ব্যাটসম্যান পন্টিং, অধিনায়ক পন্টিং
উৎপল শুভ্র
২৭ জানুয়ারি ২০২১
টানা ক্রিকেট খেলার ক্লান্তি নিয়েই এসেছিল অস্ট্রেলিয়া দল, এরপর বাংলাদেশে রুদ্ধশ্বাস ব্যস্ততার এক সফর। বাধ্যতামূলক সংবাদ সম্মেলনের বাইরে কথা বলায় অনীহার মাধ্যমে ক্লান্তিটা বুঝিয়েও দিয়েছে অস্ট্রেলীয় খেলোয়াড়রা। তারপরও ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়া দলের সেই বাংলাদেশ সফরে অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক রিকি পন্টিং এই একটা সাক্ষাৎকার না দিয়ে পারেননি।
প্রথম প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল, ২০০৬। প্রথম আলো।
উৎপল শুভ্র: প্রথম প্রশ্নটা আপনার অবিশ্বাস্য সাম্প্রতিক ফর্ম নিয়েই হোক। গত এক-দেড় বছর তো রীতিমতো রানের ফোয়ারা ছুটছে আপনার ব্যাট থেকে। কী বলবেন এটিকে, ক্যারিয়ারের সেরা সময়?
রিকি পন্টিং: তা বলতে পারেন। তবে এক-দেড় বছর কেন, গত তিন-চার বছর ধরেই আমি মোটামুটি একটা ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আসছি। এটাকে আমি অধিনায়কত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত বলেই মনে করি। ওয়ানডে ক্রিকেটের কথা যদি বলেন, আমি অধিনায়কত্ব পেয়েছি বছর তিনেক আগে। টেস্ট দলের দু বছর আগে। ভালো ফর্ম বা আপনি যেটাকে ক্যারিয়ারের সেরা সময় বলছেন, সেটি কিন্তু এই সময়েই। শুধু আমার জন্যই নয়, গত কয়েকটা বছর আমাদের দলের জন্যও দারুণ কেটেছে। আমরা নতুন অনেক কিছু অর্জন করেছি, দারুণ কিছু সিরিজ জিতেছি—সব মিলিয়ে আমার ক্যারিয়ারের দারুণ উপভোগ্য একটা সময়ই বলতে হবে এটিকে।
শুভ্র: অধিনায়কত্ব তো দুধারী তলোয়ার। অনেকেই তো এর চাপে উল্টো নিজের খেলা ভুলে যান। আপনার ক্ষেত্রে তো তা হয়ইনি, বরং এটি আরও প্রেরণাদায়ী হয়ে উঠেছে। কৌশলটা কী, ব্যাটিং করার সময় ‘আমি অধিনায়ক’, এটা ভুলে শুধুই নিজের ব্যাটিং নিয়ে ভাবা?
পন্টিং: ঠিক তা-ই। আমি ঠিক তা-ই করি। যখন ব্যাট করতে নামি, তখন আর আমি অধিনায়ক নই। তখন আমি শুধুই দলের জন্য সেরাটা ঢেলে দেওয়ার চেষ্টা করা একজন ব্যাটসম্যান, এটাই তখন আমার ধ্যানজ্ঞান। আমার কাছে অধিনায়কত্বের অর্থ এই নয় যে, সারাক্ষণই এ নিয়ে ভাবতে হবে। অন্য খেলোয়াড়রা কে কী করল, সব সময় তা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকতে হবে। আমি জানি, ওরা ওদের মতো করে প্রস্তুতি নেবে। দল হিসেবে আমরা কী অর্জন করতে চাই, সেটি যদি আমার কাছে পরিষ্কার থাকে এবং মাঠে তার রূপায়ণ করতে পারি, সেটাই তো আসল ব্যাপার। ব্যাটিংয়ের সময় মাথাটা পরিষ্কার থাকা খুব জরুরি। অন্য কোনো চিন্তা যদি সেখানে ভিড় করে, তাহলে আপনি সেরা খেলাটা খেলতে পারবেন না।
শুভ্র: আপনার অধিনায়কত্বের দর্শনটা কি ব্যাখ্যা করে বলবেন? প্রশ্নটা অন্যভাবে করি, মার্ক টেলর ও স্টিভ ওয়াহর মতো দুজন দারুণ সফল অধিনায়কের অধীনে আপনি খেলেছেন। তারা আপনার অধিনায়কত্বের ধরনকে কতটা প্রভাবিত করেছে?
পন্টিং: অধিনায়কত্বের পুরো ব্যাপারটিই ব্যক্তিত্বের ওপর নির্ভরশীল। প্রত্যেকের ব্যক্তিত্ব যেহেতু ভিন্ন, তাই অধিনায়ক হিসেবেও তারা ভিন্ন হতে বাধ্য। একই পরিস্থিতিতে একেকজন একেকভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে। মার্ক টেলর ও স্টিভ ওয়াহ দুজনের কাছ থেকেই আমি অনেক কিছু শিখেছি। শুধু এই দুজন কেন, যত অধিনায়কের অধীনে খেলেছি, সবার কাছ থেকেই শিখেছি কিছু না কিছু। তবে আমি তো আগেই বললাম, আমার কাছে অধিনায়কত্ব ব্যাপারটি হলো ব্যক্তিত্ব ও তাৎক্ষণিকভাবে মন যা বলে তাতে সাড়া দেওয়া। আমি অনেক দিন খেলছি, খেলাটাও মোটামুটি বুঝি বলেই ধারণা, এরপর ওই সহজাত প্রবৃত্তির ব্যাপারটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। অধিনায়ক হিসেবে আমি স্টিভ ওয়াহর চেয়ে অনেক আলাদা, মার্ক টেলরের চেয়েও। তবে আমার অধিনায়কত্বে দল যেমন করছে, যে পথে আমরা এগোচ্ছি, তাতে আমি যথেষ্টই সন্তুষ্ট।
শুভ্র: মার্ক টেলর ও স্টিভ ওয়াহ দুজনই তো অনেক বড় অধিনায়ক ছিলেন। যদি জানতে চাই, আপনার কাছে অধিনায়ক হিসেবে তাঁদের ট্রেডমার্কটা কী ছিল?
পন্টিং: দুজন পুরোপুরি আলাদা। স্টিভ ছিল কঠিন এক চরিত্র। ওর ধরনটা ছিল, দৃষ্টান্ত স্থাপন করে সেটির মাধ্যমেই অন্যদের অনুসরণ করতে বলা। মাঠে ব্যাটিংয়ের মতো মাঠের বাইরে দলের সঙ্গে ওর সব কর্মকাণ্ডই ছিল, সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া বলতে যা বোঝায়, তা-ই। মার্ক টেলরের অধিনায়কত্ব ছিল অনেকটা তাঁর ব্যাটিংয়ের মতোই। স্টিভের চেয়ে মার্ক হয়তো ভালোভাবে নিজের যুক্তিটা অন্যদের বোঝাতে পারত, মাঠে ট্যাকটিশিয়ান হিসেবেও হয়তো এগিয়ে। তবে একটা কথা বলে রাখি, শুধু মাঠে দেখে কোনো অধিনায়ককে বিচার করা কঠিন। বিশেষ করে বাইরের কারো জন্য। কারণ অধিনায়কত্বের অনেকটাই হয় খেলার আগে, মাঠের বাইরে। অন্য খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলা, তাদের দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে দেওয়া—এসব কাজ সেরেই মাঠে নামতে হয় অধিনায়ককে। আমি তাই শুধু মাঠে দেখে প্রতিপক্ষ অধিনায়ককে বিচার করতে রাজি নই। কারণটা আগেই বলেছি, অধিনায়কত্বের অনেকটাই হয় বদ্ধ দরজার পেছনে।
শুভ্র: স্টিভ ওয়াহর কাছ থেকে বিশ্বজয়ী এক দল পেয়েছেন আপনি। এমন একটি দলের অধিনায়কত্ব করাটা যেমন আনন্দের, তেমনি জ্বালাও তো কম নয়। জিতলেও অনেক সময় শুনতে হয়, না, অস্ট্রেলিয়া আগের মতো দাপট দেখিয়ে জিততে পারছে না। আপনার ওপর চাপটা তো অন্য রকম।
পন্টিং: ঠিকই বলেছেন। শুরুতে এই চাপটা খুব ভালোই অনুভব করেছি আমি। সেটি মূলত এর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বজয়ী পারফরম্যান্সের কারণেই। টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে আমার প্রথম সফর ছিল শ্রীলঙ্কায়। শ্রীলঙ্কা সফরটা সব সময়ই কঠিন, সেখানে জেতাটাও খুব কঠিন। অথচ আমরা শ্রীলঙ্কাকে হোয়াইটওয়াশ করলাম। ৩-০-তে টেস্ট সিরিজ জিতলাম, এর আগে শ্রীলঙ্কা কোনো দিন এভাবে হারেনি। এমন দারুণ একটা শুরু করতে পেরেছিলাম বলে আমার সতীর্থদের কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত। কারণ ওই সিরিজটা হারলে আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে অনেক কথাই বলা হতো। ভবিষ্যতেও কখনো তা হতে পারে। তবে যেসব ব্যাপারে আমার নিজের নিয়ন্ত্রণ নেই, তা নিয়ে আমি ভাবতে চাই না। আমি নিজে যদি খুশি থাকি এবং টিমমেট ও দলের সাপোর্ট স্টাফরা সন্তুষ্ট থাকে, কে কী বলল, তাতে আমার কিছু আসে-যায় না।
শুভ্র: অনেক দিন ধরেই একটা কথা আপনাকে জিজ্ঞেস করব ভাবছি। ছোটবেলায় আপনার দাদী নাকি আপনাকে একটা টি-শার্ট দিয়েছিল, তাতে লেখা ছিল—‘ওয়ান ডে রিকি উইল প্লে টেস্ট ক্রিকেট!’
পন্টিং: এটা তো অনেক দিন আগের কথা। কথাটা সত্যি, উনি একটা টি-শার্ট কিনে এনে তাতে অমন একটা ছাপ দিয়ে আমাকে উপহার দিয়েছিলেন। আসলে কথাটা ছিল—‘ইনসাইড দিস, দেয়ার ইজ আ ফিউচার অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার।’ এই গল্পই এখন খুব বিখ্যাত হয়ে গেছে। গত কয়েক বছরে এ নিয়ে প্রায় চার হাজার আর্টিকেল লেখা হয়েছে (হাসি)!
শুভ্র: তা দাদী কি ক্রিকেটে আপনার আগ্রহ দেখে ওই টি-শার্ট বানিয়েছিলেন, নাকি এটা ছিল আপনাকে নিয়ে তার নিজেরই স্বপ্ন?
পন্টিং: হয়তো আমার আগ্রহ দেখেই। সেই ছোট্টটি থাকার সময় থেকেই আমি বলতাম, একদিন অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ক্রিকেট খেলব। অনেক ব্যাপারে আমার আগ্রহের নড়চড় হলেও এই একটা জায়গা কখনো বদলায়নি।
শুভ্র: ‘কিশোর প্রতিভা’ পরিচিতি নিয়েই তো আপনার বেড়ে ওঠা। অস্ট্রেলিয়ান একাডেমিতে ভর্তি হওয়ার পর আপনাকে দেখে রডনি মার্শ বলেছেন ‘এমন খেলোয়াড় এক প্রজন্মে একজনই আসে।’ শুরু থেকেই এই যে প্রত্যাশার চাপ, এটির কীভাবে সামলেছেন আপনি?
পন্টিং: আমার সম্পর্কে কে কী বলল, তা নিয়ে আমি কখনো মাথা ঘামাইনি। রড মার্শ যা বলেছিলেন, তা অবশ্যই ভালো লাগার মতো কথা। তবে আমি যদি সেটি নিয়েই বেশি ভাবতাম, তাহলে আজ এখানে (অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক হিসেবে) বসতে পারতাম না। সাবেক খেলোয়াড়-কোচরা আমার প্রশংসাসূচক যা বলেছেন, আমি তা এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দিয়েছি। আমি কী অর্জন করতে চাই, সে ব্যাপারে আমার পরিষ্কার ধারণা ছিল। এ কারণেই পেছন ফিরে তাকিয়ে প্রত্যাশার চাপকে কখনোই আমার কোনো সমস্যার কারণ বলে দেখতে পাই না।
শুভ্র: আপনার এই কথাগুলো তো মোহাম্মদ আশরাফুলের জন্য বড় শিক্ষা হতে পারে। ১৬ বছর বয়সে টেস্ট সেঞ্চুরি করার পর থেকে প্রত্যাশার চাপই তো ওর কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাল (২৬ এপ্রিল) তো দল থেকেই বাদ পড়ে গেল।
পন্টিং: সব ক্রিকেটারেরই ক্যারিয়ারে এমন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এমন কাউকে আপনি পাবেন না, যার এমন হয়নি। আমি এটাকে খুব খারাপ বলেও মনে করি না। ও কালকের ম্যাচে ড্রপড হয়েছে। এই অস্ট্রেলিয়া দলকেই দেখুন না, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ছাড়া সবাই কখনো না কখনো দল থেকে বাদ পড়েছে। এটাকে ভালো বলছি, কারণ এতে নিজের খেলা নিয়ে ভাবার সুযোগ মেলে। আমি নিশ্চিত, আশরাফুল আরও ভালো খেলোয়াড় হয়ে ফিরে আসবে।
শুভ্র: আবার আপনার ব্যাটিং প্রসঙ্গে আসি। কোনো ম্যাচে বা সিরিজে লক্ষ্য ঠিক করে নামার অভ্যাসটা আছে আপনার?
পন্টিং: না, আমি লক্ষ্য-টক্ষ্য ঠিক করায় বিশ্বাসী নই। আমি মনে করি, যেকোনো ব্যাটসম্যান, শুধু ব্যাটসম্যানই বা কেন, যেকোনো ক্রিকেটার এমনিতেই প্রতিদিন তার সেরা খেলাটা খেলার লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নামে। ওসব লক্ষ্য-টক্ষ্য ঠিক করা মানে অহেতুক বাড়তি চাপ তৈরি করা। যেকোনো দিনই আমি ব্যাট করতে নামি না কেন, আমার লক্ষ্য থাকে একটাই—যত বেশি সম্ভব রান করা। ধরুন, এমন যদি হয়, ৪০০ রান করার লক্ষ্য নিয়ে কোনো সিরিজ শুরু করে আমি ৩০০ রান করলাম, তাহলে কী হবে? আমি মন খারাপ করে ভাবতে শুরু করব, লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ হয়েছি। ওসবের কী দরকার! আমি শুধু মাঠে নেমে যত বেশি সম্ভব রান করার চেষ্টায় বিশ্বাস করি। কতটা ভালো খেলোয়াড় হতে পারি, কতটা ভালো অধিনায়ক... আমার প্রতিদিনের চেষ্টা তো তা-ই।
শুভ্র: এই চেষ্টা গত কিছুদিন যেভাবে সেঞ্চুরি আনছে, তাতে তো মনে হচ্ছে, শচীন টেন্ডুলকারের অধিকারে ৩৫ টেস্ট সেঞ্চুরির যে রেকর্ড, এক বছরের মধ্যেই তা ভেঙে দেবেন আপনি।
পন্টিং: (হেসে) না না, তা হচ্ছে না। আবার আমরা টেস্ট খেলব এই বছরের শেষ দিকে। পুরো ২০০৬-২০০৭ মিলিয়েও বোধ হয় আমাদের পাঁচটি টেস্ট ম্যাচের বেশি নেই। এই সময়ে শচীন তো আর বসে থাকবে না, নিশ্চয়ই সেঞ্চুরির সংখ্যা বাড়াবে। এই রেকর্ডের কথা ভাবার জন্য আমাকে তাই আরও কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে।
লারা-টেন্ডুলকারের প্রতি আমার কোনো ঈর্ষা নেই। আমি সব সময়ই বলে এসেছি, আমি যাদের বিপক্ষে খেলেছি, তাদের মধ্যে লারা আর টেন্ডুলকারই সেরা। এমনকি আমার দেখা সেরা দুই ব্যাটসম্যানও সম্ভবত তারাই।
শুভ্র: গত এক দশক শচীন টেন্ডুলকার ও ব্রায়ান লারাকেই বিশ্বের সেরা দুই ব্যাটসম্যান বলে মেনে এসেছে সবাই। এখনো ব্যাটসম্যানদের নিয়ে কথা উঠলে এই দুজনের কথাই আগে আসে। অথচ গত কিছুদিন আপনার যে পারফরম্যান্স, তাতে এখন আপনার নামটাই তো সবার আগে আসা উচিত।
পন্টিং: এ নিয়ে আমি একটুও ভাবি না। অন্য লোক আমাকে খেলোয়াড় হিসেবে কী চোখে দেখল, সেটি আমি থোড়াই কেয়ার করি। দলকে আমি কী দিতে পারলাম, সেটিই আমার কাছে বড়। যদি আমি রান করে যেতে পারি, আর আমার টিমমেটরা সন্তুষ্ট থাকে, সেটিই আমার জন্য যথেষ্ট। লারা-টেন্ডুলকারের প্রতি আমার কোনো ঈর্ষা নেই। আমি সব সময়ই বলে এসেছি, আমি যাদের বিপক্ষে খেলেছি, তাদের মধ্যে লারা আর টেন্ডুলকারই সেরা। এমনকি আমার দেখা সেরা দুই ব্যাটসম্যানও সম্ভবত তারাই। কেউ ওদের সঙ্গে আমার নাম বলল কি বলল না, সেটি নিয়ে আমি একদমই ভাবি না। খেলা ছাড়ার পর হয়তো আমি আমার রেকর্ড খুলে আমার সময়ের অন্য গ্রেট খেলোয়াড়দের সঙ্গে তুলনা করব। এখন এসব নিয়ে ভাবতে যাওয়া মানে আসল কাজ থেকে মনোযোগ সরে যাওয়া, আমি তাতে ভালো পারফর্ম করতে পারব না। পাঁচ-ছয়-সাত বছর, যত দিন পরেই হোক, আমি যখন অবসর নেব, তখন এসব নিয়ে ভাববার অনেক সময় পাওয়া যাবে।
শুভ্র: কিন্তু খেলোয়াড়ি জীবনেই বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানের স্বীকৃতি পাওয়ার কি কোনো গুরুত্বই নেই আপনার কাছে? খেলা শুরুর সময় নিশ্চয়ই এটাই লক্ষ্য ছিল আপনার।
পন্টিং: অবশ্যই আমি বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান হতে চাই। কে না তা হতে চায়! আমিও সব সময়ই তা চেয়ে এসেছি। তবে তার মানে এই নয় যে, আমি এ চিন্তাতেই কাতর হয়ে থাকব। আমি তো আর নিজেই নিজেকে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান বলে ঘোষণা করতে পারি না। আমি যা পারি, তা হলো মাঠে নেমে যত বেশি সম্ভব রান করার চেষ্টা করা। অন্য লোকেরা তখন আমার পারফরম্যান্স বিচার করে দেখবে। তবে আগেই বলেছি, গত তিন-চার বছর আমার দারুণ কেটেছে। পরিসংখ্যান কী বলে জানি না, তবে আমার তো মনে হয় এই সময়ে বিশ্বের অন্য যে কারো চেয়ে আমি বেশি রান করেছি। আশা করি, আগামী বছরটাও এমনই হবে।
শুভ্র: শুরুর দিকে আপনার কোনো আইডল-টাইডল ছিল?
পন্টিং: ছিল। কিম হিউজ ও ডেভিড বুন। বুন তাসমানিয়ার, যেখানে আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। তাঁরও আমার বয়সেই (১৭) তাসমানিয়ার পক্ষে অভিষেক হয়েছিল, অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আমাদের দুজনের অভিষেকও প্রায় একই বয়সে। আমার সামনে তার ছবিটা তাই সব সময়ই ছিল। আর কিম হিউজের ব্যাটিং আমাকে পাগল করে দিত। ওর ব্যাটিংয়ে ডাকাবুকো ব্যাপারটা আমার খুব ভালো লাগত।