বাবা-মা, পরিবার আর বেড়ে ওঠার শিক্ষা
উৎপল শুভ্র
২০ আগস্ট ২০২১
ক্রিকেটার মাশরাফিকে তো সবাই চেনেন। অনেকে মাঠের বাইরের মাশরাফিকেও কিছুটা। ক্রিকেটারের আবরণ ছিঁড়ে মানুষ মাশরাফিকে বের করে আনতে এই ইন্টারভিউ, যেটিতে অবধারিতভাবে ক্রিকেটও এসেছে। তবে দীর্ঘ ইন্টারভিউটা চার পর্বে ভাগ করে নেওয়ায় প্রথম পর্বে একটুও নয়। এখানে বিষয় তাঁকে নিয়ে মানুষের আবেগ, ব্যতিক্রমী বাবা-মা. পরিবার, বেড়ে ওঠা, ধর্মবিশ্বাস, জীবনদর্শন ইত্যাদি।
প্রথম প্রকাশ: অক্টোবর ২০১৭। প্রথম আলো ঈদ সংখ্যা।
উৎপল শুভ্র: আপনার প্রতি মানুষের ভালোবাসার প্রকাশ এর আগেও দেখেছি। একটু আগে আবার দেখলাম। আপনাকে নিয়ে গান লিখে, সুর করে আপনাকে তা শুনিয়ে গেলেন পরপর দুজন। এটা তো অভাবিত একটা ব্যাপার। আমার মনে হয়, খেলার সীমানা ছাড়িয়ে সব ক্ষেত্র মিলিয়েই বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা আপনাকে ঘিরে। একে আপনি কীভাবে দেখেন?
মাশরাফি বিন মুর্তজা: অবশ্যই পজিটিভলি দেখি। তবে আমার মনে হয়, এটা পাওয়ার চেয়ে রক্ষা করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ অনেক, অনেক অনেক কষ্ট করে অনেক কিছু পায়। আবার দেখা গেল, অনেক দিন ধরে আমার চেয়ে বেশি কষ্ট করেও অনেকে অনেক কিছু পায়নি। এ রকম মানুষের সংখ্যাও কম নয়। আমার চোখের সামনেই আছে। তারাও কিন্তু অনেক ভালো কাজ করছে। তারা যা পায়নি, আমরা শুধু ক্রিকেট খেলেই তা পেয়ে গেছি (হাসি)। আমাদেরটা দৃশ্যমান, ওদেরটা দৃশ্যমান না। তবে যেটা বললাম, গুরুত্বপূর্ণ হলো এটা ধরে রাখা। মানুষের একটা কিছু অর্জন করতে অনেক দিন লাগে। যেতে বেশি সময় লাগে না। ওভাবেই চিন্তা করি আর কী! মানুষ ভালোবাসে, কারণ অনেকে হয়তো চিন্তা করে, আমি ভালো কাজ করছি। আমিও চেষ্টা করি ভালো কিছু করার। আর খেলাটা তো পেশা। সঙ্গে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা, এটা ভিন্ন একটা ব্যাপার।
শুভ্র: কিন্তু আপনাকে নিয়ে মানুষের এই তীব্র আবেগ কি কখনো ভয় পাইয়ে দেয়? এই আবেগ তো কখনো কখনো যুক্তি-বুদ্ধি মানে না। যার পরিচয় আমিও পেয়েছি। আপনি ভারতে ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর অবসর নিতে পারেন বলে একটা আভাস দিয়েছিলেন। এ নিয়ে একটা লেখা লিখে আমি পাঠকদের তীব্র ক্ষোভের মধ্যে পড়েছিলাম। সবাই ধরে নিল, আমি আপনাকে অবসর নিতে বলেছি। অথচ ঘটনা তা ছিল না। লেখাটা ছিল আপনার প্রতি একধরনের নৈবেদ্য। কিন্তু পাঠকেরা সেটি বুঝলই না! এই যে মানুষের আবেগ, এটা তো ভয়েরও ব্যাপার, তাই না?
মাশরাফি: না। দেখেন, ভয় বলে আমার জীবনে আলহামদুলিল্লাহ কিছু নেই। যেসব জিনিস নিয়ে ভয় পাওয়া যৌক্তিক, তা নিয়ে হয়তো ভয় পাই। তবে এসব সাধারণ বিষয় নিয়ে ভয় পাই না। আমার কাছে এগুলো সাদামাটা বিষয়ই। জীবনের দিকে যখন তাকাই, দেখি, এটাই আমার জীবন, এটাই মানুষ গ্রহণ করেছে। যদি গ্রহণ না-ও করত, তাহলেও এটাই আমার জীবন থাকত। কারণ, একেকজন মানুষ একেক রকম থাকতে পছন্দ করে। আমি সাদামাটাভাবে চলতেই ভালোবাসি। এখন আমার পক্ষে বদলানোও সম্ভব নয়। কারণ, অন্য কিছু আমি উপভোগ করি না। কোনো কিছু নিয়ে বেশি ভাবিও না। ভাবা মানেই প্রেশার। কোনো কিছু না ভাবা মানে আপনি আপনার মতো আছেন। আমি কি খারাপ কাজ করি না? অবশ্যই করি। পৃথিবীর কোনো মানুষ বলতে পারবে না যে, আমি খারাপ কাজ করি না বা আমার খারাপ বলে কিছু নেই। এমনকি যারা আমাকে পছন্দ করে, তারাও আমার কোনো কাজ যে অপছন্দ করে না, তা তো নয়। সবকিছু মিলিয়েই জীবন।
শুভ্র: মানুষের এই ভালোবাসার কি কোনো ব্যাখ্যা আছে আপনার কাছে? একটা তো বুঝি, আপনার কথাবার্তা, চিন্তাভাবনা একটু আলাদা। আপনি যেমন সব সময় বলেন, ক্রিকেট খেলছেন বলে লোকে আপনাকে মাথায় তুলে রাখছে। যেখানে সমাজে এর চেয়ে বেশি অবদান রেখেও অনেকে এমন ভালোবাসা বা সম্মান পাচ্ছে না। কথাটা সত্যি, কিন্তু তারকাখ্যাতি অনেককেই এটা ভুলিয়ে দেয়। আপনার মধ্যে এই বোধটা কীভাবে থাকল?
মাশরাফি: আপনি বলতে পারেন, এর একটা কারণ ধর্মবিশ্বাস। প্রত্যেক মানুষ তার ধর্মকে বিশ্বাস করে। যেমন আমি প্রবলভাবে বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে যা কিছু হচ্ছে ওপরওয়ালার মাধ্যমেই হচ্ছে। এটা আমি সব সময় মানি। জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপে দুজনকে ভয় পাই—প্রথম আল্লাহ, দ্বিতীয় আমার মা। এই দুটো জিনিস পৃথিবীতে আমার সবচেয়ে দুর্বল জায়গা। এর সঙ্গে আমি ভাগ্যে প্রচণ্ড বিশ্বাসী। দেখেন, শুধু পরিশ্রম করলেই সব পাওয়া যায় না। যদি আমি এভাবে চিন্তা করি, একজন রিকশাওয়ালা আমার চেয়ে বেশি খাটছে। আপনি তাকে কীভাবে বলবেন যে, তুমি পরিশ্রম করো, তোমার জীবন বদলে যাবে! ২০ বছর ধরে রিকশা চালাচ্ছে, সে আর কত পরিশ্রম করবে? সংসারে সচ্ছলতা নেই, শান্তি নেই। তার মানে কি সে ঠিকমতো খাটেনি? একজন রিকশাওয়ালার দিকে তাকিয়ে দেখেন, ভ্যানওয়ালার দিকে, একজন ড্রাইভারের দিকে...তারা কী না করছে! তারা ছেলেমেয়েদের যেভাবেই হোক, পড়ালেখা করাচ্ছে। আবার ওই ছেলে বড় হওয়ার পর হয়তো তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এর কী ব্যাখ্যা? পরিশ্রম করলেই সাফল্য—এই কথা কি এখানে খাটে? অনেকে শচীন টেন্ডুলকারের উদাহরণ দেন—টেন্ডুলকার পরিশ্রম করেছে বলে এত সাফল্য পেয়েছে। তাহলে ওই রিকশাওয়ালা কী করছে? সে-ও তো পরিশ্রম করছে। অনেকে বলে, আল্লাহ তোমাকে দিয়েছে। হ্যাঁ, তোমার ‘ট্যালেন্ট’ ছিল, তুমি ভালো করেছ। আবার আমি এটাও বিশ্বাস করি যে, যদি না খাটো, তাহলে তুমি কিছুই পাবে না। শুধু ‘ট্যালেন্ট’ থাকলেই হবে না। তার ঠিকমতো ব্যবহার করতে হবে। আবার এটাও বিশ্বাস করি, অনেক খেলোয়াড়ই খুব পরিশ্রম করছে, কিন্তু হচ্ছে না। তার মানে কী, খাটলেই সবার হয় না। তবে তখন একটা সান্ত্বনা থাকে যে আমি আমার সেরাটা দিয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, তুমি যা পেয়েছ, যেখানে আছ, পরিশ্রম না করলে ওখান থেকে ওপরে যাওয়া সম্ভব নয়। হয়তো নিচে যাবে, কিন্তু ওপরে যাওয়া সম্ভব নয়। আবার এটাও বিশ্বাস করি না যে, শচীন টেন্ডুলকার এত রান করেছেন, এটা শুধু ওঁর যোগ্যতাতেই করেছেন। আজকে আমি এত ভালোবাসা মানুষের পেয়েছি বা আমার এই যে ক্যারিয়ার, তা যেমনই হোক—আমি বিশ্বাস করি না যে, এর সবকিছু আমার দ্বারাই সম্ভব হয়েছে। হ্যাঁ, আমি চেষ্টা করেছি, আমার নিষ্ঠা-আন্তরিকতা ছিল, সবই ঠিক আছে। কিন্তু ওপরওয়ালার থেকে না আসলে এটা আমার পক্ষে সম্ভব হতো না। এটা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।
শুভ্র: আল্লাহর পর মাকে সবচেয়ে ভয় পান বললেন। এটা একটু ব্যাখ্যা করবেন?
মাশরাফি: এর মূল কারণও ধর্মবিশ্বাস। ছোটবেলা থেকেই একটা কথা বিশ্বাস করে এসেছি, এখনো বিশ্বাস করি, মা যদি কোনো কথা বলে, এর ওপরে কোনো কথা বলা যাবে না। আমার ধর্ম আমাকে এটাই বলে। আমি এটা মেনে চলি।
শুভ্র: মায়ের প্রতি শ্রদ্ধার যে কথাটা বললেন, শুধু কি ধর্মের কারণেই নাকি আপনার মায়ের ব্যক্তিত্ব, কার্যকলাপেরও ভূমিকা আছে এতে?
মাশরাফি: তা তো আছেই। ধর্মের কথা যদি বলেন, আপনি হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান যে ধর্মেই যান; কোনো ধর্মেই অসৎ কাজ করতে বলা হয়নি। আমার মা-বাবার কতগুলো জিনিস তো আমাকে প্রভাবিত করেছেই। আমার মা-বাবা যদি বলতেন, তুমি নামাজ পোড়ো না, আমার মা-বাবা যদি বলতেন, তুমি টাকাটা ওইভাবে উপার্জন কোরো; আমার মা-বাবা যদি বলতেন, তোমার মানুষকে দেওয়ার এত দরকার কী, তুমি তোমার মতো থাকো, তাহলে আমি একটু থমকে যেতাম। আমি বড় হয়েছি মামার কাছে—নাহিদ মামা। আমি আর মামা একবার খেতে বসেছি, তো, আমাদের বাসার সামনের মোড়ের এক চায়ের দোকানদার ভণ্ডুলদা। ভণ্ডুলদার ডায়রিয়া হয়ে এমন অবস্থা, বিছানা থেকে উঠতে পারছেন না তিনি। আমরা কেউই সে খবর জানতাম না। তো, কে যেন একজন দৌড়ে এসে খবর দিল। গিয়ে দেখি ভণ্ডুলদার গায়ে ময়লা-টয়লা লেগে আছে। ওই অবস্থায় তাঁকে ভ্যানে উঠিয়ে আমি পাশে পাশে দৌড়াচ্ছি। পরিবারই আমাকে এটা শিখিয়েছে যে মানুষ বিপদে পড়লে তুমি আর কিচ্ছু পারো না পারো, পাশে থেকো। মা-বাবার ব্যাপারে আপনি যে প্রশ্ন করলেন, তার উত্তর হচ্ছে, আসলে তাঁদের দেখে দেখে শ্রদ্ধা বাড়ছে। মা-বাবার প্রতি ভালোবাসা সবারই থাকে। কিন্তু আমার আম্মার কিছু কাজ যখন দেখি, শ্রদ্ধাটা অন্য জায়গায় চলে যায়। আব্বার কথাও বলতে পারি। আমার আব্বা যা করছেন, এটা বলার বিষয় নয়, আমি বলতেও চাই না।
শুভ্র: আমি যে শুনতে চাই...
মাশরাফি: (হাসি) না, এটা বলব না।
শুভ্র: কেন?
মাশরাফি: না, এটা আমার মুখে ভালো শোনাবে না।
শুভ্র: আমি তো কিছু কিছু জানিই, বলে ফেলুন না...
মাশরাফি: আমি বললে একটু খারাপ দেখায়। শুধু এটুকু বলি, আপনি এখন আমাদের বাড়িতে গেলে দেখবেন, আমার আম্মার কাছে ৫-৭ জন ছোট ছেলেমেয়ে আছে। কারও বাবা-মা নেই। কারও বা মা মারা গেছে, বাবা আরেকটা বিয়ে করছে। আম্মা তাদের নিয়ে এসেছেন। তাদের জন্য আম্মা গৃহশিক্ষক রেখেছেন। আমরা যা খাই, তারাও তা-ই খায়। আমার ছেলেমেয়ের কাপড়চোপড় যেখান থেকে কিনি, সেখান থেকে তাদেরটাও কিনতে হয়। নতুন বাড়ি করেছি, সেখানে তাদের জন্য আলাদা ঘরও আছে। এটা আজকের ঘটনা নয়, ছোটবেলা থেকেই এসব দেখে দেখে বড় হয়েছি আমি। আমার আম্মাও এসব দেখেই বড় হয়েছেন। কারণ, আমার নানিও ছিলেন এ রকম। তাঁর অনেক ঘটনা আছে, সব বলতে চাচ্ছি না। শুধু একটা ঘটনা বলি, যদিও এটা বলতেও একটু অস্বস্তি হচ্ছে। একদিন চার-পাঁচ বছরের ছোট্ট এক ছেলে ভিক্ষা করতে এসেছে। আমার নানি বললেন, তুই থাকবি আমার কাছে? তুই ভিক্ষা করিস কেন? তুই আমার কাছে থাক। পড়ালেখা করবি। ছেলেটা বলে, আমি মাকে গিয়ে বলি? পরের দিন ছেলেটা তার মাকে নিয়ে এল। ওর মা নানিকে বললেন, আমি তো ওকে খেতেও দিতে পারি না, আপনি রেখে দেন। ওই ছেলেটা আমার মা-মামাদের সঙ্গেই বড় হয়েছে। আমার আম্মা, আমার মামারা তিন ভাই-বোন। আমার আম্মার নামে, আমার মামার নামে যতটুকু সম্পত্তি আছে, নানা ঠিক ততটুকু সম্পত্তি তাঁর নামে লিখে দিয়েছেন। তাঁকে ওকালতি পড়িয়েছেন, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক বানিয়েছেন। তাঁর একটা মুদির দোকান আছে। আমাদের বাড়ির সমস্ত সম্পত্তিও তিনিই দেখাশোনা করেন। কেউ হিসাবও নিতে যায় না। আমরা ছোটবেলা থেকে এসব দেখেই বড় হয়েছি।
আম্মার একটা ঘটনা বলি। নড়াইলে দিব্য ভারতী নামে একটা পাগল ছিল। ও কাউকে নামে চিনত না। একদিন বাসায় আছি, দেখি ওই দিব্য ভারতী এসে আম্মাকে বলছে, ‘এই বলাকা, (আমার আম্মার ডাকনাম) ভাত দে।’ ও কোনো দিনই ভাত খায় না, শুধু মাটি খেত। তাই খুবই অবাক হয়েছিলাম আমি। বিস্ময় ছিল এ কারণে যে, দিব্য ভারতী তো কাউকেই চেনে না। কিন্তু আম্মার কাছে এসে তাঁর নাম ধরে যে বলল, এই বলাকা ভাত দে। পরে মনে হয়েছে, নিশ্চয়ই আম্মার সম্পর্কে দিব্য ভারতীর মনে কোনো ধারণা হয়েছিল।
আমার আম্মা কোনো কিছু পাননি এর বিনিময়ে। বা আমার নানা-নানি মারা গেছেন, এর বিনিময়ে কী পেয়েছেন? মানুষের কাছ থেকে সম্মান ছাড়া। শুধু আপনাদের বা নড়াইলের মানুষের কাছ থেকে সম্মানটুকুই পেয়েছেন তাঁরা। তাঁরা খুব ধনী হতে পারেননি। তাঁদের জীবনযাপন বদলে যায়নি। কিন্তু তাঁরা মনে শান্তি নিয়ে পিসফুল একটা জীবন যাপন করেছেন। কারও মুখেই কোনো অভিযোগ শুনিনি। তো, এগুলো দেখেই বড় হয়েছি তো, এই জিনিসগুলোই মাথায় ঘোরে।
শুভ্র: তাঁরা হয়তো কিছু পাওয়ার আশায় করেনওনি...
মাশরাফি: আমিও ওটা করি না। সত্যি কথা বলতে কি, আমিও ছোটবেলা থেকে এ রকম। কোনো কিছু একা করতে পারি না। টাকাপয়সাকে কোনো দিন টাকাপয়সা মনে করিনি। দশ টাকা পেয়েছি, যখন এক টাকায় ২-৩টা আইসক্রিম পাওয়া যায়, আমি দশ টাকাই ভেঙে ফেলেছি। ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো দিন ভাবিনি। আমার আম্মা-আব্বাকেও কখনো ভাবতে দেখিনি। তাঁদের বেশি চাহিদা নেই। অল্পের মধ্যে ভালো থাকা—এতেই তাঁরা বিশ্বাসী। এসব দেখে বড় হয়েছি তাই আমার জীবনেও সুখ-শান্তি বলতে এটাই। আমার স্ত্রীও এমনই। সবাই মিলে আনন্দে থাকতেই ভালোবাসে। এই যে কদিন আগে বান্দরবানে ঘুরতে গেলাম, এর আগে কাশ্মীরে; পুরো পরিবারের ১১-১২ জন মিলে গেছি। আমি আর আমার বউ আলাদা যেতে পারতাম। কিন্তু তারও এক কথা—সবার সঙ্গে যাব। এই জিনিসটাই আমার কাছে ভালো লাগে। এটা আমি উপভোগ করি।
শুভ্র: বাবার সঙ্গে সম্পর্কটা কি বন্ধুত্বের?
মাশরাফি: বন্ধুত্বও বলতে পারেন। আবার অনেক গ্যাপও আছে। গ্যাপ কী ধরনের, আমি এখনো আমার আব্বার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলি না। কখনো যদি মনে হয়, আব্বা এই কাজটা ঠিক করছেন না, আমি আম্মাকে বলি। চিল্লাপাল্লা করলেও তা আম্মার সামনে। আব্বার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলি না। আমি বা আমার ভাই মানে আমরা যারা ছোট আছি, বাসায় মুরব্বিদের তুলনায় যারা ছোট, আমরা মুরব্বিদের ওপরে কিছু চাপিয়ে দিই না। তাঁরা যেটা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেন, আমরা সেটাই করি।
শুভ্র: মানে যে মাশরাফি বিন মুর্তজা বাইরে সুপারস্টার, বাড়িতে তা একদমই নয়...?
মাশরাফি: প্রশ্নই ওঠে না। এমন ভাবার চিন্তাই করতে পারি না। আবার আব্বা-আম্মাও আমার সিদ্ধান্ত ছাড়া কোনো কাজ করতে চান না। তবে এটা আমার জন্য বেশ অস্বস্তিকর। তাঁরা যখন জিজ্ঞেস করেন, এটা কী করব? আমি বলি, তোমরা যা ভালো মনে করো, সেটাই। আমি কোনো সিদ্ধান্ত দেব না। কখনোই কোনো সিদ্ধান্ত দেব না।
চলবে...