ইয়ান চ্যাপেলের একান্ত সাক্ষাৎকার
`নিজে যা, তা থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ; মানুষ পছন্দ করলে করবে, না করলে নাই`
উৎপল শুভ্র
২৭ এপ্রিল ২০২১
ক্রিকেট নিয়ে কথা বলতে চান? ইয়ান চ্যাপেলের চেয়ে ভালো কাউকে পাওয়া কঠিন। সেটি শুধু ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে ডাকাবুকো অধিনায়ক ছিলেন বা খেলাটা খুব ভালো বোঝেন বলেই নয়, চ্যাপেলদের বড় ভাইয়ের আসল আকর্ষণ অসাধারণ বাগ্মিতা। ১৯৯৬ সালে সিঙ্গাপুরে সিঙ্গার ওয়ার্ল্ড সিরিজের সময় নেওয়া এই সাক্ষাৎকারটিই যেমন অনেক দিন ক্যাসেটে ধরে রেখেছিলাম, মুছে ফেলতে মন চায়নি। মুগ্ধতার কথা বলার পর উত্তরটাও দিয়েছিলেন খুব মজার, `এখন তো আমি কথা বেচেই খাই।` কমেন্ট্রির দিকে ইঙ্গিত আর কি!
প্রথম প্রকাশ: এপ্রিল ১৯৯৬। ভোরের কাগজ।
উৎপল শুভ্র: অবসর-পরবর্তী জীবন কেমন কাটছে আপনার?
ইয়ান চ্যাপেল: খুবই ভালো। খেলার মতোই দারুণ উপভোগ করছি খেলা-পরবর্তী জীবনটাও। যে খেলাটা সারা জীবন আমার সঙ্গে জড়িয়ে ছিল, তাতে জড়িত থাকতে পারাটা খুব দারুণ ব্যাপার। আমি এখন কমেন্ট্রি করছি ও লিখছি। দুটোই আমি উপভোগ করি খুব। ভালো ক্রিকেট দেখার সুযোগ পাই, সুন্দর সুন্দর জায়গায় যেতে পারি এবং এর পরও বাড়িতে থাকার অনেকটা সময় পাই। ইটস আ গুড লাইফ।
শুভ্র: প্রায় দেড় যুগ ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট খেলার পর খেলা ছেড়েছেনও প্রায় দেড় যুগ হতে চলল। কী কী পরিবর্তন চোখে পড়েছে আপনার?
চ্যাপেল: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনটা আমার ক্যারিয়ারের শেষদিকেই শুরু হয়। তা হলো নাইট ক্রিকেট। আমার কাছে গত অনেক বছরে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। আমি চাই, এটার আরও সম্প্রসারণ ঘটুক এবং টেস্ট ম্যাচও রাতে খেলা হোক। এ জন্য সমস্যা একটাই, ৮৫ ওভার টিকে থাকার মতো বল, যা রাতের ভিন্ন পরিবেশে আকার ও রং বদলাবে না। এ ধরনের বল পাওয়া গেলে আমার মনে হয় রাতে টেস্ট খেলা সম্ভব এবং ক্রিকেটের জন্য এটা হবে খুব ভালো ব্যাপার।
শুভ্র: রাতের ক্রিকেট, রঙিন পোশাক, সাদা বল এগুলোর তো অনেক সমালোচনাও আছে। আপনি মনে হচ্ছে এর বড় সমর্থক?
চ্যাপেল: সমালোচনা যা আছে, তার বেশির ভাগই করে ইংরেজ সাংবাদিকরা। ওদের এ সম্পর্কে একটা অদ্ভুত সংস্কার আছে। তাতে অবশ্য আমি অবাক হইনি। কারণ ইংরেজ সাংবাদিকদের অনেকেই বাস করে অতীতে। কিন্তু যেমন লেখা হয়েছে, রঙিন পোশাক আনা হয়েছে শুধুই সৌন্দর্যের প্রয়োজনে, আসলে তা ঠিক নয়। এটা আসার খুব যুক্তিসংগত কারণ আছে। এই রঙিন পোশাকের প্রবর্তনে আমারও কিছুটা অবদান আছে। একেবারে প্রথম দিকের একটি ডে-নাইট ম্যাচে খেলার সময়ই আমি রঙিন পোশাকের প্রয়োজনীয়তাটা বুঝতে পারি। সাদা পোশাক পরে সাদা বল দিয়ে আমরা খেলছিলাম। আমি ফিল্ডিং করছিলাম গালিতে। কয়েকটি বল হওয়ার পরই আমি বুঝতে পারি, সাদা পোশাক পরে সাদা বলে খেলা চালিয়ে গেলে কেউ না কেউ মারা যাবে। কারণ ব্যাটসম্যান স্কয়ার কাট খেললে গালির ফিল্ডার সাদা পোশাকের কারণে সাদা বল দেখতে পায় না। তাই বল মাথায় লাগার আশঙ্কা থাকেই, আর লাগলে সে মারা যাবে। কাজেই রঙিন পোশাকের বিরুদ্ধে ইংরেজ সাংবাদিকরা যা লিখেছে, সেগুলো সব ‘রাবিশ’। ডে-নাইট ম্যাচ খেলতে হলে আপনাকে সাদা বল ব্যবহার করতেই হবে, রাতে আপনি লাল বলে খেলতে পারবেন না এবং সাদা বলে খেললে আপনি সাদা পোশাক ব্যবহার করতে পারবেন না। এটা খুব সরল ব্যাপার।
আরেকটা ব্যাপারেও আমার কোনো আপত্তি নেই। তা হলো, টেস্ট আর ওয়ানডেতে যে পার্থক্যটা আছে এখন। ওয়ানডে খেলা হচ্ছে রঙিন পোশাকে, টেস্ট সাদা পোশাকে। এ ধরনের পার্থক্য থাকায় কোনো সমস্যা নেই। বরং এতে খেলাটির ভিত্তি আরও বিস্তৃত হচ্ছে, বাড়ছে এর আবেদন। ক্রিকেটকে আরও ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যও এটি ভালো। যদি তরুণ খেলোয়াড়রা তাদের প্রিয় ক্রিকেটারের নাম লেখা শার্ট পরে ঘুরে বেড়ায়, তাহলে সমস্যাটা কী তা তো আমি বুঝি না। আমার যদি অ্যাডিলেড ওভালে গিয়ে কিথ মিলারকে দেখে ক্রিকেটার হতে ইচ্ছে জাগে, যদি তাঁর খেলা দেখে রোমাঞ্চিত হই, তাহলে তাঁর সঙ্গে আজকের কিশোর-তরুণদের ব্রায়ান লারা, শচীন টেন্ডুলকার ও মার্ক ওয়াহর খেলা দেখে রোমাঞ্চিত হওয়ায় পার্থক্যটা কী? তাঁদের নাম লেখা শার্ট পরায় সমস্যাটা কী? এ সবকিছুই খেলাটিকে প্রমোট করায় সাহায্য করছে। আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন কিথ মিলারের নাম লেখা শার্ট পেলে তো আমার আনন্দের সীমা থাকত না। সেটা রঙিন না সাদা পোশাক, তাতে আমার কিছুই এসে যেত না। ওটা পরে বাড়ির আঙিনায় আমি আনন্দে দৌড়ে বেড়াতাম। আমি তো বুঝি না, এতে সমস্যাটা কী! ক্রিকেটের জন্য তো এটি ভালো ব্যাপার।
শুভ্র: কিথ মিলারই কি আইডল ছিল আপনার?
চ্যাপেল: হ্যাঁ, কিথ মিলারই ছিলেন আমার আইডল। তিনি যেভাবে ক্রিকেট খেলতেন, সেটাই পছন্দ ছিল আমার। আমার বাবা ছিলেন কিথ মিলারের ফ্যান। বাবাই আমাকে ক্রিকেট শেখান। মাঠে নিয়ে গিয়ে তিনিই বলেন, 'দেখো, কিথ মিলার কী করছে!’ আমার মনে হয় না, এর চেয়ে ভালো কোনো উদাহরণের কথা বলতে পারতেন তিনি। কিথ মিলার ছিলেন খুব আক্রমণমনস্ক ক্রিকেটার। তিনি ছিলেন বোলার, তিনি ছিলেন ব্যাটসম্যান, তিনি ছিলেন খুব ভালো ফিল্ডার--সব সময়ই কিছু না কিছু করতেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মিলার ছিলেন বর্ণাঢ্য এক চরিত্র। মাঠে খুব দারুণ লাগত তাঁকে। লম্বা, সুঠামদেহী; যা করতেন তাতেই একটা সৌন্দর্য থাকত। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয়—তিনি ছিলেন একজন অ্যাগ্রেসিভ ক্রিকেটার। এ কারণেই, যে মাঠে কিথ মিলার খেলেছেন, সে মাঠে খেলার স্বপ্ন জেগেছিল আমার।
শুভ্র: ব্যাটসম্যান এবং অধিনায়ক–দু ক্ষেত্রেই আপনিও ছিলেন খুব অ্যাগ্রেসিভ। এটা কি তাহলে মিলারেরই প্রভাব?
চ্যাপেল: আমি যেভাবে খেলেছি, তাতে অনেকেরই অবদান আছে। আমার বাবাকে এর অনেকটা কৃতিত্ব দিতে হবে। তিনি ছিলেন একজন ভালো ক্লাব ক্রিকেটার। তাঁর বিপক্ষে যাঁরা খেলেছে, তাঁরাই আমাকে বলেছে, 'তোমার বাবা ছিল খুব অ্যাগ্রেসিভ ও কম্পিটিটিভ ক্রিকেটার।' তবে একই সঙ্গে তিনি ছিলেন খুব ফেয়ার ক্রিকেটার। আমাদের ভাইদেরও তিনি সেভাবেই খেলতে শিখিয়েছেন, ‘হার্ড বাট ফেয়ার।' আমার খেলায় আক্রমণাত্মক মেজাজ বেশিরভাগই বাবার কাছ থেকে পাওয়া। আমার দাদা (ভিক রিচার্ডসন), যিনি অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক ছিলেন; শুনেছি তিনিও ছিলেন খুব আক্রমণাত্মক খেলোয়াড় এবং অধিনায়ক। আমি আমার ক্যারিয়ারের শুরুতে দারুণ আক্রমণাত্মক এক অধিনায়কের নেতৃত্বে খেলেছি। শেফিল্ড শিল্ডে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক লেস ফ্যাভেল ছিলেন খুবই অ্যাগ্রেসিভ অধিনায়ক। তাঁর নেতৃত্বে অনেক উত্তেজনা ভরা ম্যাচ খেলেছি আমরা। সব মিলিয়ে, এ ধরনের পরিবেশে বেড়ে ওঠার পর আমার আক্রমণাত্মক ক্রিকেটার না হয়ে উপায় ছিল না। তবে আমি যেভাবে খেলেছি, সে নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ নেই। আমার সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাইভ লয়েড বলেছে, 'চ্যাপেল ভাইরা হার্ড ক্রিকেট খেলে, কিন্তু তা সব সময় ফেয়ার।' এটা আমার খুব ভালো লেগেছে। আমার বাবা বেঁচে থাকলে এটা পড়ে তিনি খুব খুশি হতেন, কারণ তিনি আমাদের এভাবেই খেলতে শিখিয়েছেন।
শুভ্র: যে কেউই অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের সেরা অধিনায়কদের তালিকা করুক না কেন, আপনাকে বাদ দেওয়া প্রায় অসম্ভব। আপনার দৃষ্টিতে আদর্শ লিডারশিপের সংজ্ঞাটা কী?
চ্যাপেল: আমার অধিনায়কত্বে খেলা খেলোয়াড়দের জন্য খেলাটাকে ইন্টারেস্টিং করে তুলতে হবে, এটাকে আমি সব সময়ই আমার কাজের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মনে করছি। কারণ খেলোয়াড়দের জন্য ক্রিকেট ইন্টারেস্টিং হলে তা দর্শকদের জন্যও ইন্টারেস্টিং হতে বাধ্য। একই সঙ্গে আমার বিশ্বাস ছিল, এটাই খেলোয়াড়দের কাছ থেকে সেরা খেলাটা বের করে আনবে। কারণ আপনি সচরাচর দেখবেন, খেলাটা আকর্ষণীয় ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাময় হলেই সেরা খেলোয়াড়দের সেরা খেলাটা বেরিয়ে আসে। অনেককে আমি বলতে শুনেছি, সোমবারে শেফিল্ড শিল্ড ম্যাচে খেলে কোনো মজা নেই। কারণ মাঠে দর্শক থাকে খুব কম।' জবাবে আমি সব সময় বলেছি, গ্যালারিতে চার জন দর্শক থাকল না চল্লিশ হাজার দর্শক থাকল, তাতে আমার কিছু আসে যায় না। খেলার প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেহারাটাই গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাচ নিষ্প্রাণ এবং অনাকর্ষণীয় হলে আমি কখনোই খেলায় আগ্রহ ধরে রাখতে পারিনি। খেলাটি যদি উত্তেজনাপূর্ণ হয়, সেটাই শুধু আমাকে সেরা খেলা খেলিয়েছে। খেলোয়াড় হিসেবে আমার যখন এই উপলব্ধি, তখন আমি কর্তব্য মনে করেছি, আমার অধিনায়কত্বে খেলাটা খেলোয়াড়দের কাছে আকর্ষণীয় ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাময় করে তুলতে। আমার মনে হয়, সেটাই তাঁদের কাছ থেকে সেরা খেলাটা বের করে এনেছে।
শুভ্র: আপনার আত্মজীবনী 'ক্রিকেট ইন আওয়ার ব্লাড'-এ একটা কথা অন্যরকম লেগেছে আমার কাছে। আপনি লিখেছেন, চার-পাঁচ বছরের বেশি কারও জাতীয় দলের অধিনায়ক থাকা উচিত নয়। কারণ এরপর সে মানসিকভাবে অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে।
চ্যাপেল: আসলে প্রত্যেক মানুষই আলাদা। আমার বোধ হয় কথাটা একটু অন্যভাবে বলা উচিত ছিল। তবে আমি বিশ্বাস করি, অধিনায়কত্বেরও একটা নির্দিষ্ট সময় আছে, এরপর আপনি মানসিকভাবে ক্ষয়ে যেতে শুরু করবেন। আমার নিজের কথা বললে, আমি ছিলাম নিজেকে সব সময় উজাড় করে দেওয়ার মানসিকতাসম্পন্ন এক ক্রিকেটার। যেহেতু আমি অধিনায়কত্বে সব কিছু ঢেলে দিয়েছিলাম, এগারোটা-ছয়টার বাইরেও অনেক সময় ব্যয় করতাম এর পেছনে, খেলোয়াড়দের সঙ্গে মিশতাম, ক্যাপ্টেনসি নিয়ে ভাবতাম—তাই বছর চারেক পর আমার নিজেকে মানসিকভাবে অনেক ক্লান্ত মনে হয়েছে, মনে হয়েছে আমি আগের মতো চনমনে নেই। যেভাবে অধিনায়কত্ব করতে চাই, সেভাবে আর ভাবতে পারছি না আমি, আগের সেই আক্রমণাত্মক মেজাজটাও বদলে গেছে অনেকটা। তখনই বুঝতে পেরেছি, এটাই সরে যাওয়ার সময়। এ কারণেই আমি বিশ্বাস করি, অ্যালান বোর্ডারের আরো অনেক আগেই অস্ট্রেলিয়ার ক্যাপ্টেনসি ছেড়ে দেওয়া উচিত ছিল। তবে সে অন্য রকম ভেবেছে এবং অনেক বেশি দিন অধিনায়ক থেকেছে। যদিও বোর্ডার বা অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের জন্য তা ভালো হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই। আমি সত্যিই বিশ্বাস করি, অধিনায়ক হিসেবে একটা সময়ের পর একজন মানসিকভাবে স্থবির হয়ে পড়তে বাধ্য। তখনই উচিত অন্য কাউকে দায়িত্ব দিয়ে নিজের ওপর থেকে চাপটা কমিয়ে দেওয়া।
শুভ্র: অধিনায়ক হিসেবে মার্ক টেলরকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন আপনি?
চ্যাপেল: মার্ক টেলর খুব ভালো অধিনায়ক। আমি মনে করি, টেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে এই মুহূর্তে মার্ক টেলরই বিশ্বের সেরা অধিনায়ক। তবে তাঁর খুব কাছাকাছিই আছে অর্জুনা রানাতুঙ্গা। অধিনায়ক হিসেবে অর্জুনাকেও আমি খুব ভালো মনে করি। এটা শুধু শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক সাফল্য বা বিশ্বকাপ জয়ের কারণে নয়। আমি তাকে আশির দশকের শেষ দিকে ও এ দশকের প্রথম দিকে খুব শক্তিশালী নয় এমন শ্রীলঙ্কান দলকেও নেতৃত্ব দিতে দেখেছি। তখনই আমার মনে হয়েছে, ভালো অধিনায়ক হওয়ার সব গুণই তার আছে। তার অধিনায়কত্বের ধরনটা আমি পছন্দ করি। সে শ্রীলঙ্কা দলকে অনেক কম্পিটিটিভ করে তুলেছে এবং সেটিকে আরও ভালো দলে পরিণত করেছে। আমি মনে করি, একজন অধিনায়কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ এটাই—দলকে সামর্থ্যের চূড়ায় নিয়ে যাওয়া। শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক হিসেবে অর্জুনা রানাতুঙ্গা তা-ই করেছে। যে অধিনায়ক তার দলের সেরা খেলাটা বের করে আনতে পারে, আমি তাকে প্রশংসা করি। আমি মনে করি, অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক হিসেবে মার্ক টেলরও তাই করেছে। বোর্ডারের কাছ থেকে দায়িত্ব নেওয়ার পর সে অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে গেছে নতুন এক পর্যায়ে। আমি আগেই বলেছি, একজন অধিনায়কের কাজ হলো, তার দলের সেরা খেলাটা বের করে আনা এবং মার্ক টেলর ও অর্জুনা রানাতুঙ্গা তা পেরেছে। শুধু সাফল্য নয়, কোনো দল কী ধরনের ক্রিকেট খেলছে, এটাও আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আমার মতে, বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কাই সবচেয়ে উপভোগ্য ক্রিকেট খেলছে এবং এর বেশির ভাগ কৃতিত্বই অধিনায়কের প্রাপ্য। এ কারণেই শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে বিশ্বকাপ ফাইনাল হওয়ায় খুব খুশি হয়েছিলাম আমি। কারণ আমার বিচারে এই দুটিই ছিল প্রতিযোগিতার সেরা দল। এবং টেলর ও রানাতুঙ্গা ছিল সেরা দুই অধিনায়ক।
শুভ্র: অধিনায়ক হিসেবে আপনি নিশ্চয়ই শেন ওয়ার্নকে দলে পেলে খুশি হতেন।
চ্যাপেল : কোনো অধিনায়ক যদি শেন ওয়ার্নকে দলে পেতে না চায়, তাহলে বলতে হবে সে একটা ইডিয়ট। তাকে কোনো ক্রিকেট দলের অধিনায়কই বানানো উচিত নয়। কারণ শেন ওয়ার্ন ঘটনার স্রোতে ভেসে যায় না, সে ঘটনা ঘটায় এবং একজন অধিনায়ক সব সময়ই দলে এ ধরনের খেলোয়াড় চায়, যারা যেকোনো সময় কিছু ঘটানোর ক্ষমতা রাখে।
একটা ব্যাপার পরিষ্কার করে নেওয়া ভালো। আমাকে লোকজন যখন জিজ্ঞেস করে, আমি কি সময় বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকলে এখন খেলতাম, কারণ এখন খেলায় অনেক বেশি টাকা? আমি সব সময়ই বলেছি, না। যদি আমাকে সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে যে সময়ে খেলেছি, সে সময়েই আবার খেলতে চাইব। আমি দারুণ উপভোগ করেছি আমার সময়টা। একটা ভালো দিকও ছিল, আমি প্রায় অ্যামেচারিশ একটা সময়ে খেলার সুযোগ পেয়েছি। এই অ্যামেচারিশ কথাটা টাকা-পয়সার অর্থে, অবশ্যই খেলার অর্থে নয়। প্রসঙ্গক্রমে বলি, খেলোয়াড়দের টাকা-পয়সা বাড়ানোর কথা বলা প্রথম লোকদের একজন ছিলাম আমি। কাজেই অধিনায়ক হিসেবে আমি শেন ওয়ার্নকে দলে পেলে খুশি হতাম, এ কথা বলার অর্থ এই নয় যে, আমি যখন খেলেছি, তার চেয়ে এখন খেলতে পারলে খুশি হতাম। আমি যা বলতে চাচ্ছি তা হলো, যেকোনো অধিনায়কের জন্যই শেন ওয়ার্নের মতো একজন বোলার দলে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। একই কারণে ভাগ্যের ব্যাপার মানতে হবে ডেনিস লিলির মতো বোলার দলে পাওয়াটাকেও। ডেনিস লিলির মতো বোলারকে দলে পেয়েছিলাম বলে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।। আসলে ডেনিস লিলিকে আমি যেভাবে বর্ণনা করেছি, একইভাবে বর্ণনা করব শেন ওয়ার্নকে, 'অধিনায়কের স্বপ্ন এবং ব্যাটসম্যানের দুঃস্বপ্ন।'
শুভ্র: অনেকেই এমন বলতে শুরু করেছেন। আপনিও কি মনে করেন, শেন ওয়ার্ন সর্বকালের সেরা স্পিনার?
চ্যাপেল: এ ধরনের কথাবার্তা পুরোপুরি অর্থহীন। কারণ আপনি কখনোই ভিন্ন যুগের বোলারদের তুলনা করতে পারবেন না। আসল ব্যাপার হলো, যেকোনো খেলোয়াড় তা সে বোলার, ব্যাটসম্যান বা ফিল্ডার যা-ই হোক না কেন, যদি তাঁর সময়ে খুব ভালো খেলোয়াড় হয়, তাহলে সে যেকোনো সময়েই তা হবে। যদি শেন ওয়ার্ন বিল ও'রিলি ও ক্ল্যারি গ্রিমেটের সময় জন্ম নিত, তাহলেও সে খুব ভালো বোলার হতো। হয়তো নির্বাচকরা এই তিন জনকে একটি অস্ট্রেলিয়া দলে ঢোকাতে গিয়ে গলদঘর্ম হতেন। তাই সে সময় জন্মালে তার অন্য দেশে জন্মালেই ভালো হতো। যা হোক, সৌভাগ্যক্রমে এই তিনজন এক সময়ে জন্মাননি। আমি যা বলতে চাইছি তা হলো শেন ওয়ার্ন যেকোনো যুগেই খুব ভালো বোলার হিসেবে স্বীকৃতি পেত। একইভাবে বিল ও'রিলি যদি এখন জন্মাতেন, তাহলেও ব্যাটসম্যানদের জীবন অতিষ্ঠ করে ছাড়তেন। একই কথা গ্রিমেটের ক্ষেত্রেও। কারণ তাঁরা ছিলেন খুব ভালো বোলার। একই কথা বলা যায় শচীন টেন্ডুলকারের ক্ষেত্রেও। ত্রিশের দশকে ব্র্যাডম্যানের সময়ে জন্মালেও সে খুব ভালো ব্যাটসম্যান হতো।
বিশ বছর পর সবাই বলবে, এখন আর ক্রিকেটে শচীন টেন্ডুলকার, মার্ক ওয়াহ ও ব্রায়ান লারার মতো চরিত্র নেই । ভিন্ন ভিন্ন যুগে ভিন্ন রকম খেলোয়াড় হবে, ভিন্ন রকম মানুষ হবে। আমি যখন খেলতাম, তখন মানুষ বলত, 'এখন গ্যারি সোবার্স ও কিথ মিলারের মতো চরিত্র কোথায়?'
শুভ্র: ব্র্যাডম্যানের মতো ভালো?
চ্যাপেল: না, না, সে প্রশ্নই আসে না। ব্র্যাডম্যানের অ্যাভারেজ ৯৯, এটা পরবর্তী সেরা ব্যাটসম্যানটির চেয়ে ৪০ বেশি। আমরা অ্যাভারেজ ব্যাটসম্যানের কথা বলছি না। বলছি পরবর্তী সেরা ব্যাটসম্যানের চেয়ে ব্র্যাডম্যানের অ্যাভারেজ ৪০ বেশি। এটা একটা বিশাল ব্যবধান। আমি মনে করি, এভাবে তুলনা হয় না। প্রতিপক্ষ যদি আপনাকে খুব ভালো খেলোয়াড় মনে করে, সেটাই সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি। প্রতিপক্ষ যদি বলে, 'সে খুব ভালো ব্যাটসম্যান ছিল’, আমার কাছে সেটাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে তুলনার প্রশ্নই আসে না। এখন কেউ যদি আমাকে বলে আমি ব্র্যাডম্যানের চেয়ে বড় ব্যাটসম্যান, তাহলে সে হয় ইডিয়ট, নয় তো মিথ্যেবাদী অথবা সে খেলা বোঝে না।
শুভ্র: এই প্রশ্নটা তো এখন অবশ্যম্ভাবী। ব্রায়ান লারা ও শচীন টেন্ডুলকারের মধ্যে তুলনা...
চ্যাপেল: আমি এই দুজনের ব্যাটিংই খুব এনজয় করি। তবে আমাকে যদি আপনি বলেন, দুজনের মধ্যে শুধু একজনকে দলে নিতে পারব, তাহলে আমি লারাকে বেছে নেব। কারণ আমার মনে হয়, সে শচীন টেন্ডুলকারের চেয়ে সামান্য কম ঝুঁকি নিয়ে রান করে। পার্থক্যটা খুব বেশি নয়। তবে এটুকুর জন্যই আমার পছন্দ হবে লারা। আমি অবশ্য মার্ক ওয়াহকেও এদের দলে রাখতে চাই। কারণ মার্ক ওয়াহ গত কয়েক মাসে ব্যাটসম্যান হিসেবে অনেক পরিণত হয়েছে। আমি এখন তাকে লারা ও টেন্ডুলকারের পাশেই রাখব। এই তিনজনের মধ্যে একজনকে বেছে নিতে হলে আমি লারাকেই নেব, যদিও এটা বলা অনেক বড় ব্যাপার। কারণ আমি মার্ক ওয়াহ ও শচীন টেন্ডুলকারের ব্যাটিংও খুব উপভোগ করি।
শুভ্র: একটা অভিযোগ এখন খুব শোনা যায়, খেলাটিতে আগের মতো চরিত্র নেই। খেলোয়াড়রা সব প্রায় একই রকম।
চ্যাপেল: এ কথা যারা বলে, আমার ধারণা তারা ঠিকমতো খেলা দেখে না। আপনি কীভাবে বলতে পারেন, শচীন টেন্ডুলকার ও ব্রায়ান লারা একই রকম খেলোয়াড়? ওরা দুজন একেবারেই আলাদা রকম, মার্ক ওয়াহ আবার অন্য রকম। আমি তো ওদের সবার খেলা দেখেই আনন্দ পাই।
শুভ্র: কথাটা শুধু তাদের খেলা নিয়ে হচ্ছে না। মাঠে ও মাঠের বাইরে খেলোয়াড়দের কথাবার্তা, আচার-আচরণ এসব।
চ্যাপেল: আমার তো মনে হয়, বিশ বছর পর সবাই বলবে, এখন আর ক্রিকেটে শচীন টেন্ডুলকার, মার্ক ওয়াহ ও ব্রায়ান লারার মতো চরিত্র নেই । আমি মনে করি, ভিন্ন ভিন্ন যুগে ভিন্ন রকম খেলোয়াড় হবে, ভিন্ন রকম মানুষ হবে। আমি যখন খেলতাম, তখন মানুষ বলত 'এখন গ্যারি সোবার্স ও কিথ মিলারের মতো চরিত্র কোথায়?' এসব নিয়ে আমি কোনো দিন ভাবিনি, এখনকার ক্রিকেটারদেরও ভাবা উচিত বলে মনে করি না। নিজে যা, তা থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ। তাতে মানুষ পছন্দ করবে করবে, নইলে নাই। আমি সব সময়ই একটা জিনিস বিশ্বাস করে এসেছি, পঞ্চাশ শতাংশ লোক আমাকে পছন্দ করবে, পঞ্চাশ শতাংশ করবে না। এ নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই। আমি যা, তা-ই থাকব।
আমার দেখা সেরা ব্যাটসম্যান স্যার গারফিল্ড সোবার্স। আমি তাঁর অলরাউন্ড সামর্থ্যের কথা বলছি না, শুধু তার ব্যাটিং সম্পর্কে বলছি। ১৯৭১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রেস্ট অব দ্য ওয়ার্ল্ডের পক্ষে ২৫৪ রান করেছিলেন সোবার্স। এই দীর্ঘ ইনিংস খেলার সময় একবারও মনে হয়নি, তাঁকে আউট করতে পারব আমরা।
শুভ্র: খেলোয়াড় জীবনের কোনো ঘটনা নিয়ে কি আপনার অনুতাপ আছে?
চ্যাপেল: দুটি অনুতাপ আছে আমার। দুবার আমি আম্পায়ারকে গালাগালি করেছিলাম। শুধু ক্রিকেটের আইনেই আমি অপরাধ করিনি, আমার নিজের আইনেও ওই কাজটা ছিল অন্যায়। কারণ আমি বিশ্বাস করি, একজন খেলোয়াড় কখনোই আম্পায়ারকে গালাগালি করতে পারে না। মাঠে আমি আমার আবেগ সামলাতে পারিনি বলে অনুতপ্ত। তবে ১৬ বছর দীর্ঘ আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে মাত্র দুটি অনুতাপের ঘটনা! আমার মনে হয় এটা খুব বেশি খারাপ নয়।
শুভ্র: আন্তর্জাতিক ক্রিকেট যেসব বোলারের বিপক্ষে খেলেছেন, তাদের সম্পর্কে কিছু বলুন। লিলিকে তো আপনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলেননি।
চ্যাপেল: লিলির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলিনি, খেলেছি শেফিল্ড শিল্ডে। তবে আপনি যখনই লিলির মুখোমুখি হবেন, সব সময়ই তা আসল লিলি। বিশেষ করে শেফিল্ড শিল্ড ম্যাচে। শেফিল্ড শিল্ড প্রতিযোগিতার আসল দিকটাই এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মেজাজ। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আমরা টিমমেট, কিন্তু শেফিল্ড শিল্ডে দুদলে খেলার সময় দুজন পরস্পরের চরম শত্রু। আমি দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে ডেনিস লিলির মুখোমুখি হয়েছি এবং সেটা অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে খেলা লিলিই। তাই সেই ম্যাচগুলোতে রান করার পর আলাদা একটা তৃপ্তি পেয়েছি। কারণ লিলির মতো একজন গ্রেট বোলারের বোলিংয়ে আপনি রান করতে পারেন, এই উপলব্ধিটা সব সময়ই আনন্দের ব্যাপার। কোনো সন্দেহ নেই, ডেনিস লিলিই আমার দেখা সেরা ফাস্ট বোলার।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলা ফাস্ট বোলারদের মধ্যে সেরা ইংল্যান্ডের জন স্নো, ওয়েস্ট ইন্ডিজের অ্যান্ডি রবার্টসের চেয়ে সে সামান্য এগিয়ে। যেসব স্পিন বোলারের বিপক্ষে খেলেছি, তাদের মধ্যে সেরা ভারতের এরাপল্লী প্রসন্ন । সে ছিল দারুণ এক স্পিনার। খুব অ্যাটাকিং বোলার, প্রতি বলেই তার চেষ্টা থাকত ব্যাটসম্যানকে আউট করার। স্পিন বোলারদের মধ্যে রান করা সবচেয়ে কঠিন ছিল ডেরেক আন্ডারউডের বোলিংয়ে, ফাস্ট বোলারদের মধ্যে 'বিগ বার্ড' জোয়েল গার্নার। এ দুজনের বোলিংয়ে রান করা ছিল খুবই কঠিন।
শুভ্র: আপনার সমসাময়িক ব্যাটসম্যানদের সম্পর্কে বলুন।
চ্যাপেল: আমার দেখা সেরা ব্যাটসম্যান স্যার গারফিল্ড সোবার্স। আমি তাঁর অলরাউন্ড সামর্থ্যের কথা বলছি না, শুধু তার ব্যাটিং সম্পর্কে বলছি। হি ওয়াজ আ গ্রেট প্লেয়ার। ১৯৭১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রেস্ট অব দ্য ওয়ার্ল্ডের পক্ষে ২৫৪ রান করেছিলেন সোবার্স। এটি আমার দেখা সেরা ইনিংসগুলোর একটি। এই দীর্ঘ ইনিংস খেলার সময় একবারও মনে হয়নি, তাঁকে আউট করতে পারব আমরা। এত বড় একটা ইনিংসের ক্ষেত্রে এ কথা বলতে পারা অনেক বড় ব্যাপার। অন্য যেকোনো ব্যাসম্যানকে এত রান করতে হলে কিছু না কিছু ঝুঁকি নিতেই হবে। কিন্তু সোবার্স এত ভালো ব্যাটসম্যান ছিলেন যে, একদম কোনো ঝুঁকি না নিয়েই এত বড় ইনিংস খেলতে পেরেছেন। আরেক বাঁহাতি দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রায়েম পোলকের চেয়ে সোবার্সকে সামান্য এগিয়ে রাখব আমি। রোহান কানহাইকেও আমি খুব বড় ব্যাটসম্যান মনে করি। ভিভ রিচার্ডস সম্ভবত সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যাটসম্যান। কারণ চোখের পলকে যেকোনো আক্রমণ ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল তার। তা ছাড়া সে ছিল খুব ইনটিমিডেটিং। এমনিতে ফাস্ট বোলাররা ব্যাটসম্যানকে ভয় দেখায়, ভিভ রিচার্ডস ফাস্ট বোলারদেরকেই উল্টো ভয় দেখাত। আমি অবসর নেওয়ার পরই ভিভের ব্যাটিং বেশি এনজয় করতে পেরেছি। চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে ভিভের ব্যাটিং দেখার মতো আনন্দ আর নেই। কিন্তু সে যখন আপনার দলের বোলারদের নিয়ে অমন খেলা খেলবে, তখন তা উপভোগ করা কঠিন।
ক্লাইভ লয়েড সম্পর্কে রডনি মার্শ বলত, বিশ্বের সবচেয়ে বিধ্বংসী ওয়ানডে ব্যাটসম্যান। আমি ঠিক নিশ্চিত নই, ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্লাইভ ভিভের চেয়ে এগিয়ে ছিল কি না। তবে আমার মনে হয়, ক্লাইভ ও ভিভ ব্যাটসম্যান হিসেবে খুব কাছাকাছি। আমার ভাই গ্রেগ চ্যাপেলকে আমি মনে করি মানসিকভাবে সবচেয়ে গোছানো ব্যাটসম্যান। ব্যারি রিচার্ডস মাত্র ৪টি টেস্ট খেলেছে, এটা পরিতাপের ব্যাপার। তবে ব্যারি ছিল খুব ভালো ব্যাটসম্যান। আমি ডগ ওয়াল্টার্সের কথাও বলব। কারণ ডগ ওয়াল্টার্স ছিল ম্যাচ উইনিং ব্যাটসম্যান।
এমনিতে ফাস্ট বোলাররা ব্যাটসম্যানকে ভয় দেখায়, ভিভ রিচার্ডস ফাস্ট বোলারদেরকেই উল্টো ভয় দেখাত। আমি অবসর নেওয়ার পরই ভিভের ব্যাটিং বেশি এনজয় করতে পেরেছি। চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে ভিভের ব্যাটিং দেখার মতো আনন্দ আর নেই।
শুভ্র: আপনার আত্মজীবনীতে ডগ ওয়াল্টার্স সম্পর্কে খুব উচ্ছ্বসিত মনে হয়েছে আপনাকে।
চ্যাপেল: ডগ ওয়াল্টার্সকে আমি গ্রেট ব্যাটসম্যান হিসেবে আখ্যায়িত করায় অনেকেই বেশ অবাক হয়েছেন। কিন্তু আমি যদি আপনাকে বলি, ডগ ওয়াল্টার্স টেস্ট ক্রিকেটে তিনবার এক সেশনে সেঞ্চুরি করেছে, আর একবার করেছে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে রেস্ট অব দ্য ওয়ার্ল্ডের বিপক্ষে। আমার মনে হয় না, খুব বেশি খেলোয়াড়ের টেস্ট ক্রিকেটে এক সেশনে সেঞ্চুরি করার সামর্থ্য আছে। আমি তাকে গ্রেট ব্যাটসম্যান মনে করি, কারণ আমার অধিনায়কত্বে অস্ট্রেলিয়াকে অনেক ম্যাচ জিতিয়েছে সে। এজন্যই আমি সব সময়ই বলেছি, ডগ ওয়াল্টার্স নেই এমন অস্ট্রেলিয়া দলে খেলতে চাই না আমি। এটা শুধু তার ব্যাটিংয়ের জন্য নয়। সে ছিল দারুণ এক টিমম্যান। ট্যুরিং এবং খেলাটাকে সে পরিণত করত ফানে, মাতিয়ে রাখত ড্রেসিংরুম। এ ধরনের খেলোয়াড় দলে থাকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে সময়টা যখন খারাপ যায়। ও ছিল দারুণ এক চরিত্র, দারুণ এক ব্যাটসম্যান।
শুভ্র: ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সুনীল গাভাস্কারের কথা বলতে হয়তো আপনি ভুলে গেছেন।
চ্যাপেল: না, আসলে তা নয়। সানিকে আমি এই দলে রাখতে পারিনি, কারণ আমি তার খেলা খুব বেশি দেখতে পারিনি। ১৯৭১ সালে রেস্ট অব দা ওয়ার্ল্ডের পক্ষে সে আমার বিপক্ষে খেলেছিল, ওই সিরিজে বেশি রান করেনি। এটা ছিল তার ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের কথা। আমি সানির বিপক্ষে ওই একটা সিরিজই খেলেছি। তাই খুব কমই দেখতে পেয়েছি ওর ব্যাটিং। ব্যাটসম্যান সানির ওপর আমার পুরো শ্রদ্ধা আছে। কিন্তু সানি এই দলে নেই, কারণ আমি তার বিপক্ষে খুব বেশি খেলিনি। আমি যাদের বিপক্ষে অনেক খেলেছি, আমি তাদের নামই বললাম।