রাজনীতি নিয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজার অপ্রকাশিত সাক্ষাৎকার
‘রাজনীতির চেয়ে ক্রিকেট অনেক কঠিন’
উৎপল শুভ্র
২ আগস্ট ২০২১
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার রেকর্ডও হয়ে গেছে। সেই আনন্দের রেশ নিয়ে সিলেটের হোটেলে মাশরাফির রুমে এই ইন্টারভিউ। খেলা নিয়ে শুরু হয়ে যা শেষ হয়েছিল রাজনীতিতে। সংসদ নির্বাচন করবেন তত দিনে ঠিক হয়ে গেছে। মাশরাফির রাজনৈতিক দর্শন, কেন রাজনীতিতে, কী করতে চান এসব নিয়ে কথাবার্তার এই প্রথম প্রকাশ।
উৎপল শুভ্র: খেলা তো শেষ হলো, এখন খেলার মাঠ থেকে নির্বাচনের মাঠে, তা নড়াইল যাচ্ছেন কবে?
মাশরাফি বিন মুর্তজা: যেতে তো হবেই। তবে কবে যাব, এখনো ঠিক করিনি।
শুভ্র: আপনার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে একের পর এক চ্যালেঞ্জ জয় করার গল্প, রাজনীতি কি এর চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ?
মাশরাফি: আমি তা মনে করি না। ক্রিকেট অনেক কঠিন। ক্রিকেটে সবকিছু আনকমন, সবকিছু মুখস্ত করে গেলেন, মাঠে নেমে পেলেন আনকমন প্রশ্ন। তখন? একজন বোলারের প্ল্যান ‘এ’ থাকে, প্ল্যান ‘বি’ থাকে। প্ল্যান 'সি'ও থাকে। কোনো দিন তিনটা প্ল্যানের কোনোটাই কাজ করে না, নাহলে কোনো বোলার ৮০ রান দেয় কীভাবে? রাজনীতিতে ‘সি’ প্ল্যান পর্যন্ত গেলে সব ঠিক হয়ে যায়। রাজনীতির চেয়ে ক্রিকেট অনেক কঠিন।
শুভ্র: রাজনীতির ‘এ’–‘বি’–‘সি’ প্ল্যানের ব্যাপারটা কি একটু বুঝিয়ে বলবেন?
মাশরাফি: রাজনীতির কিছু স্ট্রেট ফরোয়ার্ড জিনিস আছে। হুটহাট যদি কোনো বিপদ আপদ না আসে, তাহলে সরকারের কাছে একটা প্রক্রিয়া সেট করাই থাকে যে, এভাবে সব কাজ হবে। যার যা প্রাপ্য, সেটা ঠিকঠাক বন্টন করার কিছু কাজ থাকে।
শুভ্র: এটা তো সরকার দলীয় এমপির মতো কথা বলছেন, কেন ধরে নিচ্ছেন, যে নির্বাচিত হবেনই, আপনার দল আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় আসবে?
মাশরাফি: একবারও কিন্তু ধরে নেইনি। ওটাই বলছিলাম, যদি আমি নির্বাচিত হই এবং দল ক্ষমতায় আসে, তখন কী হবে সেটা বলছিলাম।
শুভ্র: ধরুন, আপনার দল ক্ষমতায় এলো না, বিরোধী দল হয়ে গেল, তখন কী হবে?
মাশরাফি: তখন যে কাজ, তাই হবে। কাল যেটা হবে, ইউ নেভার নো, তাই না? আগে থেকে এত ভেবে কী লাভ! ধরুন, কাল আপনাকে পাহাড়ে উঠতে হবে, আপনি যদি ভাবেন, ওখানে গাছ আছে কি-না, গাছ ধরে ঝুলে থাকব। ওখানে সিড়ি আছে কি-না, সিড়িতে গিয়ে বসব, তাহলে আপনি পাহাড়ে ওঠার আগে নিচে থেকেই মরে যাবেন। আপনি যখন একটা জিনিস ফেস করতে যাবেন, সবচেয়ে ভালো হচ্ছে বর্তমানে থেকে সেটির সমাধান খোঁজা।
শুভ্র: নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে কি আপনি খুব আত্মবিশ্বাসী?
মাশরাফি: একদমই না। আসলে খেলা আর নির্বাচন এক জিনিস না। এটা আমি খুব ভালো করে বুঝি। কারণ এটা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ব্যাপার। এখানে কেউ কাউকে ছাড় দেবে না, কেউ আমার নাম দেখে ভোট দিতে আসবে না। যারা রাজনীতি করেন বা যারা এমপি হন, তারা এত সহজ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে হন না। কারণ কী? যার ভোট, সেই তো ভোটটা দেবে। মন যাকে চায়, তাঁকেই তো দেবে। কাজেই ওই মানুষটাকে বুঝতে হবে। আমি নামের ওপর দিয়ে পার পেয়ে যাব ভাবলে সেটি ভুল হবে ।
শুভ্র: মানুষকে কী বলবেন, কেন আপনাকে ভোট দেওয়া উচিত?
মাশরাফি: আমি...আমাকে ভোট দেওয়া উচিত কেন...আমি তো বললাম, আমার যদি গ্রহণযোগ্যতা থাকে, তাহলে দেবে। আর এসব নিয়ে জানাবোঝার ব্যাপার আছে। কথা বলার আগে বোধ হয় আমাকে আরেকটু স্টাডি করতে হবে বা জানতে হবে।
শুভ্র: আমাদের দেশে তো নির্বাচনের আগে সবাই নানা প্রতিশ্রুতি দেয়। নড়াইলবাসীর জন্য আপনার কোনো প্রতিশ্রুতি থাকবে?
মাশরাফি: এটা আমি এখনো সুনির্দিষ্টভাবে ভাবিনি। তবে অবশ্যই আইনি প্রক্রিয়ার ভিতরে যতটুকু করা সম্ভব, আমি সবটুকু করার চেষ্টা করব। আমি যদি জিততে পারি, অবশ্যই এটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করব যে, আইনি প্রক্রিয়ায় যার যেটা প্রাপ্য, সে যেন এটা পায়।
শুভ্র: আপনার বিরুদ্ধে ঐক্যফ্রন্টের যে প্রার্থী, তাঁকে চেনেন?
মাশরাফি: আমি তাঁকে চিনি না, শুধু নাম জানি। কখনো আলাপ হয়নি।
শুভ্র: ভোটের প্রতিপক্ষ হিসাবে তাকে কেমন মনে হয়?
মাশরাফি: ভেরি স্ট্রং। প্রতিপক্ষকে যে দুর্বল ভাবে, সে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বোকা। খেলায় না শুধু, যেকোনো ক্ষেত্রেই এটা সত্যি।
শুভ্র: রাজনীতি করতে গেলে কোন গুণগুলো বেশি প্রয়োজন?
মাশরাফি: এই পর্যন্ত পলিটিকস যা দেখেছি, তা দেখেই এত বড় মন্তব্যে যাওয়া ঠিক হবে কি না আমি জানি না। তবে মানুষের মুখে শোনা, রাজনীতি করে একটা পর্যায়ে যেতে পারলে আপনি অনেক মানুষের উপকার করতে পারবেন। সেটা যদি করতে পারি, তার থেকে আনন্দের আর কিছু নেই। এই খেলাধুলা আমার জীবনের বড় কোনো অংশই হবে না তখন।
শুভ্র: আপনার কথাগুলো ইমরান খানের কথার মতো শোনাচ্ছে...
মাশরাফি: কথাটা তো ঠিক, আপনি ক্রিকেট খেলে কতজনের পেটে ভাত দিতে পারছেন? সাকিব যে এক শ মারছে, তামিম যে আজ আশি করল, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে জিতলাম, একটা রিকশাওয়ালারও ভাগ্য বদলেছে? বদলায়নি কিন্তু। রাজনীতি করলে মানুষের জন্য অনেক কিছু করা যেতে পারে। কিন্তু সুস্থ রাজনীতি, অসুস্থ রাজনীতি না।
শুভ্র: আমাদের দেশে যেটা হয়, প্রতিপক্ষকে গালিগালাজ করা, তাঁর নামে কুৎসা ছড়ানো—এ সবের কথা বলছেন?
মাশরাফি: আমি কোনোদিনও সেটা করতে চাই না। কারণ প্রতিপক্ষকে গালিগালাজ করা বা বাজে কথা বলে তো আমার কোনো লাভ হবে না। কারোরই লাভ হয় না। আপনাকে আল্লাহ বিবেক বুদ্ধি দিয়েছেন, আপনি শুধু নিজেকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, বাকি আট-দশ জনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। কেউ যদি আমাকে গালি দেয়, ইটস্ ফাইন। আই অ্যাকসেপ্ট ইট। আমার খেলোয়াড়ি জীবনেও তো আমি অনেকের কাছে গালি খেয়েছি। আমি তো কখনো পাল্টা গালি দিইনি।
সিম্পলি ধরেন, আপনারা সাংবাদিকেরা আমার সম্পর্কে হয়তো ভালো কথাই বেশি লিখেছেন, তবে খারাপ কথাও যে লেখা হয়নি, তা তো না। কিন্তু আমি কোনোদিন কাউকে বলিনি, আমাকে নিয়ে এটা কেন লিখলেন? আমি এভাবেই দেখি, যার যেটা কাজ, সে সেটা করুক। এর ভেতর দিয়ে যদি কেউ আমাকে ছোট করতে চায়, সেটাও আমি মেনে নেব। আমি নিজে কাউকে ছোট করা, গালিগালাজ করার পক্ষপাতী না। আমি প্রতিশোধ নিতে পছন্দ করি না। এটা আমার ক্যারেক্টারের মধ্যেই নাই।
শুভ্র: নড়াইলে যাওয়াটা সবসময়ই আপনার কাছে স্পেশাল। এবার নড়াইল যাওয়াটা কি এক্সস্ট্রা স্পেশাল, নতুন এক অভিজ্ঞতা?
মাশরাফি: অবশ্যই নতুন লাগবে। এত দিন গেছি একরকম। এবার জনমানুষদের কাছে যাওয়া, অবশ্যই নতুন লাগবে। সবার কাছে গিয়ে ভোট চাওয়া, এটা তো পুরোপুরি নতুন অভিজ্ঞতা। আমার লাইফের ধরতে পারেন এপিঠ আর ওপিঠ।
শুভ্র: এতদিন আপনাকে এক নজর দেখতে আপনার বাড়িতে হাজার হাজার মানুষ আসত, এবার আপনি উল্টো তাদের কাছে যাবেন...
মাশরাফি: হ্যাঁ এটাই। পুরোই উল্টোটা। বাট ইটস ওকে।
শুভ্র: আপনি সবার মাশরাফি ছিলেন, কিন্তু রাজনীতিতে আসার পর তো দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেল ভালোবাসা। আগে আপনাকে নিয়ে কোনো নিউজ ছাপা হলে পাঠকেরা শুধু প্রশংসাই করত, এখন গালাগালিও করে। খারাপ লাগে না?
মাশরাফি: আমি এগুলো পড়িও না, দেখিও না, জানিও না। আমি আন্দাজ করতে পারি, এতটুকুই। আমি হয়তো নিউজ পড়ি। আগেই আপনাকে বলছি, আমি শচীন টেন্ডুলকার যেমন বলত, ও নিউজ পড়ে না, দেখে না; আমি ওরকম না, আমি সবকিছু ফেস করি। অনেক মানুষ প্রবলেম ফেস করতে চায় না। আর আমি ফেস করতে চাই। এই কারণে চাই, আপনি যদি প্রবলেম ফেস না করেন, ওই প্রবলেম আর আপনার জীবন থেকে কোনো দিন আর যাবে না। আর আপনি যদি প্রবলেমটাকে একবার ফেস করেন, ইউ নো হোয়াট ইট ইজ। এজন্য আমি প্রবলেম থেকে কখনো পালাই না।
শুভ্র: তারপরও যদি বলি, আগে সবার ভালোবাসা পেতেন, এখন পাচ্ছেন না, আফসোস হয় না?
মাশরাফি: পৃথিবীতে কেউ সবার ভালোবাসা পায় না। আমি তো এভাবেও বলতে পারি, আমাকে যারা ভালোবাসত, তারা যদি এখন না ভালোবাসে, তার কারণ কী? আমি তো তাঁদের এক সেকেন্ডের জন্যও অসম্মান করিনি, করতে চাইও না। এখন যদি এমন হয়, আমাকে আপনি পছন্দ করতেন, এখন আর করছেন না, সেটার কারণ কী, সেটা আগে ফাইন্ড আউট করতে হবে। আমি ফাইন্ড আউট করার আগে আপনাকে ফাইন্ড আউট করতে হবে, কারণটা কী? মানুষ এটা চিন্তা করতেই পারে, আপনি কিসের জন্য পলিটিকসে যাচ্ছেন? উদ্দেশ্যটা কী আপনার?
আমি যদি আজকে জিতি, দল ক্ষমতায় আসে, আজ থেকে পাঁচ বছর পর যদি দেখেন, ব্যাংকে আমার এক শ কোটি টাকা আছে, দেন ইউ হেট মি। কিন্তু যে আমাকে গালি দিচ্ছে, আমি যদি তাঁর উপকারে আসি, তাহলে তাঁর আগেই কেন আপনি আমাকে গালি দেবেন? আর একটা কথা পৃথিবীর কোনো মানুষই সবাইকে খুশি রাখতে পারে না, একটা না একটা সময় এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। আর বাংলাদেশে তো কেউ মৃত্যুর আগে অমরত্ব পায় না। আপনি একটা মানুষ দেখান বাংলাদেশে, যার মৃত্যুর আগে হান্ড্রেড পারসেন্ট মানুষ তাকে ভালো বলবে। একজনকে বের করে আমাকে দেখান। যদি থাকে তো কালকে আপনি তাঁকে নিয়ে কিছু লেখেন, তারপর নিচে দুইটা হলেও বাঁকা কমেন্ট পাবেনই। এটাই নিয়ম। এটা কিন্তু যিনি বাঁকা কথা বলছেন তাঁর দোষ না, আমাদের কালচার হয়ে গেছে এরকম। একজনের আরেকজনের প্রতি অবিশ্বাস, অসম্মান; এটা একদম চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছে। এটা হয়তো যে এরকম করছে তাঁরও দোষ না, সে–ও হয়তো এমন কিছু ফেস করে এসেছে বলে নিজেও এরকম করছে।
শুভ্র: এটা কি আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির দোষ, নাকি সমাজটাই এমন হয়ে গেছে?
মাশরাফি: আমাদের সমাজটাই এমন হয়ে গেছে। দেখেন, আপনার দুইটা ছেলে, আমার একটা ছেলে, একটা মেয়ে। যখন বাসায় চিৎকার চেচামেচি হয়, ছেলেটা এসে মেয়েটার ওপর দোষ চাপায়, মেয়েটা এসে ছেলেটার ওপর। তার মানে ছোটবেলা থেকেই ব্লেইম দেওয়ার কালচার আমাদের। একদম ছোটবেলা থেকে। এটাই আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়। এতে অনেক ক্ষতিও হয়। আমাদের দেশে ভালো ডাক্তার আছে না? আছে তো। তো একজন ট্যালেন্টেড ডাক্তার ওপেন হার্ট করার আগে ভাবে, হয়তো রোগী বাঁচবে না, কিন্তু ভিন্ন একটা কিছু করলে বাঁচতেও পারে। কিন্তু সে তা করার সাহস পাবে না। রোগী যদি মারা যায়, তাহলে তাঁর ওপর দোষ দেওয়া হবে এই ভয়ে।
বাইরের দেশে যে উপরে যাচ্ছে, তাঁকে উপরে উঠতে দেয় মানুষ, সাহায্য করে। এখানে তা হয় না। অবিশ্বাস থেকে এটা তৈরি হয়েছে। যদি না হতো... আমাদের দেশে ট্যালেন্টের কোনো অভাব নেই। আমরা যে বলি না, আমাদের দেশ অসুন্দর, আমাদের ট্যালেন্ট নাই, এটা পুরোপুরি বাজে কথা। আমাদের দেশে এ ক্লাস ডাক্তার আছে, ইঞ্জিনিয়ার আছে, কিন্তু নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে পারছে না, হয়তো তার আত্মবিশ্বাসটা ওই জায়গায় নেই। তাঁর বাড়ির মানুষের কারণেই নাই। তাঁর বাড়ির মানুষই তাঁকে হিংসা করছে।
আপনি ক্রিকেটেই দেখেন না, সাকিবের কী হয়েছে। আইপিএল খেলছে, সাড়ে তিন কোটি টাকা পায়। ভাই, ও প্লেয়ারই ওরকম। আর তো কেউ পায় না চান্স। সাকিবের ওই অ্যাবিলিটি আছে, আল্লাহ তার মধ্যে ওই অ্যাবিলিটি দিয়েছেন। এখন এটাও যদি আমাদের গায়ে লাগে, যদি বলি, ‘ও টাকার পিছনে দৌড়ায়’। আমি বিশ্বাস করি, যেকোনো মতামত দেওয়ার আগে এটা মনে রাখা উচিত, ইউ আর নট বাইবেল। আপনি যেটাই বলছেন সেটাই ঠিক, সেটাই সত্যি। আমরা যখন কথা বলি, চূড়ান্ত মত দিয়ে দেই। বরং বলা উচিত, ‘আমার মনে হয়, এই জিনিসটা এরকম।’
শুভ্র: আপনার প্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কে?
মাশরাফি: অবশ্যই বঙ্গবন্ধু। ওনাকে তো দেখার সুযোগ আমাদের হয়নি। উনি মারা যাওয়ার সাত-আট বছর পরে আমাদের জন্ম। বইয়ে পড়েছি, বাবার কাছে শুনেছি, বাসায় শুনেছি। তারপর তো অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীকে দেখেছি। অবশ্যই এই দুজন।
শুভ্র: আপনি রাজনীতিতে নাম লেখানোর পর ইমরান খানের প্রসঙ্গ আসছে। ইমরান দেখিয়েছেন, একজন ক্রিকেটার প্রধানমন্ত্রীও হতে পারে...
মাশরাফি: এটা ওই দেশেই হয়। ওই দেশেই সম্ভব। কত বছর লেগেছে ইমরানের। বাইশ বছর পর প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তিনি। সেটাও আর্মি তাঁকে এনেছে। ফেয়ার ইলেকশনের মাধ্যমে আসেননি। আপনাকে বুঝতে হবে, আপনাকে সেই স্বপ্নই দেখতে হবে, যেটা রিয়েলিস্টিক।
শুভ্র: আজ হোক, দশ বছর পরে হোক, পনের বছর পরে হোক, আপনি কি দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন?
মাশরাফি: না, আমি সেই স্বপ্ন দেখি না। কখনও চিন্তার ভেতরই আনিনি। আমি যখন ২০০১ সালে খেলা শুরু করি, ভেবেছি, তিনটা ম্যাচ আমাকে টিভিতে দেখিয়েছে, বাড়িতে দেখেছে। দারুণ তো! আমি এভাবেই ভাবতাম, এটা আমার একটা অভ্যাস। এখনও ভাবি যে, আমার একটা সুযোগ এসেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে সুযোগটা আমাকে দিয়েছেন, আমার এলাকার মানুষের জন্য, আমি যদি নির্বাচিত হই, আওয়ামী লীগ যদি সরকার গঠন করে, আমি এলাকার মানুষের জন্য সর্বোচ্চ যতটুকু করা যায়, চেষ্টা করব। আমার স্বপ্ন অতটুকুর ভেতরই আছে। আমি চিন্তা করি, আমি যদি ভালো কাজ করতে পারি, তা দেখে কারও ভালো লাগতে পারে। অন্য কেউ উৎসাহিত হতে পারে।