শুরুতেই ‘শেষ’ শারমিনের স্বপ্ন

২০১২ লন্ডন অলিম্পিক

উৎপল শুভ্র

২১ জুলাই ২০২১

শুরুতেই ‘শেষ’ শারমিনের স্বপ্ন

অলিম্পিকে এখনো পদকের স্বপ্ন দেখারই সাহস হয়নি বাংলাদেশের। ২০১২ অলিম্পিকে গিয়ে শুটার শারমিনের তাই আশা ছিল, অনুশীলনের ফর্মটা চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় টেনে নিয়ে যাওয়া। বাছাইয়ের শেষ তিন সিরিজে তা পারলেও প্রথম সিরিজে পারেননি, যে কারণে শেষ তিন সিরিজে ৩০০'র মাঝে ২৯৮ স্কোর করেও বাদ পড়তে হয়েছিল শারমিনকে।

প্রথম প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০১২। প্রথম আলো

জীবনের প্রথম অলিম্পিক। উত্তেজনা-রোমাঞ্চ তো থাকবেই, নার্ভাসনেসও বোধহয় কম নয়। সেটিই কাল হলো শারমিন আক্তার রত্নার। লন্ডন অলিম্পিকে পদক নির্ধারণী প্রথম ইভেন্টটাতেই ছিলেন শারমিন। ওই নার্ভাসনেসের কারণেই হয়তো শুরুটা হলো অভাবিত রকমের খারাপ। এরপর দুর্দান্তভাবে ফিরে এলেও শেষটা আর ভালো হলো না।

মেয়েদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের চূড়ান্ত ফলাফল বলবে, ৫৬ জনের মধ্যে শারমিন ২৭তম। কিন্তু এটা পুরো গল্পটা বলছে না। শেষ তিনটি সিরিজে খুবই ভালো করেছেন। স্কোর—৯৯, ১০০ ও ৯৯। কিন্তু প্রথম সিরিজে স্কোর মাত্র ৯৫। এই ইভেন্টে ৪৯ জন প্রতিযোগীর মধ্যে যেকোনো সিরিজে যা সর্বনিম্ন। এ কারণেই শেষ তিন সিরিজে সম্ভাব্য ৩০০-এর মধ্যে ২৯৮ স্কোর করেও শারমিনের মোট স্কোর হয়ে থাকল ৩৯৩, যা তাঁর ব্যক্তিগত সেরার চেয়ে পাঁচ কম।

অলিম্পিকে বাংলাদেশের পাঁচ অ্যাথলেটের মধ্যে জিমন্যাস্ট সাইক সিজার যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর নিজের মতো করে প্রস্তুতি নিয়েছেন। বিওএর ব্যবস্থাপনায় বাকি চার অ্যাথলেট প্রস্তুতি নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে শারমিনই সবচেয়ে ভালো প্রস্তুতির সুযোগ পেয়েছিলেন। কোচসহ বেশ কয়েক মাস ধরে ইংল্যান্ডে ছিলেন। অনুশীলনেও খুব ভালো করছিলেন বলে তাঁকে নিয়ে বড় আশা ছিল। পদক জয়ের আশা হয়তো নয়। অলিম্পিকে এখনো পদকের স্বপ্ন দেখারই সাহস হয়নি বাংলাদেশের। তা হলে আশাটা ছিল কিসের? অনুশীলনের ফর্মটা যদি চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় টেনে নিয়ে যেতে পারেন! কোয়ালিফাইং পর্ব পেরিয়ে ফাইনালের আটজনের মধ্যে জায়গা পেলেও তো সেটি ‘বড়’ সাফল্য হিসেবেই বিবেচিত হতো।

এসএ গেমসে সোনাজয়ী শারমিন শুরুটা এমন খারাপ না করে ফেললে সেটি হয়তো অসম্ভবও ছিল না। আট ফাইনালিস্টের মধ্যে সর্বনিম্ন স্কোর ৩৯৭। ৪০ শটের কোয়ালিফাইং রাউন্ডে সেটি আবার করেছিলেন পাঁচজন। তাঁদের মধ্যে পাঁচ শটের শ্যুট-অফের মাধ্যমে বেছে নেওয়া হয় চারজনকে।

ছবি: সংগৃহীত

গেমসের প্রথম সোনা নিয়ে সবারই বাড়তি একটা আগ্রহ থাকে। সেটি জিতলেন চীনের ইয়ি সিলিং। এই ইভেন্টে বিশ্বের এক নম্বর ২৩ বছরের তরুণী। সোনাটা তাই অপ্রত্যাশিত কারও গলায় শোভা পায়নি।  তবে অলিম্পিক সোনা বলে কথা, সোনা জয়ের পর সিলিংয়ের প্রতিক্রিয়াটা তাই উচ্ছ্বসিতই হয়েছে, ‘আমার নিজেকে মুভি স্টার মনে হচ্ছে। আমি প্রায় কেঁদেই ফেলেছিলাম।’

ট্রেনিং ক্যাম্পে ছিলেন গত নয় মাস। প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে অনুশীলন করেছেন। চীনাদের প্রস্তুতি যে কঠিন হয়, সে তুলনায় তো এটাকে ‘সামান্য’ই বলতে হয়। এবার গেমসে চীন যে কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে, গেমসের প্রথম সোনা জয় তাতে দারুণ রসদই জোগাল। চার বছর আগে আমেরিকান শ্রেষ্ঠত্বের অবসান ঘটিয়ে পদক তালিকার শীর্ষে ছিল চীন। সেই শ্রেষ্ঠত্বকে প্রশ্নাতীত করতে এবারও সেটির পুনরাবৃত্তি করা জরুরি। গতবারের সাফল্যে যে ‘স্বাগতিক’ হওয়ার সুবিধাকে বড় করে দেখেন অনেকে।

আর কিছুদিন গেলে যুক্তরাষ্ট্র বনাম চীন লড়াইটাই হয়তো এই অলিম্পিকের মূল সুর হয়ে উঠবে।
 

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×