যেভাবে ইউনাইটেডে রোনালদো
দ্য অ্যাথলেটিক
২৮ আগস্ট ২০২১
চুক্তির এক বছর বাকি থাকতেই জুভেন্টাস ছাড়লেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দিচ্ছেন বলে প্রবল গুঞ্জনের মধ্যে শেষ পর্যন্ত পুরোনো ঠিকানা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে! এই প্রত্যাবর্তনের পেছনে নাটকীয় ঘটনাপ্রবাহের গল্পটা জানাচ্ছে `দ্য অ্যাথলেটিক`।
বৃহস্পতিবার পুরো সন্ধ্যাটাই ছেয়ে ছিল ওই খবরে, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো যাচ্ছেন ম্যানচেস্টার সিটিতে। স্বাভাবিকভাবেই শহরের অন্যপ্রান্তে খবরটা গিয়েছিল শোকবার্তা নিয়ে! ক্লাবের কিংবদন্তিকে শেষ পর্যন্ত নগরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে হারাতে হবে?
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ম্যানেজার ওলে গানার সোলশায়ার খবরটা শুনেই কথা বললেন তাঁর কাছের লোকজনের সঙ্গে। ইউনাইটেডকে তো কিছু একটা করতেই হবে। শুধু পেপ গার্দিওলার দলে খেলাই তো নয়, রোনালদো আকাশি-নীল জার্সি গায়ে চাপালে সেটা আরও বড় হুমকি হয়ে দেখা দেবে রেড ডেভিলদের জন্যে। বর্তমান খেলোয়াড় আর সমর্থকদের কাছে ক্লাবের সম্মানহানি তো ঘটাবেই, ভবিষ্যতে খেলোয়াড় কিনতে গেলেও দেখা দেবে বিপত্তি।
সোলশায়ার তাই ইউনাইটেডের প্রধান নির্বাহী এড উডওয়ার্ডকে ফোন করলেন একটা প্রশ্ন নিয়েই, চুক্তিটা কোনোভাবে ইউনাইটেড করতে পারে কি না? উডওয়ার্ড সম্মতি দিলেন সাথে সাথেই। কল গেল ইতালির তুরিনে।
রোনালদোর এজেন্ট হোর্হে মেন্দেস প্রথম থেকেই ইউনাইটেডে ফেরাতে চাইছিলেন রোনালদোকে। কিন্তু এগোতে সাহস পাচ্ছিলেন না জুভেন্টাস ছাড়তে আগ্রহী হবে না ভেবে। এরই মধ্যে রোনালদোর সঙ্গে ব্যক্তিগত চুক্তিতে সম্মত হয়ে যায় সিটি। শুক্রবার সকাল আটটায় শুরু হওয়া জুভেন্টাসের অনুশীলনে রোনালদো তাঁর সতীর্থদের ইঙ্গিত দেন, ম্যান সিটিই তাঁর গন্তব্য হতে যাচ্ছে। যদিও বৃহস্পতিবার রাতেই রোনালদোর সঙ্গে ইউনাইটেডের যোগাযোগ হয়েছে, তবুও তখনো যেন ম্যানচেস্টারের অদলবদলের হিসাবটা ঠিক মেলাতে পারেননি তিনি।
তখনই মঞ্চে আবির্ভাব ঘটে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের। রুদ ফন নিস্টরলয়ের সঙ্গে গণ্ডগোলের সময় সেই যে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন রোনালদোর, স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন রোনালদোর মাথার ওপর ছায়া হয়ে আছেন এখনো। যে গুটি কয়েক মানুষকে রোনালদো অন্ধভাবে বিশ্বাস করেন বলে ভাবা হয়, স্যার অ্যালেক্স তাদেরই একজন।
রোনালদোকে ওল্ড ট্রাফোর্ডে ফিরিয়ে আনতে ক্লাব কর্তাদের এর আগেও কয়েকবার তাগাদা দিয়েছেন তিনি, বেশ কয়েকবার এ নিয়ে কথা বলেছিলেন সোলশায়ারের সঙ্গেও। এবার আর সুযোগটা কোনোমতেই হাতছাড়া করবেন না মন্ত্রে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে বৃহস্পতিবার রাতেই ইউনাইটেডের বোর্ড মেম্বার এবং মেন্দেসের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। ইউনাইটেডের সাবেক কিছু খেলোয়াড়ও কথা বলতে শুরু করেন দু'পক্ষে। বলা হচ্ছে, এই চুক্তির পেছনে রিও ফার্ডিনান্ড অনেকটা দালালের কাজই করেছেন। এমনিতেই উডওয়ার্ডের বেশ কাছের লোক তিনি। রাত দেড়টা পর্যন্ত একের পর এক ম্যাসেজ পাঠিয়ে গেছেন সব দিকে। নিজের সাবেক সতীর্থের সঙ্গে লম্বা এক আলাপচারিতায় তিনি বুঝিয়েছেন, নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবে গেলে সেটা ইউনাইটেডে যে সম্মানটা পান, তাতে কেমন নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সিটির বদলে ইউনাইটেডকে বেছে নিলে সমর্থকদের তা কত খুশি করবে, বুঝিয়েছিলেন তা-ও।
এগিয়ে এসেছিলেন প্যাট্রিক এভরাও। হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা চালাচালি করছিলেন রোনালদো আর সোলশায়ারের সঙ্গে। বর্তমান খেলোয়াড়দের মধ্যে এজেন্টের কাজ করেছিলেন ব্রুনো ফার্নান্দেজও। পর্তুগালের সতীর্থকে এক অর্থে পীড়াপীড়িই করেছেন তিনি।
সকাল সাড়ে দশটার মধ্যেই ইউনাইটেডের কর্তাদের রোনালদো জানিয়ে দেন, প্রত্যাবর্তনে ইচ্ছুক তিনি। ইউনাইটেড কর্তারাও আর দেরি করতে চাননি। এমনিতেই সুপার লিগ প্রকল্পের কারণে উডওয়ার্ডের সঙ্গে জুভেন্টাসের চেয়ারম্যান আগ্নেল্লির সুসম্পর্কই ছিল। কাজের সমাধা করাটা খুব একটা কঠিন হয়নি ইউনাইটেডের জন্যে।
জুভেন্টাস রোনালদোকে রিয়াল মাদ্রিদ থেকে দলে ভিড়িয়েছিল ১১৭ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে। চার বছরের বাৎসরিক ৩১ মিলিয়ন ইউরোর চুক্তির তিন বছর ইতোমধ্যেই পেরিয়ে গেছে, সব কাটাকুটির পর রোনালদোর মূল্য তাই দাঁড়ায় ২৮.৮ মিলিয়ন ইউরোতে। জুভেন্টাস তাই এর কাছাকাছি দামেই ছেড়ে দিতে চাইছিল রোনালদোকে। ইউনাইটেড প্রাথমিকভাবে ১৫ মিলিয়ন ইউরো দিচ্ছে জুভেন্টাসকে, পরবর্তী সময়ে চুক্তির শর্তের ওপর ভিত্তি করে দিতে হতে পারে আরও ৮ মিলিয়ন ইউরো। বার্ষিক বেতন জুভেন্টাসের চেয়ে কম হলেও রোনালদো চুক্তিতে রাজি হয়েছেন দুই বছরের জন্য। সব পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছালে বিকাল ৪:৫৩ মিনিটে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ঘোষণা দেয়, চুক্তি হয়ে গেছে।
ওল্ড ট্রাফোর্ডের মাঠে রোনালদোকে দেখতে অবশ্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন। উলভসের বিপক্ষে ম্যাচের পরই তো খেলোয়াড়েরা ফিরে যাচ্ছেন জাতীয় দলের দায়িত্বে।
*'দ্য অ্যাথলেটিক' থেকে ভাষান্তর: রিজওয়ান রেহমান সাদিদ