প্রিয় দল পাঁচটা!

আসিফ নজরুল

১২ জুন ২০২১

প্রিয় দল পাঁচটা!

যেকোনো টুর্নামেন্টের আগে প্রশ্নটা অবধারিত, `কোন দলকে সমর্থন করছেন?` ইউরো শুরুর আগে আসিফ নজরুলকেও একই প্রশ্ন করেছিলেন উৎপল শুভ্র। তখন উত্তর দেননি। পরে লিখে জানালেন, এবারের ইউরোতে তাঁর সমর্থনটা পাঁচটি দলের মাঝে বণ্টন হয়ে গেছে শতকরা হারে। সেটা আবার কেমন?

ইউরোতে আপনার প্রিয় দল কোনটি? উৎপল শুভ্র আমাকে এটা জিজ্ঞেস করার পর হাসলাম। সাপোর্ট করে কম দুঃখ পাইনি জীবনে। জিকো-সক্রেটিস-ফ্যালকাওদের ব্রাজিল দলকে সাপোর্ট করে কাঁদতে কাঁদতে বুক ভিজে যেত। বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম হারলে আগে নিজেকে নিঃস্ব মনে হতো। আবাহনী হারলে লজ্জায় লুকিয়ে থাকতাম যতটা পারা যায়। এসব আগের কথা। এখন আমার বয়স হয়েছে, সাপোর্টার হিসেবে বুদ্ধিও বেড়েছে বোধ হয়।

কাজেই নো সাপোর্ট, নো প্রিয় দল। কিন্তু আসলে এটা ঠিক না। ঠিক না মানে পুরোপুরি ঠিক না। এই যেমন এবারের ইউরো ফুটবলে ইংল্যান্ডকে সমর্থন করব। ১৯৯৪ সালে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়ে সেখানে পড়তে যাওয়ার পর, আগে দু'চোখে দেখতে পারতাম না, সেই ইংল্যান্ড দলটাকে আস্তে আস্তে ভালোবাসতে শুরু করি।

নুন খেয়ে গুণ গাওয়ার পর মতো কিছু বিষয় আছে এখানে। তবে ইংল্যান্ডকে সমর্থন করার আরেকটা কারণ, দলের প্রতিটি খেলোয়াড়কে চিনি বলে। চিনি এমনকি দলের ম্যানেজার সাউদগেটকেও, ও যখন ইংল্যান্ড দলে খেলত, তখন থেকে। সাউদগেটের পাশে একবার খেলতে নেমেছিল জনাথন উডগেট। দক্ষিণ দরজা (সাউদগেট) আর কাঠদরজার (উডগেট) ডিফেন্স নিয়ে অবশ্য কোনোদিন বেশি দূর যেতে পারেনি ইংল্যান্ড।

এবারের ইংল্যান্ড দলটা শক্তিমত্তায় এগিয়ে অনেক, অন্তত সাউদগেট-উডগেটের ইংল্যান্ডের চেয়ে তো বটেই। ছবি: গেটি ইমেজেস

তবে এবারের ইংল্যান্ড টিমটা কিছু কারণে আগের চেয়ে অনেক ভালো। দলে আছে ফোডেন, গ্রিলিশ আর ম্যাসন মাউন্টের মতো তুখোড় কিছু আক্রমণভাগের খেলোয়াড়। গত বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে খেলা দলটির অধিকাংশ খেলোয়াড়ও আছে এবারের টিমে। ম্যানেজার হিসেবে সাউদগেটেরও অনেক অভিজ্ঞতা হলো। ইংল্যান্ড এবার অন্তত সেমিফাইনাল পর্যন্ত না গেলে অবাক হব, একটু খারাপও লাগবে।

কাজেই আমি ইংল্যান্ডের সমর্থক। কিন্তু পুরোপুরি বা অন্ধ সমর্থক না। সেটা কেমন, ব্যাখ্যা করি। বড় ধরনের কোনো আপসেট না হলে ইংল্যান্ডের সাথে সেমিফাইনালে দেখা হওয়ার কথা ফ্রান্স বা জার্মানির। আমি ফ্রান্স টিমেরও বিরাট ভক্ত, সামগ্রিকভাবে এবারের ইউরোর সবচেয়ে শক্তিশালী দল এটি। আমার সবচেয়ে প্রিয় মিডফিল্ডার কান্তে আর খুব প্রিয় ফরোয়ার্ড এমবাপ্পে খেলছেন এই দলে। কাজেই ইংল্যান্ড আর ফ্রান্স খেলা হলে আমি যে দল ভালো খেলবে, সেটিকেই সাপোর্ট করব তখন। আর ইংল্যান্ডের সাথে জার্মানি বা পর্তুগালের খেলা হলে অবশ্যই ইংল্যান্ডকে, সেটা তারা যেমনি খেলুক না কেন।

টিম হিসেবে বেলজিয়ামের প্রতিও আমার দুর্বলতা আছে ডি ব্রুইনার জন্য, নেদারল্যান্ডের প্রতি আছে ভ্যান ডাইকের জন্য। শেষেরজন খেলছেন না এবার ইনজুরির কারণে, তাই নেদারল্যান্ডের প্রতি তেমন দুর্বলতা আর নেই। পর্তুগালের খেলার স্টাইল ভালো লাগে, দলের ডিফেন্সে আছে বিশ্বসেরা সেন্টারব্যাক ডিয়াজ। এসব দলকেও সমর্থন করব, তবে ইংল্যান্ডের সাথে খেলা পড়লে না।

আসিফ নজরুলের চাওয়া, ইউরোটা জার্মানি আর ইতালি না জিতুক! ছবি: গেটি ইমেজেস

কাজেই সমর্থন হয়ে গেছে এখন শতকরা হারে। ইংল্যান্ড ৪০ শতাংশ, ফ্রান্স ৩০ শতাংশ, বাকিরা (স্পেনসহ) মিলে ৩০ শতাংশ। এতে অন্তত একটা লাভ হয়েছে। খেলা দেখে দুঃখ পাওয়ার, পরাজিত বোধ করার সম্ভাবনা কমেছে। জার্মানি বা ইতালির মতো অপ্রিয় কোনো দল 'অঘটন' না ঘটিয়ে ফেললে ইউরোতে জিতবে আমারই দল।

আসুন, ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবল (ইউরো) দেখি। দেখি কোপা আমেরিকান ফুটবল। করোনা, দুঃশাসন, দুঃখ-বেদনা ভুলে থাকার জন্য ফুটবলের মতো আর কি আছে এই ভুবনে!

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×