অবশেষে জিদানের বিদায়ী ম্যাচ!
উৎপল শুভ্র
২৭ জানুয়ারি ২০২১
২০০৬ বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে ফ্রান্সের প্রতিটি ম্যাচই শুরু হতো একটা প্রশ্ন নিয়ে। এটাই কি জিনেদিন জিদানের শেষ ম্যাচ? সেমিফাইনালে পর্তুগালের বিপক্ষে ফ্রান্সের জয়ে অবসান সেই আলোচনার। শেষটা তাহলে বিশ্বকাপ ফাইনালেই। সেই শেষ কীভাবে হয়েছিল, তা পরের গল্প। এই লেখা মিউনিখের সেমিফাইনালে মুখোমুখি দুই বন্ধু জিদান ও লুইস ফিগোকে নিয়ে
প্রথম প্রকাশ: ৭ জুলাই, ২০০৬। প্রথম আলো।
সাদা জার্সিটা হাতে নিয়েই মাঠ থেকে বেরোলেন লুই ফিগো। জিনেদিন জিদান তখন ‘ফিগো’ হয়ে গেছেন। ‘ফিগো’আর ‘7’ লেখাটা অবশ্য দেখা যাচ্ছে না। ভুল করে জার্সিটা উল্টো করে পরেছেন, নাকি ঘামে জবজবে বলে!
একটু আগেই মাঠের ঠিক মাঝখানে অভিনীত হয়েছে আবেগময় সেই দৃশ্যটা। জিদান আর ফিগো, দুই বন্ধু জার্সি বদল করেছেন। তারপর আলিঙ্গনে বেঁধেছেন একে অন্যকে। কী বলেছেন খুব জানতে ইচ্ছে করছিল। ‘বিদায় বন্ধু, ফুটবল মাঠে আর দেখা হবে না’—এমন কিছুই হবে হয়তো।
দৃশ্যটা দেখতে দেখতে ভাবছিলাম, বিশ্বকাপে জার্সি বদলের সবচেয়ে বিখ্যাত ছবিটার পাশে কি এটিরও জায়গা হবে! ১৯৭০ বিশ্বকাপে ব্রাজিল-ইংল্যান্ড ম্যাচের পর পেলে ও ববি মুরের জার্সি বদলের ছবিটার পাশে জিদান-ফিগো! খেলোয়াড় হিসেবে ওই দুজন আরও ওপরে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের কথা অনেকবারই বলেছেন দুজন। ববি মুর ক্যান্সারে মারা যাওয়ার পর পেলের বিবৃতিতে ছিল বন্ধু হারানোর হাহাকার। তবে তাঁরা তো আর জিদান-ফিগোর মতো বন্ধু ছিলেন না। রিয়াল মাদ্রিদে একসঙ্গে কত দিন, কত রাত! জার্সি বদলানোর ওইটুকু সময়টাতেই সেসব স্মৃতি নিশ্চয়ই জলপ্রপাতের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছে দুজনের ওপর।
এটাই কি জিদান-ফিগোর শেষ ম্যাচ? কতবার যে এই প্রশ্নটা উঠেছে। ফিগো বলেছেন, ‘এটাই আমার শেষ ম্যাচ হতে পারে—প্রতিটি ম্যাচে আমি এটা মাথায় নিয়েই নামি।’ জিদান বলেছেন, ‘এটাই আমার শেষ ম্যাচ হতে পারে—আমি কখনোই এমন ভাবি না।’ জিদান আছেন, ফিগো নেই—এতে দুজনের মানসিকতার ভূমিকা দেখলেও দেখতে পারেন। গোলপোস্টের কয়েক হাত সামনে থেকে ফিগো যে হেডটা পোস্টের ওপর দিয়ে পাঠালেন, সেটিতেও খুঁজে পেতে পারেন ‘শেষ ম্যাচ’-এর টেনশন। জিদানের পেনাল্টিই ফাইনালে তুলে দিল ফ্রান্সকে। পর্তুগালকে ছিটকে দিল ফিগোর অবিশ্বাস্য ওই ব্যর্থতাই।
রাউল, রোনালদো, রবার্তো কার্লোস, ফিগো—জিদানের জন্য এবারের বিশ্বকাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে বন্ধুদের বিদায় করে দেওয়ার টুর্নামেন্ট। দেখতে দেখতে ফাইনাল এবং জিদান এখন এমন এক চূড়ার সামনে দাঁড়িয়ে, যেখানে এর আগে কারও পা পড়েনি। অধিনায়ক হিসেবে দুটি বিশ্বকাপ জয়!
১০ বছর ধরেই ফ্রান্স মানেই জিদান। এই বিশ্বকাপে আরও বেশি। ফ্রান্সের প্রতিটি ম্যাচের আগে জিদান, ম্যাচের পরও। প্রশ্নটা বারবার শুনতে শুনতে পরশুর সেমিফাইনালের পর কোচ রেমন্ড ডমেনেখ একটু বিরক্তই হলেন। ‘সবার মনে রাখা দরকার, এটা জিদানকে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য আয়োজিত কোনো টুর্নামেন্ট নয়, এটি বিশ্বকাপ।’
ডমেনেখ যতই এ কথা বলুন, ফাইনালের আবহে যে ওটা থাকছেই। এত দিন ফ্রান্সের জেতা-হারার সঙ্গে জিদানের বিদায় সম্পর্কিত ছিল। এবার তো আর তা নয়। আগামী রোববার ইতালির বিপক্ষে ফাইনালে যা-ই হোক, সেটাই হচ্ছে জিদানের শেষ ম্যাচ। মার্সেলো লিপ্পিও জিনেদিন জিদানের খুব ভক্ত বলে জানি। তাই বলে তাকে বিদায়ী উপহার দেওয়ার কথা নিশ্চয়ই ভাবছেন না ইতালিয়ান কোচ!