ইতিহাসের সেরা স্প্রিন্ট জিতলেন গ্যাটলিন

২০০৪ অলিম্পিক

উৎপল শুভ্র

২১ জুলাই ২০২১

ইতিহাসের সেরা স্প্রিন্ট জিতলেন গ্যাটলিন

ইতিহাসের সেরা স্প্রিন্ট বলে '৯১র টোকিওর নামই নেন সবাই। তবে ২০০৪ এথেন্স অলিম্পিক যেন এসেছিল ওই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তেই। যাতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে ৯.৮৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে স্বর্ণ জিতেছিলেন জাস্টিন গ্যাটলিন।

প্রথম প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০০৪। প্রথম আলো

অলিম্পিক ইতিহাসে সেরা ১০০ মিটার? প্রতিযোগীরা সবাই তা–ই বলছেন। বলছেন অ্যাথলেটিকসের সঙ্গে প্রায় ৩০ বছর জড়িয়ে থাকা মার্কিন কোচ জন ওয়াল্টন স্মিথও। ‘১০.১ সেকেন্ড টাইমিং করে আমি সপ্তম হয়েছি। এটাই যে অলিম্পিক ইতিহাসে দ্রুততম ১০০ মিটার, আর কী প্রমাণ চাই’— বললেন সিডনি অলিম্পিকে ব্রোঞ্জজয়ী বারবাডোজের ওবাডেলে টমসন। ইতিহাসের সেই সেরা দৌড়ে জয়ীর নাম... না, সর্বকালের সেরা স্প্রিন্টারের দাবিদার মরিস গ্রিন নন। জয়ীর নাম জাস্টিন গ্যাটলিন।

মার্কিন ট্রায়ালে গ্রিনের পেছনে থেকে দ্বিতীয় হয়েছিলেন, তাঁকে মনে করা হচ্ছিল মার্কিন স্প্রিন্টের ভবিষ্যৎ। মাত্র ৯.৮৫ সেকেন্ড, মাত্র ৯.৮৫ সেকেন্ডেই পাল্টে গেল ২২ বছর বয়সী এই তরুণের জীবন। ভবিষ্যেত বর্তমানে টেনে এনে জাস্টিন গ্যাটলিন এখন আর প্রতিশ্রুতিশীল এক স্প্রিন্টারের নাম নয়। জাস্টিন গ্যাটলিন এই মর্ত্যধামের দ্রুততম মানব। এথেন্স অলিম্পিকের সবচেয়ে দামি চ্যাম্পিয়নও।

গ্যাটলিনের চেয়ে দশমিক শূন্য দুই সেকেন্ড বেশি নিয়েছেন মরিস গ্রিন। এই ৯.৮৭ সেকেন্ডেই সোনা জিতেছিলেন সিডনিতে, অথচ একই টাইমিং করে এখানে তাঁর ব্রোঞ্জ। গ্যাটলিনের সোনা জয় যতটা চমক, পর্তুগালের ফ্রান্সিস ওবিকওয়েলুর রুপা জয়ে চমক তার চেয়ে অনেক বেশি। জন্ম নাইজেরিয়ায়, জন্মভূমির হয়েই অংশ নিয়েছিলেন সিডনি অলিম্পিকে। সেখানে ইনজুরির কবলে পড়ার পর নাইজেরিয়ান কর্মকর্তাদের অবহেলার প্রতিবাদে দেশ ছেড়ে চলে যান পর্তুগালে। নাইজেরিয়া যে কত বড় ভুল করেছে, পর্তুগিজ পরিচয়ে প্রথম কোনো বড় প্রতিযোগিতাতে নেমেই তা বুঝিয়ে দিলেন ওবিকওয়েলু। অথচ তাঁকে কেউ হিসেবেই ধরেনি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন কিম কলিন্স ছিলেন, ছিলেন গত কিছু দিনে সেনসেশন হয়ে ওঠা আসাফা পাওয়েল। অথচ তাঁদের কেউ পদক তালিকায় নেই। ৯.৮৬ সেকেন্ড সময় নিয়ে রুপা জিতে ফেললেন ফ্রান্সিস ওবিকওয়েলু।

ছবি: গেটি ইমেজেস

ফাইনালে ৮ জন প্রতিযোগীর একজন (ঘানার আজিজ জাকারিয়া) পায়ের পেশিতে টান পড়ায় দৌড় শেষ করতে পারেননি। বাকি ৭ জনের ৫ জনই শেষ করেছেন ১০ সেকেন্ডের কমে। গ্যাটলিন ৯.৮৫, ওবিকওয়েলু ৯.৮৬, গ্রিন ৯.৮৭, শন ক্রফোর্ড ৯.৮৯, পাওয়েল ৯.৯৪। এর আগে কোনো দিন ৯.৮৯ সেকেন্ড (ক্রফোর্ড) সময় নিয়ে পদকবঞ্চিত থাকার ঘটনা দেখেনি অলিম্পিক। ইতিহাসের সেরা দৌড় তো বলা হবেই।

সেই দৌড় শেষ হওয়ার পর হাতজোড় করে ট্র্যাকে বসে পড়লেন গ্যাটলিন, তারপর শুরু হলো মাঠ জুড়ে ল্যাপ অব অনার দেওয়ার পালা। ৯.৮৫ সেকেন্ডে ১০০ মিটার দৌড়ানোর চেয়েও এটি নাকি বেশি কঠিন লেগেছে তাঁর কাছে, ‘কী করা উচিত, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।’ এমন গায়ে গায়ে লেগে থাকা লড়াই, তারপরও গ্যাটলিন বলছেন, ‘১০ মিটার বাকি থাকতেই আমি বুঝে ফেলেছিলাম আমার স্বপ্ন সত্যি হতে যাচ্ছে। এত কাছাকাছি সবাই, তারপরও আমার মনে হচ্ছিল বাকিদের চেয়ে ১০০ মাইল এগিয়ে আছি।’

মরিস গ্রিন আর মারিয়ন জোন্সের কীর্তি দেখতে দেখতে বড় হয়েছেন, এ কারণেই বলছেন, ‘মরিস গ্রিন-মারিয়ন জোন্সরা ইতিহাস গড়েছে। আজ আমিও তা পেরেছি।’ পেরেছেন বলেই এখন তিনি বিশ্বের দ্রুততম মানব, তা সেই অনুভূতিটা কেমন? এতক্ষণ খুব বিনয়ী বলে মনে হচ্ছিল, স্প্রিন্টারদের অস্তিত্বের অংশ হয়ে থাকা অহংকারটা বেরিয়ে এল এই প্রশ্নের উত্তরে, ‘এ জন্যই আমার জন্ম হয়েছে। এ জন্যই আমি দৌড়াতে শুরু করেছিলাম, এ জন্যই আমার বেঁচে থাকা।’ 

বিশ্বের দ্রুততম মানব হওয়ার জন্যই তাঁর জন্ম হয়েছে, কিন্তু সেই স্বীকৃতিটাকে আরও পোক্ত করতে বিশ্ব রেকর্ড ভাঙাটাও তো জরুরি। সেটি শুধুই সময়ের ব্যাপার বলেই গ্যাটলিনের দাবি, ‘আজ আমি বিশ্ব রেকর্ডের কথা ভাবিইনি, শুধু জিততে চেয়েছি। টুকটাক দু-একটা জিনিস ঠিক করতে হবে, তাহলেই আমি ৯.৭ সেকেন্ডেই দৌড়াতে পারব।’

৯.৭ সেকেন্ডের চেয়ে একটু বেশি নিলেও চলছে। ১০০ মিটারের বিশ্ব রেকর্ড ৯.৭৯ সেকেন্ড।

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×