মেসির কাছে ডি মারিয়ার চাওয়া

উৎপলশুভ্রডটকম

১১ ডিসেম্বর ২০২১

মেসির কাছে ডি মারিয়ার চাওয়া

নতুন দলে পুরোনো দুই সতীর্থ

বার্সেলোনা তো ছিল মেসির পাড়ার ক্লাব। একসঙ্গে বেড়ে ওঠা বন্ধুদের সঙ্গে মনের আনন্দে খেলা। পেশাদার ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো অন্য ক্লাবে গিয়ে তাই অন্য চ্যালেঞ্জ। নতুন সতীর্থ, ভিন্ন ফুটবলীয় ঘরানার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার কঠিন কাজটা করতে হচ্ছে লিওনেল মেসিকে। মেসির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হচ্ছে সতীর্থদেরও। সেই কাজটা ভালোই হচ্ছে বলে দাবি পিএসজির আরেক আর্জেন্টিনিয়ান অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়ার।

একই সঙ্গে খেলা গড়ে দেয়া এবং গোল করা, দুই ভূমিকাতেই সমান উজ্জ্বল ফুটবলার হাতে গোনা। আর এই হাতে গোনা ফুটবলারদের মাঝে সবচেয়ে ধারাবাহিকভাবে এই দুই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন সম্ভবত লিওনেল মেসিই। বার্সেলোনার হয়ে তাঁর পরিসংখ্যানই এই কথার পক্ষে সাক্ষী দেয়।

মেসির বার্সেলোনা-দিন অতীত হয়ে যাওয়ার পরও সেটির উদাহরণ কেন? কারণ প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ে এখনো সেভাবে দলের প্রাণভোমরা হয়ে উঠতে পারেননি মেসি। বার্সেলোনার চেয়ে পিএসজিতে তাঁর কাজটা অবশ্যই একটু কঠিন। বার্সার সঙ্গে মেসির আত্মার সম্পর্ক। ২০০০ সালে বার্সেলোনার একাডেমি লা মাসিয়া থেকে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, তার শেষ হয় ২১ বছর পরে। তাও অনেকটা বাধ্য হয়ে। মেসির জন্য বার্সেলোনায় খেলাটা ছিল যেন পাড়ার ক্লাবে খেলার মতো। লা মাসিয়ায় একই সঙ্গে বড় হয়ে ওঠা ফুটবলারদের সঙ্গে বছরের পর বছর খেলতে খেলতে একটা টেলিপ্যাথিক যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল তাঁদের মধ্যে। জাভি-ইনিয়েস্তারা চোখের ইশারাতেই বুঝে ফেলতেন, মেসি কী করতে চাইছেন বা কী করবেন। মেসিও তা-ই। কখনো হয়তো ওই চোখের ইশারাও লাগত না।

যেখানে পিএসজি মেসির জন্য অজানা-অচেনা এক দল। জীবনে প্রথমবারের মতো ক্লাব পাল্টেছেন। ক্লাবের সঙ্গে বদলে গেছে শহর-দেশ-আবহাওয়া-টিমমেট। সম্পর্কটাও এখানে যতটা  আত্মিক, তার চেয়ে বেশি পেশাদার। এমন এক পরিবেশে মেসির সেরাটা দিতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ দলের সাথে মানিয়ে নেওয়া! শুধু কি মেসি মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেই কি হবে? পুরো দলেরও প্রয়োজন মেসির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া। তাহলেই বোধ হয় গোল করা ও করানোর ক্ষেত্রে বার্সার মেসিকে পাবে পিএসজি। আর এক্ষেত্রে মেসি কিংবা পুরো দলকেই সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারেন সম্ভবত মেসির আর্জেন্টিনিয়ান সতীর্থ ডি মারিয়া। আর এটা তিনি তার দায়িত্ব হিসেবেও নিতে পারেন! কে না জানে, মেসির পিএসজিতে আসার অন্যতম বড় কারণ এই ডি মারিয়াই। 

মেসি পিএসজিতে যোগ দেওয়ার পর ডি মারিয়ার উচ্ছ্বাসটা যদি আপনার মনে থাকে, তাহলেই বুঝতে পারবেন, মেসিকে দলে পেয়ে তিনি কতটা খুশি। ডি মারিয়া তখন কী বলেছিলেন, একটু মনে করিয়ে দেওয়া যাক: ‘মেসি অন্য গ্রহ থেকে এসেছে। আপনি তার দিকে একটা পাথর ছুঁড়ে মারুন, সে ওটাও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেবে, এমনভাবে প্রতিপক্ষকে কাটিয়ে যাবে যে ওটা কোনো ব্যাপারই নয়। অন্য যে কারো চাইতে ওর চিন্তা দ্রুততর। আমি এমন কিছু আর দেখিনি। আমি ক্রিস্টিয়ানো, নেইমার, এমবাপ্পে, রুনি, ফন পার্সি, ইব্রাহিমোভিচ, বেনজেমা, বেলদের সঙ্গেও খেলেছি। সত্যি বলছি, আমি ওর মতো কাউকে আর দেখিনি।’

তা না দেখলে কী হবে, পিএসজিতে লিওনেল মেসির শুরুটা যে মেসিসুলভ হয়নি, ডি মারিয়াও নিশ্চয়ই তা মানবেন। এখন পর্যন্ত লিগ ওয়ানে গোলসংখ্যা মাত্র এক। কয়েক মাস কেটে গেলেও মাঠে সতীর্থদের সঙ্গে বোঝাপড়ার অভাব এখনও স্পষ্ট। তবে ডি মারিয়ার দাবি, মেসি এবং পিএসজির বাকি দল পরস্পরের সঙ্গে দ্রুতই মানিয়ে নিচ্ছে।

ইএসপিএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ডি মারিয়া যা বলেছেন, তা তুলে দিলে বুঝতে আপনার আরও সুবিধা হবে। তা কী বলেছেন ডি মারিয়া? 'মেসি পিএসজিতে আসায় সবার প্রত্যাশা আকাশচুম্বী। ভক্তরা হয়তো প্রতি ম্যাচেই পিএসজির ৪-০ কিংবা ৫-০ গোলের ব্যবধানে জয় দেখতে চায়। কিন্তু ফুটবল খেলাটা এমন নয়। আমি বলব, চ্যাম্পিয়নস লিগে ক্লাব ব্রুগার সঙ্গে ম্যাচটাই প্রমাণ করে যে, আমরা ভালো করছি।’

শুধু দল নয়, মেসি ও মেসির পরিবারকে প্যারিস শহরের সঙ্গেও মানিয়ে নিতে হচ্ছে। আর ডি মারিয়ার মতে এখানেও মেসি সঠিক পথেই আছেন, ‘পরিবারের সঙ্গে তাঁর এখানে ভালো সময় কাটছে , তাঁর বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছে। এখানকার প্রত্যেকেই মেসির জীবনকে সহজ করে তুলতে ব্যস্ত। আর মেসিও প্যারিসের জীবনের সাথে দ্রুতই মানিয়ে নিচ্ছে।’

বার্সেলোনায় মেসিকে রাইট উইঙ্গার, রাইট ফরোয়ার্ড, ফলস নাইন, অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার এমনকি কখনো কখনো দলের প্রয়োজনে লেফট ফরোয়ার্ড পজিশনেও খেলতে দেখা গেছে। তবে পিএসজিতে তাঁর ভূমিকা এখনো হয়তো পরিষ্কার নয়। প্রশ্ন তো আরও আছে। দলের অন্য খেলোয়াড়েরা কি মেসির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন? মেসি নিজেও কি মানিয়ে নিতে পারছেন পিএসজির ফুটবলীয় কৌশলের সঙ্গে? এই প্রসঙ্গে ডি মারিয়া মনে করিয়ে দিচ্ছেন, দায়িত্বটা দুই পক্ষেরই।

প্রকারান্তরে একটু সময়ও যেন চেয়ে নিলেন তিনি, 'ফুটবলে সবকিছু ধীরে ধীরে অর্জন করতে হয়। বার্সা ছেড়ে পিএসজিতে আসা তার জন্য অনেক বড় পরিবর্তন, তার নতুন দলের অন্যান্য খেলোয়াড়দের সাথে মানিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি পিএসজিতে নতুন ঘরানার ফুটবল কৌশলের সাথেও মানিয়ে নিতে হচ্ছে। কারণ পিএসজি দ্রুত আক্রমণে ওঠে আর বার্সেলোনা বিশ্বাস করে বল পজেশনে রাখায়। আমরা এতে একটা ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছি। আমাদের সাথে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটা তাকেও নিশ্চিত করতে হবে। এটা দুই পক্ষেরই ব্যাপার।’

লিওঁর বিপক্ষে পচেত্তিনো তাঁকে তুলে নেওয়ায় অসন্তোষটা গোপন রাখেননি মেসি

এমন তারকাখচিত দল নিয়েও পিএসজি মাঠে সেরাটা না দিতে পারায় কোচ মরিসিও পচেত্তিনো পড়েছেন সমালোচনার মুখে। গুঞ্জন আছে, দলের অনেক খেলোয়াড়ের সঙ্গেই নাকি কৌশল নিয়ে মতবিরোধ আছে তাঁর। এই ’অনেক খেলোয়াড়ের’ মধ্যে মেসিও নাকি আছেন। ডি মারিয়া এখানেও অবতীর্ণ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায়। পচেত্তিনোর ওপর ভরসা রাখতে সমর্থকদের আহ্বান জানিয়ে তাই বলছেন, 'পচেত্তিনোর কাজটা সহজ নয়। মাঠে শুধু ১১ জনই খেলতে পারে এবং তাঁকে এটাই ঠিক করতে হয়। সবাইকে খুশি রাখা তাঁর জন্য সহজ নয়। তিনি যা করছেন, দলের ভালোর জন্যই করছেন এবং মাঠে আমাদেরকে তাঁর ভরসার প্রতিদান দিতে হবে।’

অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়ার কথায় স্পষ্ট, পিএসজি এখনও পুরোপুরি দল হয়ে উঠতে পারেনি। একটা দল হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াই চলছে এখনও। তবে যত দ্রুত সম্ভব এ প্রক্রিয়া শেষ করে পিএসজির দল হিসেবে খেলতে হবে, কারণ আসল লড়াই তো শুরু হলো বলে!

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×