কোহলি আর শোয়েব মালিকের বাবল যে কারণে আলাদা
উৎপলশুভ্রডটকম
২ নভেম্বর ২০২১
বিরাট কোহলির কাছে বায়ো-বাবলে খেলা মানে একটা শাস্তি। হাত পা বেঁধে খেলতে নামিয়ে দেওয়ার মতো। জসপ্রিত বুমরাহর কাছে বাবলের অন্য নাম মানসিক অবসাদ। কিন্তু কারো কারো কাছে বাবলের অর্থ বদলে যায়। কারণ, লক্ষ্য তখন কিছু অর্জন। সেই অর্জনের লক্ষ্যটাকে বড় করে দেখছেন বলেই কি কোহলি আর বুমরাহর বাবলের সঙ্গে শোয়েব মালিকের বাবলের ভিন্নতা?
জসপ্রিত বুমরাহর কথায় বোঝা গিয়েছিল, বায়ো-বাবল কতটা গলার ফাঁস হয়ে এঁটে বসেছে ভারতীয় দলের জন্য। অধিনায়ক বিরাট কোহলি তো তারও বেশ আগে বাবলের মধ্যে খেলা কতোটা কষ্টের, তা বোঝাতে একটা ছবি পোস্ট করেছিলেন। খুব সাড়াও ফেলেছিল তা। কিন্তু সেই বাবলের কথা যখন আসে, তখন কিনা পাকিস্তানের অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার শোয়েব মালিক ভিন্ন দর্শনে চলে যান। কিছু অর্জন করতে চাইলে কঠিন সময় তো পার করতেই হয়, এমন কথা বলার পাশাপাশি জানিয়ে যান, কেউ কেউ পরিবার পরিজনের সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত এই নিরাপত্তা পরিস্থিতি উপভোগও করতে শুরু করেছেন!
শেষ কবে বায়ো-বাবলের বাইরে ছিল ভারতীয় দল? এই প্রশ্নে কোনো ভারতীয় ক্রিকেটার হয়তো কষ্ট নিয়ে জবাব দেবেন, ‘কয়েক যুগ আগে’! ভারত দল গত জুনে ইংল্যান্ডে গেল। প্রথমে বাবলে ঢুকতে হলো নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলার জন্য। ওটা হয়ে গেলে ২৪ জুন বাবল থেকে তারা তিন সপ্তাহের জন্য মুক্তি পায়। এরপর ইংল্যান্ডের সঙ্গে ইংল্যান্ডের মাটিতেই খেলতে হয় পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। সেটি সামনে রেখে আবার বাবলে ঢুকে পড়ে দলটা। পঞ্চম টেস্টটা অবশ্য কোভিড-১৯ নিয়ে সৃষ্ট এক কারণে বাতিল হয়। ভারতীয় খেলোয়াড়রা ইংল্যান্ড থেকে সোজা আরব আমিরাতে চলে আসেন। যেখানে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে মে মাসে অর্ধেক পথে স্থগিত আইপিএলের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়।
This is what playing in bubbles feels like. pic.twitter.com/e1rEf0pCEh
— Virat Kohli (@imVkohli) October 15, 2021
আইপিএলের ফাইনাল হলো ১৫ অক্টোবর। ১৭ অক্টোবর থেকে ওমান ও ইউএইতে বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড শুরু হলো। ভারতীয় খেলোয়াড়রা আইপিএলের বাবল থেকে ঢুকে পড়েন বিশ্বকাপের বাবলে। ২৪ অক্টোবর তারা বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে তাদের প্রথম ম্যাচ খেলে পাকিস্তানের সঙ্গে। সেটি হারার পর এক সপ্তাহের বিশ্রাম নিয়ে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে গত রোববারের ম্যাচটা খেলে অসহায়ের মতো হেরে যায়। আর পাকিস্তান প্রথম ম্যাচেই বিশ্বকাপে ভারতক প্রথমবারের মতো হারানোর টনিক পেয়ে নিউজিল্যান্ড ও আফগানিস্তানকেও হারিয়ে সেমিফাইনালে একটা পা দিয়ে রাখে।
শোয়েব মালিক নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চমৎকার একটা ইনিংস খেলে দলের জয়ে ভূমিকা রেখেছেন। বিশ্বকাপ চলাকালে তিনি সাথে পাচ্ছেন তার ভারতীয় স্ত্রী টেনিস সুপারস্টার সানিয়া মির্জা ও সন্তানকে। সব মিলে তার সময়টা যে খারাপ যাচ্ছে না, বাবল নিয়ে প্রশ্নে তা পরিষ্কার বোঝা গেল, ‘এখন বাবলের মধ্যে পরিবারের সঙ্গে আছি বলে এটা মোটেও তেমন কঠিন কিছু মনে হচ্ছে না।’
তবে ওটাই শোয়েব মালিকের মূল কথা নয়। প্রশ্নটা করা হয়েছিল একটু বড় পরিসরের বাবল নিয়ে। সেই প্রশ্নের জবাবেও দেশের প্রতি কমিটমেন্টের কথা উঠে আসে তাঁর কথায়, ‘আসলে বাবলের মধ্যে জীবন একটু কঠিন তো বটেই। বিশেষ করে যখন ব্যাক টু ব্যাক সিরিজ খেলতে হয়। আর বাবলের মধ্যে থাকাও সহজ কাজ নয়। কিন্তু আপনার সামনে যখন জীবনে কিছু অর্জনের লক্ষ্য, তখন তো আপনাকে কিছু কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতেই হবে। এটাই আমাদের ভাবনা। আমরা সমস্ত মনোযোগ দিচ্ছি নির্দিষ্ট এই টুর্নামেন্টে। কেউ কেউ তো বাবলের মধ্যে জীবনটা উপভোগ করতে শুরু করেছে।’
পাকিস্তান টানা জয়ের মধ্যে আছে এবং টুর্নামেন্ট শুরু করার পর ফেবারিট হয়ে ওঠায় হয়তো এভাবে নির্ভার কথাবার্তা বলতে পারছেন শোয়েব মালিক। তাঁকে তো আর কোহলিদের মতো মাসের পর মাস এক বাবল থেকে আরেক বাবলে ঢুকতে হয়নি। আচ্ছা, আপনার কি মনে আছে, গত ১৫ অক্টোবর টুইটারে কোহলির পোস্ট করা ছবিটা? একটা চেয়ারের সঙ্গে শরীর আর হাত বাঁধা হয়ে বসে আছেন কোহলি। এই ছবি পোস্ট করে লিখেছিলেন, ‘বাবলের মধ্যে খেলতে এমনই লাগে।’
মানে কোনো স্বাধীনতা নেই। নেই কোনো আনন্দ। জীবন বিস্বাদ। স্বাধীনতা বা আনন্দের চেয়ে পেসার বুমরাহর কাছে বড় হয়ে উঠেছে টানা বাবলের মধ্যে থাকার ক্লান্তিকর বিষয়টা। আইপিএল ও বিশ্বকাপের মাঝে একটা বিরতি পেলে কেমন হতো, এমন প্রশ্নে সেদিন জবাব দিয়েছিলেন, ‘অবশ্যই, বিরতি তো দরকার।’ এর সঙ্গে বেরিয়ে পড়েছিল তার মনের হাহাকারটা, ‘ছয় মাস ধরে রাস্তায় থাকলে আপনি তো পরিবারকে মিস করবেনই। ওটা কখনো না কখনো আপনার অবচেতন মনে খেলা করবেই।’
পরিবার ও ঘরবাড়ি থেকে দীর্ঘদিন দূরে থাকলে মানসিক অবসাদ আসবেই। তবে সবকিছু মেনে নেওয়া ছাড়া যখন কোনো উপায় থাকে না তখন তো অসহায় লাগে আরো বেশি, ‘মহামারি চলছে এবং আমরা বাবলের মধ্যে থাকছি। এটাই বাস্তবতা। এটা কঠিন। আমরা মানিয়ে নিতে চেষ্টা করি কিন্তু বাবলের ক্লান্তি ও মানসিক অবসাদ পেয়ে বসে।’
কিন্তু যদি পাকিস্তানের মতো জয়ের ধারায় থাকত ভারত. তাহলে কথাগুলো কি এমন হতো? হয়তো হতো, হয়তো না। সেটা তো আর জানা যাচ্ছে না। তবে অনুমান করা কঠিন নয় যে, তখন এই বাবল এতটা অসহ্য লাগত না কোহলিদের কাছে।