সাকিব-মাশরাফি: একে অন্যের আয়নায়
উৎপল শুভ্র
২৭ জানুয়ারি ২০২১
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ শেষে ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিতে বাংলাদেশ দল থেকে গেছে খুলনাতেই। সেখানেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় দুই তারকা মাশরাফি বিন মুর্তজা ও সাকিব আল হাসানকে একসঙ্গে বসিয়ে নেওয়া হয়েছিল এই সাক্ষাৎকার। নিজেদের দেখেছিলেন তাঁরা একে অন্যের আয়নায়।
প্রথম প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি, ২০১৬। প্রথম আলো।
উৎপল শুভ্র: প্রথম প্রশ্ন যদি এটা হয়, একে অন্যের কোন পারফরম্যান্সটা প্রথমেই মনে পড়ে?
সাকিব আল হাসান: জাতীয় দলে খেলার আগে আমি খুব কমই বাংলাদেশের খেলা দেখতাম। জাতীয় দলে ঢোকার পর ২০০৭ বিশ্বকাপে ইন্ডিয়ার সাথে উনি ৪ উইকেট পেলেন, ওটা খুব ভালোভাবে মনে আছে। সবচেয়ে বেশি যদি কিছু মনে থাকে, তাহলে এখনো ওটাই সবার আগে মনে পড়ে।
মাশরাফি বিন মুর্তজা: সাকিবের সবকিছু আমি প্রথম দিন থেকেই বলে দিতে পারি। তবে আমার কাছে ওর সেরা ইনিংস শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯২ (২০০৯ সালে মিরপুরে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে)। এর পর ও ওয়ানডেতে এক শ করেছে, টেস্টেও করেছে। তার পরও ওই ইনিংসটাকে আমার আলাদা মনে হয়। কারণ এর পর থেকেই সাকিব নিজেকে অন্য লেভেলে নিয়ে গেছে। অন্য খেলোয়াড় হয়ে গেছে।
শুভ্র: আমি কিন্তু সাকিবের সেরা ইনিংসের কথা জানতে চাইনি। জানতে চেয়েছি, সাকিবের কোন পারফরম্যান্সটা দেখে আপনার প্রথম মনে হলো, ও বিশেষ কিছু?
মাশরাফি: আমি ওই ইনিংসটার কথাই বলব। সাকিবকে আজ এখানে নিয়ে এসেছে ওই ইনিংসটা। ওটাই ওর ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট।
শুভ্র: ক্রিকেটার হিসেবে একে অন্যের সবচেয়ে বড় গুণের কথা যদি বলতে বলি...
সাকিব: সবার সঙ্গে সহজে মিশতে পারা। মাশরাফি ভাই খুবই ইজি গোয়িং। এই গুণটা সবার মধ্যে থাকে না। আমার মনে হয় না, আমাদের টিমে আর কারও মধ্যে এই গুণটা আছে। দেশের ১৬ কোটি মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করি আমরা ১৬ জন, তাঁদের মধ্যে একজনেরই এটি আছে। তার মানে উনি স্পেশাল।
মাশরাফি: সাকিবের সবচেয়ে বড় গুণ টিমের মধ্যে থাকলেই শুধু বোঝা যায়। বাইরের অনেকে ওকে ভুল বোঝে। সাকিব আমার সম্পর্কে যেমন সহজেই কথাটা বলল, আমি বললে অনেকে ভাবতে পারে, মিথ্যা কথা বলছে কি না। কিন্তু সত্যি বলছি, ও দলের অন্যদের অনেক সাহায্য করে। ও তো এখন দলের বড় ভাই-ই হয়ে গেছে। ওর কাছে দলের তরুণ কেউ কোনো সমস্যা নিয়ে গেলে ও যথাসাধ্য সাহায্য করে। আমি কখনো শুনিনি যে, ও বলেছে, ‘এখন না, পরে আয়।’ এভাবে নীরবে সবাইকে সাহায্য করে যাওয়াটা দারুণ ব্যাপার।
শুভ্র: সাকিব, আপনি মাশরাফির অধিনায়কত্বে খেলছেন। মাশরাফি, আপনিও সাকিবের অধিনায়কত্বে খেলেছেন। অধিনায়ক হিসেবে একে অন্যকে কীভাবে বিচার করবেন?
সাকিব: মাশরাফি ভাইয়ের গেম সেন্স খুবই ভালো। অধিনায়কের জন্য যা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর সঙ্গে উনি যেহেতু সবার সঙ্গেই খুব ভালোভাবে মিশতে পারেন, মাঠের বাইরে ড্রেসিংরুমে দলকে উদ্বুদ্ধ করার কাজটাও ওনার জন্য খুব সহজ হয়।
মাশরাফি: আশরাফুলের পর আমি আবার যখন ক্যাপ্টেন হলাম, চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যাওয়ার পর সাকিব ক্যাপ্টেনসি পেল। আমি তখনই ওকে বলেছি, ‘বাংলাদেশ টিমের ক্যাপ্টেনসি কিন্তু তোকেই করতে হবে।’ আমি চাইতাম, ও-ই যেন সব সময় ক্যাপ্টেনসি করে। কারণ ওর যে সামর্থ্য, তাতে ও ক্যাপ্টেনসি না করলে বাংলাদেশ টিমের বড় ক্ষতি। এখন হয়তো আমি করছি, তবে আমি দেখতে চাই ও-ই বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিক। এটা কিন্তু ও দলের সেরা পারফরমার বলে নয়। অভিজ্ঞতা বলেন, ওর প্রতি দলের অন্যদের সম্মান বলেন, সব দিক বিচার করে ভবিষ্যতে ওকেই ক্যাপ্টেনসি করতে হবে। সেটা আমি চলে গেলেই হবে কি না জানি না। ওর মনে কী আছে, তা-ও জানি না। তবে আমি মনে করি, ওর আবার ক্যাপ্টেনসি করা উচিত।
শুভ্র: কেন উচিত?
মাশরাফি: দেখেন, ও যতটুকু ক্যাপ্টেনসি করেছে, কঠিন পরিস্থিতিতে করেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আমি চোট পাওয়ার পর ও ক্যাপ্টেনসি পেয়েছে। ক্যাপ্টেনসি করতে একটা মানসিক প্রস্তুতি লাগে। কিন্তু দুবারই ও মাঠ থেকে হঠাৎ ক্যাপ্টেনসি পেয়েছে। সুইচড অফ একটা মানুষের হঠাৎ করে সুইচড অন হয়ে ক্যাপ্টেনসি করা অনেক কঠিন, সঙ্গে আবার নিজে পারফর্ম করা। ও সেখানে দারুণভাবে কিছু ম্যাচ জিতিয়েছে। বাংলাদেশ টিমের ক্যাপ্টেনসি করা কিন্তু অনেক কঠিন। এখানে অনেক কিছু খেয়াল রাখতে হয়। ওই সময়ই আমার মনে হয়েছে, ও যদি লম্বা সময়ের জন্য বাংলাদেশ টিমের ক্যাপ্টেনসি না করে, বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য সেটি বড় ক্ষতি হবে। ক্রিকেট বোর্ড যদি ওকে দিতে চায়, ওর চিন্তা করা উচিত।
শুভ্র: সাকিব কী বলেন, আবার ক্যাপ্টেনসি করতে চান?
সাকিব: (হাসি) এ নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।
শুভ্র: আচ্ছা, ক্যাপ্টেনসি নিয়ে মাঝখানে কিছুদিন যে আপনাদের মধ্যে মিউজিক্যাল চেয়ার খেলা হলো, সেটি আপনাদের সম্পর্কে প্রভাব ফেলেনি?
সাকিব: মানুষ তো এটাই ভুল বোঝে। আমি যখন প্রথম ক্রিকেট বল ধরেছি, তখন থেকে আমি ওনাকে চিনি। কাজেই ওনার সঙ্গে আমার ক্রিকেট নিয়ে সম্পর্কটাই কম। ক্রিকেটের বাইরের সম্পর্কটাই বেশি। উনি তো এখনই আমাকে বলবে, আমাকে প্রথম দেখার সময় আমার পরনে ছিল হাফপ্যান্ট আর মাফলার (হাসি)...
মাশরাফি: সাদা ডোরাকাটা মাফলার...আর এখন তো গুচ্চির মাফলার পরে (হাসি)।
সাকিব: অনেকে অনেক রকম বলতে পারে, তবে আমরা জানি আমাদের সম্পর্ক কী। একবার হলো না যে, আমাদের নিয়ে অনেক কথাবার্তা...তো পরদিন পত্রিকায় আমাদের একসঙ্গে ছবি দিয়ে লিখল, একসঙ্গে বসে থাকলেও আমাদের মধ্যে নাকি মিল নাই। আমি এমন একজন মানুষ না যে, যার সঙ্গে মিল নাই, তার পাশে গিয়ে বসতে পারব।
মাশরাফি: আরেকটা বিষয়ও এই সুযোগে পরিষ্কার করে দিই। অনেকের ভুল ধারণা আছে যে, সাকিবের ক্যাপ্টেনসির সময় আমি রাগ করে হোটেল ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। হোটেল ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম সত্যি, তবে আমি সাকিবের কারণে যাইনি। আমার আম্মা অসুস্থ ছিলেন। আর আমি সব নিয়ম মেনেই হোটেল থেকে বেরিয়েছি। প্রধান নির্বাচক, সিইও, ক্রিকেট অপারেশন্সকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। ২০১১ বিশ্বকাপের সময় যেমন অনেক কথা হলো, সাকিব আমাকে দলে চায়নি। ও বলেছে, কথাটা সত্যি না। আমিও ওর কথাই বিশ্বাস করি। তবে আমার কথা হলো, ও যদি ওই মুহূর্তে আমাকে না চায়, না-ই চাইতে পারে। ক্যাপ্টেন হিসেবে ওর মনে হতেই পারে, ওই সময় আমাকে দলে দরকার নাই। এটা নিয়ে সাকিবের সঙ্গে আমার সমস্যা হবে কেন? আমার কাছে সাকিব ছোট ভাই ছিল, এখনো ছোট ভাই-ই আছে। আমার একটা ছোট ভাই আছে, ওর চেয়ে তিন-চার বছরের ছোট। ওকে, দলের বাকি সবাইকেও আমি ছোট ভাইয়ের মতোই দেখি। ওরা ভুল করলেও আমি ক্ষমা করে দিই। আর আমি ভুল করলেও ওদের সামনে ছোট হতে আমার কোনো সমস্যা নেই। আমার বিশ্বাস, আমার সঙ্গে সাকিবের কোনো সমস্যা হলে ও সেটা সবার আগে আমাকেই বলবে।
শুভ্র: বিশ্বের সব দলেই তো নানা কোন্দলের কথা শোনা যায়। আপনাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে, তাতে বাংলাদেশ দলে অমন কিছু নেই। বাংলাদেশ দলটা কি আসলেই এমন সুখী পরিবার?
সাকিব: আসলেই এ রকম। বাইরে থেকে কারও যা-ই মনে হোক, কখনো কখনো আপনারাও নানা রকম নিউজ করেন। তবে এসব সত্যি তো না-ই, সত্যির ধারেকাছেও না। এটা শুধু আমার আর ওনার ব্যাপার নয়, আমাদের সবার ক্ষেত্রেই সত্যি। আমাদের টিম ম্যানেজমেন্ট, কোচিং স্টাফ, ড্রেসিংরুমে যারা থাকে, কেউ-ই অন্য কিছু বলবে না।
শুভ্র: বাংলাদেশ দলে এখন অনেক তারকা আর তারকা মানেই ইগো। খেলার বাইরেও কত কিছু আছে...বিজ্ঞাপন জগতে কারও বেশি চাহিদা, কারও একটু কম, এসব নিয়ে ঈর্ষা-টির্ষা হয় না? আপনাদের কথা অনুযায়ী সত্যিই যদি তা না হয়, তাহলে তো বাংলাদেশ দল বিশ্ব ক্রিকেটেই বড় একটা উদাহরণ...
মাশরাফি: আসলেই আমরা একটা উদাহরণ। সমস্যা কী জানেন, এখনো আমরা মাঠে গিয়ে আমাদের প্ল্যানগুলো ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারি না। যেদিন পারব, যেদিন আমরা ভারত-অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে বলেকয়ে হারাতে শুরু করব, সেদিন আমরাই বিশ্ব ক্রিকেটে উদাহরণ হব। এটাই সত্যি, আর সেটা বেশি দিন দূরেও নেই। আমাদের মধ্যে সত্যি কোনো বিভেদ নেই। একটা সুবিধা কী জানেন, আমরা সবাই প্রায় একই ধরনের পরিবার থেকে এসেছি। সাকিব কিন্তু বিল ক্লিনটনের ফ্যামিলি থেকে আসেনি, আমিও ওবামার মতো ফ্যামিলি থেকে না। আমরা আমাদের ভিতটা খুব ভালো বুঝি, তা ধরে রাখি। আমাদের ড্রেসিংরুমে একটা কালচার তৈরি হয়ে গেছে। যাঁরা এর বাইরে কিছু ভাবে বা করতে যায়, তারা ঝরে যায়।
শুভ্র: আপনাদের চোখে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে প্রতিভাবান ক্রিকেটার কে?
সাকিব: মুস্তাফিজ।
মাশরাফি: আমিও একমত, মুস্তাফিজ।
শুভ্র: একটু ব্যাখ্যা করবেন?
মাশরাফি: দেখেন, প্রতিভা কিন্তু অন্য ব্যাপার। এটা গড গিফটেড হয়। সাকিব যেটা হয়েছে, সেটা তিলে তিলে হয়েছে। এমন হয়নি যে, সাকিব প্রথম দিন থেকেই সেঞ্চুরি করছে, ৫ উইকেট নিয়ে ফাটিয়ে দিচ্ছে। সাকিব ধীরে ধীরে নিজেকে তৈরি করেছে। যেখানে মুস্তাফিজের একটা বল আছে, যেটি ধরার ক্ষমতা বিশ্বের কোনো ব্যাটসম্যানের নাই। এখন এটাকে ঘষেমেজে ও কোথায় নিয়ে যায়, সেটি ওর ওপর। তবে প্রতিভার কথা বললে এমন একটা জিনিস ওর আছে, যেটি দিয়ে ও দুনিয়া কাঁপিয়ে বেড়ায়।
সাকিব: মুস্তাফিজ আসলেই অন্য রকম। এ মুহূর্তে বিশ্ব ক্রিকেটে ফাস্ট বোলারদের মধ্যে মালিঙ্গা আর মুস্তাফিজ ছাড়া আমি তো ব্যতিক্রমী কাউকে দেখি না। বাকি সবার অ্যাকশন তো প্রায় একই রকম।
শুভ্র: সাকিব, নেটে মুস্তাফিজকে খেলতে আপনার সমস্যা হয়?
সাকিব: খুব একটা না...তবে হ্যাঁ, মারতে গেলে সমস্যা, ১ রান নিতে চাইলে সমস্যা না।
মাশরাফি: এই যে একটু আগে আপনি আমাদের দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে ঈর্ষা-টির্ষার ব্যাপারে কথা বলছিলেন না, মুস্তাফিজের উদাহরণটাই দিই। মুস্তাফিজ এসেছে সেদিন, আর দুনিয়া-মুনিয়া সব মুস্তাফিজ-মুস্তাফিজ...আর আমি পনেরো বছর ধরে কিছু করতে পারলাম না! তাহলে কি আমার হিংসা হবে? দেখেন, আমি বিশ্বাস করি, আমার মধ্যে এই হিংসা-বিদ্বেষ ছিল না বলেই আল্লাহ আমাকে এত কঠিন সময় পার করে নিয়ে এসেছে। আরেকটা জিনিসও আমি বিশ্বাস করি, মানুষের মধ্যে যে ক্ষমতা, তা ওপরওয়ালাই দিয়ে দেয়। কেউ তা বিকশিত করতে পারে, কেউ পারে না। গুণীজনের কাছেও শুনে এসেছি, হিংসা মানুষকে ধ্বংস করে। আমি তাই কখনোই কাউকে হিংসা করি না। একেকজনের একেকটা স্কিল আছে, আর যে যা করছে, তা তো বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্যই। এভাবে ভাবলেই হয়।
শুভ্র: সাকিব, মাঠে নামার আগে বা মাঠে মাশরাফি এমন কিছু বলেছেন যা আপনাকে খুব উদ্দীপ্ত করেছে, এমন একটা-দুটি উদাহরণ দেবেন?
সাকিব: একটা-দুইটা বলা কঠিন। এমন তো না যে, উনি একদিন অমন বলেছেন। ওনার সবচেয়ে ভালো দিক হলো, উনি সব সময়ই বিশ্বাস করেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে টিম জিততে পারে। এটা খুব জরুরি। অধিনায়কেরই যদি জিততে পারি বিশ্বাস না থাকে, অন্য খেলোয়াড়দের তা মনে হওয়ার কোনো কারণ নেই। আর এটা উনি হঠাৎ একদিন না, সব সময়ই করেন।
শুভ্র: আপনারা দুজনই তো বড় তারকা। তারকাখ্যাতিকে কীভাবে দেখেন বা কতটা উপভোগ করেন?
মাশরাফি: আমি তারকাখ্যাতি বলতে কিছুই বুঝি না। আমি তারকা বলতে পৃথিবীতে একজনকেই বুঝি—ডিয়েগো ম্যারাডোনা। আমি ওর সমস্ত অন্যায় মেনে নিই। ও যদি আমাকে বলে, তুই এটা কর, আমি তা-ই করব। সারা জীবন গোলামি করব। এর বাইরে আমি মনে করি না যে, তারকাখ্যাতির জন্য বিশেষ কিছু করতে হবে। আমাদের সামাজিকতায় তো নাই-ই। তবে তারকাখ্যাতি কে না এনজয় করে? আপনার নাম যেদিন প্রথম পেপারে এসেছে, সবাই আপনাকে চিনেছে, নিশ্চয়ই আপনার ভালো লেগেছে। কিন্তু পাঁচ দিন আসা আর পাঁচ বছর ধরে আসা ভিন্ন কথা। তার মানে আপনি দেশকে কিছু দিতে পারছেন। আমি বলব, তারকাখ্যাতি পাওয়ার চাইতে ধরে রাখাটাই আসল।
সাকিব: আমি আসলে এগুলো নিয়ে চিন্তাই করি না। কেউ যদি বলে, আপনি তো সেভাবে বাইরে যান না, মানুষের সঙ্গে মেশেন না। তাহলে আপনি কি সবার সঙ্গে একটা দূরত্ব রাখার চেষ্টা করেন? এটা কিন্তু নিজেকে তারকা ভাবি বলে করি না। আমি বিকেএসপিতে পড়েছি, একটা জিনিস শিখে এসেছি। আমি ওভাবেই চলি। যদি বিকেএসপিতে না পড়তাম, তাহলে হয়তো এমন হতাম না। আপনি খেয়াল করলে দেখবেন, আমরা যারা বিকেএসপি শেষ করে বেরিয়েছি, প্রায় সবাই একই রকম।
শুভ্র: খেলার বাইরে আপনাদের দুজনের সবচেয়ে বড় বিনোদন কী?
মাশরাফি: আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিনোদন আড্ডা। এই ইন্টারভিউটা যেহেতু ক্রিকেটকেন্দ্রিক, আমি বলব আমরা দলের সবাই যখন একসঙ্গে থাকি। আমার কাছে মনে হয়, এর চেয়ে আনন্দের কোনো সময় নেই। সেটা আমরা একসঙ্গে বসে থাকি, একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করি, যা-ই করি। আমাদের মধ্যে যা হয়, সেসব আমার সারা জীবনের পুঁজি হয়ে থাকবে। আমার জীবনে আড্ডা অনেক বড় ব্যাপার। এটা আমার যেমন অনেক ক্ষতি করেছে, আবার আমাকে এখানে নিয়েও এসেছে। আড্ডা তাই আমার জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
সাকিব: আমি অবদান রাখার পর টিম জিতলে এর চেয়ে মজা আমার আর কিছুতেই লাগে না।
শুভ্র: এটা তো পেশাগত জীবনেরই কথা হয়ে গেল। ক্রিকেটের বাইরে বিনোদন কী?
সাকিব: ফ্রেন্ডদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া, ফ্যামিলির সঙ্গে সময় কাটানো। আলাদা কিছু নয়।
শুভ্র: আমি তো অনেক প্রশ্ন করলাম। এবার আপনারা একে অন্যকে একটা করে প্রশ্ন করবেন। সাকিব মাশরাফিকে প্রশ্ন করুন, প্লিজ।
সাকিব: (কিছুক্ষণ ভেবে) কী প্রশ্ন করব, আমাদের সবই তো আমরা জানি...ঠিক আছে, এই প্রশ্নটা করি, প্রতি ম্যাচে নামার সময় কী চিন্তা করেন?
মাশরাফি: আমি ২০০৩ সালে যখন আবার চোট পেলাম, তত দিনে আমার তিনটা অপারেশন হয়ে গেছে। এর পর ২০০৮ পর্যন্ত যখন টানা খেলি, তখনো আমার অনেক স্বপ্ন ছিল। দুই শ-আড়াই শ টেস্ট উইকেট পাব। আট বছর টানা খেলতে পারলে তা সম্ভবও ছিল। কিন্তু ২০০৯ সালে আবার অপারেশন করে ফেরার পর আমি প্রতিটি ম্যাচে এই ভেবে নামি, এটা আমার লাস্ট ম্যাচ। যতটুকু পারি, উপভোগ করব। কারণ এখন ইনজুরি হলেই আমি শেষ। মাঠে নেমে কী হবে, আমি জানি না। তাই মনকে বলি, এটাই হয়তো আমার শেষ ম্যাচ, আমি আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।
শুভ্র: মাশরাফি, এবার আপনি সাকিবকে প্রশ্ন করেন?
মাশরাফি: আমার দুইটা বাচ্চা আছে। তাই আমেরিকায় বাচ্চা রেখে এসে তোর অবস্থাটা আমি বুঝতে পারি। আমার প্রশ্ন হলো, তোর বাচ্চাকে আমরা কবে দেখব?
সাকিব: (হাসি) আগামী মাসের শুরুতেই আসার কথা আছে। যদি দুবাই হয়ে আসে, তাহলে হয়তো তিন-চার দিন দেরি হবে। যেটাই হোক, এশিয়া কাপের সময়ই দেখতে পারবেন ইনশা আল্লাহ।