নেমেই রেকর্ড, সেই ম্যাচেই কিনা ডি লিটের লাল কার্ড!
চেক প্রজাতন্ত্র-হল্যান্ড
রিজওয়ান রেহমান সাদিদ
২৮ জুন ২০২১
সবাইকে চমকে দিয়ে হল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারিয়ে চেক প্রজাতন্ত্র উঠে গেছে ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে। কেমন হলো এই ম্যাচ? কীভাবে আবারও লেখা হলো `কমলা-দুঃখ`?
ম্যাচটা হতে পারত ডি লিটের।
সবচেয়ে কম বয়সে হল্যান্ডের পক্ষে ৩০তম ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন। দুয়ের সামনে একা দাঁড়িয়ে যে ব্লকটা করলেন ৩৮-তম মিনিটে, তাতে মিলেছিল উপলক্ষটা রাঙিয়ে দেওয়ার আভাসও। কিন্তু ম্যাচের ৫১তম মিনিট আসতে না আসতেই উপলক্ষটার রঙ হয়ে গেল 'লাল'। ইউরোর আগের আসরগুলোতে ডাচরা লাল কার্ড দেখত কেবল চেক প্রজাতন্ত্র কিংবা চেকোশ্লোভাকিয়া নামগুলো সামনে এলেই। ১৯৭৬ ইউরোতে যেমন দেখছিলেন ইয়োহান নিসকেন্স আর উইন ফন হানেগ্যাম, ২০০৪ সালে জন হেইটিঙ্গা। সেই ধারাই ২০২১-এ টেনে নিয়ে গেলেন ডি লিট। শেষ ডিফেন্ডার হিসেবে বল হাত দিয়ে আটকানোর অপরাধে ভিএআরের সাহায্য নিয়ে তাঁকে সরাসরি লাল কার্ড দেখিয়ে দিলেন রেফারি। যা তাঁকে সর্বকনিষ্ঠ বানিয়ে দিল আরেক রেকর্ডে। জিয়ানলুকা জামব্রোতাকে মুক্তি দিয়ে ইউরোর নক আউট ম্যাচে সবচেয়ে কম বয়সে লাল কার্ড দেখার রেকর্ড এখন ২১ বছর ৩১৯ দিন বয়সী ম্যাথিয়াস ডি লিটেরই।
অথচ এই ঘটনার সেকেন্ড পঞ্চাশেক আগে ম্যাচটা তো ডনিয়েল মালেনের হয়েই যাচ্ছিল।
মালেনের সামনে তখন গোলরক্ষক, তারও সামনে বিস্তীর্ণ গোলপোস্ট আর তারও সামনে আকাশে উঠে যাওয়া গ্যালারিভর্তি দর্শক। মালেনের সামনে চিপ করার সুযোগ ছিল, তীব্রগতির শটে জাল ছিঁড়ে ফেলার সুযোগ ছিল, কিংবা শট নিতে গিয়ে বল ওই জনারণ্যে পাঠানোরও সুযোগ ছিল। এসব কিছু না করে মালেন চাইলেন গোলরক্ষককেও কাটিয়ে জালে ঢুকবেন বল নিয়ে। কিন্তু চেক গোলকিপার আটকে দিলেন বলটা। ওই 'হয়েই যাচ্ছিল' মুহূর্তটা ডাচদের জন্য আর কখনোই 'হলো না'।
যেমন হলো না জর্জিনিও উইনালদুমের। পুরো ম্যাচজুড়ে সতীর্থদের উদ্দেশে মাত্র ১০টা পাস বাড়াতে পেরেছেন। নক আউট পর্বের পুরো ম্যাচ খেলেছেন, গোল রক্ষণের দায়িত্বও সামলাতে হয়নি--১৯৮০ সাল থেকে এমন ডাচ ফুটবলারদের মধ্যে যা সবচেয়ে কম।
অধিনায়কের মলিন দিনে হলো না হল্যান্ডেরও। আগের তিন ম্যাচেই মুহুর্মুহূ আক্রমণের ফুল ফোটানো ডাচরা এ ম্যাচে গোলপোস্ট বরাবর কোনো শটই নিতে পারল না। ১৯৮০ সালে হিসাব রাখতে শুরু করার পর যে ঘটনা ঘটল এই প্রথম। নক আউট ম্যাচে ডাচরাও হেরে গেল টানা পঞ্চমবারের মতো। টাইব্রেকার ছাড়া নক আউট ম্যাচে হল্যান্ড সর্বশেষ জয়ের দেখা পেয়েছিল ২০০০ ইউরোতে। আর যে দেশের বিপক্ষে ৬-১ গোলের জয়টা এসেছিল, সেই যুগোস্লাভিয়ার এখন অস্তিত্বই নেই মানচিত্রে।
বদলে ম্যাচটা হলো টমাস হোলেসের। সাধারণত ৯ নম্বর জার্সিটা স্ট্রাইকারদের গায়েই থাকে। অথচ, চেক প্রজাতন্ত্র তা দিয়েছিল মধ্যমাঠে খেলা টমাস হোলেসকে, যিনি কিনা গত মৌসুমটা কাটিয়েছেন ফুল ব্যাক আর ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের ভূমিকায় খেলে। হল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটাতেও তিনি মিডফিল্ডার হিসেবেই খেলছিলেন। কিন্তু ৬৮ মিনিটে একটি গোল করলেন। গোল লাইনে দাঁড়ানো তিন ডাচ খেলোয়াড়কে ফাঁকি দেওয়া গোলটা আমাদের বোঝাল, বেহুলার বাসরঘরে ছিদ্রটা কোথায় ছিল। সম্ভবত এটাও জানাল, ৯ নম্বর জার্সিটা কেন হোলেসকেই দেওয়া হয়েছিল।
গোলের পর হোলেস করেছেন একটি অ্যাসিস্টও। ইউরোতে চেকদের হয়ে একই ম্যাচে গোল আর অ্যাসিস্টের সর্বশেষ ঘটনা ঘটেছিল ২০০৪ সালে। সেবারও এই হল্যান্ডের বিপক্ষেই যা করেছিলেন ইয়ান কোলার আর মিলান বারোস।
ম্যাচটা মিলান বারোসের হয়ে গেল আরও এক জায়গায়, আর তা হলো প্যাট্রিক শিকের সৌজন্যে। জাতীয় দলের হয়ে শিকের গোল এখন ৩০ ম্যাচে ১৫টি। আর হোলেসের বাড়ানো বলে গোল করে এবারের টুর্নামেন্টে চারটি। চেকদের হয়ে বড় টুর্নামেন্টে এর চেয়ে বেশি গোল আছে একজনেরই, সেই মিলান বারোসের গোল একটিই বেশি।
ম্যাচটা কি গ্যারি লিনেকারেরও হলো না?
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে 'কে জিতবে'-জাতীয় ভবিষ্যদ্বাণী করাটা ক্রীড়া-পণ্ডিতদের অবশ্য কর্তব্যর মধ্যেই পড়ে। রিও ফার্ডিনান্ড, থিয়েরি অরিঁর সঙ্গে গ্যারি লিনেকারকে নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অবশ্য এই প্রশ্ন নয়, জানতে চাওয়া হয়েছিল, 'ফেবারিটদের বাইরে কোন দলটা চমকে দিতে পারে?' লিনেকার সেখানেই নিয়েছিলেন চেক প্রজাতন্ত্রের নাম। হল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারিয়ে চেক প্রজাতন্ত্র কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে যাওয়ার পর লিনেকার তাই বলতেই পারেন, 'আমি তো আগেই বলেছিলাম...'