শামীমের কাছে প্রত্যাশা শুধুই বিগ হিটিংয়ের নয়

নাজমূল আবেদীন ফাহিম

১৯ আগস্ট ২০২১

শামীমের কাছে প্রত্যাশা শুধুই বিগ হিটিংয়ের নয়

বয়সভিত্তিক দল থেকে শামীম পাটোয়ারী পরিচিতি পেয়েছে মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবে। আমাদের দলের জন্য এমন একজন ব্যাটসম্যান খুব দরকারও। তবে শামীম যেন নিজেকে শুধু `বিগ হিটার` আর `ফিনিশার` পরিচয়েই আটকে না রাখে। সব প্রলোভন দূরে সরিয়ে নিজেকে কমপ্লিট ব্যাটসম্যান হিসেবেই গড়ে তুলুক ও।

বিশ্বের সেরা হওয়ার অনুভূতিটা ঠিক কেমন, এটা বোধ হয় আমরা কেউ অনুধাবনই করতে পারব না। কখনো হতেই তো পারি নাই। সেখানে শামীম হোসেন পাটোয়ারী একটা দেশকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছে, সাথে সাথে নিজেও বিশ্বের সেরা একজন মানুষ হয়ে এসেছে। ওর সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা এটাই, ও একটা বিশ্বজয়ী দলের সদস্য ছিল।

ওর আত্মবিশ্বাস কিংবা অহম...যেটাই বলি...বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কারণে সেটা অন্য পর্যায়ের। আমরা বোধ হয় মাঠে সেটা দেখতেও পাই। দলের সবচেয়ে নবীন খেলোয়াড়, এমনকি সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় সত্ত্বেও ওর ফিল্ডিংয়ে, হাঁটাচলায় কিংবা ব্যাট হাতে ও যেভাবে কর্তৃত্ব দেখাতে চায়, যত কিছু হয়ে যাক না কেন 'আমি আছি' অনুভূতিটা ছড়াতে চায় সবার মাঝে--এটাই ওকে বিশেষ করে তুলেছে।

এবার ওর কিছু খেলা দেখার সুযোগ হয়েছে, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও কিছু খেলা দেখেছি। ওখানে আমরা দেখেছি, কিভাবে পিছিয়ে পড়া দলকে ও জিতিয়েছে, যেটা হয়তো আমরা আশাও করিনি। জিম্বাবুয়েতে ওর অভিষেক ম্যাচটার কথাই মনে করা যাক, ১৩ বলে ২৯ রানের একটা বিধ্বংসী ইনিংস খেলেছিল ও। সেদিন না পারলেও পরের ম্যাচেই আবার ১৫ বলে ৩১ রানের ইনিংসে দলকে জিতিয়েছিল।

শামীম পাটোয়ারী

তাই আমরা ধারণা করতেই পারি, ওর মধ্যে অ্যাগ্রেসিভ ইন্টেন্ট পুরোপুরি মাত্রায় আছে। আর শুধু 'ইন্টেন্ট' থাকলেই তো হয় না, সেটা প্রয়োগ করার জন্য যোগ্যতাও থাকতে হয়। শামীমের সেটাও আছে। আরেকটা লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, ও দারুণ ফিল্ডিংও করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বদলি ফিল্ডার হিসেবে নেমেই অনবদ্য একটা ক্যাচ নিয়েছিল বাউন্ডারিতে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতেও মিড-অফে ডাইভ দিয়ে ওকে ক্যাচ নিতে দেখেছি আমরা। সব মিলিয়ে শামীম দুর্দান্ত একজন ক্রিকেটার। তাই আমার ধারণা, শামীমকে খেলালে দলের উপকারই হবে। ফিল্ডিং তো আছেই, সঙ্গে শেষের দিকে আমরা যে গতিতে রান চাই, সেই গতির সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার ক্ষমতাও ওর আছে।

তবে এখানে একটা কথা আছে। দলের প্রয়োজনে ওকে হয়তো নিচেই ব্যাট করতে হবে এখন, তবে শামীমও নিজেকে 'শুধুই শেষের ওভারের ব্যাটসম্যান' ভেবে ফেললে সমস্যা। যদি ও কমপ্লিট ব্যাটসম্যান হতে চায়, তাহলে 'ফিনিশার', 'পাওয়ার হিটার'-জাতীয় ট্যাগলাইন থেকে ওর বেরিয়ে আসা উচিত। হ্যাঁ, আমি যদি ব্যাটসম্যান হতাম, আমার নিশ্চয়ই এই উপমাগুলো ভালো লাগত যে, সবাই আমাকে এমন চোখে দেখে, আমি এমন খেলতে পারি। কিন্তু এটাও মাথায় রাখতে হবে, এমন একমুখী ব্যাটিং আমাকে অনেক ওপরে নিয়ে যাবে না। যদি সত্যিকার অর্থেই নিজেকে বড় মাপের ব্যাটসম্যান হিসেবে শামীম নিজেকে দাঁড় করাতে চায়, তবে এই ধরনের 'বিগ হিটার', 'ফিনিশার' তকমা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সব ধরনের পরিস্থিতিতে ভালো ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। ওকে ইনিংস গড়ে তুলতে হবে, বড় ইনিংস খেলতে হবে, ওকে স্বপ্ন দেখতে হবে 'আমি টেস্ট ক্রিকেট খেলব'। আপাতত হয়তো সেটা সম্ভব হবে না, তবে ও যদি ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে প্রচুর রান করে, বড় ইনিংস খেলে, সারাদিন ব্যাট করে ম্যাচ ড্র করতে সাহায্য করবে দলকে,  তখন কিন্তু ও ঠিকই নজরে পড়বে।

শামীম যে বড় ইনিংস খেলতে পারে, তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি

আর ও যে বড় ইনিংস খেলতে পারে, তার প্রমাণ কিন্তু আমরা বয়সভিত্তিক দলগুলোতে পেয়েছি। কক্সবাজারে অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্টে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের বিপক্ষে একটা ডাবল হান্ড্রেড করেছিল ও, যার প্রশংসা করে মুশফিকুর রহিম পর্যন্ত ফেসবুকে পোস্ট করেছিল। তাই, ওর কাছ থেকে বড় স্বপ্ন দেখার প্রত্যাশাই করতে পারি আমরা।

বোলিং দিয়েও আমাদের দলে বাড়তি মাত্রা যোগ করতে পারে শামীম। ঘরোয়া লিগে কিংবা অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে ও বেশ ভালোই বোলিং করেছে। নিয়মিত বোলিং না করলেও ও বেশ স্মার্ট একজন বোলার। মাহেদীর মতোই ব্যাটসম্যানকে পড়ে বা পরিস্থিতি বুঝে দারুণ বোলিং করতে পারে ও। টেস্ট বোলার হওয়া হয়তো কঠিন হয়ে যাবে ওর জন্যে, ওয়ানডেতেও পুরো দশ ওভার করতে পারবে না, তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ও বেশ কার্যকরী একজন বোলার হতে পারে। আমরা দেখেছি, ভালো বোলারও অনেক সময় মার খেয়ে ঘাবড়ে যায়। কিন্তু ওর মানসিক শক্তির কথা আগেই বলেছি, ও কখনোই ঘাবড়ে যায় না। তাই ও যদি ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত বোলিং করতে শুরু করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও অধিনায়ক ওর কাছ থেকে এক/দুই ওভারের সার্ভিস পেতে পারে। ওর ক্যারিয়ারকেও এটা আরও সমৃদ্ধ করবে।

আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, যেহেতু পরিচিতি পেতে শুরু করেছে, ওর সামনে এখন অনেক প্রলোভন আসবে। তবে নাম-যশ-খ্যাতির যেমন অনেক ইতিবাচক দিক আছে, তেমনি কিছু নেতিবাচক দিকও আছে। আশা করব, ও যেন ঠিকভাবে পরিচালিত হয়, সঠিক দিক নির্দেশনা পায়, ওকে যেন ভালোভাবে মেন্টরিং করা হয়। যারা কাছে থাকে, তাদের কিন্তু এই ব্যাপারগুলোতে সতর্ক দৃষ্টি রাখতেই হবে। ওর সামনে যেই মানসিক চ্যালেঞ্জগুলো আসবে, সেগুলোর মুখোমুখি হওয়ার যোগ্য করে তোলাও কিন্তু দায়িত্বের মধ্যেই পড়বে সংশ্লিষ্টদের। যদি সব কিছু ঠিক মতো চলে, আমি শামীমের উজ্জ্বল ভবিষ্যতই দেখি।

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×