`ভিভ রিচার্ডস ছিলেন স্পেশাল, ভেরি স্পেশাল`
উৎপল শুভ্র
২৭ জানুয়ারি ২০২১
৮৬টি টেস্ট খেলেছেন, ২২৪টি ওয়ানডে। ভয়ডরহীন ব্যাটিংয়ের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। শর্ট বল পেলেই হুক করার জন্যও। রিচি রিচার্ডসন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের পালাবদলের সবচেয়ে বড় সাক্ষীও। ১৯৮৩ সালে যখন অভিষেক, ক্রিকেট বিশ্ব ক্যারিবিয়ানদের পদানত। ১৯৯৬ সালে যখন খেলা ছাড়লেন, অস্তমিত ক্যারিবিয়ান সাম্রাজ্যের সূর্য। রিচার্ডসনের কষ্টটা আরও বেশি, কারণ তিনিই তখন অধিনায়ক। চট্টগ্রামে এই সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় রিচার্ডসন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের ম্যানেজার।
প্রথম প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০১১। প্রথম আলো।
উৎপল শুভ্র: ক্যারিয়ারের বড় একটা সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ মানেই ছিল জয়। এখন এই যে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ক্রমাগত হারতে দেখেন, এতে নিশ্চয়ই খুব কষ্ট লাগে?
রিচি রিচার্ডসন: আমি ব্যাপারটা অন্যভাবে দেখি। দূরের চিত্রটা দেখি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে যা হয়েছে, তাতে আমি একটুও বিস্মিত নই। কারণ আমার খেলোয়াড়ি জীবনেই পতনের চিহ্নটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু কেউই তাতে গা করেনি। সবাই ভেবেছে, আমাদের গ্রেট সব প্লেয়ার আছে। আমরা পুরো বিশ্বের ওপর ছড়ি ঘোরাচ্ছি, চিরকাল তাই ঘুরিয়ে যাব। তরুণ খেলোয়াড় তুলে আনা, অবকাঠামো, এসব দিকে একদমই নজর দিইনি। এখন এসব নিয়ে কাজ হচ্ছে। আবার ফিরে আসার কাজটা খুব কঠিন, তবে আমি কিছু ইতিবাচক দিকও দেখতে পাচ্ছি। খেলোয়াড়দের মনমানসিকতায় পরিবর্তন, অনুশীলনে নিবেদন...তবে অবস্থাটা এমন যে সবার সম্মিলিত চেষ্টা লাগবে।
শুভ্র: একটা কষ্ট তো আপনার না থেকেই পারে না। আপনি যখন অধিনায়ক, ওয়েস্ট ইন্ডিজের পতন তখনই শুরু...
রিচার্ডসন: এটা ছিল খুব হতাশাজনক। অধিনায়ক হওয়ার আগেই তো চোখের সামনে দেখছিলাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট কীভাবে দ্রুত নিচে নামছে। খেলোয়াড়েরা কিন্তু সাবধান করেছিল। ক্লাইভ লয়েড অনেকবারই বলেছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কানে নেয়নি। আমরা সারা বিশ্বে গিয়ে দেখেছি অন্য সব দেশ কী করছে...কী দুর্দান্ত সুযোগসুবিধা। যদি আমরা কিছু না করি, তা হলে অন্যরা আমাদের ধরে ফেলবে। তার পরও কর্তৃপক্ষ তা কানে নেয়নি। নিলে অবস্থাটা এমন হতো না। হয়তো আমরা চিরদিন শীর্ষে থাকতাম না, তবে এত নিচে নামতাম না।
শুভ্র: এবার সুখের সময়ের কথা বলি। ১৯৮৩ সালে আপনি যখন দলে ঢোকেন, তখন তো ওয়েস্ট ইন্ডিজ রাজা। সেই রাজত্ব আরও অনেক বছর থাকল। কী মনে হয় সেই সময়টার কথা ভাবলে?
রিচার্ডসন: এটা ছিল স্বপ্নরাজ্যে বাস করার মতো। তরুণ বয়সে সবারই এমন কিছু স্বপ্ন থাকে, যা পূরণ হওয়ার পর নিজেরই বিশ্বাস হতে চায় না। মনে হয়, এ কি সত্যি না স্বপ্ন! ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওই গ্রেট খেলোয়াড়দের পাশে স্থান পেয়ে আমারও এমনই মনে হয়েছিল। কী সব ক্রিকেটার! অপরাজেয় সব ক্রিকেটার! আমি ওদের সঙ্গে খেলছি, অনেক সময় এটা আমার বিশ্বাস হতো না। একই সঙ্গে খুব তাড়াতাড়ি বাস্তবতাটাও বুঝতে পারি, এই দলে থাকতে হলে অনেক পরিশ্রম করতে হবে। কারণ নিজেদের এমন একটা উচ্চতায় ওরা তুলে নিয়েছিল যে দুটি পথই ছিল সামনে। হয় পরিশ্রম করে ওদের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে, নয়তো বিদায় নিতে হবে।
শুভ্র: ওই দলে তো ছিল তারকারাজির সমাহার। তাঁরা কেমন খেলতেন, তা তো আমরা জানিই। কাছ থেকে আপনার মনে কোন ছবিটা চিরস্থায়ী হয়ে আছে?
রিচার্ডসন: ছবি তো অনেক...কোনটা বলব! সবাই এমন গ্রেট প্লেয়ার, কাকে রেখে কার কথা বলব! সবাই শুধু ওদের খেলাটা দেখেছে। তবে তাঁরা কী কঠিন সব মানুষ ছিল, এটা সবাই জানে না। ক্লাইভ লয়েড...টাফ। ভিভ রিচার্ডস...টাফ। ম্যালকম মার্শাল, জোয়েল গার্নার, গর্ডন গ্রিনিজ...টাফ গাইস। ম্যালকম মার্শাল ভাঙা হাতে প্লাস্টার নিয়ে ব্যাটিং করতে নেমেছে। ভিভ রিচার্ডসের এমন অবস্থা যে, ঠিকভাবে হাঁটতে পারছে না। অথচ ওই অবস্থায় আমি তাকে সেঞ্চুরি করতে দেখেছি। গর্ডন গ্রিনিজ খুঁড়িয়ে হাঁটছে, তার পরও সেঞ্চুরি করেছে। আমরা ছিলাম এমনই টাফ। নিজের কথা যদি বলি, অনেক বছর আমি হ্যামস্ট্রিংয়ে সমস্যা নিয়ে খেলেছি (ডান উরুর পেশি টান করে দেখালেন, সেখানে একটা গর্ত)। ব্যথা নিয়ে অনেক খেলেছি। আমার কাছে দেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার অর্থ ছিল দেশের জন্য যুদ্ধে যাওয়া। চোট আছে বলে কি আমি আমার দেশকে রক্ষা করতে লড়ব না? আমরা ব্যথা-যন্ত্রণা মানসিক শক্তি দিয়ে, ইচ্ছাশক্তি দিয়ে জয় করেছি। একটু চোট পেলেই খেলব না—আমার কাছে তা ছিল দুর্বলতার প্রকাশ। মরে গেলে মাঠে মরে যাব। ফিল্ডিংয়ে বল থামাতে বাউন্ডারি বোর্ডে লেগে যদি পা ভেঙে যায় তো যাক, আমি দলকে আমার হান্ড্রেড পার্সেন্ট দেবই। আমার কাছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার, দেশের পক্ষে খেলার অর্থ এটাই। আমি কখনো টাকার জন্য খেলিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে খেলার গর্বটাই ছিল আসল।
শুভ্র: ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওই দলের সাফল্যের রহস্য হিসেবে সবাই ‘কী সব গ্রেট প্লেয়ার ছিলেন’ বলেই উত্তর খুঁজে নন। ফিটনেস, প্রস্তুতি, পেশাদারি এ সবে সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকার ব্যাপারটি আড়ালেই থেকে যায়। ও সবেরও তো বড় ভূমিকা ছিল, তাই না?
রিচার্ডসন: ভুলে যাবেন না, আমরা কিন্তু এর আগে সমানে হারছিলাম। এটি পরিবর্তনের জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। ক্লাইভ লয়েড এটির মূলে। লয়েড দলের খেলোয়াড়দের ডেকে বলেন, ‘এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। আমাদের কিছু একটা করতে হবে। আমাদের আরও পেশাদার হতে হবে। আরও পরিশ্রম করতে হবে। আমরা আমাদের দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি। সবাই আমাদের হারিয়ে চলে যাবে, এটা হতে পারে না। আমরা সবাই মিলে পরিশ্রম না করলে এমন চলতেই থাকবে।’ পরিবর্তনটা শুরু হয় তখনই। জয়ের একটা সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। কিন্তু সেটি কীভাবে? এর মূলে ছিল নিবিড় প্রস্তুতি, সব কিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করা। কীভাবে আমরা প্রস্তুতি নেব, মাঠে নেমে কীভাবে খেলব...প্রতিপক্ষ সম্পর্কে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছি আমরা। আমাদের অনেক টিম মিটিং তিন ঘণ্টা, সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে চলেছে। নিজেদের নিয়ে বিশ্লেষণ, প্রতিপক্ষের প্রতিটি খেলোয়াড় নিয়ে বিশ্লেষণ...তখন তো আর ভিডিও-টিডিও ছিল না। টেলিভিশনে যা দেখেছি, সেটাই সম্বল। মনে রাখবেন, যখন এসব করছি তখন কিন্তু আমরা টানা জিতে চলেছি। আমরা মাঠে নামতাম প্ল্যান এ-বি-সি-ডি নিয়ে। মাঠে কী হবে কেউ তো জানে না। উইকেট যেমন ভাবছি তেমন নাও থাকতে পারে, কন্ডিশন বদলে যেতে পারে। প্রতিপক্ষের প্রতিটি খেলোয়াড়ের জন্য তাই আমরা অনেক বিকল্প পরিকল্পনা ভেবে রাখতাম। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমরা প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়, ট্যাকটিকস, কন্ডিশন এসব নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করতাম। এসব আমাদের কষ্ট বলেও মনে হতো না। কারণ আমরা জয়টা খুব উপভোগ করতাম।
ক্লাইভ লয়েড যা করেছেন, অন্য কারও পক্ষে তা করা কঠিন হতো। ক্লাইভ লয়েড অসাধারণ এক মানুষ। অসাধারণ অধিনায়ক, অভিভাবক...বলা যায় ফাদার-ফিগার।
শুভ্র: ক্যারিবিয়ানরা তো এমনিতেই পার্টি খুব ভালোবাসে। জয়ের পর নিশ্চয়ই জম্পেশ পার্টি হতো...
রিচার্ডসন: আমরা উদযাপন করতাম, তবে সেটি মাত্রা ছাড়িয়ে নয়। ক্লাইভ লয়েড যদি বুঝতে পারতেন, কেউ রাতে ঠিকমতো ঘুমায়নি, তিনি শুধু ডেনিস ওয়েইটের (ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের ফিজিও) দিকে তাকাতেন। আর কি, লাগাও চার চক্কর। পেটে সামান্যতম মেদের আভাস থাকলেই পরদিন সকাল ছয়টায় দরজায় ওয়েইটের নক—‘চলো, এক ঘণ্টা দৌড়াতে হবে’। কারও না বলার সুযোগ নেই। ওই দলের সংস্কৃতিটা এমন ছিল যে একটুও আয়েশি হওয়ার উপায় ছিল না।
শুভ্র: অনেকে এমন বলেন, ওই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে এমন সব খেলোয়াড় ছিল, ক্লাইভ লয়েডের অধিনায়কত্ব করার কিছু ছিল না। যে কেউই তা করতে পারতেন...
রিচার্ডসন: এত সহজ নয়। ক্লাইভ লয়েড যা করেছেন, অন্য কারও পক্ষে তা করা কঠিন হতো। দলের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে যে শ্রদ্ধাটা পেতেন, তা পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। ক্লাইভ লয়েড ছিলেন অসাধারণ এক মানুষ। অসাধারণ অধিনায়ক, অভিভাবক...বলা যায় ফাদার-ফিগার। এ কারণেই তিনি যা বলেছেন, খেলোয়াড়রা তা অনুসরণ করেছে। হ্যাঁ, লয়েডকে যে সমস্যায় পড়তে হয়নি, তা নয়। কোনো কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গে সমস্যা হয়েছে। সবকিছুই একেবারে নির্ঝঞ্চাট ছিল, এমন নয়। তবে আমরা সবাই বিশ্বাস করতাম, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট সবার ওপরে। নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চাইতে কারও দ্বিধা ছিল না। কেউ ভুল করলে সে হাত তুলে বলত, ‘স্যরি গাইস। আমার ভুল হয়েছে। আমি ক্ষমা চাচ্ছি।’ আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য অবশ্যই হয়েছে, কিন্তু মূল লক্ষ্যটা আমরা কখনো ভুলিনি—ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে জেতা।
শুভ্র: ক্লাইভ লয়েডের মানব ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে ট্যাকটিক্যালি তাঁকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
রিচার্ডসন: ওই চারজন ফাস্ট বোলার হাতে থাকা মানে মূল সিদ্ধান্তটা ছিল, কীভাবে তাদের ব্যবহার করা হবে। ক্লাইভ লয়েড ওদের এত ভালোভাবে বুঝত যে, কাকে কখন আনতে হবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব সহজ ছিল তার জন্য। তবে কেউ যদি বলে, দলে অমন চার ফাস্ট বোলার থাকা মানে একজনের পর একজনকে বল দিয়ে গেলেই হলো—ব্যাপারটা এত সহজ ছিল না। অন্য কেউ ওদের লয়েডের মতো কাজে লাগাতে পারত বলে মনে হয় না। ক্লাইভ লয়েড জানত, কীভাবে ওদের সেরাটা বের করে আনতে হয়। লয়েডকে যে কখনো সমস্যায় পড়তে হয়নি, এমন নয়। কোনো দিন হয়তো কোনো বোলার ভালো করছে না, কখনো যেভাবে বোলিং চাইছে তা হচ্ছে না, লয়েডকে তখন কোনো না কোনো পথ বের করতে হয়েছে। কখনো হয়তো ভিভ রিচার্ডস বা ল্যারি গোমসকে দিয়ে কয়েক ওভার করালেন। সব কিছু মিলিয়ে ট্যাকটিক্যালিও ক্লাইভ লয়েডকে দারুণ অধিনায়কই বলব আমি।
শুভ্র: খেলোয়াড়ি জীবনে মাঠে মাঠে তো অনেক স্মরণীয় লড়াই হয়েছে। কোনটা আলাদা করে মনে আছে?
রিচার্ডসন: ব্যাটিংয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলাটা আমার কাছে সব সময়ই খুব কঠিন লাগত। বিশেষ করে যখন পাকিস্তানে খেলতাম...ওদের দলে ছিল ইমরান খান, আবদুল কাদির....এরপর এলো ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস। ওদের বিপক্ষে খেলাটা ছিল সব সময়ই বড় চ্যালেঞ্জ। আমার মতে আবদুল কাদিরের সর্বকালের সেরা লেগ স্পিনার হওয়াটা নিয়তি নির্ধারিতই ছিল। জাদুকরী বোলার, বোলিংয়ে দারুণ বৈচিত্র্য। আরও অনেক দূর যাওয়ার কথা ছিল ওর। ইমরান খানের ওই বড় বড় ইনসুইঙ্গার, লেগ কাটার...ও ছিল সত্যিকার এক ফাইটার, সিংহের মতো। ওয়াসিম ওই গতিতে দুদিকেই বল সুইং করাত, ওয়াকারের ছিল দুরন্ত গতি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলাটাও খুব উপভোগ করেছি। অস্ট্রেলিয়ানরা খুব আক্রমণাত্মক, প্রতিপক্ষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। খেলার মাঠে লড়াইটা যত কঠিন হয়েছে, আমি ততই উপভোগ করেছি। আমার শুধু একটা জিনিসই সহ্য করতে পারতাম না। খেলার মাঠে কাউকে প্রতারণা করতে দেখলে আমার মাথায় রক্ত উঠে যেত।
ভিভ রিচার্ডস আমার দেখা গ্রেটেস্ট ক্রিকেটার। বেস্ট ব্যাটসম্যান। আমি ব্র্যাডম্যানকে দেখিনি, সোবার্সকেও না...ওরা যদি রিচার্ডসের চেয়েও ভালো হয়, ওয়াও! (হাসি)।
শুভ্র: সারা জীবন হেলমেট না পরে ব্যাটিং করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৯৯৫-৯৬ সিরিজে প্রথম হেলমেট পরলেন। স্টিভ ওয়াহ তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, আপনাকে হেলমেট পরে নামতে দেখেই উনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরে কাঁপুনিটা টের পান। কেন হঠাৎ হেলমেট পরতে গিয়েছিলেন?
রিচার্ডসন: আমি জানতাম, ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। শেষবেলায় আর কোনো ঝুঁকি নিতে চাইনি। তা ছাড়া এর আগে ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোমে ভুগে আমি মাস ছয়েক খেলার বাইরে ছিলাম। ওই সিরিজের সময়ও পুরোপুরি সুস্থ হইনি। কখনো খুব ক্লান্ত লাগত, মনোসংযোগ ধরে রাখতে পারতাম না। এ কারণেই কোনো ঝুঁকি না নিতে হেলমেটটা পড়েছিলাম। ভয় পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই সিরিজেই জ্যামাইকাতে ম্যাকগ্রা আমার হেলমেটে মারল, পরের বলেই আমি হুক করে ছক্কা মেরেছি।
শুভ্র: শেষটা ভিভ রিচার্ডস দিয়েই হোক। আপনারা দুজনই অ্যান্টিগার। রিচার্ডসকে আদর্শ মেনেই বড় হয়েছেন, এটাও জানি। ব্যাটসম্যান রিচার্ডস সম্পর্কে যদি বলতে বলি...
রিচার্ডসন: ভিভ রিচার্ডস আমার দেখা গ্রেটেস্ট ক্রিকেটার। বেস্ট ব্যাটসম্যান। আমি ব্র্যাডম্যানকে দেখিনি, সোবার্সকেও না...ওরা যদি রিচার্ডসের চেয়েও ভালো হয়, ওয়াও! (হাসি)। আমি নিজে যা দেখেছি, তাতে বলতে পারি ভিভ রিচার্ডস ছিলেন এখানে (মাথার সামনে হাত রেখে), আর আমরা এখানে(পেটের কাছে হাত নামিয়ে)।হি ইজ আ এক্সস্ট্রা অর্ডিনারি হিউম্যান বিইয়িং। স্পেশাল, ভেরি স্পেশাল।
শুভ্র: ভিভ রিচার্ডসের সঙ্গে কোথায় বাকিদের পার্থক্য ছিল...মানে জানতে চাইছি কী এমন বিশেষত্ত্ব যা রিচার্ডসকে স্পেশাল বানিয়েছিল?
রিচার্ডসন: অসম্ভব প্রতিভা তো ছিলই, আর ছিল প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস। পরিস্থিতি যা-ই থাক, নিজের সামর্থ্যের ওপর প্রচণ্ড আস্থা ছিল। কোনো কিছুকে ভয় পেত না, কাউকে না। ভেতরে একটা তাড়না ছিল, আমি সর্বকালের সেরা হতে চাই। যেকোনো পরিস্থিতিতে বিশ্বাস রাখত, আমি চ্যাম্পিয়ন, কারও সাধ্য নেই আমার সামনে দাঁড়ায়!
শুভ্র: যত বড় খেলোয়াড়ই হোক, ক্যারিয়ারে কখনো না কখনো তাঁকে খারাপ সময়ে পড়তেই হয়। ভিভ রিচার্ডসকে কি কখনো সংগ্রাম করতে দেখেছেন?
রিচার্ডসন: হ্যাঁ, একবার অস্ট্রেলিয়ায় ভিভকে একটু নড়বড়ে দেখেছিলাম। ও কিন্তু ডাবল সেঞ্চুরি করেছিল (হো হো হাসি)।
শুভ্র: আপনি ভিভ রিচার্ডসের এমন ভক্ত, অথচ একটা ধারণা আছে আপনার কারণেই তাঁর ১৯৯২ বিশ্বকাপে খেলার ইচ্ছা পূরণ হয়নি....
রিচার্ডসন: (থামিয়ে দিয়ে) এই প্রশ্নের উত্তর আমি এক লক্ষ বার দিয়েছি। এবারও সেই একই উত্তর।
শুভ্র: উত্তরটা আপনার মুখ থেকে শুনতে চাই...
রিচার্ডসন: না, আমি আর এই প্রশ্নের উত্তর দেব না। আমি অনেকবার তা দিয়েছি, আপনিও হয়তো তা পড়েছেন। উত্তর ওটাই আছে। এইমাত্র ঠিক করলাম, আর কোনো দিন আমি এই প্রশ্নের উত্তর দেব না। কেন, জানেন? আমার মনে হচ্ছে, এত বার এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি, সবাই তা পড়েছে, তার পরও যখন এই প্রশ্ন হচ্ছে, তার মানে আমি যা বলেছি, তা কেউ বিশ্বাস করছে না। না করলে না করুক। আমি আর তা বলতে যাচ্ছি না।