ফাইনালের আগে যা জানা দরকার
উৎপলশুভ্রডটকম
১৩ নভেম্বর ২০২১
মহা উত্তেজনার দুটি সেমিফাইনাল এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ উপভোগের পেয়ালা দিয়েছে উপচে। এখন আর একটা মাত্র ম্যাচ বাকি। সেটা আবার সবচেয়ে বড়। জানা নেই দুই সেমির চেয়ে এটা আরও বেশি উত্তেজনার হবে কি না, কিন্তু আশা করতে দোষ কি? ফাইনালের আগে কিছু জিনিস জেনে নেওয়া ভালো।
বিশ্বকাপ শুরু হয়েছিল ১৬টা দল নিয়ে। ৪৪ ম্যাচের পর এখন টিকে আছে দুটি। সব আসরের শেষটায় যা হয় আর কি। একটা বিশ্বকাপ ট্রফি। আর সেটির জন্য এবারের লড়াই ট্রান্স-তাসমান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে, রবিবার মুখোমুখি যেখানে অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ড।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এটাই নিউজিল্যান্ডের প্রথম ফাইনাল। আর সব ফরম্যাটে বিশ্ব শাসন করা অস্ট্রেলিয়ার একমাত্র দুঃখের নামই তো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। আগের ছয়বারের একবারও তাদের ঘরে শিরোপা ওঠেনি। কী দুঃখ! এটা তাই নিশ্চিত, এখন এবারের মরুর দেশের বিশ্বকাপ দেখতে যাচ্ছে নতুন এক চ্যাম্পিয়ন।
আর এই ফাইনালে উঠতে কী রোমাঞ্চকর খেলাটাই না উপহার দিল দুই দল! প্রতিপক্ষ ছিল বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের এক ও দুই নম্বর দল। খেলাটাও ঢলে পড়েছিল র্যাঙ্কিংয়ের দুই সেরাদের দিকে, সেখান থেকে জিমি নিশাম, ড্যারিল মিচেল কিংবা ম্যাথু ওয়েড যে কাণ্ডটা করলেন, তা বারবার ঘুরে ফিরে আসবে ক্রিকেট গল্পে, আড্ডায়।
অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বড় আসরের ফাইনাল বলতে ২০১৫ বিশ্বকাপ। মেলবোর্নের সেই ফাইনাল নিউজিল্যান্ড পাত্তাই পায়নি। চার বছর পর নিউজিল্যান্ডের আরেকটা ফাইনালও শেষ হয়েছে হতাশায়। আগেরবারের চেয়েও বেশি হতাশায়। বাউন্ডারির হিসেবে হারতে হওয়ার চেয়ে হতাশার আর কিই-বা হয়! বৈশ্বিক শিরোপা অবশ্য একটা জিতেছে তারা এ বছরই। প্রথম আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল নিউজিল্যান্ড।
কবে-কখন-কোথায়
চলুন ফেরা যাক বর্তমানে। রবিবার নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার ফাইনাল ম্যাচটা অনুষ্ঠিত হবে দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায়। বাংলাদেশের সময় রাত ৮টায়।
নিউজিল্যান্ড যেভবে ফাইনালে
আইসিসির বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে অবস্থান চার নম্বরে। নিউজিল্যান্ড খুবই গোছানো একটা দল। টুর্নামেন্টে দারুণ ধারাবাহিক। প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে হারার কথা বাদ দিলে তাদের খেলা ছিল দেখার মতো। কিউই বোলিং আক্রমণকে এই টুর্নামেন্টে অবশ্যই সেরাদের কাতারে রাখতে হবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের কন্ডিশনের সঙ্গে এই বোলিং অ্যাটাক এমন চমৎকারভাবে মানিয়ে নিয়েছে, যা সত্যি উদাহরণযোগ্য। ঋষিসুলভ অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের ক্ষুরধার মস্তিস্ক নিয়ে নুতন করে কিছু বলার নেই। ব্যাটিংয়ে যেমন বিশ্বের অন্যতম সেরা, তেমনি অধিনায়ক হিসেবেও নিজেকে তুলে নিচ্ছেন নতুন উচ্চতায়। দলে বিপদে দাঁড়িয়ে যাওয়ার মতো ব্যাটসম্যানও আছেন। পরিস্থিতি বুঝে যারা নিজেদের খেলাটা সুন্দর খেলে যান। পেশাদারির চূড়ান্ত আর কি। 'ডেথ' পরিস্থিতিতে তাদের শান্ত ধীর দেহভঙ্গি চোখে পড়ার মতো। সেমিফাইনালে বিশ্বের এক নম্বর দলকে পেছনে থেকে উঠে এসে যেভাবে বিদায় করে দিল, তা তো অধিকাংশের ভাবনায় ছিল না। এই প্রসঙ্গে জিমি নিশাম আর আর ড্যারিল মিচেলের কথা আলাদা করে না বললে গল্পটা অসম্পূর্ণ রয়ে যায়।
অস্ট্রেলিয়া যেভাবে ফাইনালে
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ যে অস্ট্রেলিয়ার দুঃখের নাম, তা তো আগেই বলা হয়েছে। এবার কি তাদের দুঃখ মিটবে? নিউজিল্যান্ডের মতো তারাও ফাইনালে এসেছে থ্রিলার জিতে। আইসিসি বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে তাদের জায়গা ৬ নম্বরে। বিশ্বকাপের আগে হেরেছে টানা পাঁচটি সিরিজ। এবারের বিশ্বকাপেও যাত্রা শুরু হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এক ম্যাচ দিয়ে। ম্যাচটা অস্ট্রেলিয়াই জিতেছে, কিন্তু দুই ম্যাচ পরই বড় ব্যবধানে হেরেছে ইংল্যান্ডের কাছে। এরপর অবশ্য তারা যে দুটি ম্যাচ জিতল দারুণ দাপটে, সেটাই তাদের সেমিফাইনালে আনতে বড় ভূমিকা রেখেছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে সেমিফাইনালে রোমাঞ্চকর জয়ের স্মৃতি তো এখনো টাটকা। টানা পাঁচ ম্যাচ জিতে সেমিতে ওঠা পাকিস্তানই ছিল এই ম্যাচে ফেবারিট। ম্যাচও অনেকটা সেই চিত্রনাট্য মেনেই এগোচ্ছিল। শেষে এসে ম্যাথু ওয়েড যে অমন কাণ্ড করে ফেলবেন, তা কে জানত! শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে পরপর তিন ছক্কায় ম্যাচ শেষ করে দেওয়ার ওই দৃশ্য অনেকদিন দর্শকের চোখে ভাসবে।
ম্যাচ অফিসিয়াল
ফাইনাল মানে ম্যাচে অফিসিয়ালদের ওপরও হিমালয়সম চাপ। আধুনিক সময়ে প্রযুক্তি তাদের কাজ একটু সহজ করে দিলেও মূল চ্যালেঞ্জগুলো তো থাকছেই। ফাইনালে অন-ফিল্ড আম্পায়ার থাকবেন মারাইস ইরাসমাস ও রিচার্ড কেটেলবোরো। টিভি আম্পায়ারের দায়িত্ব নিতিন মেমনের। ম্যাচ রেফারি রঞ্জন মাদুগালে। চতুর্থ আমপায়ার কুমার ধর্মসেনা।
রিজার্ভ ডে
ফাইনালের জন্য নির্ধারিত আছে একটা রিজার্ভ ডে।
নির্ধারিত দিনে ম্যাচ শেষ করার সব চেষ্টাই করা হবে। প্রয়োজনে ম্যাচের আয়ু কমিয়ে এনেও। যদি ম্যাচ শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় ওভার নির্ধারিত দিনে সম্ভব না হয়, শুধু তাহলেই রিজার্ভ ডেতে যাবে ম্যাচ। নির্ধারিত দিনে ম্যাচ শুরু হলে এবং কোনো কারণে তা শেষ না হলে রিজার্ভ ডেতে খেলা শুরু হবে আগের দিন যেখানে শেষ হয়েছিল, সেখান থেকে।
যদি 'টাই' হয়
ম্যাচ টাই হলে স্বাভাবিকভাবে ম্যাচ সুপার ওভারে গড়াবে। সুপার ওভারও যদি টাই হয়, তাহলে বিজয়ী নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত সুপার ওভার চলতে থাকবে। ব্যতিক্রমী কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলে ফল নির্ধারণ করতে যতগুলো প্রয়োজন, ততগুলো সুপার ওভার হবে।
টাইয়ের পর সুপার ওভার যদি আবহাওয়ার কারণে করা না যায়, বা তা সম্পূর্ণ না হতে পারে কিংবা ম্যাচ পরিত্যক্ত হয় বা কোনো ফলাফল না হয়, তা হলে দুই দলকে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ঘোষণা করা হবে।
তথ্যসূত্র: আইসিসি