প্লে-অফে যদি রোনালদো বা ইতালি বেছে নিতে হয়!
উৎপলশুভ্রডটকম
১৭ নভেম্বর ২০২১
সেই সম্ভাবনা তো আছেই। সম্ভাবনা না বলে অবশ্য আশঙ্কা বলাই ভালো এবং সেই আশঙ্কা শুধু পর্তুগাল বা ইতালির নয়, সাধারণ ফুটবলপ্রেমীদেরও।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো না থাকলে বিশ্বকাপ নিশ্চিত রং হারাবে, চারবারের চ্যাম্পিয়ন ইতালি না থাকলেও। তবে প্লে-অফে দুই দল এক গ্রুপে পড়ে গেলে রোনালদোর পর্তুগাল বা ইতালির মধ্যে এক দল তো বাদ পড়ে যাবেই। দুই দেশই তাই দুরু দুরু বক্ষে অপেক্ষা করছে ২৬ নভেম্বরের জন্য। সেদিনই জুরিখে ড্র হবে ইউরোপের বিশ্বকাপ বাছাই প্লে-অফের।
এবারের প্লে-অফ যেভাবে হবে
২০১০ ও ২০১৪ বিশ্বকাপেও রোনালদোর পর্তুগালকে প্লে-অফ খেলেই উঠতে হয়েছিল। সর্বশেষবার সেই প্লে-অফ ছিল সুইডেনের বিপক্ষে, যা পরিণত হয়েছিল ‘রোনালদো বনাম ইব্রাহিমোভিচ’ দ্বৈরথে। এবার প্লে-অফের নিয়ম বদলেছে। ১২টি দল এবার খেলবে চার দল করে তিনটি গ্রুপে ভাগ হয়ে। প্রতি গ্রুপ থেকে একটি করে দল বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাবে।
এই ১২ দলের মধ্যে ১০টি ইউরোপীয় অঞ্চলের বাছাই পর্বে ১০ গ্রুপের রানার্স আপ। বাকি দুটি দল এসেছে নেশনস লিগ থেকে (অস্ট্রিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্র)। বাছাই পর্বে পয়েন্ট ও গোল পার্থক্যের ভিত্তিতে ছয়টি দল বাছাইয়ের মর্যাদা পাচ্ছে।
বাছাই: পর্তুগাল, ইতালি, স্কটল্যান্ড, রাশিয়া, সুইডেন, ওয়েলস
অবাছাই: তুরস্ক, পোল্যান্ড, উত্তর মেসিডোনিয়া, ইউক্রেন, অস্ট্রিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র
চার দলের প্রতিটি গ্রুপে ম্যাচ হবে দুটি করে। প্রথমটিকে বলা হচ্ছে সেমিফাইনাল। বাছাই দলের সঙ্গে অবাছাই দলের সেই সেমিফাইনালে পরাজিত দল বিদায় নেবে। দুই সেমিফাইনালের জয়ী দুই দল মুখোমুখি হবে ফাইনালে। সেমিফাইনাল হবে মার্চের ২৪ ও ২৫ তারিখে। ২৮ ও ২৯ মার্চ ফাইনাল। বাছাই হওয়ার একটা সুবিধা আছে, সেমিফাইনাল ম্যাচটা নিজেদের দেশে খেলার সুযোগ।
ইতালি আর পর্তুগালের মধ্যে এক দলের বাদ পড়ার শঙ্কা কেন জাগছে, তার কারণটা তো মনে হয় বুঝেই ফেলেছেন। দুই দলই বাছাই তালিকায় থাকলেও বাছাই ছয় দল তো ভাগ হয়ে যাবে তিনটি গ্রুপে। যার অর্থ, প্রতিটি গ্রুপে বাছাই দল থাকবে দুটি, অবাছাই দুটি। ইতালি ও পর্তুগাল তো তাই একই গ্রুপে পড়ে যেতে পারেই। আর পড়ে গেলেই তো নিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে, কাতার বিশ্বকাপে হয় রোনালদোর পর্তুগাল থাকবে নয় তো মানচিনির ইতালি।
দুই দলের জন্যই বড় হতাশা
২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপেও কোয়ালিফাই করতে পারেনি ইতালি। বিশ্ব ফুটবলের পরাশক্তিদের জন্য এ ছিল বিষম এক আঘাত। সেই হতাশাকে কবর দিয়ে রবার্তো মানচিনির ইতালির ঘুরে দাঁড়ানো রোমাঞ্চকর এক গল্প। যে গল্পের সুন্দরতম অংশ গত জুলাইয়ে ইতালির ইউরো শিরোপা জয়। সেই ইতালিই বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে সুইজারল্যান্ডের পেছনে পড়ে দ্বিতীয় হয়েছে।
IMAGENS EXCLUSIVAS DA TNT SPORTS! O CLIMA ESQUENTOU! Cristiano falou poucas e boas pro técnico Fernando Santos depois do apito final contra a Sérvia... #EliminatóriasNaTNTSports pic.twitter.com/kZr1M48gFM
— TNT Sports Brasil (@TNTSportsBR) November 14, 2021
পর্তুগালের ঘটনা তো আরও অপ্রত্যাশিত। কারণ দুই ম্যাচ বাকি থাকতে পর্তুগালের সরাসরি বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করা এক রকম নিশ্চিতই মনে হচ্ছিল। ডাবলিনে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্রয়ের পর নিজেদের মাঠে সার্বিয়ার বিপক্ষে শেষ মিনিটের গোলে পরাজয় সেই পর্তুগালকেই ঠেলে দিয়েছে প্লে-অফের অনিশ্চয়তায়। রোনালদোর আবির্ভাবের পর পর্তুগাল কোনো বিশ্বকাপ মিস করেনি। ২০০৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত টানা চারটি বিশ্বকাপে খেলেছেন রোনালদো। পঞ্চম এবং নিশ্চিতভাবেই শেষ বিশ্বকাপ নিয়েই এখন শঙ্কা।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ড্রয়ের পর রোনালদো ইনস্টাগ্রামে পর্তুগিজদের সবাইকে আশ্বস্ত করে লিখেছিলেন, ‘রোববার নিজেদের সমর্থকদের সামনে আমরা কাতার বিশ্বকাপে আমাদের জায়গা নিশ্চিত করব।’
সার্বিয়ার বিপক্ষে পরাজয়ের পরও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছেন রোনালদো। এবার তিনি একটু সাবধানী এবং অনেক বেশি কাব্যিক, ‘ফুটবল আমাদের বারবার দেখিয়েছে যে, কখনো কখনো সবচেয়ে দূস্তর পথই সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ফলের দিকে নিয়ে যায়। ২০২২ বিশ্বকাপে খেলার লক্ষ্য এখনও শেষ হয়ে যায়নি এবং আমরা জানি সেখানে যেতে আমাদের কী করতে হবে...পর্তুগাল কাতারে যাচ্ছে।’
ইতালির কোচ রবার্তো মানচিনিও ইতালিয়ানদের আশার আলো দেখাচ্ছেন। ইতালি কাতার বিশ্বকাপে যাবে এবং সেখানে শিরোপাও জিততে পারে...মানচিনির এই বিশ্বাসকে উড়িয়ে দেওয়া কোনোই কারণ নেই। রোনালদোর ‘পর্তুগাল কাতারে যাচ্ছে’ ঘোষণাকেও যেমন না। তবে প্লে-অফে এক গ্রুপে পড়ে গেলে রোনালদো ও মানচিনি দুজনের আশাই তো পুরণ হওয়া সম্ভব নয়।
অপেক্ষা তাই ২৬ নভেম্বরের। মনে আছে তো, সেদিনই প্লে-অফের ড্র।