অভিষেক টেস্টের পর হাবিবুল বাশার
`টেস্ট অ্যাভারেজ ৪০ দেখতে চাই`
উৎপল শুভ্র
১৭ আগস্ট ২০২১
১৪৫ রানের মহাকাব্যিক ইনিংসের কারণে আমিনুল ইসলাম বুলবুলই কেড়ে নিয়েছেন সব আলো, তবে অভিষেক টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম `হিরো` অবশ্যই হাবিবুল বাশার সুমন। দুর্বিনীত স্ট্রোক প্লের এক অনুপম প্রদর্শনীতে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম হাফ সেঞ্চুরিটি করেছিলেন তিনিই। দুঃস্বপ্নের দ্বিতীয় ইনিংসেও সর্বোচ্চ রান এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকেই। ওই টেস্টের কিছুদিন পরই নেওয়া এই সাক্ষাৎকারে সুযোগ না পাওয়ার আক্ষেপ, বারবার বঞ্চনার শিকার হওয়ার কষ্ট, ক্যারিয়ার নিয়ে স্বপ্ন…সব কিছুই উঠে এসেছিল।
প্রথম প্রকাশ: ৩ ডিসেম্বর ২০০০। প্রথম আলো।
উৎপল শুভ্র: অভিষেক টেস্টের আগে তীব্রতম হতাশা আর তীব্রতম আনন্দ–পুরো বিপরীত দুই অনুভূতিই হয়েছে আপনার। দলে জায়গা না পাওয়ার পর নাটকীয়ভাবে আবার ফিরেও এলেন দলে। কেমন ছিল সেই সময়টা?
হাবিবুল বাশার সুমন: বাদ পড়ার পর তো খুবই খারাপ লেগেছিল। পরদিন এজন্যই এক দিনের জন্য ছুটি নিয়ে বিকেএসপি থেকে চলে এসেছিলাম বাসাতে। রাতে আমার এক বন্ধু শোভন 'কনগ্রাচুলেশনস, তুই সুযোগ পেয়েছিস' এসব লিখে এক চিঠি পাঠাল। আমি তা পড়ে কিছুই বুঝলাম না, এ রকম তো হয় না, বাসায়ও কাউকে বলিনি তখন। পরে বিকেএসপিতে মনি ভাইকে (এনামুল হক মনি) টেলিফোন করে নিশ্চিত হলাম। বাদ পড়ার দুঃখটা যেমন বলে বোঝাতে পারব না, তেমনি ওভাবে আবার সুযোগ পাওয়ার আনন্দটাও না।
শুভ্র: বাদ পড়াটা তো আপনার ক্যারিয়ারে নতুন কিছু না। ১৯৫ সালে জাতীয় দলে অভিষেকের পর থেকে আপনি তো দলে আসা-যাওয়ার মধ্যেই ছিলেন। পেছন ফিরে তাকিয়ে নিজের ক্যারিয়ারটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
হাবিবুল: গত বছর ইংল্যান্ড 'এ' দলের বিপক্ষে সিরিজের আগ পর্যন্ত আমার পারফরম্যান্সে কখনোই ধারাবাহিকতা ছিল না। এর আগে '৯৫ সালে প্রথম চান্স পাওয়ার থেকে আমি কখনো একটানা কিছুদিন খেলার সুযোগ পাইনি। যা খেলেছি, সেগুলোও কঠিন কঠিন সব ম্যাচ। যেমন '৯৫ এশিয়া কাপে দুটি ম্যাচ খেললাম। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করলাম ১6, পাকিস্তানের বিপক্ষে তো রানই করতে পারিনি। এরপর মাঝখানে কোনো খেলা হয়নি, অথচ পরের দলটা থেকেই আমি বাদ পড়ে গেছি। আবার সুযোগ পেয়েছি '৯৭ সালে শ্রীলঙ্কা এশিয়া কাপে। সেখানে আবার খারাপ করেছি, আবার বাদ। আমার যেটা সমস্যা হয়েছে তা হলো, আমি কখনোই সহজ ম্যাচগুলো খেলার সুযোগ পাইনি। এশিয়া কাপের মতো কঠিন টুর্নামেন্টে খারাপ করলাম বলে এরপর তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষের বিপক্ষে আর নেওয়া হয়নি আমাকে। তবে গত বছর ইংল্যান্ড 'এ' দলের সঙ্গে সিরিজের পর থেকে আমি কিছুটা ফিরে পেয়েছি নিজেকে। সে সময় থেকে আমার পারফরম্যান্সে আমি সন্তুষ্টই বলতে পারেন। তবে এখনো মনে হয় শুরুর সময়টায় যদি আমাকে আরেকটু সুযোগ দেওয়া হতো, তাহলে এখন হয়তো আরও ভালো অবস্থায় থাকতে পারতাম। গত কিছুদিন যে পারফরম্যান্সটা করছি, আরও আগেই তা করতে পারতাম।
শুভ্র: '৯৫ সালের এশিয়া কাপে প্রথম জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার আগে আমাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারেই আপনি বলেছিলেন, একবার জাতীয় দলে ঢুকলে আর বেরোতে চাই না। কিন্তু তা তো হয়নি। এতে আপনার নিজের দায় কতটুকু?
হাবিবুল: কিছুটা দায় তো আছেই। দলে ঢুকেই আমার পারফর্ম করা উচিত ছিল। তবে একটা-দুটো ব্যর্থতার পরও অনেককে যে রকম সুযোগ দেওয়া হয়, আমাকে সে রকম দেওয়া হয়নি। এ কারণে যখনই খেলেছি, আমাকে খুব প্রেসারে থাকতে হয়েছে। হ্যাঁ, আমার দায় এটাই যে, আমি প্রথমেই পারফর্ম করতে পারিনি। করতে পারলে হয়তো অমন অবস্থায় পড়তে হতো না।
শুভ্র: এই দলে আসা-যাওয়া করতে করতে যা হলো, আইসিসি ট্রফি-বিশ্বকাপ বড় সব প্রতিযোগিতার কোনোটিতেই খেলা হলো না আপনার। নিশ্চয়ই খুব কষ্টে কেটেছে ওই সময়গুলো।
হাবিবুল: সত্যি কথা বললে আমি কিন্তু ক্রিকেট খেলা ছাড়া আর কিছুই করি না। পড়াশোনা করেছি, বিএ পাস করেছি, কিন্তু ক্রিকেটই আমার সব। এখন তো পেশা, তবে পেশার আগেও তা নেশা। খেলতে আমার খুব ভালো লাগে। কিছুদিন ক্রিকেট না খেললে আমার রাতে ঘুম হয় না, খাওয়া-দাওয়া করতে পারি না, এমনকি হজমে গোলমাল হয়। খেলা ছাড়া ৫/৭ দিন হয়তো থাকতে পারি, কিন্তু এরপরই অসহ্য লাগে। তাই আইসিসি ট্রফি থেকে যখন বাদ পড়লাম, খুব খারাপ লেগেছিল। এর আগে '৯৪ আইসিসি ট্রফিও মিস করেছি, কিন্তু সেটি তেমন খারাপ লাগেনি। কিন্তু '৯৭-তে বাদ পড়ব ভাবিনি। কারণ এর আগে এসিসি ট্রফিতে মোটামুটি ভালো খেলেছিলাম, বাদ পড়ার আগ পর্যন্ত লিগেও খুব খারাপ করিনি। তাই বাদ পড়ার পর খুব খারাপ লেগেছিল। তারপরও ভাবলাম, মন খারাপ করে বসে থাকলে তো আরও বেশি মন খারাপ লাগবে; তার চেয়ে বরং খেলার মধ্যে থাকি। খেলার মধ্যে থাকলে আমি সব দুঃখ ভুলে যাই।
আইসিসি ট্রফিতে বাদ পড়ার চেয়েও আমি বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম বিশ্বকাপের আগের বছর যে যুক্তরাজ্য সফর হয়েছিল, তাতে আমি ২৫ জনের মধ্যেও ছিলাম না। এর কদিন আগেই আমরা ভারতে উইলস ট্রফিতে খেলতে গিয়েছিলাম, সেখানে উইলস একাদশের বিপক্ষে যেটি ছিল আসলে ভারত 'এ' দল, আমি ফিফটি প্লাস রানের একটি ভালো ইনিংস খেলেছিলাম। অথচ এরপরই বাদ। কেন বাদ পড়েছি কাউকে জিজ্ঞেস করিনি, তবে কানে এসেছিল আমার সম্পর্কে নাকি বলা হয়েছিল, ওর আর বাংলাদেশ ক্রিকেটকে কিছু দেওয়ার নাই। শুনে আমার খুব খারাপ লেগেছিল। তখন তো আমি ঠিকমতো শুরুই করিনি আর আমাকে শেষ বলে দেওয়া হলো। সবচেয়ে বেশি খারাপ লেগেছিল ২৫ জনেও না থাকায় আমি প্র্যাকটিস-ট্যাকটিস সব কিছুর বাইরে চলে গেলাম। এই ক্রিকেটের একদমই বাইরে চলে যাওয়াটাই আমার সবচেয়ে বেশি কষ্ট লাগে।
শুভ্র: বিশ্বকাপের ৩০ জনের দলেও তো আপনি ছিলেন না।
হাবিবুল: না, ছিলাম না। তখন যদি আমি অন্য কিছু করতাম, তাহলে ক্রিকেট খেলা ছেড়ে দিতাম। কয়েক দিন আমি ভেবেছি–বাংলাদেশের ৩০ জনের মধ্যেও যদি আমি না থাকি, তাহলে আর আমার ক্রিকেট খেলে লাভ কী? এর মানে তো আই অ্যাম নট গুড এনাফ। কিন্তু আপনাকে একটু আগে যেটা বললাম, খেললে আমার ভালো লাগে। ৩০ জনে চান্স না পাওয়ার পর তখন ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ চলছিল, আমি বিমানের পক্ষে বাইরে খেলতে চলে গেলাম। সে টুর্নামেন্টে একটা সেঞ্চুরি করেছিলাম এই ঢাকায়। ১০০ করার পর আমি সব দুঃখ ভুলে গিয়েছিলাম। মাঠে নামলে, রান করলে আমার আর কোনো দুঃখই মনে থাকে না। আমি দুটি সেঞ্চুরি করেছিলাম, দুটি ফিফটি করেছিলাম। এরপর আমাকে 'এ' টিমের ক্যাপ্টেন করে পাঠানো হলো পাকিস্তানে। তবে প্রথমে ওই ২৫ জন, এরপর ৩০ জনে থাকতে না পারায় খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।
শুভ্র: এখনো তো আপনি বলতে গেলে ট্রায়ালেই আছেন। এখনো আপনার দলে জায়গা নিশ্চিত নয়। আপনার কি মনে হয়, এই অনিশ্চয়তা না থাকলে আরও ভালো পারফর্ম করতে পারতেন?
হাবিবুল: আমি এটা বলব না যে, ৫টা শূন্য মারলেও আমাকে খেলিয়ে যেতে হবে। তবে একটা-দুটো ইনিংস খারাপ করলেই 'ও আর চলে না' বলে দেওয়া বোধ হয় ঠিক না। একজন ব্যাটসম্যানের একটা ট্যুর খারাপ যেতেই পারে। সবারই তা যায়, কিন্তু আমাদের এখানে খুব তাড়াতাড়ি একজন প্লেয়ারকে বাতিল বলে দেওয়া হয়। যেমন আমার সম্পর্কে '৯৮ সালেই বলে দেওয়া হয়েছিল, ওর আর বাংলাদেশের ক্রিকেটকে দেওয়ার কিছু নাই। অথচ আমি টেস্ট ক্রিকেট খেলেছি, রানও করেছি। এ রকম মন্তব্যগুলো আমার খুব খারাপ লাগে।
শুভ্র: আপনাকেই যদি বিচারকের আসনে বসতে বলি–ব্যাটসম্যান হিসেবে আপনার সবচেয়ে শক্তিশালী দিক বলবেন কোনটিকে?
হাবিবুল: আমার ব্যাটিংয়ে যেটিকে প্লাস পয়েন্ট বলে মনে হয়, কখনো কখনো মাইনাস পয়েন্টও সেটিই। তা হলো, আমি সব সময় পজিটিভ থাকি। মারার বল পেলে আমি মারবই। খারাপ বল আমি ছাড়ি না। কখনো তা ভালো হয়, কখনো বা খারাপ হয়। কখনো বল চুজ করতে ভুল করে ভালো বলকে খারাপ ভেবে মেরে বসি, ওভার কনফিডেন্স এসে যায়।
শুভ্র: শুরু থেকেই কি আপনি এমন স্ট্রোক খেলতেন?
হাবিবুল: হ্যাঁ, এটা ন্যাচারাল। কেউ কেউ আছে না যারা ঠিক করে রাখে যে, হাফভলি পেলে মারব, আমার তা না। কিছু শট আমি খেলি, যা নিজেও জানি না কীভাবে খেলে ফেলি।
শুভ্র: যেমন?
হাবিবুল: স্ট্রেট ড্রাইভ বা কাভার ড্রাইভ করার জন্য আমার পা এমনিই চলে যায়। আছে না যে খেলার আগে মাথাটা কাজ করল, আমার কিছু শট আছে আমি এমনিই চলে যাই, একেবারেই ইনস্টিঙ্কট থেকে খেলে ফেলি।
শুভ্র: এবার আমরা 'পুল' বিষয়ে আসি। এটি নিয়ে আলাদাভাবে কথা বলার কারণ, অভিষেক টেস্টের পর আপনার খেলা এই শট নিয়ে যত কথা হয়েছে, আর কিছু নিয়েই তা হয়নি।
হাবিবুল: আসলেই তা-ই। সবাই আমার সব কিছু ভুলে গিয়ে শুধু এটা নিয়েই কথা বলেছে। ব্যাপারটা আমি একটু ব্যাখ্যা করে বলি। আমি যখন স্টার্ট করি, এই শটটা খুব খেলতাম। থাকে না কিছু শট, আমিও এটা খুব ভালো খেলতাম। আমাদের দেশে সমস্যা কী, কেউ এক শট খেলে দুবার আউট হলেই সবাই এটা নিয়ে কথা বলতে শুরু করে। আমি আউট হওয়ার পর সবাই বলা শুরু করেছে তোমার এই শট ভুল, এই শট ভুল, এই শট ভুল। কিন্তু আমাকে কেউ বলছিল না, তোমার পজিশনটা ঠিক ছিল না বলে শটটা ভুল হয়েছে বা তোমার ব্যাটটা ঠিকমতো ঘোরেনি। কী ভুল হয়েছে তা না বলে সবাই শুধু বলেছে, 'তুমি এটা বাদ দিয়ে দাও'। আমি কিন্তু এই শটটা বাদই দিয়ে দিয়েছিলাম, পুল আর খেলতাম না। ইদানীং আমি আবার কনফিডেন্স ফিরে পেয়েছি। কিন্তু সমস্যা কি, এই যে একটা ম্যাচে আউট হলাম, সবাই আবার বলতে শুরু করেছে, এই শটটা খেলো না। আসলে টেস্টে আমার সমস্যা হয়েছে আমি ডাবল মাইন্ডেড হয়ে যাওয়ায়। সবাই বলেছে, এটা মারবে না; আমি ব্যাটিংয়ের সময় বুলবুল ভাই, আকরাম ভাইয়ের কাছেও প্রমিজ করেছি যে, এই শটটা খেলব না। কিন্তু কারও কারও থাকে না! আমারও তেমনি শর্ট বল পেলেই মারা ঠিক হবে কি না এটা ভাবতে গিয়ে যে ২/৩ সেকেন্ড নষ্ট হয়েছে, তাতেই সর্বনাশটা হয়েছে।
তো আমি এখন যেটা চেষ্টা করছি, বাড়তি প্র্যাকটিস করছি। তাতে ছাড়ার চেষ্টা তো করছিই, এক্সট্রা প্র্যাকটিস করছি মারাটাও। কারণ আমরা এখন যে লেভেলে ক্রিকেট খেলব, তাতে পুল ছাড়া রান করা ভেরি ডিফিকাল্ট। ওরা আপনাকে সামনে বল দেবে না। আমি বাইরে যা খেলেছি, তাতে দেখেছি, ওদের ব্যাটসম্যানরা সামনের বল আস্তে খেলে, একদম জায়গামতো না পেলে ড্রাইভ খেলে না, কিন্তু ব্যাকফুটে ওরা খুব ভালো খেলে। এই লেভেলে রান করতে হলে আপনাকে ব্যাকফুটে খেলতেই হবে, পুল বা স্কয়ার কাট ছাড়া রান করা এখানে খুব কঠিন। কারণ কেউ আমাদের সামনে বল দেবে না। প্রথম ইনিংসে যদিও বা দেয়, দ্বিতীয় ইনিংসে কখনোই দেবে না। ওরা আপনার শরীরে অ্যাটাক করবেই আর তা করলে আপনি কতক্ষণ ছাড়বেন, আপনাকে শট খেলতেই হবে। টেস্টে আমার খেলা ওই শট নিয়ে এত কথা হওয়াটা বোধ হয় ঠিক না।
'ভারতীয় দলের স্লেজিং দেখে আমরা নিজেরাই হাসাহাসি করেছি, বলেছি, একবার বিকেএসপিতে আয়, দেখবি স্লেজিং কাকে বলে।'
শুভ্র: এত কথা হওয়ার আরেকটা কারণ, আপনি প্রথম ইনিংসে ওভাবে আউট হওয়ার পর নিজেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আর ওই শট খেলবেন না। আর বাইরে থেকে যা মনে হয়েছে, মাঠে অজিত আগারকরের সঙ্গে আপনার একটা বাগযুদ্ধ চলছিল। তাকে জবাব দিতে গিয়েই আপনি দ্বিতীয় ইনিংসে আউট হয়েছেন।
হাবিবুল: না, এটা ঠিক নয়। তবে এটা সত্যি, আগারকার কেন যেন শুরু থেকেই আমাকে টার্গেট করেছিল। নামার পরই বলেছে, 'ওয়েলকাম টু দ্য হেল অ্যান্ড পার্টি'; আমি হেসে জবাব দিয়েছি, 'থ্যাংক ইউ'। এরপরও প্রতিটি বল করার পরই ও কিছু না কিছু বলেছে। তবে এসব কোনো ব্যাপার নয়। এসবে আমাদের অভ্যাস আছে। আমরা বিকেএসপিতে অনেক টাফ ক্রিকেট খেলি। ওখানে যে ট্রায়াল ম্যাচ খেলি, সেগুলোতে আরও অনেক বেশি হয়। ভারতীয় দলের স্লেজিং দেখে আমরা নিজেরাই হাসাহাসি করেছি, বলেছি, একবার বিকেএসপিতে আয়, দেখবি স্লেজিং কাকে বলে। আসলে এসব কোনো কারণ নয়, আমি শটটাই ভুল খেলেছি। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে পুল করতে গেছি, ওটাতে আমি স্কয়ার কাট করতে পারতাম।
শুভ্র: সব মিলিয়ে টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতাটা কেমন হলো আপনার। ওভাবে দলে ফেরায় আপনার ওপর চাপটাও তো ছিল সবচেয়ে বেশি।
হাবিবুল: বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, আমি কিন্তু কোনো চাপই অনুভব করিনি। দলে ঢোকার পর এ নিয়ে আর কথাও বলিনি কারও সঙ্গে। শুধু ম্যাচে ফোকাস করতে চেয়েছি। তখন আমার টেলিফোন না থাকাতেও সুবিধা হয়েছে, কারও কোনো কথা শুনতে হয়নি। ম্যাচে ব্যাট করতে নামার পরও আমার সব কিছু এত সহজ লাগছিল যে, নিজেরই অবাক লেগেছে। নিজেই নিজেকে বলেছি, এটা তো টেস্ট ক্রিকেট, অনেক কঠিন হওয়ার কথা, কিন্তু এমন সহজ লাগছে কেন?
শুভ্র: বেশি সহজ লাগাতেই বোধ হয় সেঞ্চুরিটা মিস করেছেন!
হাবিবুল: হয়তো তা-ই!
শুভ্র: এখন তো আমরা নিয়মিতই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলব। আপনার অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যাটা কী হবে বলে মনে করেন?
হাবিবুল: বড় সমস্যা বলব উইকেট। বিকেএসপিতে আমরা যে উইকেটে প্র্যাকটিস করি, সেখানে বল একদমই ওঠে না। কেনিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে প্র্যাকটিস উইকেটে বল অ্যাঙ্কল হাইটে এসেছে, ঢাকা স্টেডিয়ামে যে নরম্যাল বাউন্স, সেই হাঁটু উচ্চতাতেও বল আসেনি। স্বাভাবিকভাবেই সব বলেই ফরোয়ার্ড খেলতে হয়েছে আমাদের। কিন্তু বাইরে গিয়ে আমরা যে উইকেট পাই, তা একেবারে বিপরীত। ঢাকায় ফরোয়ার্ড খেললে যে বল ব্যাটের নিচের দিকে লাগে, ওখানে তা আমাদের গ্লাভসে লেগে ক্যাচ হয়ে গেছে। ওখানে বল বাউন্স করে, সিম করে, কাট করে। আমাদের তাই প্র্যাকটিসের জন্য হলেও ও রকম বাউন্সি উইকেট বানাতে হবে। জাতীয় লিগে আমরা ম্যাটে খেলছি, ঠিক আছে। কিন্তু শুধু সেটা করলেই হবে না। কারণ ম্যাটে পড়ে বল অনেক আস্তে আসে। ব্যাটসম্যানরা বেশি সময় পায়, ওখানে তা পাওয়া যায় না।
শুভ্র: ক্যারিয়ার নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো স্বপ্ন-টপ্ন আছে?
হাবিবুল: আমার স্বপ্নটা শুনে কে কী বলবে জানি না, তবে টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ করার সময় আমি আমার অ্যাভারেজ ৪০ দেখতে চাই।
শুভ্র: সেটি কত টেস্টে?
হাবিবুল:: যত টেস্ট খেলতে পারি। আমার বয়স এখন ২৮, ব্যাটসম্যান যখন, আরও পাঁচ বছর তো খেলবই ইনশাআল্লাহ। আরও বেশিও খেলতে পারি, তবে কমপক্ষে পাঁচ বছর তো খেলবই।