিল আরেক খবরে, যে অলিম্পিক স্বর্ণ জেতা নিয়ে ব্রাজিলের এত অপেক্ষা, প্রথম পর্বের প্রথম দুই ম্যাচ ড্র করে তা-ই যে শঙ্কায় ফেলে দিয়েছিলেন নেইমাররা।

প্রথম প্রকাশ: ৯ আগস্ট ২০১৬। প্রথম আলো

প্রথম রাউন্ড থেকেই নোভাক জোকোভিচের বিদায়, না ইরাকের সঙ্গে ব্রাজিলের ড্র—অঘটনের পাল্লায় কোনটি এগিয়ে থাকবে?

অবশ্যই ব্রাজিলের ড্র। জোকোভিচের হারটাও হইচই ফেলে দেওয়ার মতো। তবে যাঁর কাছে হেরেছেন, সেই হুয়ান দেল পোত্রো একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো কেউ নন। গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছেন। একসময় ছিলেন র‍্যাঙ্কিংয়ের ৪ নম্বরে। এসব অবশ্য অনেক আগের কথা। ২০০৯ সালে রজার ফেডেরারকে হারিয়ে দেল পোত্রো যখন ইউএস ওপেন জেতেন, জোকোভিচের নামও সেভাবে কেউ শোনেনি। ওই এক গ্র্যান্ড স্লামেই অবশ্য শেষ তাঁর মহিমা। গত বছর ছয়েক টেনিস কোর্টে প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে চোটের সঙ্গেই বেশি লড়তে হয়েছে দেল পোত্রোকে।

গত পরশু দিনের শেষটা যেমন মনে রাখবেন দেল পোত্রো, তেমনি শুরুটাও। গেমস ভিলেজে ৪০ মিনিটের মতো লিফটে আটকা পড়ে ছিলেন এই আর্জেন্টাইন। কোথায় যেন পড়লাম, একজন রসিকতা করে লিখেছেন, জোকোভিচের বিপক্ষে ম্যাচটা নিয়ে পোত্রোকে ‘ঠান্ডা মাথায়’ ভাবার সুযোগ করে দিয়েছে লিফটে আটকা পড়ে থাকার ওই সময়টা!

ক্যারিয়ারে সবই জিতেছেন জোকোভিচ। একমাত্র অতৃপ্তি বলতে অলিম্পিক সোনা। লন্ডনে সেমিফাইনালে হেরেছিলেন। পরে ব্রোঞ্জ নির্ধারণী ম্যাচে এই দেল পোত্রোর কাছেই। একটা সময় পেশাদার টেনিস খেলোয়াড়দের কাছে অলিম্পিক ছিল নিছকই ‘ঝামেলা’। সেই দিন বদলেছে। গ্র্যান্ড স্লামকে সবার ওপরে রাখলেও ‘অলিম্পিক বছর’ এখন টেনিস খেলোয়াড়দের বাড়তি মনোযোগ পায়। যেটির সবচেয়ে বড় প্রমাণ, দেল পোত্রোর কাছে হারার পর জোকোভিচের চোখ মুছতে মুছতে কোর্ট থেকে বেরিয়ে যাওয়া। গত মাসেই উইম্বলডনের তৃতীয় রাউন্ডে স্যাম কোয়েরির কাছে পরাজয় তো এর চেয়েও বেশি অপ্রত্যাশিত ছিল। জোকোভিচকে তখন কেউ কাঁদতে দেখেনি। এখানে তিনিই কেন এমন আবেগাপ্লুত?

এমন কান্নাভেজা চোখেই অলিম্পিক ছাড়তে হয়েছিল জোকোভিচকে। ছবি: গেটি ইমেজেস

কারণটা অনুমান করাই যায়। বছর ঘুরতেই আবার উইম্বলডন পাওয়া যাবে, কিন্তু অলিম্পিক তো আবার সেই চার বছর পর। চার বছর পর টোকিওতে জোকোভিচকে কল্পনা করতে একটু কষ্ট হচ্ছে। অলিম্পিক তাই জোকোভিচের কাছে আজীবনের আক্ষেপই হয়ে থাকছে।

ব্রাজিলিয়ান ফুটবলেও অলিম্পিক চিরন্তন এক আক্ষেপের নাম। পাঁচটি বিশ্বকাপ জেতা হয়েছে, কিন্তু একটিও অলিম্পিক নয়। এবার নিজেদের দেশে অলিম্পিক, সেই দুঃখ ঘোচানোর সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগাতে নেইমারকে ছাড়াই কোপা আমেরিকায় খেলতে গেছে ব্রাজিল। নেইমারহীন ব্রাজিল কোপার প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিয়েছিল। নেইমারময় ব্রাজিলেরও অলিম্পিকে এখন একই পরিণতি হওয়ার শঙ্কা। পরপর দুটি গোলশূন্য ড্র আগামী বুধবার ডেনমার্কের বিপক্ষে ম্যাচটাকে বানিয়ে দিচ্ছে অগ্নিপরীক্ষা। যেটিতে নিজেদের দর্শকদেরই ব্রাজিল পক্ষে পাবে কি না, তা নিয়ে ঘোরতর সন্দেহ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ড্রয়ের পর দর্শকেরা দুয়ো দিয়েছে। ইরাকের বিপক্ষে ম্যাচ শেষ হওয়ার জন্যও অপেক্ষা করেনি।

ব্রাসিলিয়ার ওই ম্যাচে সবচেয়ে কৌতুককর ছিল, দর্শকদের ‘মার্তা’ ‘মার্তা’ বলে চিৎকার। নেইমারের পায়ে বল গেলে যা আরও তীব্র হয়েছে। মার্তার নেতৃত্বে ব্রাজিলিয়ান মেয়েরা দুই ম্যাচ জিতে বীরদর্পে উঠে গেছে কোয়ার্টার ফাইনালে। ‘আমাদের মেয়েরাও তোমাদের চেয়ে ভালো খেলে’—নেইমারদের কি এই খোঁচাটাই দিতে চাইলেন হতাশার অন্ধকারে তলিয়ে যেতে থাকা ফুটবল-পাগল ব্রাজিলিয়ান?

অলিম্পিক ফুটবলে কখনো সোনা জেতা হয়নি, এটা অবশ্যই সবচেয়ে বড় কারণ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আরেকটি তাড়নাও। দুই বছর আগে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ৭-১ গোলে পরাজয়ের ওই বিভীষিকাময় স্মৃতিকে কবর দেওয়া। নেইমাররা গোল করাটাকে যেমন বিশ্বের দুরূহতম কাজ বানিয়ে ফেলেছেন, উল্টো নতুন এক কলঙ্ক না যোগ হয়ে যায় ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে!

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×