উৎসবের রং হলুদ
কনফেডারেশনস কাপ ২০১৩
উৎপল শুভ্র
১০ জুলাই ২০২১
আগের পাঁচ/ছয় বছরে ফুটবলের রংকে `লাল` বানিয়ে দিয়েছিল স্পেন। ইউরো-বিশ্বকাপ-ইউরো টানা তিনটি বৈশ্বিক শিরোপার স্মৃতি নিয়ে কনফেডারেশনস কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ব্রাজিলের, যে ব্রাজিল তখন র্যাঙ্কিংয়ে ২২ নম্বরে। নেইমারের জাদুতে সেই ফাইনালই পরিণত হয়েছিল `হলুদ উৎসবে`!
প্রথম প্রকাশ: ২ জুলাই ২০১৩। প্রথম আলো।
মারাকানায় কান পাতলে এখনো নাকি শোনা যায় দীর্ঘশ্বাস! ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে চিরন্তন এক দুঃখের স্মৃতি বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সেই মারাকানাই কি দেখল সেলেসাওদের পুনর্জন্ম! বাংলাদেশে ভোররাত হয়ে আসা রিও ডি জেনিরোর সন্ধ্যায় কনফেডারেশনস কাপ ফাইনাল যেন শুনিয়ে গেল বিশ্ব ফুটবলে পালাবদলের গান। স্প্যানিশ অহংকারকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে মহাদেশীয় সেরাদের এই টুর্নামেন্টে টানা তৃতীয় শিরোপা জিতল ব্রাজিল। কীর্তিটা প্রথম এবং অদ্বিতীয়।
১৯৫০ বিশ্বকাপে উরুগুয়ের ‘অলিখিত ফাইনালে’ ড্র করলেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেত ব্রাজিল। মারাকানায় প্রায় দুই লাখ দর্শক চোখে অবিশ্বাস নিয়ে দেখেছিল প্রিয় দলের পরাজয়। সেই মারাকানার ধারণক্ষমতা এখন নেমে এসেছে এর অর্ধেকেরও কমে। কনফেডারেশনস কাপের ফাইনাল তাদের ভাসিয়ে দিল আনন্দবন্যায়। শুধুই তো একটা ট্রফি জয় নয়, চোখের সামনে যে মঞ্চস্থ হলো অবিশ্বাস্য এক ফুটবল-নাটক!
১৯৭০ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের স্বপ্নের ওই দলের মাঝমাঠের শিল্পী টোস্টাও ফাইনালটিকে বলছিলেন ‘শতাব্দীর সেরা ম্যাচ’। ফুটবল ইতিহাসের মনোযোগী ছাত্রদের কাছে তা বিস্ময় হয়ে আসেনি। ফুটবল ইতিহাসের সফলতম দলের সঙ্গে সাম্প্রতিক ইতিহাসের সেরা দলের লড়াই—এটি নিয়ে কোনো কথাই অতিশয়োক্তি নয়। কিন্তু ব্রাজিলের বর্ণাঢ্য ইতিহাস ভুলে কেউ যদি শুধু ফিফা র্যাঙ্কিংকেই বড় করে দেখত, বিস্ময় তাকে গ্রাস করে নিতই। র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী র্যাঙ্কিংয়ে ২২ নম্বর দল। এটা নাকি শতাব্দীর সেরা ম্যাচ!
র্যাঙ্কিংকে ফালতু বলে উড়িয়ে দেবেন, সেই উপায়ও তো ছিল না। বছর ছয়েক ধরেই তো ফুটবল বিশ্বের রং লাল। স্পেনের টিকি-টাকার মায়াজালে আচ্ছন্ন সবাই। লা রোজারা এমনই সর্বজয়ী এক রূপে আবির্ভূত হয়েছিল যে, তুলনা হচ্ছিল সর্বকালের সেরা দলগুলোর সঙ্গে। কেউ কেউ ইনিয়েস্তা-জাভির এই স্পেনকেই দিয়ে ফেলতে চাইছিল সেই স্বীকৃতি। আর তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কারা? ফুটবল ইতিহাসে সর্বকালের সেরা দূরে থাক, ভুল করেও কেউ ব্রাজিলের সেরা দলগুলোর সঙ্গেও তুলনা করেনি এই দলের। এই দলের খেলা দেখতে দেখতে ব্রাজিলিয়ানরা ১৯৫৮ ও ১৯৬২ বিশ্বকাপের ব্রাজিল, ১৯৭০ বিশ্বকাপের ব্রাজিল, ১৯৮২ বিশ্বকাপের ব্রাজিলের স্মৃতিচারণা করে শুধু দীর্ঘশ্বাসই ফেলেছে এত দিন। নেইমারের সেই ব্রাজিলই টানা ২৯ ম্যাচে অপরাজিত স্পেনকে নিয়ে কী ছেলেখেলাটাই না খেলল!
আক্ষরিক অর্থেই এটি নেইমারের ব্রাজিল। ২১ বছর বয়সী এই তরুণের জাদুর পরশেই কনফেডারেশনস কাপে ফুটবলের রং লাল থেকে আবারও হলুদ!