ফেলপসের আরেকটি ‘প্রথম’
২০১২ লন্ডন অলিম্পিক
উৎপল শুভ্র
২১ জুলাই ২০২১
লন্ডন অলিম্পিক ফেলপসকে অভূতপূর্ব সব অভিজ্ঞতা দেবে বলেই যেন ঠিক করে রেখেছিল। ৪x১০০ মিটার মিডলেতে রুপা পাওয়ার আগে ১০০ মিটার ফ্রি-স্টাইল রিলেতেও রুপা। এই অলিম্পিকের আগে তাঁর ১৬টি পদক, তবে রুপা এই প্রথম।
প্রথম প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০১২। প্রথম আলো
মিক্সড জোন দিয়ে যাওয়ার পথে মাইকেল ফেলপস একটু থামেন। বলে যান, ‘রিলেটা কোনো ব্যক্তিগত ব্যাপার নয়।’
কে না তা জানে! তারপরও ফেলপসকে তা বলতে হলো, কারণ একটু আগে শেষ হওয়া ৪x১০০ মিটার ফ্রি-স্টাইল রিলেতে যুক্তরাষ্ট্রের সোনা জিততে না পারার ‘আসামি’কে অনায়াসে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। প্রথম তিনজনই প্রথমে শেষ করার পরও শেষ ১০০ মিটারে রায়ান লোকটি পারেননি। ইয়ানিক অ্যাঙ্গেল তাঁকে ছাড়িয়ে গিয়ে সোনা এনে দিয়েছেন ফ্রান্সকে।
আগের দিন ৪০০ মিটার ব্যক্তিগত মিডলেতে ফেলপসকে হারিয়ে ‘হিরো’ লোকটি এবার ‘ভিলেন’। লন্ডন অলিম্পিক ফেলপসকে অভূতপূর্ব সব অভিজ্ঞতা দেবে বলেই যেন ঠিক করে রেখেছে। গত পরশু ১০০ মিটার ফ্রি-স্টাইল রিলেতে রুপাও তাঁর একটি। এই অলিম্পিকের আগে তাঁর ১৬টি পদক, তবে রুপা এই প্রথম। লারিসা লাতিনিনার দিকে অবশ্য আরেক ধাপ এগোনো হলো এতে। রুশ জিমন্যাস্টের মোট পদকের রেকর্ড ছুঁতে যেকোনো রঙের আর একটি পদক হলেই চলে।
লাতিনিনাকে ছোঁয়াই শুধু নয়, ফেলপসকে তাঁকে ছাড়িয়ে যাওয়াও নিশ্চিতই বলতে পারেন। রিলেতে সোনা হাতছাড়া হয়ে যাওয়াটা যদি হতাশার হয়, গত পরশু আনন্দের উপলক্ষও খুঁজে পেলেন ফেলপস। সেটি অন্য একজনের ব্যর্থতায়। ৪০০ মিটার মিডলেতে ফেলপসের ব্যর্থতা একটা ক্ষেত্রে ‘প্রথম’ হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল কোসুকে কিতাজিমাকে। প্রথম পুরুষ সাঁতারু হিসেবে টানা তিন অলিম্পিকে একই ইভেন্ট জিতে ইতিহাস গড়ার সুযোগ। ১০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে পদকই পাননি গত দুটি অলিম্পিকে ব্রেস্টস্ট্রোক ‘ডাবল’জয়ী জাপানি।
কিতাজিমার ব্যর্থতায় নিশ্চিত হয়ে গেছে, পারলে ফেলপসই পারবেন। আজ ২০০ মিটার বাটারফ্লাইয়েই রচিত হতে পারে সেই ইতিহাস। ২০০১ সাল থেকে সব কটি অলিম্পিক ও বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে (২০০৫ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেননি) এই ইভেন্টে সোনা জিতেছেন। বিশ্ব রেকর্ডটাও তাঁর।
সাঁতারে গত পরশুর দিনটি ছিল রেকর্ডে ভাস্বর। ৪টি ফাইনালের প্রথম দুটিতেই বিশ্ব রেকর্ড হয়েছে, অলিম্পিক রেকর্ড আরেকটিতে। ইতিহাসে প্রথম ৫৬ সেকেন্ডের ব্যারিয়ার ভেঙে মেয়েদের ১০০ মিটার বাটারফ্লাই জিতেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ডানা ভলমার। ছেলেদের ১০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্যামেরন ভ্যান ডার বার্গ সেমিফাইনালে অলিম্পিক রেকর্ড ভেঙেছিলেন। ফাইনালে ভাঙলেন বিশ্ব রেকর্ড। অলিম্পিক সাঁতারে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম সোনাও এটি।
সেটি তিনি উৎসর্গ করলেন এক নরওয়েজিয়ানকে! ১০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আলেক্সান্ডার ডেল ওয়েনকে। বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নই, তবে অ্যালেক্স (এই নামেই পরিচিত ছিলেন) নিজেই অতীত হয়ে গেছেন। গত এপ্রিলে অলিম্পিকের প্রস্তুতি ক্যাম্পে বাথরুমে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় তাঁকে। সুস্থ-সবল এক অ্যাথলেটের হৃদযন্ত্র হঠাৎ কীভাবে বিদ্রোহ করল, তা একটা বিস্ময়ই বটে। অ্যালেক্সের প্রেরণাদায়ী ভূমিকার স্মৃতিচারণা করতে করতে একটু আবেগাক্রান্তই হয়ে পড়লেন ক্যামেরন, ‘সাঁতার শেষ করার পর আমি আকাশে তাকিয়ে অ্যালেক্সকে খুঁজেছি। ও হয়তো ওপর থেকে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিল।’
সাঁতারে প্রথম দুই দিনে ৩টি বিশ্ব রেকর্ড বছর আড়াই আগে বলার মতো কোনো ব্যাপারই হতো না। বডি স্যুটের যুগে রেকর্ড ভাঙা-গড়া যে ছিল ছেলেখেলা। বেইজিং অলিম্পিকে সাঁতারে বিশ্ব রেকর্ড হয়েছিল ২৫টি। সেসবও ভেঙে যেতে সময় লাগেনি। অথচ ২০১০ সালের জানুয়ারিতে ফিনা ওই বডি স্যুট নিষিদ্ধ করার পর এই অলিম্পিকের আগে বিশ্ব রেকর্ড হয়েছে মাত্র দুটি। দুটিই গত বছর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে।
বডি স্যুটের সাহায্য ছাড়াই ১০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে ৫৬ সেকেন্ডের ব্যারিয়ার ভাঙতে পেরেছেন বলে বাড়তি গর্ব আছে ডানা ভলমারের। বলেছেনও তা, ‘বডি স্যুট নিষিদ্ধ করাটা খুব ভালো হয়েছে। এটা কাউকে কাউকে বেশি সাহায্য করেছে। এখন সাঁতার আবার সত্যিকার সহজাত প্রতিভার পরীক্ষায় ফিরে এসেছে।’
কথাটা তো ঠিকই। বডি স্যুট নিষিদ্ধ হওয়ায় আরেকটা লাভও হয়েছে। বিশ্ব রেকর্ড ফিরে পেয়েছে তার মর্যাদা। অবস্থাটা যা হয়েছিল—পুলে নামলেই রেকর্ড—এতে বিশ্ব রেকর্ডের মর্যাদা থাকে নাকি!