রিয়ালেও ফিরতে পারতেন রোনালদো!

দ্য অ্যাথলেটিক

২৮ আগস্ট ২০২১

রিয়ালেও ফিরতে পারতেন রোনালদো!

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ছবি: গেটি ইমেজেস

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে প্রত্যাবর্তন ঘটেছে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর, এই খবর পুরনো। তবে রোনালদোকে যে চাইলে দলে ভেড়াতে পারত রিয়াল মাদ্রিদ, পিএসজিও; সেটা কি জানেন? `দ্য অ্যাথলেটিক` জানার সুযোগ করে দিচ্ছে সেই পেছনের গল্পটাই। উৎপলশুভ্রডটকমের পাঠকের জন্য সেটিরই অনূদিত রূপ।

জুভেন্টাসের জীবন নিয়ে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো নাখোশ প্রায় এক বছর ধরেই।

এ বছরের জানুয়ারিতেই 'দ্য অ্যাথলেটিক' প্রতিবেদন করেছিল, গত (২০২০-২১ মৌসুম) গ্রীষ্মকালীন দলবদলে প্যারিস সেন্ট-জার্মেই রোনালদোকে দলে ভেড়ানোর প্রস্তাব পেয়েছিল। কিন্তু পিএসজি নাকচ করে দেয় সে প্রস্তাব। পিএসজির কাতারি মালিক নাসের-আল-খেলাইফির সঙ্গে হোর্হে মেন্দেসের ততটা ঘনিষ্ঠতা না থাকার কারণ তো ছিলই, লিওনেল মেসিকে বার্সেলোনা থেকে নিজেদের দলে টানাতেই পিএসজি সমস্ত মনোযোগ দিয়েছিল বলেও বিবেচনা করেনি রোনালদোকে।

এবারের মৌসুমও শুরু হয়েছিল গত মৌসুমের মতোই, রোনালদোর ভবিষ্যৎ যথারীতি অনিশ্চয়তার চাদরে মোড়া। যদিও ওপরে ওপরে বলাবলি হচ্ছিল, তিনি তুরিনেই থাকছেন। লিওঁর কাছে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় রাউন্ডে হেরে বাদ পড়ার পরও তো জুভেন্টাসের চেয়ারম্যান বলেছিলেন, 'রোনালদোই জুভেন্টাসের ভিত্তি। পিএসজির সঙ্গে রোনালদোকে জড়িয়ে করা সব সংবাদই মিথ্যে।' রোনালদো জুভেন্টাসের প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতিতে যথাসময়ে যোগ দেবেন বলেই জানিয়েছিলেন তিনি এবং তাঁকে সত্যি প্রমাণ করে জুভেন্টাসেই নিজের প্রাক-মৌসুম মেডিকেল সম্পন্ন করেন রোনালদো। তখন ধারণা করে নেওয়া হয়, অন্তত এই মৌসুমটা জুভেন্টাসেই কাটাচ্ছেন তিনি।

তবে পিএসজিতে লিওনেল মেসির দলবদলের পর থেকেই ফের শঙ্কা ঘিরে ধরে রোনালদোর ভবিষ্যৎ নিয়ে। আনচেলোত্তি জানতে পেরেছিলেন, রোনালদো যেকোনো মূল্যে জুভেন্টাস ছাড়তে চান এবং পরবর্তী গন্তব্যস্থল রিয়াল মাদ্রিদ হলেও কোনো আপত্তি নেই তাঁর। রোনালদোর দলবল তাই চাইছিল, আনচেলোত্তি যেন নিজেই রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে চাপ দেন এই নাটকীয় প্রত্যাবর্তন ঘটাতে।

তবে শুরু থেকেই রিয়াল চাইছিল, রোনালদো যে রিয়াল ছেড়ে ভুল করেছেন, সেটা ভালোমতো বুঝিয়ে দিতে। যে কারণে অতীতেও রোনালদোর রিয়ালে ফেরার আকুতি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন পেরেজ। আর গত জুনে আনচেলোত্তির সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতেই পেরেজ স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, এই গ্রীষ্মে কেবল এমবাপ্পেকেই পাবেন তিনি, সেটা সার্জিও রামোস-রাফায়েল ভারানের মতো খেলোয়াড়দের বিসর্জন দিয়ে হলেও। তবে গুজব ছড়ানোর লোকের তো অভাব নেই, রোনালদো-রিয়ালকে কেন্দ্র করে তাই খবর ছড়াচ্ছিল সব দিকে। এই পরিস্থিতিতে জবাব দেওয়ার মাধ্যম হিসেবে আনচেলোত্তি বেছে নেন টুইটারকে। জানিয়ে দেন, রোনালদোর পিছু নিচ্ছেন না তাঁরা।

রিয়ালের অনাগ্রহের পর মেন্দেস আরেক দফা হাজির হয়েছিলেন পিএসজির দ্বারে। তবে খেলাইফি আগ্রহ দেখাননি এবারও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে 'রোনালদো-মেসি এক দলে'-জাতীয় কিছু গুজব ছড়ানো ছাড়া ওই খবরের আর কোনো সাফল্যই ছিল না।

রোনালদোর জন্যে হোর্হে মেন্দেসের সঙ্গে সিটির সম্পর্কে ভাটা পড়বে বলেই ধারণা

মেন্দেস এরপর দৃষ্টি ফেলেন ম্যানচেস্টার সিটির দিকে। দিন দশেক আগে সিটিকে জানানো হয়, চাইলে রোনালদোকে দলে টানতে পারে তারা। কিন্তু সিটিজেনরা তখনো বুঁদ হ্যারি কেনকে পাওয়ার স্বপ্নেই। এমনকি স্পেনের কিছু বিশ্বস্ত সূত্র এমনও জানাচ্ছে, পেপ গার্দিওলা কখনোই চাননি রোনালদো তাঁর দলে যোগ দিন।

অবশ্য এই সংবাদের সপ্তাহ না পেরোতেই নতুন করে খবর বেরোয়, হ্যারি কেন টটেনহ্যামে থেকে যাচ্ছেন নিশ্চিত হতেই গার্দিওলা রোনালদোর সঙ্গে সিটিতে তাঁর ভূমিকা কী হবে, সেটা নিয়ে আলোচনা করেছেন। সিটির সঙ্গে রোনালদোর এজেন্টের আলোচনা সোমবারে শুরু হয়ে মোটামুটি পরিণতি পেয়ে যায় মঙ্গলবারেই। কোচের প্রাথমিক অনাগ্রহ ছিল, রোনালদোর বেতন সিটি ড্রেসিংরুমের সংহতি নষ্ট করার সম্ভাবনাও থেকে যাচ্ছিল; তবুও, একজন সেন্ট্রাল ফরোয়ার্ডের জন্য সিটিজেনদের অনেক দিনের হাহাকার আর মাঠের বাইরে রোনালদোর বাণিজ্যিক মূল্যের কথা বিবেচনায় নিয়ে সিটি কর্তারাই এই দলবদলে আকৃষ্টই হয়েছিলেন।

রোনালদো জুভেন্টাস ছাড়তে চান, এটা ততদিনে একদমই নিশ্চিত হয়ে যাওয়াতে বুধবার তুরিন উড়ে যান মেন্দেস। আর বৃহস্পতিবার সেখানেই মিটিংয়ে বসেন ক্লাব কর্তাদের সঙ্গে। মৌসুম শুরু হয়ে গেছে, দলবদলের পর্দা নেমে যেতেও আর বাকি মাত্র পাঁচ দিন, রোনালদোর সিদ্ধান্ত জুভেন্টাস কর্তৃপক্ষের মনঃপূত হয়নি স্বাভাবিকভাবেই। তবে মেন্দেস যখন জানান, জুভেন্টাসের কথামতোই চুক্তি সম্পন্ন হবে, তখনই খুব সম্ভবত রাজি হন ক্লাব কর্তারা। রোনালদো সেদিন অনুশীলনে এলেও মাঠ ছেড়েছিলেন সবার আগে, সরিয়ে নিয়েছিলেন লকারে রাখা নিজের সব জিনিসপত্রও।

প্রথমে রোনালদোকে বিনামূল্যে চাইলেও মেন্দেসের সঙ্গে আলোচনা নির্দিষ্ট একটা মূল্য পরিশোধে সিটি সম্মত হয়েছিল বলেই ধারণা অনেকের। তবে শেষ পর্যন্ত আর সিটিকে অর্থ খরচ করতে হয়নি রোনালদোর পেছনে। এক রাতের ঝড়ে রোনালদোকে দলে ভিড়িয়েছে সিটিরই নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।

সেই ঝড়ের বিস্তারিত বর্ণনা আপনি ইতোমধ্যে পড়ে ফেলেছেন বলেই ধারণা। যদি না পড়ে থাকেন, আর দেরি কেন?

আরও পড়ুন: যেভাবে ইউনাইটেডে রোনালদো

*'দ্য অ্যাথলেটিক' থেকে ভাষান্তর: রিজওয়ান রেহমান সাদিদ

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×