‘ট্যাকটিক্যালি সাকিব সম্ভবত বেস্ট ক্যাপ্টেন’

উৎপল শুভ্র

২৮ ডিসেম্বর ২০২১

‘ট্যাকটিক্যালি সাকিব সম্ভবত বেস্ট ক্যাপ্টেন’

তিন পর্বের সাক্ষাৎকারের তৃতীয় ও শেষ পর্বে নিজের ক্যাপ্টেনসি দর্শন নিয়ে তো কথা বলেছেনই, বলেছেন বাংলাদেশ দলে তাঁর সাত অধিনায়ককে নিয়েও। পঞ্চপাণ্ডবের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে যেমন, তেমনি এক সময়ের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু সাকিব আল হাসানকে নিয়েও। অধিনায়ক হিসেবে বড় একটা স্বপ্নেরও ঘোষণা আছে এখানে।

উৎপল শুভ্র: এবার আলোচনার বিষয় ক্যাপ্টেন তামিম। আপনি ক্যাপ্টেনসি এনজয় করেন না বলেই জানতাম, কোনোদিন ‘ক্যাপ্টেনসি ম্যাটেরিয়াল’ হিসেবেও আপনাকে নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। ওয়ানডে ক্যাপ্টেন হয়ে যাওয়াটাকে কিভাবে দেখেন?

তামিম ইকবাল: ঠিকই বলেছেন, আমি কখনোই চিন্তা করিনি, বাংলাদেশের ক্যাপ্টেন হবো। তবে যেহেতু আমাকে একটা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, এখন যদি আমার গা ছাড়া ভাব থাকে, তাহলে এই জিনিসটার ইফেক্ট আমাদের দলের মধ্যেও পড়বে। পছন্দ করি বা না-করি, একটা দায়িত্ব যখন দেওয়া হয়েছে, আমি তা ভালোভাবেই করার চেষ্টা করব। আপনি যদি এখন আমাকে বলেন, ‘তামিম, হাউ ওয়াজ ইয়োর ক্যাপ্টেনসি এক্সপেরিয়েন্স’? আমি কিন্তু উত্তর দেব না। কারণ, ইট ইজ টু আর্লি টু মেক এ কমেন্ট’। আমি যদি ধরেন আরও ২০টা ম্যাচে ক্যাপ্টেনসি করি, বা কমপক্ষে ১০-১৫টা, তাহলে বুঝতে পারব হাউ ইজ দ্য এক্সপেরিয়েন্স। আমি কেমন করে রিঅ্যাক্ট করছি, টাফ সিচুয়েশেনে ভালো হচ্ছে কি হচ্ছে না। হ্যাঁ, আমরা ওয়ার্ল্ড ওডিআই লিগে এখন পর্যন্ত খুব ভালো করেছি। ৭/৮টা ম্যাচ জিতেছি না আমরা? এটা নিয়ে যে আমি সারা রাত ভাবি, চিন্তা করি, এরকম কিছু না। 

উৎপল শুভ্র: কেন, ভাবার মতো অনেক কিছু তো আছে। সামনে ২০২৩ বিশ্বকাপ, ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে এ নিয়ে নিশ্চয়ই ভাবতে শুরু করেছেন। কেমন দল চান, কাকে কাকে দলে চান...এসব ইনপুট তো মনে হয় দিতে শুরু করেছেন, তাই না?

তfমিম ইকবাল: অবশ্যই আমি আমার ইনপুটগুলো দিই সিলেক্টেরদের। কিন্তু আপনি আপনি যদি লাস্ট একটা বছর দেখেন, আমি ক্যাপ্টেনসি শুরু করার পর ওয়ানডে কম ছিল এবং গ্যাপও ছিল অনেক বড় বড়। আমি যখন তিন মাসে ১০টা ওয়ানডে খেলব বা ৯টা ওয়ানডে খেলব, সামনে যেটা হবে, তখন সবকিছুই ভালো করে বুঝতে পারব। আমি তিনটা ম্যাচ (ক্যাপ্টেনসি) করলাম, আবার তিন মাস কোনো খেলা নেই। আবার দুই মাস পর খেললাম, আবার পরের দুই মাস ম্যাচ নেই। তখন কিন্তু রিদমটা ঠিক থাকে না। যখন আমি টানা খেলতে থাকব, তখন আমার জন্য আমার নিজেকে বোঝা, আমার টিমের কাছে আমার কী চাওয়া, এটার আরও ভালো বুঝতে পারব।

উৎপল শুভ্র: তারপরও বাংলাদেশের ওয়ানডে টিমটা তো আপনার জানাই। অধিনায়ক হিসেবে টিমটা কমপ্লিট করার জন্য যদি আপনাকে নির্দিষ্ট টাইপের কোনো প্লেয়ার নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়, সেটি কী হবে? 

তামিম ইকবাল: আমার নতুন কোনো প্লেয়ার বা অ্যান্ড্রু রাসেল বা ক্রিস গেইল দরকার নেই। আমার কথা হলো, যা আছে এই মুহূর্তে, যারা আছে, তারা যেন ওদের বেস্ট পারফরম্যান্সটা করতে পারে। অমুককে লাগবে, তমুককে লাগবে...এসব বলে তো লাভ নেই। যারা আছে, তারাই যদি তাদের বেস্ট পারফরম্যান্সটা করে, তাহলে এই দল বিশ্বের যেকোনো দলকে হারানোর ক্ষমতা রাখে।

অধিনায়ক তামিমউৎপল শুভ্র: গত জিম্বাবুয়ে সফরে টেস্ট না খেলে ওয়ানডে সিরিজ খেলা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ওয়ানডে লিগটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আগামী বছর বিশ্বকাপের আগে র‍্যাঙ্কিংয়ে এমন জায়গায় থাকতে চান, যাতে শিরোপার দাবিদার বলে ঘোষণা করলে মানুষ হাসবে না...এটাই তো স্বপ্ন, তাই না?

তামিম ইকবাল: অবশ্যই। আমার একটা সিম্পল লজিক হচ্ছে, আমরা যদি ওডিআই লিগে টপ ফোরে শেষ করি, তারপর আমি বা অন্য যে কোনো যদি কেউ ২০২৩ ওয়ার্ল্ড কাপে গিয়ে বলে, ‘আমরা এখানে ট্রফি জিততে এসেছি’; হোক না হোক, এটা সবাইকে মানতে হবে। যদি আপনি ১০ নম্বর টিম হিসেবে ফিনিশ করেন, তাহলে ব্যাপারটা একটু অন্যরকম হবে না? 

উৎপল শুভ্র: এবার আপনার অধিনায়কদের কথায় আসি। আপনি শুরু করেছিলেন হাবিবুল বাশার সুমনের ক্যাপ্টেনসিতে। তারপর আশরাফুল, মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক...টি-টোয়েন্টির কথা যদি বলি মাহমুদউল্লাহ, টেস্টে মুমিনুল...এই যে সাতজন অধিনায়কের আন্ডারে আপনি খেলেছেন, তাদের নির্দিষ্ট কোনো একটা গুণ যদি আপনি নিতে চান তো সেটা কী?

তামিম ইকবাল: সুমন ভাইকে দিয়ে শুরু করি। আমার প্রথম ক্যাপ্টেন। সুমন ভাই ওয়াজ লাইক আ ফাদার ফিগার ইন দ্য টিম। এনি ইস্যু, এনি প্রবলেম সবাই সুমন ভাইয়ের কাছে যেত। ওনার প্রতি সবার কেন যেন অন্যরকম একটা সম্মান ছিল। ওনার সমবয়সী যারা ছিল তাদেরও, যারা ছোট ছিল, তাদেরও। এই একটা জিনিস পেলে আমি খুব খুশি হবো। এটা তো জোর করে, বকা দিয়ে, ভালোবেসে পাওয়া সম্ভব না।

সুমন ভাইয়ের পর আমার ক্যাপ্টেন আশরাফুল ভাই। আশরাফুল ভাইয়ের ব্যাপারে আমার যদি পজিটিভ কিছু বলতে হয়, তাহলে বলব, তার সাহস। এই সাহস অনেক ব্যাকফায়ারও করেছে। যদি ওই সময়ে রিসোর্সেস্ থাকত, ওরকম বোলিং অ্যাটাক থাকত, ব্যাটিং লাইন আপ থাকত, তাহলে হয়তো বা তার এই সাহস অনেক পজিটিভ কিছু আনতেও পারত। উনি এমন অনেক কিছু করেছেন যে, অনেকে অবাক হয়ে যেত, এটা কী করলেন! অথবা কী হচ্ছে? তার অনেক মুভ অনেক সাহসী ছিল, যেটা নরমালি খুব কম মানুষই নেবে। 

উৎপল শুভ্র: মাশরাফি বিন মুর্তজা...

তামিম ইকবাল: মাশরাফি বিন মুর্তজা একটা টিম কিভাবে বানাতে হয়, এটা আমাদের দেখিয়েছেন। একটা টিমকে একসাথে কিভাবে খেলাতে হয়, এটাই ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা। একটা টিমের মধ্যে ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, ঝগড়া, সম্পর্ক খারাপ এরকম থাকেই। ওয়ার্ল্ডের কোনো টিম নাই, যাদের মধ্যে এসব থাকে না। এই সবগুলোকে মিলে এক সাথে একটা দলকে কিভাবে খেলানো যায়, তা মাশরাফি বিন মুর্তজা ৫/৬ বছর যতদিন ক্যাপ্টেন ছিলেন, ততদিন সেটা করেছেন। 

`মাশরাফি বিন মুর্তজা একটা টিম কিভাবে বানাতে হয়, এটা আমাদের দেখিয়েছেন`উৎপল শুভ্র: সাকিব আল হাসান। 

তামিম ইকবাল: সাকিব আল হাসান...মাঠে ট্যাকটিক্যালি সম্ভবত বেস্ট ক্যাপ্টেন।

উৎপল শুভ্র: মাঠের বাইরে?

তামিম ইকবাল: আপনি একটা ভালো গুণের কথা বলতে বলেছেন। আমি সেটাই বললাম।

উৎপল শুভ্র: মুশফিকুর রহিম। 

তামিম ইকবাল: মুশফিক অফ দ্য ফিল্ড অ্যাবস্যালিউটলি ব্রিলিয়ান্ট। অফ দ্য ফিল্ড যেভাবে একজন ক্যাপ্টেনকে সবাই দেখতে চায়...আমি আপনাকে বলব যে, ‘তোরা এই কাজ কর, ওই কাজ কর। এরকম করতে হবে, জিম করতে হবে, আরো ফিট হতে হবে।' যদি আমি নিজেই এটা না করি, তাহলে সেটার তো কোনো মানেই হলো না, তাই না? 

উৎপল শুভ্র: লিডিং বাই এক্সামপল্, যাকে বলে আর কি!

তামিম ইকবাল: হ্যাঁ, লিডিং বাই এক্সামপল্ ওয়াজ মুশফিকুর রহিম।

উৎপল শুভ্র: মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

তামিম ইকবাল: রিয়াদ ভাইয়ের কামনেস ইজ ভেরি গুড থিং দ্যাট আই উইল লাইক টু টেক। চাপের মধ্যেও উনি শান্ত থাকতে পারেন।

উৎপল শুভ্র: মুমিনুল হক। আপনার অধিনায়কদের মধ্যে মুমিনুলই মনে হয় শুধু আপনার জুনিয়র। ওকে নিয়ে কিছু বলবেন?

তামিম ইকবাল: অবশ্যই বলব। মুমিনুলের যে জিনিসটা আমার সবচেয়ে ভালো লাগে, সেটা হলো সে এক ফরম্যাট খেলে, আর একটা ফরম্যাটকে এত ভালোবাসতে আমি বাংলাদেশে কাউকে দেখি নাই। 

উৎপল শুভ্র: এছাড়া তাঁর কোনো উপায় আছে কোনো? তাঁর তো আর কোনো অবলম্বন নাই।

তামিম ইকবাল: ভাই, তারপরও দেখেন, এমন একটা টেস্ট টিমের সে ক্যাপ্টেন, যা ওয়ার্ল্ড ক্রিকেটে প্রবাবলি মোস্ট ডিফিকাল্ট জব। আমরা টেস্টে ভালো খেলি না বলে হয়তো দাম নাই, কিন্ত ওয়ার্ল্ড ক্রিকেটে দেখলে ক্যাপ্টেনদের মধ্যে সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট হলো টেস্ট ক্যাপ্টেন। ও যেভাবে চেষ্টা করে, যেভাবে সবার সাথে আলোচনা করে, যেভাবে দল যাতে ভালো করে সেজন্য সবকিছু করে নিজে পারফর্ম করে, ওয়ান থিং আই উইল ডেফিনিটলি লাইক টু টেক।

`একটা ফরম্যাটকে এত ভালো বাসতে মুমিনুলের মতো আর কাউকে দেখি নাই`উৎপল শুভ্র: ক্যাপ্টেন হিসেবে আপনার ‘ডু-ডোন্টস্’ তালিকার কথা যদি জানতে চাই। এতজন ক্যাপ্টেনের আন্ডারে খেলেছেন, তাদের অনেক কিছু হয়তো ভালো লাগেনি, হয়তো ভেবেছেন, ‘আমি ক্যাপ্টেন হলে কখনো এটা করব না’...আছে এমন কিছু?

তামিম ইকবাল: আমি পাবলিকলি কাউকে ছোট করব না। আই অ্যাম দ্য ক্যাপ্টেন, আমার কাজ হলো প্লেয়ারদের প্রোটেক্ট করা। ড্রেসিংরুমের মধ্যে কাউকে কী বলি, না-বলি দ্যাট ইজ বিটুইন মি অ্যান্ড হিম। 

উৎপল শুভ্র: বাংলাদেশ বা বিশ্ব ক্রিকেট সব মিলিয়ে এমন কেউ কি আছেন, যাকে আপনার ক্যাপ্টেন হিসেবে আদর্শ মনে হয়?

তামিম ইকবাল: দাঁড়ান, একটু চিন্তা করে নেই। (একটু ভেবে) আমি রিসেন্টলি বাবর আজমের জিনিসটা খুব এনজয় করছি। আমি ধোনির নাম বলতে পারতাম, সৌরভ গাঙ্গুলীর নাম বলতে পারতাম, রিকি পন্টিংয়ের নাম বলতে পারতাম...তা বলছি না, কারণ আমি রিসেন্টলি বাবর আজমের কিছু কিছু ভিডিও দেখেছি। ওদের ড্রেসিংরুমের ভিডিও। ও বলছে, ‘আমাদের অভ্যাস খারাপ’, ‘আমরা অনেক কষ্ট করে এক হয়েছি।‘ ‘হাল ছাড়ব না কোনোদিন’, ‘আমরা কষ্ট করব, এক হয়ে খেলব’...আর প্লেয়াররা যেভাবে এতে সাড়া দিচ্ছে, এটা আমার কাছে খুব ইন্টারেস্টিং আর খুব ভালো লেগেছে। তিনটা ম্যাচ জিতে যাওয়ার পর পাকিস্তানের হিস্ট্রি আছে রিল্যাক্স হয়ে যাওয়ার। ও (বাবর আজম) বলছে, ‘দেখো, এটা আমাদের অভ্যাস। অনেক কষ্ট করে এই জিনিসটা চেঞ্জ করেছি। আর আমরাই চেঞ্জ করতে পেরেছি। অনেক কষ্ট করে আমরা এক হয়েছি, এই একতা আমরা কোনোদিন ছাড়ব না।‘ বিশ্বকাপের সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন কিছু ভিডিও দেখেছি, এরপরও...এটা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। 

উৎপল শুভ্র: এবার যে প্রশ্নটা করব, সেটা না করাটা অন্যায় হবে। কারণ কদিন আগে সাকিব আল হাসানকেও আমি এই প্রশ্নটা করেছি। পঞ্চপাণ্ডব, মানে আপনারা পাঁচজনের মধ্যকার সম্পর্কটা ওপরে ওপরে ভালো, ভেতরে খারাপ বলে বাংলাদেশের ক্রিকেট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে? সাকিব এর সঙ্গে একমত হয়েছেন, আপনিও কি একমত? 

তামিম ইকবাল: দাদা, সবচেয়ে মজার বিষয়টা কী, জানেন? এই বন্ধুত্বও আপনারা বানিয়েছেন, এই সম্পর্ক খারাপও কিন্তু আপনারাই বানিয়েছেন। আমি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট খেলি। আমি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন প্লেয়ারদের সঙ্গে মিশি, কথা বলি, জানি কী চলছে। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলে দেব, ওয়ার্ল্ডে কোনো টিম নেই, যারা ১১ জন হ্যাপি ফ্যামিলির মতো থাকে। কারও না কারও সাথে কোনো না কোনো কিছু থাকবেই। দ্য মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট থিং ইজ ওই রোপটা ক্রস করার পর (মাঠে নামার পর) কোনো প্রবলেম হচ্ছে কি হচ্ছে না। মাঠের মধ্যে কেউ মন খারাপ করে আছে কি না, রাগ করে আছে কি না...এটা হলো সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট জিনিস। 

উৎপল শুভ্র: মানে টিমের সবাই একই কজে ফাইট করছেন কি না...

তামিম ইকবাল: হ্যাঁ। মাঠে নেমে যদি এমন হয় যে, আমার সাথে লিটনের সমস্যা, লিটনকে আমি জিজ্ঞেস করছি, কিন্তু লিটন আমাকে কিছু বলছে না। তাহলে এটা বিগ ইস্যু। আমাদের সম্পর্ক ড্রেসিংরুমে কেমন বা ড্রেসিংরুমের বাইরে কেমন, ছুটি যখন থাকে তখন কেমন-এটা কিন্তু অত ইম্পর্ট্যান্ট না। এই জিনিসটাকে না...টেকেন আউট অফ প্রোপরশন বলে একটা কথা আছে না, এরকম করে ফেলা হয়েছে। আপনি আমাকে চেনেন। যা বলি, মন থেকে বলি। আমি আমার ক্যাপ্টেনসির কথা বলি। আমার ক্যাপ্টেনসিতে এমন একটা ব্যক্তি নাই, যার কাছ থেকে আমি হেল্প পাই না। আমি যদি মুশফিকের কাছে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করি, হি ট্রাইস টু হেল্প মি। আমি যদি লিটনকে  জিজ্ঞেস করি, সেইম রিঅ্যাকশন। সাকিবের কাছে জিজ্ঞেস করি, সেইম রিঅ্যাকশন। মাহমুদউল্লাহর কাছে জিজ্ঞেস করি, সেইম রিঅ্যাকশন। আমি মাঠে যখন যার কাছে কোনো পরামর্শ চাই...এখন কী করলে ভালো হবে, এখন কাকে বোলিং করালে, এসব ব্যাপারে আমি সবার কাছ থেকে হান্ড্রেড অ্যান্ড টেন পার্সেন্ট সাপোর্ট পাই। যতদিন এই জিনিসটা ঠিক আছে, অন্য  কোনো কিছুতে কারও অত বদারড্ হওয়ার দরকার নেই। 

যদি বাংলাদেশ ২০২৩ বিশ্বকাপে খুব ভালো কোনো কিছু করতে চায়, এই চারজনের ইনভলভমেন্টটা ভেরি ভেরি ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট। চারজনের সম্পর্ক খারাপ, সম্পর্ক ভালো, কে কার সাথে ডিনারে যায়, কে কার সাথে শপিংয়ে যায়...এগুলাতে আমি গেলামই না।

উৎপল শুভ্র: বাইরে যে এসব নিয়ে আলোচনা হয়, এটাই বরং ক্ষতিকর। কিন্তু এই আলোচনাগুলো তো আসে ভেতর থেকেই।

তামিম ইকবাল: জিনিসটা কি, এখন সোশাল মিডিয়া বলেন, বা মিডিয়া...দে বিকেম সো বিগ অ্যান্ড সো ইম্পর্ট্যান্ট, ২-কে ৫/৬ বানিয়ে দিলেও সবার মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ে। আমি আপনাকে কী বললাম দাদা, যতদিন বাংলাদেশ ক্রিকেট এটার কারণে সাফার করেছে না, তত দিন এটা নিয়ে চিন্তা করার...কে কার সাথে ডিনারে গেছে, কে কার সঙ্গে শপিংয়ে গেছে, মুভি দেখতে গেছে, এটা ইম্পর্ট্যান্ট না। 

উৎপল শুভ্র: তারপরও মাঠের বাইরেও আপনারা পাঁচজন যদি ইউনাইটেড থাকতেন...সাকিব অবশ্য আমাকে এর উত্তর দিয়েছেন, ‘আমাদের কাছে এত কিছু চান কেন? আমাদের কাজ হলো খেলা...

তামিম ইকবাল: দেখেন, আমরা পাঁচজন যে ইউনাইটেড না, আমি তা বলব না। আমাদের পাঁচজনের...এখন তো একজন নেই। মাশরাফি ভাই তো বেশি কিছুদিন ধরে নাই। এখন চারজন, ঠিক না? আমি আমার ফরম্যাটটা নিয়ে বলি। যদি বাংলাদেশ ২০২৩ বিশ্বকাপে খুব ভালো কোনো কিছু করতে চায়, এই চারজনের ইনভলভমেন্টটা ভেরি ভেরি ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট। চারজনের সম্পর্ক খারাপ, সম্পর্ক ভালো, কে কার সাথে ডিনারে যায়, কে কার সাথে শপিংয়ে যায়...এগুলাতে আমি গেলামই না। আমি আপনাকে একটা কথা বললাম, বাংলাদেশকে ভালো কিছু করতে হলে এই চারজনকে বড় অবদান রাখতে হবে। সঙ্গে অবশ্যই বাকিদেরও।  

যখন তাঁরা ছিলেন হরিহর আত্মাউৎপল শুভ্র: আপনার কথা শুনে মনে পড়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিখ্যাত ওই পেস কোয়ার্ট্রেটের কথা। তাঁরা প্রত্যেকেই আমাকে বলেছেন, মাঠের বাইরে তাঁদের কোনো বন্ধুত্ব ছিল না। প্রত্যেকের জগত ছিল আলাদা, তবে মাঠে নামলে সবাই এক লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। আচ্ছা, এই প্রশ্নটাও আপনাকে করছি সাকিবকে করেছি বলে। আপনাদের পাঁচজনকে নিয়ে যে ঝামেলাটা, যদি ঝামেলাই বলি, এটার শুরু সাকিব আর আপনাকে দিয়ে। আপনারা এক সময় সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন, পরে সম্পর্কটা আর সেখানে থাকেনি, এমন তো হতেই পারে। তবে এটা খেলার ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখেনি, এটাই তো আপনার দাবি? 

তামিম ইকবাল: নট অনলি সাকিব, আমি কাউকে কোনোদিন দেখি নাই যে, মাঠে গিয়ে কেউ কাউকে সাপোর্ট করছে না। আপনি আমাকে একটা জিনিস বলেন তো, কার সাথে কার সম্পর্ক কী রকম, ফ্রেন্ডশিপ আছে কি নাই, বাংলাদেশ ছাড়া এ নিয়ে কোন দেশে কথা হয়, বলেন তো দাদা?

উৎপল শুভ্র: সব দেশেই হয়। আমাদের উপমহাদেশে হয়তো একটু বেশি। ধোনির সঙ্গে শেবাগের সমস্যা নিয়ে তো এমন আলোচনা ছিল যে, ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় ধোনিকে পুরো দল সঙ্গে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স করতে হয়েছিল...এখন যেমন বিরাট কোহলি আর রোহিত শর্মাকে নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে... 

তামিম ইকবাল: আমি আসলে জিনিসটা যেভাবে দেখি, তা হলো, মাঠের বাইরে কী হচ্ছে, এটা আমার জন্য অতটা ইম্পর্ট্যান্ট না। ইম্পর্ট্যান্ট হলো আমরা যখন বাংলাদেশের ক্রিকেটকে রিপ্রেজেন্ট করছি, জাতীয় দলের জন্য খেলছি, তখন সবাই যার যার দায়িত্ব পালন করছি কি না। কথার কথা, আমি মুশফিককে জিজ্ঞেস করলাম, দোস্ত, এখন কাকে বোলিং দেওয়া যায়, সে যদি উত্তর দেয় ‘আমি জানি না। তোর যা ইচ্ছা কর’। তা তো হয় না।  

সম্পর্ক ভালো-খারাপ নিয়ে এখন এত আলোচনার বড় একটা কারণ হচ্ছে, আমরা ভালো খেলছি না। আপনি তো এত বছর ধরে সাংবাদিকতা করেন, আপনিই আমাকে বলেন না, যখন আমরা ভালো খেলি, তখন কি ওসব নিয়ে কথা হয়? যদি কারও সাথে কারও খারাপ সম্পর্কও থাকে, তখন কিন্তু টপিকটা উঠে আসে না। 

উৎপল শুভ্র: প্রায় পনের বছরের ক্যারিয়ার আপনার। ক্যারিয়ার শেষ হওয়ার আগে নির্দিষ্ট কিছু আছে, যা অর্জন করতে চান?

তামিম ইকবাল: আমি...না না আমি না, আমরা যদি ২০২৩ ওয়ার্ল্ড কাপটা জিততে পারি, তা বাংলাদেশের জন্য দারুণ ব্যাপার হবে। আমরা ব্যক্তিগতভাবে অনেকে হয়তো অনেক কিছু অর্জন করেছি। কিন্তু দল হিসেবে বড় কিছু করতে পারিনি। আপনি ওয়ার্ল্ডের বেস্ট ব্যাটসম্যান হতে পারেন, মোস্তাফিজ ওয়ার্ল্ডের বেস্ট বোলার হতে পারে, কিন্তু দল হিসেবে অ্যাচিভ করাটাই আসল কথা।  

উৎপল শুভ্র: তার মানে ২০২৩ বিশ্বকাপই আপনার পাখির চোখ। 

তামিম ইকবাল: আমার না, আমাদের।  

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×