মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের একান্ত সাক্ষাৎকার
‘জীবনে আফসোস করে কী হবে!’
উৎপল শুভ্র
১০ জুন ২০২১
কদিন আগে ভারতীয় দল থেকে প্রথমবারের মতো বাদ পড়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁর। সেটিও ভারতের ইনডিপেন্ডেন্স কাপে। এর পরই দলে ফিরেছেন এই ১৯৯৭ এশিয়া কাপে। প্রত্যাবর্তন ম্যাচেই খেলেছেন দারুণ এক ইনিংস। তবে ভারতীয় মিডিয়াকে বিষবৎ পরিত্যাজ্য জ্ঞান করে চলেছেন তখনো। কলম্বোর তাজ সমুদ্র হোটেলের লবিতে তাদের ঈর্ষান্বিত দৃষ্টির সামনে ঠিকই সাক্ষাৎকার দিলেন বাংলাদেশের সাংবাদিককে। হয়তো ভারতীয় সাংবাদিকদের উত্ত্যক্ত করতেই লম্বা সময় ধরে!
উৎপল শুভ্র : দলে ফেরায় অভিনন্দন। নিশ্চয়ই আপনি খুব খুশি?
মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন: অবশ্যই। বিশেষ করে ফিরে এসেই ভালো খেলতে পারায় বেশি খুশি। যদিও ম্যাচটা জিততে না পারায় আনন্দটা পরিপূর্ণ রূপ পায়নি। ব্যাটিং করতে নামার সময় বেশ টেনশন কাজ করছিল, এমনকি খানিকটা নার্ভাসও লাগছিল। অনেক দিন পর খেলতে নামলাম, তাই ভালো করার একটা বাড়তি প্রেরণা ছিলই। তা করতে পেরে আমি খুশি।
শুভ্র : দল থেকে বাদ পড়ার খবর পেয়ে আপনি একটু অবাক হয়েছিলেন? এ অভিজ্ঞতা তো আপনার ছিল না।
আজহার: না, আমি ঠিক অবাক হইনি, হতাশ হয়েছিলাম। কারণ ভারত ইনডিপেন্ডেন্স কাপে খেলছিল, দেশের পক্ষে ১৪ বছর ধরে খেলে আসার পর স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত টুর্নামেন্টে খেলতে না পারাটা আমাকে খুব দুঃখ দিয়েছে। যা হোক, যা হওয়ার হয়েছে। এখন আর আফসোস করে কী হবে! জীবনে আপনি কিছু পাবেন, কিছু পাবেন না। তবে কখনোই ধৈর্য হারালে চলবে না।
শুভ্র : শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে তো আপনি অন্য রকম ব্যাটিং করেছেন। বাদ পড়ার আগে যেমন ব্যাটিং করছিলেন, তেমন নয়।
আজহার : বাদ পড়ার আগে আমি যে খুব খারাপ খেলছিলাম, তা নয়। আমি ভালো খেলতে খেলতে হঠাৎ আউট হয়ে যাচ্ছিলাম। আমার ক্যারিয়ারে এ রকম আগেও বেশ কবার হয়েছে। আমি হয়তো খুব ভালো খেললাম, আবার হঠাৎ ধপ করেই পড়ে গেলাম সেই উচ্চতা থেকে। আমি তাই এর সঙ্গে পরিচিতই এবং এ কারণেই আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে, এটা এমন থাকবে না। আগেই তো বললাম, আমি ধৈর্যকে মনে করি সাফল্যের পূর্বশর্ত। কখনো কখনো পরিস্থিতি প্রতিকূলে যাবে, প্রচুর নেতিবাচক চিন্তা ভিড় করবে মাথায়, সেগুলোকে সরিয়ে রাখতে হবে। এটা বলার চেয়ে করা অনেক কঠিন। তবে আমি বিশ্বাস করি, কেউ যদি মনে-প্রাণে কিছু চায় এবং সে জন্য পরিশ্রম করে, তা হলে সে তা পাবেই ।
শুভ্র : গত নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কলকাতা টেস্টে আপনার ৭৪ বলে সেঞ্চুরিটি আমি মাঠে বসেই দেখেছি। এটা ছিল অন্য রকম এক অভিজ্ঞতা। কিন্তু আগে আপনার ব্যাটিং দেখে যেমন মনে হতো বলকে ব্যাট দিয়ে আদর করে বাউন্ডারিতে পাঠাচ্ছেন, এই ইনিংসে তা নয়, বরং তাতে ছিল বন্য এক আক্রমণাত্মকতা।
আজহার: একদিক থেকে হয়তো আপনি ঠিক। তবে আমার খেলা কিন্তু অনেক আগেই বদলে গেছে। এটা আমার ইচ্ছেতেই হয়েছে। আপনি যদি অনেক দিন ধরে খেলেন, তা হলে অনেক ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে, সেসবের সঙ্গে মানিয়েও নিতে হবে। বোলিংয়ের প্রকৃতির ওপরও তা নির্ভর করে। আসলে এখন খেলাটা এমন জায়গায় গেছে যে, সবকিছু নিয়েই গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করা হয় । আপনার খেলা টেলিভিশনে দেখে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হবে—কোনটি আপনার শক্তিশালী দিক আর কোনটি দুর্বল জায়গা। কেউই আপনার শক্তিশালী দিক অনুযায়ী খেলবে না। আপনাকে তাই নতুন কিছু করতেই হবে। আমিও তা-ই করেছি, কিছুদিনের জন্য তা কাজও করেছে।
শুভ্র : দলে কামব্যাক করার পর কি আপনার ব্যাটিংয়ে তেমন কোনো পরিবর্তন এসেছে?
আজহার : এটা আসলে পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। আমি মাত্রই বলেছি, যদি আমি মনে করি নতুন কিছু করা উচিত আমি অবশ্যই চেষ্টা করব । দেখেছি, এতে কাজ হয়।
শুভ্র : দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কলকাতার ওই সেঞ্চুরিটিকে আপনি কীভাবে বিচার করেন?
আজহার : ওই ইনিংসটি খেলে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। আগের দিন আমি ইনজ্যুরড হয়েছিলাম, পরদিন ব্যাটিংয়ে নেমে বল খুব ভালো মারছিলাম। এক দুইয়ের বদলে বাউন্ডারিতে রান এলে তো সব সময়ই সুবিধা। হাফ সেঞ্চুরি-সেঞ্চুরি সবকিছুতেই আগে পৌছুতে পারা যায়। তবে চাইলেই তো আর সব সময় তা হয় না। ক্যারিয়ারে হয়তো সাত-আটবার এমন হয়। এই ইনিংসটি আমাকে দারুণ তৃপ্তি দিয়েছিল। টিভিতে হয়তো বোঝা যায়নি, আমি কিন্তু ব্যথায় খুব কাতর ছিলাম। সকালে তো আমি ঠিক মনে ব্যাটিংই করতে পারছিলাম না।
শুভ্র: এর আগে আমাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আপনি ১৯৯০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডসের সেঞ্চুরিটিকে আপনার সেরা ইনিংসের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। কলকাতার ইনিংসটিকে কি সেটিরও ওপরে রাখবেন?
আজহার: না, এখনো মনে করি লর্ডসের ইনিংসটিই সেরা। তবে গত দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে (১৯৯৬) কেপটাউনে খেলা ইনিংসটিকেও কাছাকাছি রাখতে চাই। আসলে আমি বেশ কটি ইনিংস খেলেছি, যেগুলো অনেকটা একই রকম। সাত আটটা হান্ড্রেড আছে, যেগুলো আমাকে খুব তৃপ্তি দিয়েছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কলকাতায় ১৮২ রানের ইনিংসটিও (১৯৯৩ সালে) মনে পড়ছে। আসলে আমার পক্ষে এগুলো থেকে একটিকে সেরা হিসেবে বেছে নেওয়া খুব কঠিন। কারণ ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন রকম বোলিংয়ের বিপক্ষে খেলেছি এগুলো। তবে আমি মনে করি, শেষ পর্যন্ত যা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো দর্শকর এই ইনিংসগুলো উপভোগ করেছে।
শুভ্র : সবকিছু বিবেচনায় নেওয়ার পরও কোন ইনিংসটি আপনার কাছে সবচেয়ে বেশি স্মরণীয়?
আজহার : স্মরণীয় যদি বলেন, তাহলে প্রথম তিনটি টেস্ট সেঞ্চুরিই। এটা আমি কোনোদিন ভুলতে পারব না। টেস্ট ক্রিকেটের শুরুটা অমন হবে এটা তো আমি কোনোদিন কল্পনাও করিনি। যে টেস্টে আমার অভিষেক হলো, সেটিতে খেলাটাই তো নিশ্চিত ছিল না। আগের রাতে জানতে পারলাম, কাল খেলছি। শুনে আনন্দের সঙ্গে টেনশনও হচ্ছিল। কারণ ঘরোয়া মৌসুমে আমি খুব ভালো করেছিলাম বলে মানুষের প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। সেঞ্চুরি পেয়ে তাই দারুণ আনন্দের সঙ্গে নিজেকে নির্ভারও লাগছিল।
শুভ্র : অধিনায়ক হিসেবে আপনার কাছে স্মরণীয়তম মুহূর্ত কোনটি?
আজহার : প্রথমেই মনে আসছে হিরো কাপ জয়ের কথা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ টেস্টে সিরিজ জয়টাও খুব স্মরণীয়। ওই সময়ের সবগুলো জয়ই আসলে তা ই। আবারও পুনরুক্তি করে বলতে হয়, ওই সাফল্যের পেছনেও ধৈর্যের বিরাট ভূমিকা ছিল। '৯২ সাল পর্যন্ত আমরা শুধুই হারছিলাম। এরপর হঠাৎ করে জয় পাওয়াটা ছিল তাই দারুণ আনন্দের ব্যাপার।
শুভ্র : অধিনায়কত্ব হারানোটা কি এখনো আপনাকে কষ্ট দেয়?
আজহার: না, না, কষ্টের প্রশ্ন আসে কোত্থেকে? ওই কয়েক বছর অধিনায়কত্ব করাটা আমার ভাগ্যে ছিল, আমি করেছি। এই পৃথিবীতে কেউই আপনাকে যেমন কিছু দিতে পারে না, তেমনি কিছু কেড়েও নিতে পারে না। আমি একই সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম ও ভাগ্যে বিশ্বাসী।
শুভ্র: আবার ভারতের অধিনায়কত্ব ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখেন নাকি?
আজহার: আমি সত্যি জানি না। আমি শুধু যত দিন সম্ভব খেলে যেতে চাই। এ নিয়ে ভাবতে চাই না।
শুভ্র: অধিনায়ক হিসেবে খেলা আর শুধু দলের আর দশজন খেলোয়াড়ের একজন হিসেবে খেলার মধ্যে কি পার্থক্য খুঁজে পান?
আজহার: আমি দুভাবে খেলাটাই উপভোগ করেছি। অধিনায়ক হলে একটা বাড়তি চাপ থাকে। কিন্তু সেই চাপসহই অধিনায়কতুটা আমি উপভোগ করেছি। তবে অধিনায়ক না থেকে খেলতেও আমার কোনো অভিযোগ নেই। যেভাবেই খেলি, আমি সব সময়ই হান্ড্রেড পার্সেন্ট দিয়ে এসেছি। কখনো হয়তো বাজে শট খেলে আউট হয়েছি। কিন্তু তা খেলারই অংশ, ভুল তো সবাই করে।
শুভ্র: ছয় বছর ভারতের অধিনায়কত্ব করেছেন। এত বছর নেতৃত্বে থাকার পর হঠাৎ যখন একদিন দেখলেন, ওভার শেষে বল আর আপনার কাছে আসছে না, তখন একটু অন্য রকম লাগেনি?
আজহার : এটা আমার কাছে কোনো ব্যাপারই মনে হয়নি। আমি জানি না, হয়তো একেকজনের একেক অনুভূতি হবে, তবে আমার জন্য এটা কোনো সমস্যাই হয়নি। কারণ আমি সবকিছু অনেক বড় প্রেক্ষাপটে দেখি। আমি নিজেকে ছোট ছোট বিষয়, এক কথায় সংকীর্ণতায় আবদ্ধ করতে চাই না।
শুভ্র : গত এপ্রিলে সিঙ্গাপুরে সিঙ্গার ট্রফির সময় আপনি বলেছিলেন, এমনকি রাহুল দ্রাবিড়ের নেতৃত্বেও আপনি খেলতে রাজি। রাহুল দ্রাবিড় তখন মাত্রই দলে এসেছে।
আজহার: তখন আসলে সবাই আমাকে অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন করে জ্বালিয়ে মারছিল। আমার মনে হয়, আমি সবচেয়ে ভালো কথাটাই বলেছিলাম। কারণ আসলেই তো কারও নেতৃত্বেই খেলতে আমার সমস্যা নেই। অন্য কেউ যদি অধিনায়কত্ব পায় এবং ভালো করে, তাহলে তো খুশিই হওয়া উচিত। এভাবেই তো ঈর্ষাকে জয় করতে হবে। মিথ্যে বলব না, কখনো কখনো ঈর্ষা আপনার হবেই। কিন্তু মানুষের তা জয় করার চেষ্টা থাকা উচিত। অন্য কেউ ক্যাপ্টেন হয়ে ভালো করলে তো দেশেরই লাভ। এতে তো খুশিই হওয়া উচিত। আমি বুঝতে পারি না, কেউ কেউ কেন এত সংকীর্ণ চিন্তা করে। কারণে এর ফলে দলে খুব সমস্যা হয়। এতে কারোরই লাভ হয় না।
শুভ্র : আপনার দল থেকে বাদ পড়ায় অনেকেই তো শচীন টেন্ডুলকারের বড় ভূমিকা দেখে।
আজহার: আমি জানি না। তবে এটুকু বলতে পারি, শচীনের সঙ্গে আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি একটা জিনিস খুব বিশ্বাস করি, সৃষ্টিকর্তা চাইলে কেউই আপনাকে কিছু পাওয়া থেকে বঞ্চিত করতে পারবে না। আপনার জন্য যা নির্দিষ্ট করা আছে, তা আপনি পাবেনই। তার কমও নয়, বেশিও নয়। ক্রিকেটে এই কথাটা মনে রাখা আরও বেশি জরুরি। এটা এমন একটা খেলা, যা আপনাকে হঠাৎ আকাশে তুলে দেবে, আবার হঠাৎই নামিয়ে আনবে মাটিতে। তাই অন্যায় করলে একসময় ঠিকই বুঝতে পারবেন যে, আমার ও-রকম করা ঠিক হয়নি। আমার মনে হয়, এই উপলব্ধির জন্য শিক্ষাটা খুব জরুরি। শিক্ষা আপনাকে জীবনে ডিসিপ্লিনড় হতে শেখায়, মানুষের সঙ্গে কী আচরণ করতে হবে তা শেখায়। কীভাবে অন্যের কাছ থেকে সম্মান অর্জন করতে হয়, অন্যদের সম্মান করতে হয় তা-ও। শিক্ষিত লোক না হলে এসবে সমস্যা হয়। এ কারণেই পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মেই জ্ঞান লাভের কথা বলা আছে। আপনি যত জানবেন, ততই চোখের সামনে নতুন নতুন দিগন্ত খুলে যাবে।
শুভ্র : আবারও কলকাতায় ওই ৭৪ বলে সেঞ্চুরিতে ফিরতে হচ্ছে। ওই সেঞ্চুরির পর দর্শকের অভিনন্দনের জবাবে ব্যাট তোলেননি। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথাও বলেননি। কেন?
আজহার : কলকাতার দর্শকদের আচরণে আমার খুব খারাপ লেগেছিল। ১৯৯৫ সালে এশিয়া কাপ জয়ের পর আমরা কলকাতায় একটা প্রদর্শনী ম্যাচ খেলেছিলাম । কিন্তু এশিয়া কাপ ফাইনালে বাংলার একজন খেলোয়াড়কে (বাঁহাতি স্পিনার উৎপল চ্যাটার্জি) খেলানো হয়নি বলে দর্শকেরা সে ম্যাচে মাঠে জলের বোতল, পাথর এসব ছুড়েছিল। আমার এতে খুবই খারাপ লেগেছিল। আমরা এশিয়া কাপে খারাপ করলে তা-ও একটা কথা ছিল। আমরা জিতেছি এবং ফাইনালের জন্য আমরা মনে করেছি, সেটিই ছিল সেরা দল। ভারতের পক্ষে খেলার সময় কে বাংলার খেলোয়াড় আর কে বোম্বের এটা মনে রাখা খুব অনভিপ্রেত। আমি জানি, বাংলার দর্শকেরা খুব আবেগপ্রবণ। কিন্তু আপনি যদি আপনার আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারেন, তাহলে কিসের মানুষ?
আর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলিনি, কারণ এর আগে আমার সম্পর্কে অনেক আজেবাজে কথা লেখা হয়েছে। আমাকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে। এ কারণেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কথা না বলার। যার যা ইচ্ছে লিখুক, এক সময় তো থামতেই হবে। আমার জন্য এটি ছিল খুব হতাশার, কারণ আমি মানুষের সঙ্গে কথা বলতে ভালোবাসি।
শুভ্র : ভারতীয় প্রেস কি তাহলে আপনার সঙ্গে অবিচার করেছে?
আজহার: আমি কাউকে দোষ দিতে চাই না। তবে আমি মনে করি, আপনি যদি আমাকে নিয়ে এমন কিছু লিখতে চান যা আলোড়ন সৃষ্টি করবে, তাহলে লেখার আগে আমার সঙ্গে একবার কথা বলে নিন না কেন! তাহলে তো পুরো সত্যটা পাওয়া যাবে। নইলে একদিন যখন আপনি বুঝতে পারবেন যে, আপনি ঠিক কথা লেখেননি, নিজেই নিজের কাছে অপরাধী হয়ে থাকবেন। এর চেয়ে বাজে ব্যাপার তো আর কিছু হতে পারে না।
শুভ্র : আর কত দিন খেলার ইচ্ছে?
আজহার : যত দিন আমি ফিট থাকব, যত দিন ফর্ম থাকবে। আমি দলের বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। তার আগেই বিদায় নেব।
শুভ্র : যখন পেছনে ফিরে তাকান, নিজের রেকর্ডে সন্তুষ্টি বোধ করেন?
আজহার: হ্যা, আমার রেকর্ডে আমি সন্তুষ্ট। অতৃপ্তি একটাই, আমি মনে করি এত দিনে টেস্ট ক্রিকেটে আমার ছয় হাজার রান থাকা উচিত ছিল। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে আমার অনেক উত্থান-পতন হয়েছে, সে কারণেই হয়নি। এছাড়া আমার আর কোনো অতৃপ্তি নেই।
শুভ্র : বাংলাদেশ ওয়ানডে স্ট্যাটাস পেয়েছে। এ ব্যাপারে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
আজহার : এটি খুবই ভালো ব্যাপার। আমি আইসিসি ট্রফির বিস্তারিত স্কোর জানি না, তবে শুনেছি বাংলাদেশ সেখানে ভালো খেলেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। বাংলাদেশের ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়াটাকে আমি দারুণ ব্যাপার মনে করি। নতুন নতুন দেশ উঠে আসার অর্থই ক্রিকেট আরও জনপ্রিয় হচ্ছে। আমাদেরকে এ লক্ষ্যেই এগোতে হবে। ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দিতে হবে আরও। ক্রিকেটকে ফুটবলের নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করলে তা অর্জন করা অসম্ভব বলে মনে করি না আমি। কারণ ক্রিকেটে এখন টাকার অভাব নেই, প্রচুর কোম্পানি এগিয়ে আসছে।
শুভ্র : প্রতিষ্ঠিত একজন আন্তর্জাতিক তারকা হিসেবে বাংলাদেশের মতো উঠতি দেশের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
আজহার : আমি প্রথমেই যেটা বলব, তা হলো প্রতিভা খুঁজে বের করতে হবে। প্রতিভা ঠিকমতো চিহ্নিত করাটা খুব জরুরি। ৫০-৬০ জনকে নিয়ে ক্যাম্প করে কোনো লাভ নেই। দেশের সেরা ২০ জন খেলোয়াড়কে বেছে নিয়ে তাদের সব ধরনের সাপোর্ট দিন। তাদের স্পনসর জোগাড় করে দিন। তাদের যেন আর কোনো কিছু ভাবতে না হয়, শুধু ক্রিকেটেই মনোযোগ দিতে পারে। কাউকে যেন ভাবতে না হয়, কাল আমাকে চাকরিতে যেতে হবে, যেতে না পারলে কী হবে। খেলোয়াড়দের এসব ব্যাপারে নিশ্চিন্ত করতে পারলে ওরা খেলায় উন্নতি করবেই।
আরেকটা জিনিস খুব গুরুত্বপূর্ণ, অবকাঠামোর উন্নতি করতে হবে। ফ্যাসিলিটিজ ভালো না হলে খেলোয়াড়রা তাদের স্কিল উন্নত করতে পারবে না। উদাহরণ দিয়েই বলি, মাঠের অবস্থা ভালো না হলে খেলোয়াড়রা কখনো ডাইভ দিতে শিখবে না। আমাদের বেশির ভাগ দেশেই উইকেট খুব খারাপ। ক্রিকেটে ভালো করতে হলে ভালো উইকেট অপরিহার্য। আমি মনে করি, এ ব্যাপারে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। বাংলাদেশের কারও দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে এসব দেখে আসা উচিত। সব হয়তো করা যাবে না, তবে কিছু জিনিস করতেই হবে। গর্ডন গ্রিনিজ বাংলাদেশের দায়িত্ব নিয়েছেন, এটা খুব ভালো ব্যাপার। গ্রিনিজের অভিজ্ঞতার সঙ্গে খুব কম জনেরই তুলনা চলে। অনেক দিন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে খেলেছেন, তাও যেনতেনভাবে নয়, দারুণ কৃতিত্বের সঙ্গে। আমি মনে করি, গ্রিনিজ দায়িত্বে থাকলে চার-পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ভালো দলে পরিণত হবে।