ইউরোর মুখ

ইউরো ২০১২ কড়চা-৫

উৎপল শুভ্র

২৭ জানুয়ারি ২০২১

ইউরোর মুখ

জার্মানির বুকে দুটি মরণশেল হানার পর বালোতেল্লি অবশ্য আর ওই অদ্ভুতুড়ে হেয়ারস্টাইলের কারণে নন, বিশ্বজুড়ে আলোচিত হচ্ছেন সেমিফাইনালে দুর্দান্ত ওই দ্বিতীয় গোল আর আরও বেশি ‘দুর্দান্ত’ উদযাপনের কারণে। অমন জার্সি খুলে বডিবিল্ডারের মতো পোজ দিয়ে নিষ্কম্প দাঁড়িয়ে যাওয়াটাই না এই ইউরোর সবচেয়ে বিখ্যাত ছবি হয়ে যায়!

প্রথম প্রকাশ: ৩০ জুন, ২০১২। প্রথম আলো।

‘ইউরোর মুখ’ কি এখন মারিও বালোতেল্লি? ফাইনালে যদি আর একটি গোলও করতে পারেন আর ইতালি জিতে যায়, তা হলে তো অবশ্যই। এই ইউরোতে সবচেয়ে বেশি গোল হয়ে যাবে তাঁর। ট্রফিটা বুফনের চেয়ে বালোতেল্লির হাতেই তখন বেশি মানাবে।

তা না হয় মানাল। কিন্তু বালোতেল্লি ‘ইউরোর মুখ’ হয়ে গেলে সেটি কি খুব মানাবে? মানে প্রিয়দর্শন কিছু হবে? এই কথাবার্তায় আবার বর্ণবাদী গন্ধ খুঁজে পাবেন না। অমন কিছু বলার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ বালোতেল্লির মতো অমন চকচকে না হলেও গাত্রবর্ণের দিক থেকে এই লেখকও তাঁর স্বগোত্রীয়ই।

এই গায়ের রঙের কথাটা উঠল, কারণ এ জন্য বেচারা বালোতেল্লিকে কম যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে না। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে তো বটেই, এই ইউরোতেও স্পেন-ক্রোয়েশিয়ার সমর্থকেরা প্রকৃতিদত্ত ওই বিষয়টি যা-তা বলেছে। ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে ম্যাচে তো মাঠে কলাও ছুড়ে দেওয়া হয়েছে। যেটির প্রচ্ছন্ন বার্তা—বালোতেল্লির মাঠে না থেকে গাছে থাকাই ভালো।

এসব সভ্য জগতের আচরণ নয়। কিন্তু বালোতেল্লিকে যতবার দেখি, একটা প্রশ্ন মনে জাগেই। চেহারা-ছবির ওপরে তো মানুষের হাত নেই, কিন্তু হেয়ারস্টাইলের ওপর তো আছে। এই অদ্ভুতুড়ে সাজটা তো তিনি নিজেই নিয়েছেন। চকচকে ন্যাড়ামাথার মাঝখানে অমন একটু চুলে তাঁকে খুব সুন্দর লাগছে বলে বালোতেল্লির ধারণা? 

থাক, এটি বালোতেল্লির ব্যক্তিগত ব্যাপার। এমনও নয় যে, লিখলে-টিখলে কোনো কাজ হবে। এই লেখা বালোতেল্লি পড়বেন না বলেই ধারণা। পরশু রাতে জার্মানির বুকে দুটি মরণশেল হানার পর বালোতেল্লি অবশ্য আর ওই অদ্ভুতুড়ে হেয়ারস্টাইলের কারণে নন, বিশ্বজুড়ে আলোচিত হচ্ছেন সেমিফাইনালে দুর্দান্ত ওই দ্বিতীয় গোল আর আরও বেশি ‘দুর্দান্ত’ উদযাপনের কারণে। 

জার্সি খুলে বডিবিল্ডারের মতো পোজ দিয়ে নিষ্কম্প দাঁড়িয়ে যাওয়া। রেফারি বেরসিকের মতো হলুদ কার্ড দেখিয়ে দিয়েছেন। নির্ঘাত বালোতেল্লির নির্মেদ ওই পেটানো শরীর দেখে তাঁর ঈর্ষা হচ্ছিল! বালোতেল্লির কথা শুনলে তো এমনই মনে হয়। কোথায় যেন পড়লাম, বালোতেল্লি বলেছেন, যাঁরা তাঁর উদযাপনের সমালোচনা করছেন, তাঁরা আসলে তাঁর দুর্দান্ত ওই শরীর দেখে ঈর্ষান্বিত।

ইতালি ইউরো জিতলে (জিতবেই তো! কবেই বলে দিয়েছি না, ‘ইউরোর রং নীল’!) বালোতেল্লির ওই বডিবিল্ডাররূপী ছবিটাই হয়ে যাবে এবারের ইউরোর সবচেয়ে বিখ্যাত ছবি। 

‘হোয়াই অলওয়েজ মি’ উদযাপনও হয়তো হয়ে যাবে দ্বিতীয় সেরা। ঘটনাটা হয়তো আপনার জানাই। প্রিমিয়ার লিগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ৬-১ গোলে বিধ্বস্ত করার ওই ম্যাচে ম্যানচেস্টার সিটির প্রথম গোলটা করার পর জার্সি তুলে ধরেছিলেন বালোতেল্লি। ভেতরের টি-শার্টে লেখা ছিল—হোয়াই অলওয়েজ মি। কথাটায় যত না প্রশ্ন ছিল, তার চেয়ে বেশি দুঃখ-অনুযোগ। বালোতেল্লির ওই মনস্তাপ এমনই হিট হয় যে, ‘হোয়াই অলওয়েজ মি’ গান হয়ে যায়, এই লেখা বুকে নিয়ে টি-শার্ট চলে আসে বাজারে।

মিডিয়ার হয়তো কিছুটা দায় আছে। একবার কারও একটা ভাবমূর্তি দাঁড়িয়ে গেলে মিডিয়া তাঁকে সেভাবেই চিত্রিত করতে থাকে। তবে বালোতেল্লির নিজেরও কম অবদান নেই এতে। এই ইউরোতেই তো আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে গোল করার পর তাঁর মুখ চেপে ধরে শাস্তি থেকে বাঁচালেন বোনুচ্চি। ফুটবল মাঠে এমন দৃশ্য দেখেছেন এর আগে?

ইউরো জেতাতে পারলে বালোতেল্লির সব ‘দোষ’-ই চলে যাবে আড়ালে। শুরু হবে তাঁর জয়গান। সেই গানের অন্তরাটা সিজারে প্রানদেল্লিকে নিয়েই হওয়া উচিত। যখন-তখন লাভা উদিগরণের ভয় থাকার পরও ইতালিয়ান কোচ বালোতেল্লি-আগ্নেয়গিরির ওপর আস্থা রেখেছিলেন বলেই তো... 

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×