বেলারুশের নেস্টেরেঙ্কো বিশ্বের দ্রুততম মানবী
২০০৪ অলিম্পিক
উৎপল শুভ্র
২১ জুলাই ২০২১
অলিম্পিকে দ্রুততম মানবীর খেতাবটা বলতে গেলে যুক্তরাষ্ট্রেরই সম্পত্তি। ১৯২৮-২০০০ পর্যন্ত অলিম্পিকে ৯বারই ১০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণ জিতেছেন কোনো আমেরিকান মানবী। ২০০৪ অলিম্পিকে এসে সেই ধারায় ছেদ ফেললেন বেলারুশের ইউলিয়া নেস্টেরেঙ্কো, ১০.৯৩ সেকেন্ডে দৌড়ে।
প্রথম প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০০৪। প্রথম আলো
মেয়েদের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে যিনি দুই যুগের মার্কিন রাজত্বের অবসান ঘটালেন, এক বছর আগেও বিশ্বের সেরা স্প্রিন্টারদের তালিকায় অনেক পরে আসত তাঁর নামটি। গত পরশু রাতে মেয়েদের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে বেলারুশের ইউলিয়া নেস্টেরেঙ্কোর সোনা জয়টাকে তাই চমকই বলা যায়।
তবে আগের দিন সকালে প্রথম হিট থেকে যাঁরা তাঁকে দেখে এসেছেন, তাঁদের খুব একটা বিস্মিত হওয়ার কথা নয়। আগের নেস্টেরেঙ্কো আর এথেন্সের নেস্টেরেঙ্কো যে এক নন, সেটি প্রথম হিট থেকেই বুঝিয়ে দিতে শুরু করেছিলেন তিনি। প্রথম হিটে ১০.৯৪ সেকেন্ডে জিতে বেলারুশের নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েছিলেন, দ্বিতীয় হিটে ১০.৯৯ সেকেন্ড নিলেও গত পরশু সন্ধ্যায় সেমিফাইনালে ১০.৯২ সেকেন্ড সময় নিয়ে আবারও ভেঙে দেন সেই রেকর্ড। স্থানীয় সময় রাত ১১টায় শুরু হওয়া ফাইনাল জিতলেন ১০.৯৩ সেকেন্ডে।
১৯২৮ সালে আমস্টারডাম অলিম্পিকে মেয়েদের প্রথম ১০০ মিটারে জিতেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বেটি রবিনসন। এরপর ১৬টি অলিম্পিকে ৯ বারই বিশ্বের দ্রুততম মানবীর সম্মান আমেরিকানদের। ১৯৮০ সালে মস্কো অলিম্পিক বয়কট করেছিল যুক্তরাষ্ট্র, সেবার জিতেছিলেন স্বাগতিক সোভিয়েত ইউনিয়নের একজন। এর পর থেকে গত ৫টি অলিম্পিকের প্রতিটিতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এথেন্সে মার্কিনিদের সবচেয়ে বড় আশা হয়ে ছিলেন লরিন উইলিয়ামস, শুরুতে এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত রুপা পেতে হয়েছে তাঁকে। তারপরও ১০.৯৬ সেকেন্ড উইলিয়ামসের সেরা সময়। ১০.৯৭ সেকেন্ড নিয়ে ব্রোঞ্জ পেয়েছেন জ্যামাইকার ভেরোনিকা ক্যাম্পবেল।
ফাইনালে নয়, ১০০ মিটারের আসল নাটক হয়েছে সেমিফাইনালে। গত এক দশকে মেয়েদের স্প্রিন্টে সেরা তিনজন বিদায় নিয়েছেন এখানেই। ’৯২ ও ’৯৬ অলিম্পিকে সোনাজয়ী গেইল ডেভার্স, ’৯৬-এ ডেভার্সের এক সেকেন্ডের এক সহস্রাংশ পেছনে থেকে রুপাজয়ী মারলিন ওটি এবং ২০০১ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইউক্রেনের ঝানা পিনতুসেভিচ ব্লক হয়ে গেছেন ফাইনালের দর্শক।
৫ ফুট ৮ ইঞ্চির ছিপছিপে শরীর, বাতাসে উড়ছে সোনালি চুল— অনেককেই ক্যাটরিন ক্র্যাবের কথা মনে করিয়ে দিলেন ইউলিয়া নেস্টেরেঙ্কো। ২৫ বছর বয়সী এই বেলারুশ এই অলিম্পিকের বছরে এসেই যেন হঠাৎ অন্য স্প্রিন্টার হয়ে গেছেন। গেটশেট, এথেন্সে দুটি মিটে জেতার পর জিতেছেন রোমে গোল্ডেন লিগেও। ওই রোমের সাফল্যটাই তাঁকে বদলে দিয়েছে বলে নেস্টেরেঙ্কোর ধারণা, ‘আমার আত্মবিশ্বাসটা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিল এটি। আমি সব সময়ই আমার সামর্থ্যকে অবমূল্যায়ন করে আসছিলাম। রোমের জয়টাই অলিম্পিকে সোনা জিততে পারি— এই বিশ্বাসটা এনে দেয়।’
ম্যাচ পাতানো কেলেঙ্কারি ক্রিকেটের যে ক্ষতিটা করেছে, ডোপিং একই কাজ করেছে অ্যাথলেটিকসে। অলিম্পিক-বছরে এসেই নেস্টেরেঙ্কোর হঠাৎ এমন উজ্জ্বল হয়ে ওঠা নিয়েও তাই সন্দেহবাদীদের ফিসফাস শুরু হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। সংবাদ সম্মেলনে নেস্টেরেঙ্কোর কাছে যে তাঁর এই নাটকীয় উন্নতির রহস্যটা জানতে চাওয়া হলো, তাতে হয়তো ঊহ্য হয়ে ছিল এই সংশয়টাও। নেস্টেরেঙ্কো অবশ্য স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দিলেন, ‘আমি অন্যভাবে ট্রেনিং করেছি, কিছু নতুন জিনিস করতে চেষ্টা করেছি। সারা বছরই এই অলিম্পিকের কথা ভেবেই প্রস্তুতি নিয়েছি।’ ট্রেনিংয়ে পরিবর্তনটা কী, এটা জানতে চাওয়ার পর অবশ্য এক বাক্যেই সেরে দিলেন উত্তর, ‘অনেক ভারোত্তোলন যোগ করেছি, তবে আমার ট্রেনিং সম্পর্কে আমি আপনাদের বিস্তারিত জানাতে রাজি নই।’